১। কোভিডের আবার ব্যাপক বিস্তার হওয়া শুরু করলে একটা কথা অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন যে ভ্যাকসিন পাওয়া ব্যক্তিদেরও কি কোভিড হওয়া সম্ভব কিনা। সহজ উত্তর হ্যাঁ, কিন্তু সাথে কিছু কমপ্লেক্সিটিও আছে।
২। এ পর্যন্ত যতগুলো ভ্যাকসিন মার্কেটে এসেছে প্রায় প্রত্যেকটাই অনেক কার্যকর কোভিডের তীব্রতা কমানোর ক্ষেত্রে। পাশাপাশি কম্পেয়ার করে বিভিন্ন ডাটায় দেখা গিয়েছে যে কোভিড হলেও, ভ্যাকসিন পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তীব্র বা সিরিয়াস কোভিড কম দেখা গিয়েছে।
পড়ুন: প্রথম ডোজ টিকা নিলে কমে মৃত্যুঝুঁকি: এস্ট্রোজেনেকা টিকা নিয়ে সিভাসুর গবেষণা
যদিও অনেক সেলেব্রেটি লেখক ও বক্তারা বারবার বলত যে সিরিয়াস ডিজিজ কমানোতে ভ্যাকসিনগুলো ১০০% কার্যকর, এটা আমি বারবার আমার লিখায় বলেছিলাম ভুল – কারন কোন কিছুই ১০০% না। তাছাড়া যেই ট্রায়াল গুলো করেছিল, সেগুলোতে সিরিয়াস ডিজিজ দেখে করা হচ্ছিল না, করা হচ্ছিল সংক্রমন কতটা কমে আসে তা দেখার জন্যে।
সেলেব্রিটি হলেও এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নুয়ান্স অনেকেই বুঝেনা, এবং বেশ অনেকে মানুষকে এনকারেজ করার জন্যে বলেছিল ভাল নিয়তেই (কারন সাধারন মানুষ হয়ত এই কমপ্লেক্সিটিগুলো বুঝবে না)। আগামী কয়েক সপ্তাহ পৃথিবীর লাইভ ল্যাব হয়ে দাঁড়াবে যুক্তরাজ্য যেখানে ধেয়ে ধেয়ে কোভিড বাড়ছে আবার, সাথে হচ্ছে ইউরো ২০২০, উইম্বেল্ডান ও ফর্মুলা ওয়ান। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ কম রাখা যায় কিনা সেটাই এখন এইম।
৩। অন্যান্য রোগের ভ্যাকসিন থেকে আমরা জানি যে কিছু কিছু মানুষ কোন একটা কারনে ভ্যাকসিন পাওয়ার পরেও এন্টিবডি অত ভাল তৈরি করেনা। যেমন বিসিজি ভ্যাকসিন পাওয়ার পরেও অনেকে যক্ষা হয়, হেপাটাইটিস-বি পাওয়ার পরেও এন্টিবডি থাকেনা এমন উদাহরন আমরা দেখেছি।
৪। এ কারনে সব সময় বলা হয় যে একটা সেট পার্সেন্টেজ লোককে ভ্যাক্সিনেট করতে হবে। এর কারন হলো যে যদি আমরা ৮০-৯০% মানুষ কে ভ্যাকসিনেটেড করতে পারি তাহলে যারা ভ্যাকসিন পায়নি, এবং যারা পেয়েও তেমন রিয়েক্ট করেনাই, তারাও প্রোটেক্টেড থাকবে কারন অধিকাংশ মানুষ ভ্যাকসিনেটেড তাই ছড়াবে কম।
তাও মাঝে মাঝে আউটব্রেক হতেই পারে, যেমনটা পশ্চিমা দেশে দেখা গিয়েছিল কিছু কিছু মিজেলস আউটব্রেকে, কারন মাঝে এমএমআর ভ্যাকসিন নেওয়া কমে গিয়েছিল।
৫। দুইটা জিনিস মেলালে যা হয় তা হলো যে অনেক সংখক মানুষ ভ্যাকসিনেটেড না হওয়া পর্যন্ত, অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন। কারন অনেক মানুষকে ভ্যাক্সিনেটেড না করলে (কমপক্ষে ৭০%), কোভিড সংক্রমিত হতে থাকবে, এবং যারা ভ্যাকসিন পেয়েছে তাদের অনেকেও আক্রান্ত হতে পারে কারন পুরোপুরি ইমিউনিটি তখনো ডেভেলাপ করেনাই, এবং কিছু মানুষ করেনা।
৬। সম্প্রতি পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের একটা ডাটাতে দেখা গিয়েছে যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট (ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট) এ যারা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, তাদের মাত্র ১৪% পুরোপুরি ভ্যাকসিনেটেড।
তার মানে এখন যারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে তার ৮৬% ভ্যাক্সিন পায়নি, যদিও ভ্যাকসিন প্রায়োরিটি ছিল বেশি অসুস্থ ও বৃদ্ধ লোকজন। তাছাড়া মৃত্যুর হার ডেল্টা থেকে মাত্র ০.১৩% (সো ফার), যেটা আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে কারন টেস্টিং বেড়েছে এবং ভ্যাকসিনেশান ও।
বলা যেতে পারে যে মৃত্যুর হার অনেকটা কমিয়ে এনেছে এবং হাসপাতালগুলো এখন ওভারলোডেড হচ্ছেনা (কিন্তু মৃত্যুর হার কিন্তু ০% না, ভ্যাকসিন পাওয়ার পরেও না)। আমি গত ৪ মাসে মাত্র একজন কোভিড রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করেছি অথচ ডিসেম্বার জানুয়ারিতে এমন দিন গিয়েছে যে প্রতি ঘন্টায় নতুন রেফারাল।
তাই ভ্যাকসিনেশান আরো অনেক অনেক বৃদ্ধি না পেলে সিরিয়াস ডিজিজ দেখার সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রচুর তাই এই রিস্ক থেকে যায় যে হাসপাতাল সিস্টেম বারবার কল্যাপ্স করতে পারে (যা গত কয়েকদিন রাজশাহী এবং খুলনায় হচ্ছে)।
ঢাকায় ভ্যাকসিনেশানের হার সব চেয়ে বেশি হওয়ার কারনে আশা আছে যে হয়ত অত বেশি ওভারলোডেড হবেনা এবার, এবং সাথে লকডাউনও দেয়া হয়েছে।
সিম্পল সাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলুন, মাস্ক পড়া, অকারনে বেশি বাইরে না থাকা এবং ভ্যাকসিন নিতে পারলে তাড়াতাড়ি নেয়া। কোন কাশি, জ্বর, গলা ব্যাথা, গায়ে ব্যাথা, ঘ্রানশক্তি চলে যাওয়া – হলে সাথে সাথে কোভিড টেস্ট করুন।
ডাঃ রাইয়িক রিদওয়ান
রেজিস্ট্রার, ইমার্জেন্সি মেডিসিন
ওয়েস্ট সাফোক হসপিটাল, যুক্তরাজ্য।
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ক্লিনিক্যাল সুপারভাইজার,
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যাম্ব্রিজ।
আরো পড়ুন: ফাইজার মডার্না না নিয়ে বাংলাদেশ কেন এস্ট্রজেনেকার ভ্যাক্সিন নিচ্ছে?