বিশাল আকাশ দেখে আমরা তার বিশালত্বে হারিয়ে যায় তাই না,কিন্তু এই বিশাল আকাশ মহাবিশ্বেরগঠন অনুসারে পয়েন্ট জিরো জিরো জিরো জিরো জিরো ওয়ান পার্সেন্ট(.০০০০০১%) কিংবা তার শতভাগের একভাগের মতোই।
এই আকাশ পৃথিবীর একটি অংশ,আবার এই পৃথিবী সৌরজগতের একটি অংশ,আবার এরকম হাজারো সৌরজগত নিয়ে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি গঠিত,আর এই গ্যালাক্সির মতো বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সি নিয়েই আমাদের মহাবিশ্ব।
আমাদের গ্যালাক্সির মতো এন্ড্রোমিডা একটি গ্যালাক্সি,যা আমাদের গ্যালাক্সির পাশের গ্যালাক্সি, আমাদের মহাজাগতিক প্রতিবেশী বললেই চলে।
চলুন আজ জানা যাক অ্যানড্রোমিডা সম্পর্কে।
এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি
এর অপর নাম M-31 বা মেসিয়ার-৩১ বা NGC-224।
আমাদের পৃথিবী থেকে যার দূরত্ব ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।
কিলোমিটার হিসেবে
২.৪*১০^৯। আমাদের মিল্কিওয়ের মতো এটিও স্পাইরাল আকৃতির।
গ্রিক পূরানে বর্ণিত ইথিওপীয় পৌরাণিক রাজকুমারী এন্ড্রোমিডার নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী-চার্লস মেসিয়ারের নাম
অনুসারে এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিকে
মেসিয়ার-৩১ নামেডাকা হয়।
এন্ড্রোমিডার সৌর ভর ৭.১×১০^১১,যা আমাদের
ছায়াপথের ভরের প্রায় ৮০%।
গ্যালাক্সিটিতে রয়েছে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন সংখ্যক নক্ষত্র,অর্থাৎ ১×১০^১২ যা আমাদের ছায়াপথের
তুলনায় প্রায় দ্বিগুন।
এখন প্রশ্ন, আমাদের গ্যালাক্সির চেয়ে নক্ষত্র দ্বিগুণ তবে ভর কেনো ২০% কম?
তার উত্তর হচ্ছে এন্ড্রোমিডায় ছায়াপথে কৃষ্ণ
পদার্থের (black matter) পরিমাণ কম,তাই নক্ষত্র বেশি হওয়া সত্ত্বেও এর ভর কম।
গ্যালাক্সির কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস কিছু
ঘণীভূত পদার্থ দিয়ে তৈরি| কেন্দ্রটিকে
ঘিরে রেখেছে গ্যাস, ধুলা এবং নক্ষত্র দিয়ে
তৈরি একটি বায়বীয় বৃত্ত।
এই গ্যালাক্সিটি আবিস্কার করেছিলেন পারস্যের এক মুসলমান জ্যোতির্বিদ আব্দাল রহমান আল-সুফী।
৯৬৪ সালে তিনি গ্যালাক্সিটি পর্যবেক্ষণ করেন, কিন্তু
সেইসময়ে গ্যালাক্সি সম্পর্কে মানুষের
ধারণা না থাকায় তিনি `তার “Book of Fixed
Stars” গ্রন্থে এর নাম দেন ‘Small Cloud’
বা ‘ক্ষুদ্র মেঘ’।
অতঃপর ১৭৬৪ সালেএন্ড্রোমিডাকে মেসিয়ার-৩১ নামকরণ করেন বিজ্ঞানী চার্লস মেসিয়ার,
তবে তিনি এর আবিস্কারের কৃতিত্ব
দিতে চেয়েছিল জার্মান জ্যোতির্বিদ
সাইমন মারিয়াসকে।
যদিও তার চেষ্টা সফল
হয়নি, বিজ্ঞানীরা আব্দাল রহমান আল-সুফীকেই মেসিয়ার থার্টিওয়ান আবিস্কারের কৃতিত্ব দিয়েছিল। ১৮৮৭ সালে এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির ছবি সর্বপ্রথম তুলেছিলেন আইজ্যাক রবার্ট।
এন্ড্রোমিডার গ্যালাক্সির কিছু উপ-গ্যালাক্সি
আছে। যেমন- M-30,M-33,M-110 ইত্যাদি।
M-33 এই উপ-গ্যালাক্সি এর অপর নাম–
ট্রায়াঙ্গুলাম উপ-গ্যালাক্সি।
ধারণা করা
হয় ট্রায়াঙ্গুলাম উপ-গ্যালাক্সি একসময়
একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্যালাক্সি ছিল।আনুমানিক ১০০ মিলিয়ন বছর আগে এন্ড্রোমিডার সাথে এর সংঘর্ষ হয়,এবং এটি এন্ড্রোমিডার সাথে পরাজিত হয় তারপর এন্ড্রোমিডা এটিকে গিলে নেয়,অর্থাৎ উপ-গ্যালাক্সি বানিয়ে নেয়।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন এটি কি আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের সাথে সংঘর্ষে জড়াবে কিনা?
উত্তর হবে অবশ্যই হ্যাঁ, কারণ এই গ্যালাক্সি প্রতি সেকেন্ডে ১৪০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার বেগে আমাদের গ্যালাক্সির দিকে প্রবল বেগে ছুটে আসছে।
এই গতিতে চলতে থাকলে সে ১.৯৬ থেকে ২.৭৪ বিলিয়ন বছর সময় নেবে আমাদের কাছে এসে পৌঁছুতে। কিছু বিজ্ঞানীদের মতে ৫ বিলিয়ন বছর ও লাগতে পারে।
তবে এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ আজ থেকে ৫ বিলিয়ন বছর পর সূর্য নিজেই একটা বিশাল দৈত্যাকার অগ্নিপিন্ডে পরিণত হয়ে সৌরজগতের গ্রহগুলোকে গিলে নেবে,তার মানে আমাদের গ্রহের অস্তিত্ব ই থাকবে না।
কি জানি কেমনভাবে আমাদের শান্তশিষ্ট মিল্কিওয়ে ছায়াপথকে ধোলাই করে।
ট্রায়াঙ্গুলামকে মারলো,এখন আমাদের লক্ষী ছায়াপথকে মারবে,ডাকাত গ্যালাক্সি।
কি হিংস্র রে বাবা…!!
অবশ্য গ্রীক রাণীর নামে নাম, যুদ্ধ-বিগ্রহ তো তার ঐতিহ্যে(গ্যাস, ধুলা,নক্ষত্র, ব্ল্যাকহোলে)
মিশে আছ!