বাংলা ভাষায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা (পর্ব ১৬):
আমরা সবাই জানি যে দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাতের জন্য দরকার পর্যাপ্ত জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি।
আগামী শুক্রবার ও শনিবার ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশের সকল জেলায় বৃষ্টিপাত হওয়ার পূর্বাভাষ নির্দেশ করেছে আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেলগুলো তার জন্য জলীয়বাষ্প সরবরাহের ঠিকাদারি নিয়েছে বঙ্গোপসাগর। এখানে উল্লেখ্য যে শীতকালে স্থল ভাগের উপরে বায়ুর তাপমাত্রা অপেক্ষা সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে।
যেমন বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা প্রায় ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু বাংলাদেশের উপরে দিনের তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রী ও রাতের তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকে। আমরা সাবই জানি যা গরম স্থান থেকে তাপ অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা স্থানে গমন করে।
এই কারণেই বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে অবস্থিত অপেক্ষাকৃত গরম ও আর্দ্র (ভেজা) বাতাস বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যা নিচে সংযুক্ত কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্রে দেখা যাচ্ছে। এই একই সময় ভারতের উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা বাতাস বাংলাদেশের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।
উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আগত অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা বাতাস যখন বঙ্গোপসাগরে থেকে আগত অপেক্ষাকৃত গরম ও আর্দ্র (ভেজা) বাতাসের সাথে মিলিত হবে ঠিক তখন মেঘের সৃষ্টি হবে ও মেঘ যখন জলিয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হবে তখন বৃষ্টি আকারে ভূমিতে পতিত হবে।
আশাকরি বুঝাতে পরেছি কেন আগামীকাল শুক্রবার ও শনিবার ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশের সকল জেলায় বৃষ্টিপাত হবে।
আরও সহজ উদাহরণ হলও ফ্রিজ থেকে কোকাকোলার ঠাণ্ডা বোতল বের করে বাহিরে রাখলে ১০ মিনিট পরে দেখা যায় যে বোতলের বাহির দিকে ছোট-ছোট পানির কণা জমা হয়েছে। আরও কিছুক্ষণ পরে কিছু পানির কণা বোতলের গা বেয়ে নিচে পড়তে থাকে।
বোতলের বাহিরের গরম বাতাস যখন কোকাকোলার ঠাণ্ডা বোতলের সংস্পর্শে আসে তখন বাহিরের গরম ও আর্দ্র বাতাস ঠাণ্ডা বোতলের সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয়ে প্রথমে ছোট পানির কণা তৈরি হয় ও সেই ছোট কোনা পাশের অন্য ছোট কণার সাথে মিলে বড় পানির কণা তৈরি করে।
অবশেষে বড় পানির কণা অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে বোতলের গা বেয়ে নিচে নামে। ঠিক একই প্রক্রিয়ার আকাশ থেকে বৃষ্টি ভূমিতে পতিত হয়।