গত জুনে মাত্র ৮ দিনের জন্য মহাকাশে গিয়েছিলেন ভারতীয়-স্লোভেনিয়ান বংশোদ্ভুত নভোচারি সুনীতা উইলিয়ামস। সাথে ছিল তার সহকর্মী বুচ উইলমোর, স্লোভেনিয়ান পতাকা, সিঙ্গারা আর সস্। সেই ৮ দিনের সফর আড়াই’শ দিনে গিয়ে ঠেকল। ফেরার যানে ত্রুটি দেখা দিলে মহাকাশে আটকা পড়েন তারা।
এরপর বেশ কয়েক বার সুনীতাদের ফেরানোর চেষ্টা করা হলেও সফল হয়নি নাসা। শেষমেষ ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স’র পাঠানো ড্রাগন আজ ভোরে আটলান্টিক মহাসাগরের ফ্লোরিডা উপকূলে এসে নামলো। নোঙ্গর করে রাখা এক ফেরির সাথে গিয়ে জোড়া লাগলো। বিজ্ঞানের কি অবিশ্বাস্য জয়যাত্রা!
পৃথিবীর এক প্রান্তে মানুষ যখন মানুষকে টেনে হিঁচড়ে ঘরে বন্দী করার খেলায় মেতেছে, তখন আরেক প্রান্তের এক নারী মহাকাশে কাটিয়ে এলেন টানা ৯ মাস! তা-ও কোনো প্রস্তুতি ছাড়া!
এই ৯ মাস সুনীতারা কী করলেন ওখানে?
তারা গবেষণা করে দেখেছেন, মাইক্রো গ্রাভিটিতে কী কী ফসল উৎপাদন করা যায়! কোন্ ফুল ফুটতে পারে? কোন জীবাণু এই ধরনের প্রতিকূল পরিবেশে কাবু হয়? তার উদ্ভিদবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণার নাম ভেজি। ওহ্ সেখানে কিন্তু সুনীতা তার প্রিয় জিনিয়া ফুল ফুটিয়েছেন।
জানিয়েছেন, ওখানে লেটুস, গাজর উৎপাদন করাও সম্ভব। একজন মহাকাশচারীকে শারীরবৃত্তীয় নানা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। হার্ট, কিডনি কিভাবে কতটা সক্রিয় থাকে তার পরীক্ষা খুব জরুরী।
সেরে নিয়েছেন সেসব গবেষণাও। সুনীতা স্বপ্ন দেখেন, একদিন মানুষ মঙ্গলে যাবে। লোটা-কম্বল নিয়ে চাঁদে যাবে ঘর বাঁধতে।
এর আগেও সুনীতা মহাকাশে গিয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট তিনবার। তিনটি অভিযান ধরলে এখন পর্যন্ত ৫১৭ দিন মহাকাশে ছিলেন তিনি। এটাই বিশ্ব রেকর্ড।
স্টেশন থেকে বেরিয়ে মহাকাশে হাঁটাহাঁটি করেছেন মোট ৫১ ঘণ্টা! ঠিকই পড়েছেন! তাও বিশ্ব রেকর্ড!
আমরা যখন ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীদের ঘরে আটকে রাখার যাবতীয় কূটকৌশল চালিয়ে যাচ্ছি, তখন এই উপমহাদেশেরই এক নারী মহাকাশে থেকে এলেন পাক্কা ৯ মাস! তাও মানুষের উদ্ভাবিত যানে চড়ে, মানুষেরই বানানো জামা কাপড়, অক্সিজেন আর খাবার খেয়ে।
সুনীতা সেসব মানুষদেরই মিথ্যা প্রমাণ করে দিলেন যারা যাবতীয় কূটবুদ্ধি দিয়ে নারীদেরকে বস্তায় বন্দি করে রাখে, আবার সেসব সঙ্কীর্ণ মানুষ যারা স্বেচ্ছায় বন্দী হয়।
কিছু মানুষ, যারা এই বলে ফতোয়া দেয় যে, বাড়ির বাইরে যেতে হলে সাথে এক পুরুষকে বাধ্যতামূলক ভাবে নিতে হয়।
জ্ঞান বিজ্ঞানে মানুষ কোথায় এগিয়ে গেলো, আর আমরা কোন্ পথে হাঁটছি।
ওয়েলকাম ব্যাক, সুনীতা উইলিয়ামস। আপনাকে দেখে মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে। শেখার আছে যে, শুধুমাত্র জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ দ্বারাই এই পৃথিবীর মানুষ এটা প্রমাণ করতে পারে যে, ”মানুষেরই মাঝে ম্বর্গ নরক, মানুষেতে সুরাসুর…”
কয়েক মিনিটের জন্য লিফটে আটকা পড়লে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসে। আর সুনীতা আটকে ছিলেন মহাকাশে, বহুদিন। মহাকাশে বসে এক সাক্ষাৎকারে সুনীতা জানিয়েছিলেন, ”যদি পৃথিবীতে ফিরে যাই, তবে এই মহাকাশের সবকিছু মিস করবো।”
রহস্যে ভরপুর বিস্তীর্ণ মহাকাশও কি সুনীতাকে মিস করবে না?
লেখা: রাজু নুরুল