ওয়ার্ম হোল শব্দটি আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত আবার অনেকেই হয়তো প্রথম শুনছি। আসলে এটা একটা খুব চমৎকার একটিবিষয়, যেটার সম্পর্কে জানার আগ্রহের শেষ নেই অনেকেরই।
১৯১৬ সালে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকে তাত্ত্বিকভাবে সর্বপ্রথম ওয়ার্মহোল এর ধারনা করা হয়েছিল। যদিও তখন একে এই নামে ডাকা হত না।
ওয়ার্মহোলের ধারণাটি মূলত আমেরিকান গণিতবিদ এডওয়ার্ড কাসনারের “কাসনার মেট্রিক্স”ব্যাবহার করে আইন্সটাইনের ক্ষেত্র সমীকরণের সমাধানের মাধ্যমে এসেছিল।
পরবর্তীতে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ পল এহরেনফেস্টের “এহরেনফেস্ট প্যারাডক্স” এর গঠনের উপর দাঁড়িয়ে ওয়ার্ম-হোলের ধারণা বর্তমানের এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছে।
ব্ল্যাকহোলের মতোই আইন্সটাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব সমাধানের মাধ্যমেই ওয়ার্মহোলের উৎপত্তি হলেও, নানান দিক দিয়েই তাদের পার্থক্য অনেক।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে ওয়ার্ম হোল বা ক্ষুদ্র বিবর হলো মহাজাগতিক একটা ব্যাপার। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি,ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ বিবর, সিঙ্গুলারিটি। সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের সমীকরণগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করে পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ও নাথান রোজেন ১৯৩৫ সালে প্রস্তাব করেন, স্থান-কালের অভ্যন্তরে এক প্রকার সেতুর অস্তিত্ব রয়েছে।
এ পথগুলোকেই বলা হয় আইনস্টাইন রোজেন সেতু অথবা ওয়ার্মহোল যা স্থান-কালের দুটি বিন্দুকে সংযুক্ত করে।এর উপর ভিত্তি করে ওয়ার্ম-হোলের আরো একটি নাম রয়েছে যা খুবই ইন্টারেস্টিং, “আইন্সটাইন-রোসেন ব্রিজ”।
সহজভাবে বলতে গেলে ওয়ার্ম হোল হচ্ছে একটি থিওরিটিকাল প্যাসেজ অথবা টানেল যা শর্টকাট রাস্তা তৈরি করে স্পেসটাইমে এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।
অর্থাৎ,আমরা যদি ওয়ার্ম-হোলের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করি তাহলে আমরা ওয়ার্ম-হোলের অপর প্রান্তে আমরা নিজেদেরকে অন্য স্পেস এবং ভিন্ন একটি সময়ে নিজেদেরকে আবিষ্কার করবো।
তাই ওই দুই বিন্দুর একস্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে আলোর কয়েক বিলিয়ন বছর সময় লাগলেও, আমরা ওয়ার্মহোল ব্যবহার করে অতি সহজেই মাত্র কয়েক মুহূর্তেই এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে চলে যেতে পারবো।
যদিও এই ভ্রমণটি আমাদের কাছে মাত্র কয়েক ন্যানো সেকেন্ডের মনে হলেও আমরা নিজেকে আবিষ্কার করতে পারি কয়েক শত বছর পরের কোনো একটা সময়ে। একটি ওয়ার্মহোলের ভেতরে প্রবেশ করি তবে নিজেকে অন্য যেকোনো ভিন্ন মাত্রায় দেখতে পাবো।
মহাবিশ্ব ১১ মাত্রিকের মধ্যে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে মাল্টিপল ইউনিভার্সের সাথে সংযুক্ত হওয়া সম্ভবপর হতে পারে।আমরা ত্রিমাত্রিক জগতে বসবাস করি।আমাদের মানুষের এই জগতটি হলো ত্রিমাত্রিক জগৎ আমরা যে কোনো বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করে থাকি তিনটি মাত্রার মাধ্যমে। এই তিনটি মাত্রা হলো দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা।
বিষয়টিকে তাত্ত্বিকভাবে যদি বলতে চাই তাহলে বলতে হয় প্যারালাল ইউনিভার্সের কথা। মনে করা হয়,মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুর সময়ে ইনফ্লেশন বা বুদবুদের মাধ্যমে এই প্যারালাল ইউনিভার্সের সৃষ্টি হয়।
বর্তমানে টাইম ট্রাভেল নিয়ে যে বস্তুটা আশার আলো জাগিয়েছে তা হলো ওয়ার্ম হোল। এটা স্থান কালের একটা ছিদ্র বিশেষ। এর মাধ্যে টাইম ট্রাভেল করা বাস্তবেই সম্ভব বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন যেহেতু এখনো পর্যন্ত সময় পরিভ্রমণের ব্যাপারে কোনো প্রমাণ নেই তাই এটি এখনো থিওরিটিক্যালিই সম্ভব।
সহজ একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছি:উদাহরণ দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছি:
যেকোনো একটা কাগজ নিই। কাগজের লম্বালম্বি দুই প্রান্তে দুটো ছোট্ট বৃত্ত আঁকি। এবার কাগজটা মাঝ বরাবর ভাঁজ করে বৃত্ত দুটো এক করে কাগজটিকে ফুটো করি। এটা হচ্ছে একটা ওয়ার্ম হোল।
খেয়াল করি, কাগজটা যখন সমান্তরাল ছিল তখন বৃত্ত দুটোর মধ্যে দূরত্বটা অনেক ছিল অথচ ভাঁজ করার পর দূরত্বটা কমে গেল।অর্থাৎ এক ইউনিভার্স হতে অন্য ইউনিভার্সে যাওয়ার শর্টকাট রাস্তা ! এটাই হচ্ছে ওয়ার্ম হোল।
সহজভাবে বললে এটি হলো সময়সংক্ষেপনের মাধ্যমে অন্যমাত্রায় বিচরণের একটি রূপ।
লিখাঃ
শফিউন নাহার ইলমা
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (৪র্থ বর্ষ)
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড রিসার্চ (নিটার)