মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা: পর্ব ১ (আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল কি ও তা কিভাবে কাজ করে?)
প্রতিদিন আবহাওয়া পূর্বাভাষ দিচ্ছি আবহাওয়া পূর্বাভাষের গাণিতিক কম্পিউটার মডেল থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে। আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেলের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে যে কারণে সবসময় সঠিক পূর্বাভাষ দিতে পারে না। একই মডেল আমেরিকা কিংবা কানাডায় যত নির্ভুল ভাবে আবহাওয়া পূর্বাভাষ দিতে পারে সেই পরিমাণ সঠিক ভাবে আবহাওয়া পূর্বাভাষ দিতে পারে না বাংলাদেশের উপরে।
তাহলে কি আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেলও ধনি ও গরিব দেশের পার্থক্য বুঝে ভিন্ন-ভিন্ন রকম আবহাওয়া পূর্বাভাষ দেয়? কি কি সীমাবদ্ধতার কারণে আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল বাংলাদেশের উপর সঠিক পূর্বাভাষ দিতে পারে না? ভবিষ্যতে কিভাবে বাংলাদেশের উপর আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেলের পূর্বাভাষ সীমাবদ্ধতা কমিয়ে আনা যাবে?
আমি চেষ্টা করবো উপরোক্ত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিতে পর্যায়ক্রমে। চলুন আজকে জেনে নেই আবহাওয়া পূর্বাভাষের মডেলগুলোকে কেন গাণিতিক কম্পিউটার মডেল বলা হয়? সেই মডেলে পদার্থ বিজ্ঞানের কোন কোন সূত্র ব্যবহার করে আবহাওয়ার পূর্বাভাষ করা হয়?
পৃথিবীর প্রত্যেকটি আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেলে বিজ্ঞানের ৭ টি সূত্র আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায় পদার্থ বিজ্ঞানের ৭ টি সূত্র ব্যবহার করা হয়।
আশার কথা হলও আমরা প্রায় সকলেই সেই প্রাইমারি স্কুল থেকে বিজ্ঞানের এই ৭ টি সূত্র সম্বন্ধে পড়ে এসেছি। এই ৭ টি সূত্রের ১ টি বাদ দিলে দৈনন্দিন আবহাওয়ার প্রকৃত অবস্থা পূর্বাভাষ করা যাবে না। এই সূত্র ৭ টি নিম্নরূপ:
১) ভরের নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র (পদার্থকে সৃষ্টি করা যায় না বা ধ্বংসও করা যায় না, তাকে এক অবস্থা হতে অন্য অবস্থায় রূপান্তর করা যায় মাত্র)
২) শক্তির নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র (শক্তি অবিনশ্বর, শক্তি সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না | এক রূপ থেকে শক্তিকে কেবলমাত্র অন্য রূপে রূপান্তরিত করা যায়)
৩) ভরবেগের নিত্যতা সূত্র বা নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র (কোনো বস্তুর ভরবেগ পরিবর্তনের হার, এর উপর প্রযুক্ত কার্যকর বলের সমানুপাতিক)। এই সূত্রটি ৩ টি দিকের জন্য ব্যবহার করা হয় (পূর্ব-পশ্চিম দিকের জন্য একটি, উত্তর-দক্ষিণ দিকের জন্য ১টি ও ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকের জন্য ১ টি, বিজ্ঞানের ভাষায় X, Y, ও Z অক্ষের প্রতিটির জন্য একটি)
৪) আদর্শ গ্যাসের সূত্র (যে সমস্ত গ্যাস বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র ও অ্যাভোগাড্রোর সূত্র মেনে চলে তাদের আদর্শ গ্যাস বলে।)
৫) পানির নিত্যতা সূত্র (তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে পানি কঠিন, তরল, ও বায়বীয় অবস্থায় থাকতে পারে। এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয় মাত্র সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না)
উপরোক্ত ৭ টি সূত্রের প্রত্যেকটির জন্য একটি করে গাণিতিক সমীকরণ রয়েছে। এই সূত্রগুলো ব্যবহার করে কোন স্থানের বায়ুমণ্ডলের অবস্থা যেমন বায়ুর তাপমাত্রা কেমন, বায়ুতে জ্বলিয় বাষ্প কি পরিমাণে রয়েছে, বৃষ্টি হব কি না, ইত্যাদি সম্বন্ধে জানা যায়। এই সূত্রগুলো যুগপৎ ভাবে একটি অন্যটির উপর নির্ভরশীল ও অনেক ক্ষেত্রে দ্বিঘাত ও ত্রিঘাত সমীকরণ দিয়ে প্রকাশ করা হয় ফলে মানুষের পক্ষে এই সীকরগুলো কেয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সমাধান করা সম্ভব হয় না।
ফলে এই সমীকরণ গুলো সমাধান করা হয়ে থাকে কম্পিউটার ব্যবহার করে। খুব দ্রুত সমাধান করার জন্য তাই ব্যবহার করা হয় সুপারকম্পিউটার। যেহেতু গাণিতিক সমীকরণ ব্যবহার করে আবহাওয়ার পূর্বাভাষ করা হয় তাই এই মডেলগুলোকে বলা হয়ে থাকে Numerical Weather Prediction Model বা সংক্ষেপে NWP Model।
বিশ্বের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ও সবচেয়ে সঠিক ভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাষ দিতে পারে এমন একটি মডেল হলও আমেরিকার Weather Research and Forecast Model বা সংক্ষেপে WRF Model। আমি WRF Model ব্যবহার করেই বর্তমানে আমার পিএইচডি গবেষণার সকল কাজ করি ও পূর্বে মাস্টার্স থিসিস এর সকল কাজ করেছি।
Writer: Mostofa Kamal Palash
Teaching Assistant (TA) at University of Saskatchewan
Former Sustainability Advisory Committee Member and Vice-Chair Green Building Committee at City of Waterloo
Studied BSc at Shahjalal University of Science and Technology, Sylhet, Bangladesh
Studied Earth & Environmental Sciences at University of Waterloo
Studied Environment and Sustainability at University of Saskatchewan
Studied Atmospheric Physics at ICTP: International Centre for Theoretical Physics