মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা: পর্ব ৮। ঢাকা কিংবা বড়-বড় শহরগুলোতে অল্প কিছুক্ষন বৃষ্টি হওয়ার পরে মানুষ ভ্যাপসা গরম অনুভব করে কেন? কিংবা শরীরের অশস্তি ভাব যায় না কেন?
উপরোক্ত প্রশ্নের ব্যাখ্যাটি নিম্নরূপ: প্রথমত, জ্বলিয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘের কণা সৃষ্টির সময় একপ্রকার তাপ ত্যাগ করে বায়ুমণ্ডলে যাকে পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় বলে বাষ্পীভবনের সুপ্ত তাপ বা Latent Heat of Vaporization of Water। ফলে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পূর্বে কোন স্থানের বায়ুমণ্ডলের বাতাসের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
দ্বিতীয়ত, ঢাকা শহর কিংবা বড়-বড় শহরের বহু-পৃষ্ঠ বা মাটি প্রায় পুরোটাই কংক্রিট (দালান-কোঠা) ও পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে ঢাকা। এই কংক্রিটের তাপ ধারণ ক্ষমতা খুবই বেশি সাধারণ মাটি অপেক্ষা। ফলে দিনের বেলা সূর্যের আলো থেকে আগত তাপের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ শোষণ করে প্রচণ্ড গরম থাকে।
১ বা ২ ঘণ্টার বৃষ্টি হওয়ার পরে বহু-পৃষ্ঠে পতিত বৃষ্টির একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বহু-পৃষ্ঠের উচ্চ তাপমাত্রার কারণে বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে বায়ুর আর্দ্রতা (জলীয়বাষ্পের পরিমাণ) বাড়িয়ে দেয়।
সোজা ভাষায় ব্যাখ্যা করি। ডিম মা পরোটার বাজার জন্য ভেজা তাওয়া বা ফ্রাই-প্যান চুলার উপর দিয়ে চুলা চালু করলে কি হয়? পানি দ্রুত উড়ে যায় তাওয়া কিংবা ফ্রাই-প্যান গরম হওয়ার সাথে-সাথে। কিংবা গরম তেলের উপর কিছু পানি পড়লে ছ্যৎ করে সেই পানি দ্রুত উড়ে যায়। ঢাকা শহরের রাস্তা কিংবা বিল্ডিং এর ছাদকে আপনি তুলনা করতে পারেন ঐ ফ্রাই-প্যানের সাথে।
বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা যত কম থাকে মানুষের শরীর থেকে ঘাম তত দ্রুত শুকিয়ে যায়। যেহেতু ১ বা ২ ঘণ্টার বৃষ্টি হওয়ার পরে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে যায় তাই আমাদের শরীর থেকে নিঃসৃত ঘাম খুব দ্রুত শুকায় না। সোজা ভাষায় ব্যাখ্যা করি। মনে করেন স্কুল কিংবা কলেজ থেকে ফেরার পরে আপনার প্রচণ্ড খুধা লেগেছে। কিন্তু বসায় আসার পরে দেখলেন যে আপনার মা খাসির রেজালা রানা করতেছে যা শেষ হতে আরও ১ ঘণ্টা লাগবে।
আপনি আপাত খুধা নিবারণ করার জন্য খাঁটি সরিষার তেল ও পেয়াজ কুচি দিয়ে কিছু মুড়ি মেখে খয়ে ফেলেন। ১ ঘণ্টা পরে আপনার মায়ের রান্না শেষ হওয়ার পরে যদি ভাত খেতে বসেন তবে কি একই দ্রুততায় ভাত খাবেন যেমন দ্রুততায় ভাত খেতেন স্কুল থেকে আসার পরেই যদি খাসির রেজালা রান্না করা থাকত? বৃষ্টি হওয়ার পরে মানুষের শরীর থেকে ঘাম শুকানোর হার ঠিক তেমনি করে কেম যায় যেমন করে মুড়ি খাবার পরে আপনার রুচি কমে যায় ভাত খাওয়ার।
অল্প কিছুক্ষন বৃষ্টি হওয়ার পরে ঢাকা কিংবা বড়-বড় জেলা শহরগুলোর বাতাসের রুচিও কমে যায় মানুষের শরীর থেকে ঘাম শুকানোর (তুলনা করা যেতে পারে বাতাসের খাদ্য হলও জ্বলিয় বাষ্প) বৃষ্টির পরে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে। যেহেূ শরীর থেকে ঘাম শুকায় কম বৃষ্টি হওয়ার পরে, তাই ঢাকা কিংবা বড় জেলা শহরগুলোর মানুষরা ভ্যাপসা গরম অনুভব করে।
মে-জুন মাসের রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা চট্টগ্রাম বিভাগের তাপমাত্রা অপেক্ষা বেশি থাকার পরেও চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষ অপেক্ষা অপেক্ষাকৃত বেশি কমফোর্ট অনুভব করে। মূল কারণ হলও রংপুর বিভাগে বাতাসে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে ফলে সেখানে মানুষের শরীর হতে দ্রুত ঘাম শুকিয়ে যায় চট্টগ্রাম বিভাগ অপেক্ষা।
আশাকরি বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে পেরেছি।