আপনি জানেন কি গাছের গুড়ি থেকে কোন অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন সম্বন্ধে জানা যায়??
আপনি প্রশ্ন করতে পারেন বিশ্বে আবহাওয়া বিষয়ে দৈনন্দিন তথ্য সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে মাত্র ১৫০ বছর পূর্বে তাহলে আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞানীরা কয়েক শত বছর থেকে কয়েক হাজার বছর পূর্বের আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্বন্ধে তথ্য দেয় কিভাবে?
যখন থেকে নিয়মিত ভাবে আবহাওয়া বিষয়ে দৈনন্দিন তথ্য সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে (আমেরিকায় ১৮৯১ সাল থেকে) তার পূর্বের সময়কার আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করে বেশ কয়েকটি পদ্ধতিতে: যেমন শতবর্ষই কিংবা হাজার বছর বয়স্ক গাছের গুড়ি থেকে; বিভিন্ন পর্বত, গ্রিনল্যান্ড, ও এন্টার্কটিকা মহাদেশে স্তরে-স্তরে জমা হওয়া বরফের থেকে; কিংবা সমুদ্রে অবস্থিত কোরাল থেকে, বিভিন্ন লেকের তলদেশে অবস্থিত কাদামাটি বা সেডিমেন্ট কোরে অবস্থিত ফুলের পরাগরেনু বিশ্লেষণ করে, ইত্যাদি । আজকে আলোচনা করতে চাই গাছের গুড়ি দেখে আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞানীরা কোন অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ুর সম্বন্ধে জানতে পারে।
অনেকেই জেনে অবাক হবেন যে গাছের গুড়ি থেকে কোন অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন সম্বন্ধে জানা যায়। শুধু কি তাই? এই গাছে গুড়ির বিভিন্ন রিং দেখে বলা যায় কোন বছরে স্বাভাবিক পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে; কোন বছরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে; কোন বছরে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে (খরা হয়েছে)। কোন গাছ কেটে ফেলা হলে সেই গাছ থেকে যদি একটি গুড়ি বেড় করে নেওয়া হয় নিচের ছবিটির মতো করে তবে সেই গুড়ির বিভিন্ন রিং দেখে কোন নির্দিষ্ট বছরে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত সম্বন্ধে তথ্য পাওয়া যাবে। শুধু কি তাপমাত্রাও বৃষ্টিপাত? গাছের গুড়ি থেকে জানা যাবে কোন বনে কোন বছর দাবানল হয়েছে কি না? কিংবা কোন বনে কত বছর পর-পর দাবানল হয়। কিংবা কোন বছর কোন বনে পোকা-মাকড়ের ব্যাপক আক্রমণ হয়েছিল কি না?
গাছের গুড়ির সবচেয়ে বাহিরের রিংটি হলও যেই বছরে গাছটি কাটা হয়েছে সেই বছরটি ও গুড়ির কেন্দ্রের রিংটি হবে গাছের জন্মের বছর। গাছের গুড়ির সবচেয়ে বাহিরের রিং থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত যদি ১০০ টি রিং থেকে তবে সেই গাছের বয়স ১০০ বছর। এই ১০০ টি রিং ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যাবে কোন কোন রিং একটু মোটা আবার কোন কোন রিং অপেক্ষাকৃত খুবই চিকন। গাছের বৃদ্ধির জন্য তাপমাত্রা ও বৃষ্টির প্রয়োজন। যে বছর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ও তাপমাত্রা অনুকূল ছিলও সেই বছর গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় ফলে সেই বছর গাছের গুড়ির রিং এর প্রস্থ বেশি হয়। পক্ষান্তরে যে বছর অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টিপাত হয় ও তাপমাত্রাও প্রতিকূল থাকে সেই বছর গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়ে ও ঐ বছর গাছের গুড়ির রিং এর প্রস্থ অপেক্ষাকৃত কম হয়।
কোন কোন সময় গুড়ি দেখে চিহ্নিত করা যায় পর-পর কয়েক বছরে রিং এর প্রস্থ অনেক কম ও এর পরে একটানা কয়েক বছর প্রতিটি রিং এর প্রস্থ বেশি। পর-পর কয়েকটি রিং এর প্রস্থ বেশি হওয়া নির্দেশ করে ঐ কয়েক বছর ভালো পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে ও পর-পর কয়েক বছর খুবই চিকন রিং নির্দেশ করে ঐ কয়েক বছরে একটানা খরা অবস্থা বিরাজ করেছে।
প্রথম ছবির গাছের গুড়িটির অপেক্ষাকৃত হালকা রং নির্দেশ করতেছে এই অংশটি বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতিবছর স্প্রিং ( বাংলাদেশের বসন্ত কাল) ও গ্রীষ্মের শুরুতে হালকা রং এর ঠিক পরের গাড় রং নির্দেশ করতেছে এই অংশটি বৃদ্ধি পেয়েছে গ্রীষ্মের শেষের দিকে ও শীতের পূর্ব পর্যন্ত।
সব শেষের ছবির গাছের গুড়ির গাছটির বেঁচেছিল প্রায় ৫০০ বছর। এই গাছটি যে বনে জন্মেছিল সেই বনে গত ৫০০ বছরে মোট ২৫ বার দাবানল হয়েছিল। কোন কোন বছর দাবানল হয়েছিল তা গাছের গুড়িটির মধ্যে নির্দেশ করা হয়েছে।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সিয়েরা-নেভাডা পর্বতের গভীর বনে এমন কিছু কাছ আছে যেগুলোর বয়স ৩০০০ থেকে ৫০০০ বছর। এই গাছগুলোকে বলা হয় আবহাওয়া ও জলবায়ুর জীবন্ত যাদুঘর।