বাংলাদেশের চতুর্থ পদার্থ বিজ্ঞানী হিসাবে The World Academy of Sciences (TWAS) এর Membership অর্জন করার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক Saleh Hasan Naqib স্যারকে অভিনন্দন।
বাংলাদেশ থেকে পূর্বে যে ৩ জন পদার্থবিজ্ঞানী TWAS Membership পেয়েছিলেন তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও পরমাণু বিজ্ঞানী শমসের আলী (১৯৮৯) এবং সদ্য প্রয়াত তত্বীয় পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক হারুন অর রশিদ (১৯৯০) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও বিখ্যাত প্লাজমা পদার্থ বিজ্ঞানী, ড. আব্দুল্লাহ্ আল মামুন (২০২০)।
আশাকরি বুঝতে পেরেছেন কোন মানের গবেষকদের TWAS Membership এর জন্য মনোনীত করা হয়। প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত ৬০০ জন এর কম বৈজ্ঞানিক TWAS Membership এর সম্মান অর্জন করেছেন।
এবারে বলি এই The World Academy of Sciences (TWAS) কি, কোথায় অবস্থিত, ও কোন ধরনের গবেষকদের এই সম্মানে ভূষিত করে?
প্রয়াত নোবেল পুরস্কারজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম ১৯৮৩ সালে ইতালির ত্রিয়েস্তে শহরে এই The World Academy of Sciences (TWAS) প্রতিষ্ঠিত করেন (https://twas.org/)।
TWAS এর প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য ছিলও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো যা উন্নয়নশীল দেশ নামে পরিচিত সেই সকল দেশে মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণায় স হায়তা প্রদান ও সেই সকল দেশের বিজ্ঞানীদের জন্য উন্নত ট্রেনিং এর ব্যবস্হা করা ও সেই সকল দেশের সেরা বিজ্ঞান গবেষকদের চিহ্নিত করে সম্মাননা প্রদান করা।
আমার উচ্চশিক্ষা গবেষণার পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল ইতালির ত্রিয়েস্তে শহরে অবস্থিত The Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics এর মাধ্যমে। সৌভাগ্যক্রমে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিও প্রতিষ্ঠা করেন প্রয়াত নোবেল পুরস্কারজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম ১৯৬৪ সালে।
দুইটি প্রতিষ্ঠানই একই শহরে ও একই ক্যাম্পাসে অবস্থিত। যেহেতু দুইটি প্রতিষ্ঠান একই ক্যাম্পাসে অবস্থিত তাই পুরো ১ বছর The World Academy of Sciences (TWAS) এর কার্যক্রম সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ ভাবে জানতে পেরেছিলাম। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ১৯৮৫ সালে TWAS এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্ভোদন করেন জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব।
নোবেল পুরস্কারজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম The Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics ও The World Academy of Sciences (TWAS) উভয় প্রতিষ্ঠানই প্রতিষ্ঠা করলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২ টি প্রতিষ্ঠানই পরিচালিত হয়ে আসছে জাতিসংঘের The United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization সংক্ষেপে UNESCO এর নেতৃত্বের মাধ্যমে।
ইতালিতে The Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics এর পড়ার সময় The World Academy of Sciences (TWAS) এর ওয়েবসাইটের তথ্য ঘেঁটে জানার চেষ্টা করেছিলাম বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত কতজন পদার্থ বিজ্ঞানী এই TWAS Membership পেয়েছে ও তা’রা কারা?
দুঃখজনক ভাবে ভারত ও পাকিস্তানের ডজন-ডজন পদার্থ বিজ্ঞানী ঐ লিস্টে থাকলেও বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২ জন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও পরমাণু বিজ্ঞানী শমসের আলী (১৯৮৯) এবং সদ্য প্রয়াত তত্বীয় পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক হারুন অর রশিদ (১৯৯০)।
আশার বিষয় হলো যে, ২০২০ সালে ও ২০২১ সালে পর-পর ২ বছর বাংলাদেশের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন পদার্থ বিজ্ঞানী TWAS Membership এর জন্য নির্বাচিত হয়েছেন যারা দুইজনই নিজ-নিজ বিভাগের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সময়ের সেরা গবেষক।
আশাকরি আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে আরও অনেক পদার্থ বিজ্ঞানী এই সম্মানে ভূষিত হবেন।
এবারে সালেহ্ হাসান নকীব স্যার সম্বন্ধে একটু বলি। নকীব স্যার ও স্যারের স্ত্রী অধ্যাপিকা দুইজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করে বিশ্ববিখ্যাত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরি থেকে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে পিএচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন।
এখানে উল্লেখ্য করতে চাই যা ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরি হলও বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম পদার্থ বিজ্ঞান গবেষণাগার। এই গবেষণাগারটি হলও নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত পদার্থ বিজ্ঞানীদের আঁতুড়ঘর কিংবা ভবিষ্যতে নোবেল পুরষ্কার পাবে এই রকম গবেষক তৈরির কারখানা হিসাবে পরিচিত।
নকীব স্যার আমার সরাসরি শিক্ষক নন যেহেতু তিনি অধ্যাপনা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ও আমি অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
শ নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী Albert Einstein এর একটি উক্তি আছে ‘If you can’t explain it to a six year old, you don’t understand it yourself.’ ২০২০ সালে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়েছিল ব্ল্যাক হোল আবিষ্কারের জন্য।
নোবেল পুরষ্কার ঘোষণার পরে ব্ল্যাক হোল নিয়ে অন্যান্য মানুষের মতো আমার আগ্রহও বেড়ে গিয়েছিল। ঐ সময় ব্লকহোল নিয়ে একটি অনলাইন লেকচারের আয়োজন করেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক Pretam Kumar Das।
আমি নিজে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করলেও হলফ করে বলতে পারি ব্ল্যাক হোল হলও পদার্থ বিজানের সবচেয়ে দুর্বোধ্য বিষয়গুলো একটি। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে যত শিক্ষক আছেন তারদের মাধ্বে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ জন শিক্ষকও পাওয়া যাবে না যারা বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী সাধারণ মানুষদের ব্লক হোল বিষয়টি বুঝাতে বা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম।
সৌভাগ্যক্রমে এই ৫ থেকে ১০ জনের মধ্যে একজন নকীব স্যার। ঐ অনলাইন লেকচারটি ছিলও প্রায় ৯০ মিনিটের। নিশ্চিত করেই বলতে পারি ঐ ৯০ মিনিটে কোন সময়ের জন্য মনোযোগ হারাইনি লেকচারটি শুনতে। আমি নিজেও একটি প্রশ্ন করেছিলাম প্রশ্নোত্তর পর্বে; কি অসাধারণ সহজ ভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছিল তা আমার আজও মনে আছে।
বিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা ক্যারিয়ার অনেকেই শুরু করে; তবে খুব কম সংখ্যক মানুষই একই সাথে বিজ্ঞান গবেষণা ও বিজ্ঞান শিক্ষাদান ও জনপ্রিয়করণে উৎকর্ষতা অর্জন করে। সৌভাগ্যক্রমে সালেহ্ হাসান নকীব স্যারের মধ্যে এই ৩ টি গুনই রয়েছে।
আমার সীমিত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি বিজ্ঞান বিষয়ে চরম উৎকর্ষতা অর্জন প্রায় অসম্ভব যদিনা পরিবারের পূর্ণ সহযোগীটা থাকে। তাই TWAS Membership এর জন্য নির্বাচিত হওয়ার নকীব সারের সাথে Raihana Shams Islam ম্যাডামকেও ধন্যবাদ স্যারকে বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণায় পাশে থেকে সহযোগিতা করার জন্য।
সালেহ্ হাসান নকীব স্যার এর মূল গবেষনা বিষয় সুপারকন্ডাকটিভিটি। নাকীব স্যার এর গুগল স্কলার প্রফাইল থেকে তার গবেষনা কাজ ও প্রকাশিত প্রবন্ধ সম্বন্ধে জানা যাবে। https://scholar.google.com/citations?user=r10IiGoAAAAJ&hl=en
বাংলাদেশি অন্য তরুণ বিজ্ঞান গবেষকদের কথা জানিনা তবে নকীব স্যারের বিজ্ঞান গবেষণা দেখে আমি সবসময়ই অনুপ্রাণিত হই। স্যার দীর্ঘজীবী হউন এই প্রার্থনা করি।
সালেহ হাসান নাকীবের লেখা পড়তে ক্লিক করুন এখানে।