পর্ব-২৬:কুদ্দুস Returns
আমরা ক্লিনিং সিম্বায়োসিস নিয়ে পড়ছিলাম, কিন্তু সামনে আগানোর আগে বিবর্তন নিয়ে আরো কিছু কথা জেনে নিতে হবে।
বিবর্তন তত্বঃ সিম্বায়োসিস/পর্ব ২১-২৫
আজ থেকে সেগুলোই জানবো, তারপর উপযুক্ত সময়ে আবার ক্লিনিং সিম্বায়োসিসে ঢুকবো।
আজকে আমরা আবার আমাদের কুদ্দুসকে ডেকে এনেছি! ইয়েএএএ!
শুরু করা যাক!
কুদ্দুস আর হোসুইনের মাঝে তখনো গফ নিয়ে মারামারি হয়নি, ওরা অনেক ভালো বন্ধু, একদমগলায় গলায় খাতির।
একদিন কুদ্দুস জানতে পারলো যে হোসুইনের টাকার দরকার, কী করবে কে জানে! কিন্তু দরকার।
কুদ্দুস আমাদের বড় দিল-দরিয়ার মানুষ। ওর কাছে মাসের হাত-খরচের টাকা ছিলো, সেই টাকা ও হোসুইনকে দিয়ে দিলো।
এই আশায় যে “হোসুইন ও ওকে ভবিষ্যতে একইভাবে বিপদে সাহায্য করবে।”
আগের লাইনটা আবার পড়েন।
তো, কুদ্দুস দিয়ে দিলো টাকা। পরে দেখলো যে হোসুইন ওই টাকা দিয়ে গফকে নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে গেছে।বেচারা! কুদ্দুস নিজে সারা মাস টেনে-হিঁচড়ে পাড় করলো! কিন্তু ও আশা ছাড়লো না, ওর অগাধ বিশ্বাস যে হোসুইনও ওকে ভবিষ্যতে সাহায্য করবে।
ও কী আর জানতো, এই হোসুইনই একদিন ওর গফকে বিয়ে করে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করবে!
যাই হোক, মূল ঘটনা ঘটে গেছে। যাকে ইভোলুশনারী বায়োলজিতে বলে “Reciprocal Altruism”. বাংলায় “পারস্পরিক পরার্থপরতা”।
দেখা যায় যে একটা প্রজাতির জীব অনেক সময় আরেক প্রজাতির জীবের বা নিজের প্রজাতির আরেক জীবেরই ফিটনেস বাড়ানোর জন্য, বা উপকারের জন্য কিছু কাজ করে, যদিও সেই কাজে তার নিজের কিছুটা ক্ষতি হয়! তাহলে সে এই ক্ষতি সহ্য করে অন্যের উপকার কেন করে?
খালি খালি? না।
সে করে, কারণ, সে আশা করে যে, সেই জীবটাও ভবিষ্যতে তার প্রতি একই আচরণ করবে, মানে সে ও তার উপকার করবে।
মানে, উপকারের আশায় উপকার, একেই বলে রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজম।এর অনেক উদাহরণ দেয়া যায়, তবে প্রায় সবগুলোই একটু অনিশ্চিত। কোনটা যে আসলে রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজম, তা জানা আসলে একটু কঠিন।
Vampire Bat নামে একধরনের বাদুড় আছে, এদের নাক অনেকটা ছোট ছোট পাতার মতো দেখতে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এরা শুধুমাত্র রক্ত খেয়ে বাঁচে, শুধু রক্ত, অন্য কিছুই না! আর যদি টানা ৭০ ঘণ্টা এরা রক্ত খেতে না পায়, মারা যাবে!
কিন্তু, দেখা যায় যে এরা একে অন্যকে খাওয়ার জন্য রক্ত দিয়ে সাহায্য করে! এক্ষেত্রে গ্রহীতার অনেক বড় উপকার হয়, কিন্তু দাতা জেনে-শুনে খুব বড় একটা রিস্ক নেয়,কারণ যদি আগামী ৭০ ঘণ্টার মধ্যে সে রক্ত না পায়, নিশ্চিত মৃত্যু! তাও সে রক্ত দেয়, কেন? কারণ সে আশা করে যে এই দাতাও একদিন তাকে রক্ত দিয়ে সাহায্য করবে। হ্যা, এইটা গবেষণা করে জানা গেছে যে যেই বাদুড়রা সাহায্য করে, তারাই ভবিষ্যতে সাহায্য বেশি পায়।
কিন্তু, একটু অনিশ্চয়তা আছে। রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজম হতে হলে আরেকটা শর্ত আছে, সাহায্যকারীরা যেমন সাহায্য পাবে, একইভাবে, যারা উপকার করে না, তারা উপকার পাবেও না। এইযে যারা সাহায্য গ্রহণ করে ঠিকই, কিন্তু পরে আর সাহায্য করেনা, তাদেরকে বলে Cheater। রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজমের মাধ্যমে এই চিটার বা বিশ্বাসঘাতককে শনাক্ত করা যায়।
কিন্তু গবেষণায় এই বাদুড়দের মধ্যে এইটা দেখা যায়নি, মানে তারা বিশ্বাসঘাতকদের শনাক্ত করতে পারেনি ঠিক মতো। তাই গবেষকরা এখনো নিশ্চিত নন যে এইটা আসলেই রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজম কিনা, কিন্তু অধিকাংশের মত এর পক্ষে।
সে যাই হোক, আমরা মূল জিনিসটা বুঝলেই হলো।
প্রাইমেটদের মধ্যে Grooming Behaviour রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজমের শর্তগুলো পূরণ করে বলে ধরা হয়।
Grooming মানে তো সবাই জানেন, সাজ-সজ্জা করা,দেহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা ইত্যাদি।
আচ্ছা, বানররা একে অন্যের মাথা থেকে উঁকুন মারে, দেখছেন নিশ্চই ডিস্কভারি চ্যানেলে? এই একে অন্যের উঁকুন মারার মতো কাজগুলোই গ্রুমিং বিহেভিয়ার, একে অন্যকে পরিষ্কার করা।
তো দেখা গেছে যে, যেসব প্রাইমেটদের মধ্যে এই গ্রুমিং বিহেভিয়ার আছে, তারা যখন ভবিষ্যতে বিপদে পড়ে, সাহায্য পায় বেশি। আবার এইখানে সূক্ষ্মভাবে সিলেকশনও কাজ করে, কারণ দেখা যায় যে এই গ্রুমিং বেশিরভাগ সম্পন্ন হয় নিজের আত্মীয় বা দলের প্রাণিদের মধ্যে।
কিন্তু, এখানেও ওই চিটার শনাক্ত হয় কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আজ এই পর্যন্তই, আগামী পর্বে রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজম নিয়ে আরো কথা বলবো!
পর্ব-২৭:পরার্থপর জীবেরা
আমরা জানি যে বিবর্তন হল নিজে টিকে যাও্রয়ার খেলা, প্রত্যেক প্রাণী চেষ্টা করবে নিজেকে বাঁচানোর।ডকিন্সের ভাষায়, আমাদের সবার ভেতরে সেই “”সেলফিস জিন” রয়েছে যা সর্বদা চেষ্টা করছে নিজেকে টিকিয়ে দিয়ে রেপ্লিকেট হওয়ার।তাহলে, কেন একটা প্রাণী অন্যের প্রতি দরদ দেখাবে? কেন সে নিজের ক্ষতি সহ্য করে অন্যের উপকার করতে যাবে? বিবর্তনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সাথে ব্যাপারটা কেমন সাংঘর্ষিক না?
এর সমাধানে উঠে আসে কয়েকটা বিষয়।
রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজম যদি বিবর্তনের স্বাভাবিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে চায়, তাহলে এর মধ্যেও সেলফিসনেস ঢূকাতে হবে, মানে প্রাণীর সাহায্য করার মধ্যেও তার নিজের স্বার্থ থাকতে হবে। জানা গেল যে ,হ্যাঁ, ঠিকই তার নিজের স্বার্থ আছে! সেটা কী? সেটা হলো ভবিষ্যতে ফেরত সাহায্য পাবার আশা।
এখন, ভবিষ্যতে ফেরত সাহায্য পেতে হলে প্রাণীটা যাকে সাহয্য করেছে, সেই প্রাণীর কিছু ক্ষমতা থাকতে হবে।সেটা হলো সাহায্য পেয়ে কৃতজ্ঞ হবার ক্ষমতা আর কে তাকে সাহায্য করেছিলো, তাকে চেনার ক্ষমতা। এক কথায় তাদের ব্রেইন এতটূকু উন্নত হতে হবে যাতে তারা চেহারা মনে রাখতে পারে বা মেমোরি উন্নত হতে হবে আর অন্যের আচরণ উপলব্ধি করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
আমরা সাধারণত মনে করতে পারি যে মানুষ আর তার কয়েকজন প্রাইমেট নিকটাত্মীয় ছাড়া মনে হয় কারো এই ক্ষমতা নেই।কিন্তু আসলে না, বিভিন্ন গবেষণায় বিভিন্ন প্রাণীদের মধ্যে এই দুটো ক্ষমতাই দেখা গেছে, ইদুঁরের মধ্যেও!
তাহলে প্রথম সমস্যার সমাধান হলো।
এবার, দেখা গেলো, আমি একজনকে সাহায্য করলাম, কিন্তু সে ভবিষ্যতে আমাকে সাহায্য করলো না, তখন কী হবে? তখন সে নিশ্চই নিজের ফিটনেস বাড়িয়ে নিয়ে আমার চেয়ে বেশি টিকে যাবে, য়ার এদিকে আমার ফিটনেস কমে যাবে। এমন হলেতো বিবর্তনের ছাকনির মাধ্যমে এই চিটারদের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজম বিলুপ্ত হওয়ার কথা। কিন্তু তা তো হয়নি, কীভাবে?
এইখানে আসে চিটার শনাক্ত করার ক্ষমতা, যা পরোক্ষভাবে ওই চেহারা মনে রাখা বা উন্নত মেমোরিরই খেলা।চিটার শনাক্ত করে তাকে ভবিষ্যতে আর সাহায্য না করলে তার ফিটনেস কমে যাবে, তখনই আমার লাভ হবে।এভাবে বিবর্তনের মূলনীতি এখানেও রক্ষা হবে,”চাচা ,আপন প্রাণ বাঁচা”
এখন আরেকটা প্রশ্ন ওঠে, প্রথমবার একটা প্রাণী কেন আরেকজনকে সাহায্য করে, সে কি তার মস্তিষ্কে এই নীল-নকশা অঙ্কন করে রাখে যে আমি সাহায্য করবো, ও সাহায্য করবে ? না, প্রাণির মস্তিষ্কে এমন কিছু হয়না।তাহলে কী হয়?
এই সমস্যার সমাধান করে Game Theory’র Prisoner’s Dilemma. [এইটা কী জিনিস তা না জানলে একটু অনুগ্রহ করে এই লিংকটা দেখে নিন, ব্যাখ্যা করতে গেলে আরো কয়েক পর্ব লেগে যাবে- https://en.m.wikipedia.org/wiki/Prisoner%27s_dilemma ]
তো, প্রিজনার্স ডিলেমার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, একটা প্রাণী অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই, সহজাতভাবেই অপরকে সাহায্য করতে চাইবে বা করবে। আর সেই প্রাণীর মধ্যেও তখন ফেরত সাহায্য করার প্রবণতা বেড়ে যাবে।এভাবে পরপর কয়েকবার সাহায্য-সাহায্য খেলা হলে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায়, Tit for tat এর মতো।
কিন্তু টিট ফর ট্যাট এর সাথে এর একটা পার্থক্য আছে, টিট ফর ট্যাট এ আমি তার সাথে যা করবো, সেও আমার সাথে তাই করবে, মানে ভালোর বদলে ভালো, খারাপের বদলে খারাপ। কিন্তু রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজম এ যেই মুহূর্তে আমি লক্ষ করবো যে সে আমাকে সাহায্য করছেনা, তখনই আমি তাকেও সাহায্য করা বন্ধ করে দেবো, ক্ষতিত কনসেপ্ট এখানে নেই।
মানে টিট ফর ট্যাটে সম্পর্ক বজায় থাকে, ভালো-খারাপ যেভাবেই হোক, কিন্তু রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজমে খারাপ সম্পর্ক থাকে না, হয় ভালো, নাহলে নেই।
এবার, আমি তাকে সাহায্য করলাম প্রথমে, সেও কৃতজ্ঞ হলো, আমাকে চিনে রাখলো,আমি বিপদে পড়লে আমাকেও সাহায্য করলো,ফলে আমিও তাকে চিনে গেলাম। এভাবে যদি আমাদের উভয়ের প্রজাতিতে বা আমাদের প্রজাতিতে একাধিক এল্ট্রুইস্ট বা সাহায্যকারীর একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়,তাহলে খুব সহজেই রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজমের ইভোলুশনারী ভ্যালু বেড়ে যাবে আর তা একটা বা অংশগ্রহণকারী দুইটা প্রজাতিতে ছড়িয়ে যাবে।
ওকে, আমাদের তত্ত্বালোচনা শেষ, এবার আরো একটা উদাহরণ –
পাখিদের মধ্যে Warning call বা সতর্ককারী ডাক এক প্রকার রেসিপ্রোকাল এলট্রুইজম। একটা পাখি যখন দেখে যে কোনো শিকারি আরেকটা পাখিকে আক্রমণ করতে যাচ্ছে, তখন সে ওয়ার্নিং কল দেয়। এতে তার নিজের অবস্থান প্রকাশ হয়ে যায় আর অনেক বড় একটা আশংকা থাকে যে শিকারি তাকে এসে ধরবে, কিন্তু তাও সে এই ডাক দেয়।
দেখা গেছে যে শিকারিরা নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিকভাবে নির্দিষ্ট প্রজাতির প্রাণিদের শিকার করার বিশেষ বিশেষ কৌশল রপ্ত করে, তাই আমি যদি আমার সমপ্রজাতির কাওকে শিকার হতে দেই, তবে ভবিষ্যতে আমার শিকার হওয়ার আশংকা আরো বেড়ে যাবে। তাই আমার সতর্ক করার জন্য দেয়া ডাক যদিও আমাকে কিছুটা বিপদের সম্ভাবনায় ফেলে, তাও নিজেরই বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষায় আমি ডাক দেই।
দেখা যায় যে যেসব পাখির মধ্যে ওয়ার্নিং কল প্রচলিত, তারা বাকিদের থেকে বেশি টিকে যায়। কিন্তু এখানে একটু সমস্যা আছে, এখানে চিটার শনাক্ত হয় এমন কোনো প্রমাণ নেই। তবে ওয়ার্নিং কল যে রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজম, তার প্রমাণ হিসেবে দুইটা বিষয় আছে
১. এই ওয়ার্নিং কল বা সতর্কমূলক ডাকের কম্পাঙ্ক শিকারির শ্রাব্যতার সীমার মধ্যেই।মানে বলা যায় যে ডাকগুলো এমনভাবেই দেয়া হয় যাতে শিকারি শুনতে পায় ও তার বিপদের আশঙ্কা বাড়ে।
২.কলিং বার্ডরা বা এই আচরণ করে এমন পাখিদের শিকার হওয়ার হার অন্যদের তুলনায় কম, মানে এই ডাক দেয়া তাদের জন্য ইতিবাচক।
পর্ব-২৮:Underwater beauty parlour
Red-winged Black Bird নামে একপ্রকার পাখি আছে, যাদেরকে প্রধানত উত্তর আর মধ্য আমেরিকায় দেখা যায়।এরা নিজের প্রতিবেশিদের অনেক ভালোবাসে, প্রতিবেশির বাসায় কোনো বিপদ হলে, মানে শিকারি আক্রমণ করলে এরা আগায় গিয়ে রক্ষা করে। এরা এমন কেন করে তা নিয়ে কয়েকটি হাইপোথিসিস আছে।
একটা হলো যে পাশের বাসায় তার নিজের “এক্সট্রা পেয়ার অফস্প্রিং” বা নিজেরই আরেক সন্তান থাকতে পারে।
[ সাধারণত অনেক প্রাণীরা একটা সঙ্গীর সাথেই সহবাস করে আর তার সাথেই আজীবন কাটায়, যাতে নির্দিষ্ট সন্তানদের ভালো করে পালন-পোষণ হয়। কিন্তু যখন অন্য কারো সাথে প্রজনন ঘটায় তখন তাকে বলে এক্সট্রা পেয়ার কপুলেশন বা অতিরিক্ত জোড়া সহবাস, আর সেই প্রজননে উৎপন্ন সন্তানদের বলে এক্সট্রা পেয়ার অফস্প্রিং বা অতিরিক্ত জোড়া সন্তান]তাই নিজের ডিএনএ বা নিজের ট্রেইটকে রক্ষা করার জন্যই হয়তো তারা এমন আচরণ করে।
আরেকটা অনুকল্প হলো এটা রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজম, মানে যারা আমার বাসা রক্ষা করবে আমিও ভবিষ্যতে তাদের বাসা রক্ষা করবো, এমন মনোভাব।
আর শেষ অনুকল্প হলো নিজের আত্মীয়দের রক্ষা করা, যেটাকে বলে কিন সিলেকশন, এক প্রকার এল্ট্রুইজম। এই রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজম শেষ হলে একদিন ওটা নিয়ে লিখবো।
তো, গবেষণা করে আসলে রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজমেরই প্রমাণ পাওয়া যায়। আর খুশির খবর হলো, এরা চিটার শনাক্ত করে। মানে যারা সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাদের বাসা আক্রান্ত হলে তারাও সাহায্য কম পায়!
রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজমের উদাহরণ দেয়া শেষ।
এইবার আসি আসল কথায়, যার জন্য এত কথা বলা। মনে আছে ক্লিনিং সিম্বায়োসিসের কথা? যেটা সার্ভিস-রিসোর্স রিলেশনশিপ?যেটা আবার মিউচুয়ালিজম ? যেটা আবার সিম্বায়োসিস?
তো, অনেক বিজ্ঞানী আবার বলেছেন যে ক্লিনিং সিম্বায়োসিস আসলে মিউচুয়ালিজম কম, রেসপ্রোকাল এলট্রুইজম বেশি।এখানে ক্লিনার তার হোস্টকে সাহায্য করে , আর হোস্ট খুব দ্রুত সেই ফেরত সাহায্যটা করে তাকে খাদ্য দেয়ার মাধ্যমে।খুব দ্রুত মানে সাথে সাথেই!
আরেকটা মজার জিনিস আছে, যার নাম “ক্লিনিং স্টেশন”। এই ক্লিনিং স্টেশন হলো নির্দিষ্ট সেইসব জায়গা যেখানে তুলনামূলক বড় প্রাণীরা বা হোস্টরা গিয়ে নিজেদের পরিষ্কার করায়, ক্লিনারদের দ্বারা।এগুলো মিষ্টি পানির তুলনায় সমুদ্রে বেশি দেখা যায়।মাছ, কচ্ছপ,জলহস্তির মতো প্রাণীরা সাধারণত হোস্ট হয়।হোস্টরা নির্দিষ্ট ক্লিনিং স্টেশনে পৌছে এমন কিছু দেহভঙ্গিমা করে যাতে ক্লিনাররা বুঝতে পারে যে সে ক্লিন হতে এসেছে। তারপর ক্লিনাররা হোস্টের দেহের ভেতর-বাইরে থেকে বিভিন্ন ময়লা,অণুজীব ইত্যাদি খেয়ে হোস্টকে একদম চকচকে করে দেয়।
তাই ক্লিনিং স্টেশনকে অনেকটা সমুদ্রতলের বিউটি পার্লার বলতে পারেন!
ক্লিনিং স্টেশন যে ক্লিনিং সিম্বায়োসিস তা আর বলা লাগবে না নিশ্চই।
এইযে ক্লিনিং স্টেশন একটা নির্দিষ্ট স্থানে হয়, তার জন্য নিশ্চই হোস্টকে স্মরণে রাখা লাগে যে কোন জায়গায় কোন প্রাণী তার দেহকে পরিষ্কার করেছিলো, মনে রাখার ফলেই যে পরের বারও একই জায়গায় যেতে পারে। আবার হোস্টরা নির্দিষ্ট অঙ্গভংগি করে, সেটা হোস্টেরও মনে রাখা লাগে, ক্লিনারেরও মনে রাখা লাগে।
মানে মনে না রাখলে বা স্মৃতিতে সংরক্ষণ না করলে এই ক্লিনিং স্টেশন নামের কিছুর অস্তিত্ব থাকতো না। তাই এটাকে রেসিপ্রোকাল এল্ট্রুইজম বলাটা অনেকটাই যুক্তিযুক্ত।কারণ স্মৃতিতে রেখেই এই সাহায্য দেয়া-নেয়া ঘটে।
আচ্ছা, এই বিশেষ অঙ্গভঙ্গির জিনিসটা হলো কীভাবে? ব্যাপারটা এভাভাবে চিন্তা করা যায় –
ক্লিনারা খাবার খুজছিলো, এখন বড় প্রাণীদের দেহে খাবার আছে, মানে এই ময়লা বা অণুজীব টাইপের জিনিস। এখন বড় প্রাণীতো ক্ষতিকরও হতে পারে, মানে কাছে গেলেই খেয়ে ফেলতে পারে।এখন যারা ক্ষতিকর মাছের কাছে গেল, তারা মারা গেল।
বাকি থাকলো তারা যারা শিকারি মাছের কাছে যায়নি।এখন তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে এই সম্পর্কটা গড়ে উঠতে থাকলো, তারা একে অপরকে চিনতে থাকলো। ক্লিনাররা হোস্টদের বিশেষ কিছু অঙ্গভঙ্গি দেখে চিনে রাখলো। এখন যেই মাছরা সেই অঙ্গভঙ্গি করতো, তারা ক্লিন হও্য়ার সুযোগ পেলো বেশি। ফলে তাদের ফিটনেস কিছুটা বাড়লো।
ফলে দীর্ঘদিনের পারস্পরিক সম্পর্ক আর কোইভোলুশনের ফলে মাছেরাও যখন ক্লিন হওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো তখন সেই অঙ্গভঙ্গিগুলোই করলো যেগুলো দেখে ক্লিনাররা তাদের চিনে রেখেছে। তারপর ধীরে ধীরে এটা একপ্রকার নিয়ম হয়ে তাদের আচরণে গেঁথে গেল।
এভাবে, ক্লিনিং স্টেশনের বিবর্তন হলো।
এই গেল।
আরেকদল বিজ্ঞানী বলেছেন যে ক্লিনিং সিম্বায়োসিস আসলে প্যারাসাইটিজম, ক্লিনাররা আসলে প্যারাসাইট।এই প্যারাসাইটদের কাজের ফলে হোস্টরা একটু বাড়তি সুবিধা পায় শুধু, আর কিছু না।যদিও এই মতকে কেউ তেমন দাম দেয়নি।
প্যারাসাইটিজম নিয়ে সামনে আমাদের আলোচনা আছে।
পর্ব-২৯: দেয়া-নেয়ার বিবর্তন
অন্নেএএক আগে আমরা মিউচুয়ালিজম নিয়ে লিখেছিলাম, মনে আছে? তার মধ্যে সার্ভিস-রিসোর্স রিলেশনশিপ নিয়ে লিখতে গিয়ে এতদিন চলে গেল, তাও শেষ হলোনা।
যাই হোক, সার্ভিস-রিসোর্স রিলেশনশিপের আবার প্রকারভেদ আছে, তার মধ্যে পলিনেশন আর ক্লিনিং সিম্বায়োসিস আমাদের পড়া শেষ।আজ থেকে আবার ধারাবাহিকভাবে শুরু করবো।
তো, আরেকপ্রকার সার্ভিস-রিসোর্স রিলেশনশিপ হলো জুকোরি, Zoochory. প্রাণীরা যখন উদ্ভিদের বীজ ছড়িয়ে দিয়ে তার বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করার মাধ্যমে সেবা করে,আর সেই বীজ বা উদ্ভিদের অন্য কিছু নিজে ব্যবহার করে সামগ্রী হিসেবে, তখন তাকে বলে Zoochory.আমাদের আজকের আলোচনা এই নিয়েই।
এই বীজ বিভিন্ন প্রাণীর মাধ্যমে, বিভিন্নভাবে ছড়াতে পারে। তাই এই জুকোরির নানান রকম প্রকারভেদ আছে। যখন উদ্ভিদের বীজ কোনো প্রাণীর, বিশেষ করে ভার্টিব্রাটদের, আরো বিশেষ করে স্তন্যপায়ীদের, দেহের বাইরে লেগে ছড়িয়ে যায়, তখন তাকে বলে এপিজুকোরি। যেসব উদ্ভিদ এই এপিজুকোরির সাহায্যে বংশবিস্তার করে, তাদের বীজে কিছু বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা দেখা যায়, যার সাহায্যে বীজগুলো প্রাণীদের দেহে লাগতে পারে। যেমন- আঠালো মিউকাস, আংটা, কাঁটা ইত্যাদি।
এখানে বিবর্তন কীভাবে ঘটেছে?
Simple!
মিউটেশন হয়ে যেই বীজের ওপরে একটুখানি আঠালো তরল জমেছে, সেই বীজই কোনো প্রাণীর দেহে লেগে থাকার সুযোগ পেয়েছে, ফলে সেই বীজই ছড়িয়ে গিয়ে বংশবিস্তার করেছে আর তার সন্তান উদ্ভিদদের মধ্যেও সেই মিউটেশন রয়ে গিয়েছে। এভাবেই বীজদের মধ্যে এই বিশেষ বিশেষ ব্যবস্থার বিবর্তন ঘটেছে।
এই এপিজুকোরির মাধ্যমে খুবই দ্রুত আর দূর-দূরান্তে উদ্ভিদের বংশবিস্তার ঘটতে পারে, যদিও মাত্র <৫% উদ্ভিদ এই এপিজুকোরির ব্যবহার করে।
আবার, অনেক সময় দেখা যায় কী, অনেক প্রাণী, বিশেষ করে পাখি, এরা উদ্ভিদের ফল খেয়ে বীজটুক আর হজম করতে পারে না, ফলে মলের সাথে বীজ ত্যাগ করে। আর সেখানেই জন্ম হয় আরেক উদ্ভিদের! একে বলে এন্ডোজুকোরি।
আমরা এইযে আম-কাঠালের মতো ফলগুলো খাই, এরাও কিন্তু এই এন্ডোজুকোরিরই ফলাফল। কারণ, যেসব বীজের চারপাশে পুষ্টিকর উপাদানের আবরণ গড়ে উঠেছে, প্রাণীরা সেটাকেই খেতে পছন্দ করেছে, আর এতে সেই বীজেরই বংশবৃদ্ধি হয়েছে।
ফলে সেই উদ্ভিদগুলোই টিকে গিয়েছে যাদের বীজের চারপাশে সুস্বাদু আর পুষ্টিকর উপাদানের আবরণ গড়ে উঠেছে, যাকে আমরা “ফল” বলি।এই পদ্ধতিতে বংশবিস্তার উদ্ভিদদের মাঝে খুবই কমন।
আবার বিভিন্ন পাখি আর কাঠবিড়ালির মতো Seed predator বা “বীজ শিকারি” প্রাণীরা বিভিন্ন বীজ সংগ্রহ করে তাদের বাসায় বা বিভিন্ন গোপন গর্তে লুকিয়ে রাখে তাদের একান্ত সম্পদ হিসেবে।
কিন্তু দেখা যায় কী, এরা অনেকসময় কিছুদিন পর ভুলে যায় যে কোন জায়গায় বীজগুলো লুকিয়েছে। ফলে বীজ থেকে গাছের জন্ম হয়। এই পদ্ধতিটা জুকোরি হলেও মিউচুয়ালিজম কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ কিছু কিছু সময় সিড প্রিডেটররা বীজ কাজে লাগালেও অধিকাংশ সময়ই ভুলে যায়, এতে বীজ তাদের কাজে আসেনা।
এছাড়া পিপড়া, পাখি, বাদূর, শামুক সহ একেক প্রাণীর জুকোরি কে একেক নামে ডাকা হয়, অত আমাদের না জানলেও চলবে।
আমাদের জুকোরি নিয়ে পড়াশোনা এখানেই শেষ।
সার্ভিস-রিসোর্সের আরেকটা চমৎকার উদাহরণ হলো Ant-Aphid relationship. Ant তো চেনেন, এই Aphid এর বাংলা জানিনা।ছবি দিচ্ছি, দেখে নিয়েন।
তো এই পিঁপড়া আর এফিড নামের পোকাদের একটা অদ্ভুত রিলেশন আছে।
এফিডরা গাছের রস শুষে খায়, আর খাওয়ার পর যে মল ত্যাগ করে,সেটা খুবই উৎকৃষ্টমানের শর্করা সমৃদ্ধ জিনিস, তাকে বলে Honeydew.
এই জিনিসটা আবার পিপড়ারা খুব আয়েশ করে খায়। বিনিময়ে কী হয়? এফিডরা যখন ওই গাছের রস খায়, তখন দল বেধে একসাথে খায়। এতে যদি শিকারি( বিশেষত Ladybug) আক্রমণ করে, তখন দল শুদ্দ মরা ছাড়া কিছু করার থাকেনা।এখানে এগিয়ে আসে পিঁপড়া। এফিডরা যখন এই রস খায়, তখন পিঁপড়ারা এদের পাহাড়া দেয়। এভাবে পিঁপড়ারা এফিডদের থেকে রিসোর্স নিয়ে আর এফিডদের সার্ভিস দিয়ে এই মিউচুয়ালিস্টিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
পিঁপড়া আর এফিডদের মধ্যে এই সম্পর্কের বিবর্তন ঘটলো কীভাবে? এ নিয়ে এখনো ধোয়াশা আছে। এরকম কিছু একটা হতে পারে, পিঁপড়ারা দেখেছে যে এফিডরা শিকারির হাতে মারা গেলে তাদেরই খাদ্যের অভাব দেখা দেবে, তাই তারা এফিডদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে, আর এর বদলে এফিডরা পিঁপড়াদের honeydew দেয়।
আমাদের সার্ভিস-রিসোর্স রিলেশনশিপ নিয়ে পড়াশোনা এখানেই শেষ।
পর্ব-৩০:শিম-কথন
আজকে আমাদের আলোচনা রিসোর্স-রিসোর্স রিলেশনশিপ নিয়ে। মানে এখানে উভয় সিম্বায়োন্টই একে অন্যকে কিছু সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো মাইকোরাইযা। আগে একদিন এই নিয়ে অল্পকিছু লিখেছিলাম ,আজকে আরেকটু বিস্তারিত লিখবো।
মাইকোরাইযার বিবর্তন কীভাবে হলো? এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত না, তবে বেশ কিছু যৌক্তিক হাইপোথিসিস আছে।
স্থলজ উদ্ভিদের বিবর্তন ঘটে জলজ শ্যাওলা জাতীয় জীব থেকে। এই স্থলজ উদ্ভিদের বিবর্তন পৃথিবীর ইতিহাসে একটা বিশাল বড় প্রভাব বিস্তার করে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমান বৃদ্ধি আর কার্বন ফিক্সেশন [ যে প্রক্রিয়ায় অজৈব কার্বন, বিশেষ করে কার্বন ডাই অক্সাইড, জৈব কার্বনে রূপান্তরিত হয় ]।
এই স্থলজ উদ্ভিদের দরকার ছিলো আর্দ্রতা আর পুষ্টি উপাদান, যা পানির মধ্যে থেকে সহজেই শোষণ করা যায়। কিন্তু মাটির ওপর থেকে তা শোষণ করতে গেলে মাটির ভিতরে দেহের কোনো একটা অঙ্গ ঢোকানো লাগবে, যা একেবারে প্রথম দিকের সেই শ্যাওলা জাতীয় জীবদের ছিলোনা। মূলের বিবর্তন আরো পরে হয়েছে। তাই এই প্রথম দিকের উদ্ভিদরা ছত্রাক জাতীয় জীবদের সাথে সিম্বায়োসিসে লিপ্ত হলো।
মাটিতে উঠে যাওয়া যেসব শ্যাওলা জাতীয় সেই জীবরা বা উদ্ভিদরা ছত্রাকের সংস্পর্শে আসলো, সেসব উদ্ভিদরা ছত্রাক হতে পুষ্টি উপাদান আর আর্দ্রতা শোষণ করতে পারলো। আর ছত্রাক সেই উদ্ভিদের দেহ থেকে শর্করা সংগ্রহ করতে পারলো নিজের খাদ্য হিসেবে। এভাবে উভয়েরই একত্রে কোইভোলুশন ঘটতে থাকলো।
পরবর্তীতে বিভিন্ন উদ্ভিদের মধ্যে স্বতন্ত্র ভাবেও মাইকোরাইযার বিবর্তন ঘটেছে। যেসব স্থানে পুষ্টি উপাদান আর খাদ্যের অভাব ছিলো, সেখানে উদ্ভিদ আর ছত্রাক একে অপরকে সামগ্রী দিয়ে মিউচুয়াল বেনিফিট পেলো। এভাবেই মাইকোরাইযার বিবর্তন ঘটোলো।
মাইকোরাইযাল ছত্রাকের আকার উদ্ভিদের মূলের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মূলরোম থেকেও ছোট, ফলে উদ্ভিদ যেসব জায়গায় পৌছাতে পারেনা , এই ছত্রাকরা অনায়াসে সেসব জায়গায় যেতে পারে।ফলে উদ্ভিদের শোষণক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়।এই ছত্রাকদের কোষঝিল্লী মাটি থেকে আয়ন এক্সচেঞ্জ করে উদ্ভিদকে সরাসরি আয়ন সরবরাহ করে।এছাড়াও মাইকোরাইযার ফলে উদ্ভিদ বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের আক্রমণ, রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পায়।
এই গেল মাইকোরাইযা। আরেকটা বিখ্যাত উদাহরণ হলো রাইযোবিয়া। এই রাইযোবিয়ার নাম একদিন উল্লেখ করেছিলাম, কিন্তু একটুও ব্যাখ্যা করিনি, তাই আজকেই বিস্তারিত লিখবো।
রাইযোবিয়া হলো ডায়াযোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া, মানে যারা পরিবেশ থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে সেটাকে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন রূপে রূপান্তর করতে পারে, যেমন- এমোনিয়া, এই ঘটনাকে বল নাট্রোজেন ফিক্সেশন । এই রাইযোবিয়া শিম গাছের মূলে আক্রমণ করে মূলজ অর্বুদ [ Root nodule ] গঠন করে আর সেখানে বাসা বাঁধে।
কারণ, নাইট্রোজেন ফিক্সেশনের জিন এক্সপ্রেশনের জন্য রাইযোবিয়ার কোনো উদ্ভিদ হোস্ট দরকার। মানে, উদ্ভিদের সাহায্য ছাড়া এরা নাইট্রোজেন ফিক্স করতে পারেনা।বাসা বাধার পর এরা নাইট্রোজেন ফিক্স করে ত্যাগ করে, আর সেই নতুন নাইট্রোজেন গ্রহণ করে শিমগাছ, নিজের বৃদ্ধিতে কাজে লাগানোর জন্য। শিমগাছ মারা গেলে এই অর্বুদ ভেঙে যায় ,আর রাইযোবিয়া মাটিতে ফিরে যায়।
[ উল্লেখ্য যে শিমগাছ বলতে আসলে শিমজাতীয় যত উদ্ভিদ আছে সবার কথা বুঝিয়েছি ]রাইযোবিয়া ও শিম গাছ থেকে জৈব এসিড টেনে নেয় যা তার দরকার। কিন্তু, অনেক সময় দেখা যায় কী, চিটার রাইযোবিয়া এসে নিজে পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব এসিড গ্রহণ করলেও বিনিময়ে ফিক্সড নাইট্রোজেন উৎপাদন করে কম। এতে উদ্ভিদের ক্ষতি হয়। অর্বুদ গঠনের ঝামেলা আর এই চিটিং এর পরিমাণ বিবেচনা করে দেখা যায় যে এই রাইযোবিয়া আর শিমের মধ্যে এমন সিম্বায়োসিস টিকে থাকাটাই বড় বিস্ময়!
তাই,এই শিম আর রাইযোবিয়ার মধ্যে কীভাবে সিম্বায়োটিক রিলেশনশিপ কীভাবে টিকে আছে তা নিয়ে দুইটি বিখ্যাত হাইপোথিসিস আছে।
[ এদের মধ্যে সিম্বায়োসিস গড়ে উঠলো কীভাবে তার ব্যাখ্যা ওয়ি মাইকোরাইযার মতোই অনেকটা ]
একটি হলো The sanction hypothesis.
অর্বুদ নিশ্চই একটা থাকেনা, অনেকগুলো থাকে। আর ওইযে চিটার রাইযোবিয়ার কথা বলেছিলাম না? এরা কয়েকটা অর্বুদে বাসা বাঁধে। তো, এই হাইপোথিসিস অনুযায়ী, শিমগাছ কিছু জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে কোন অর্বুদে চিটার আছে তা শনাক্ত করতে পারে। আর তারপর গাছটি সেই নির্দিষ্ট অর্বুদের বিরুদ্ধে একশন নেয়, সেই অর্বুদে অক্সিজেন,কার্বন ইত্যাদির সাপ্লাই কমিয়ে দেয়। ফলে সেই মূলে রাইযোবিয়া বংশবৃদ্ধির হার কমে যায়।
যদি এই হাইপোথিসিস সত্য হয়, তাহলে শিম গাছের পক্ষে চিটিং এর ক্ষতির পরিমাণ কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক সিম্বায়োটিক রিলেশন রক্ষা করা সম্ভব।
আরেকটা হাইপোথিসিস হলো The partner choice hypothesis. এখানে বলা হয় যে অর্বুদে বাসা বাঁধার পূর্বে রাইযোবিয়া উদ্ভিদকে কিছু রাসায়নিক সিগন্যাল পাঠায়। আর এই সিগন্যাল থেকে উদ্ভিদ শনাক্ত করে যে একে নডিউল বানাতে দেয়া উচিত কিনা, এভাবেও চিটার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
তো,এভাবেই জীব জগতে রিসোর্স-রিসোর্স রিলেশনশিপের মাধ্যমে মিউচুয়ালিজম দেখা যায়।
আগের পর্বগুলোঃ
- বিবর্তন তত্বঃ পর্ব ১-৫
- বিবর্তন তত্বঃ সিলেক্টিভ ব্রিডিং /পর্ব ৬-১০
- বিবর্তন তত্বঃ সিলেকশন/ পর্ব ১১-১৫
- বিবর্তন তত্বঃ র্যান্ডমনেস/পর্ব ১৬-২০
- বিবর্তন তত্বঃ সিম্বায়োসিস/পর্ব ২১-২৫