পর্ব-৩৭: অনুকরণের বিবর্তন:
কুদ্দুস অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে গিয়েছে। সমুদ্রের পাড়ে একটা হোটেলের বারান্দায় সুন্দর একটা বিকেলে বসে আছে। হঠাৎ ও দেখলো যে বারান্দায় একটা চিকন গাছের ডাল নিজে নিজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়্গায় হেটে যাচ্ছে। ডালটা মোটামুটি ২০ সেন্টিমিটার বড়।
কুদ্দুসের চক্ষু চড়ক গাছে! এ কেমন আজব গাছের ডাল , যে কিনা হাটতে পারে ? ও কিছুক্ষণ হা করে বসে ডালটা পর্যবেক্ষণ করলো। ততক্ষণে ডালটা অর্ধেক বারান্দা চক্কর দিয়ে ফেলেছে। কুদ্দুস এবার নিচে নেমে ডালটার দিকে ভালো করে খেয়াল করলো।
এবার ও দেখতে পেলো যে ডালের মাথায় দুটো চোখ, গায়ে ছয়টা পায়ের মতো অঙ্গ, আবার পেছন দিকটা লেজের মতো উঁচু। ও মোটামুটি নিশ্চিত হলো যে এটা ডাল না, একটা আস্ত প্রাণী, একটা পোকা। এই দেখতে দেখতে অদ্ভুত দেখতে পোকাটা বারান্দার কিনারা থেকে উড়াল দিলো! কুদ্দুস এইবার আরো বড় একটা হা করে আবার বসে পড়লো।
কুদ্দুস যেই পোকাটা দেখেছে সেটা হলো Margin Winged Stick Insect, অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়।
এদের দূর থেকে দেখতে হুবহু ডালের মতো, কুদ্দুস যেমন দেখেছিলো। তাই এরা সহজে শিকারি পাখির চোখে ধরা পড়ে না। এরা শিকারি থেকে রক্ষা পেতে এই ডালের মতো দেখতে হওয়ার বিবর্তন ঘটিয়েছে। এইযে একটা জিনিসের অনুকরণ করার বিবর্তন, একে বলে “Mimicry”. এটাও এক প্রকারের সিম্বায়োসিস।
মিমিক্রিতে যে শুধু অজীব বা জড় পদার্থের মতো দেখতে হতে হবে এমন না। মিমিক্রিতে যেকোনো জীব বা জড়ের যেকোনো বৈষিষ্ট্যের অনুকরণ হতে পারে। হতে পারে আকার, রঙ, শব্দ, কাজ বা ইত্যাদি যেকোনো কিছু। যে অনুকরণ করে, তাকে বলা হয় “Mimic” আর যার অনুকরণ করা হয় তাকে বলে “Model”. কুদ্দুসের দেখা ওই পোকাটা হলো মিমিক, আর ওই পোকার মডেল হলো গাছের ডাল।
মিমিক্রিতে অনেকসময় মিমিক আর মডেল উভয়ের উপকার হতে পারে, তখন একে মিউচুয়ালিস্টিক সম্পর্কও বলা চলে, এমন হলে মিমিক আর মডেলকে একত্রে “Co-mimic” বলা হয়। আবার অনেক সময় মিমিক্রির ফলে একজনের অপকার হয়, আরেকজনের উপকার হয়, তখন এটা কিছুটা প্যারাসাইটিক সম্পর্কের মতো আচরণ করে।
আবার অনেক সময় শুধু দুইটা না, দুই এর অধিক প্রজাতির প্রানী মিমিক্রিতে অংশ নেয়। মনে হতে পারে যে, মডেল মনে হয় মিমিকের চেয়ে বেশি উন্নত।আসলে সবসময় এমন হয় না, কারণ অনেক উন্নত প্রাণীও অনেকসময় তার চেয়ে নিম্নশ্রেণির প্রাণির বিশেষ কিছু বৈষিষ্ট্যের মিমিক্রি করতে পারে। দেখুন না, কুদ্দুসের দেখা পোকাটা শেষমেষ নির্জীব গাছের ডালকে মডেল বানিয়ে বসে আছে!
মডেল যদি নির্জীব বা জড় হয়, তাহলে একে মিমিক্রি না বলে “Masquerade” বলা হয়, এর অর্থও ছদ্মবেশ। আবার যখন কোনো মিমিক তার আশেপাশের পরিবেশের সাথে মিশে গিয়ে শিকারির চোখকে ফাঁকি দিতে যায়, মানে মিমিকের ব্যাকগ্রাউন্ডই যখন মডেল হয়, তখন একে বলে “Crypsis”. যাই হোক, এগুলো নিয়ে অত মাথা ঘামানোর দরকার নেই।
প্রায় সব মিমিক্রির বিবর্তিত হওয়ার প্রসেস বেসিকালি একই, ন্যাচারাল সিলেকশনের মাধ্যমে বিবর্তন।
প্রথমে মিমিকে এমন একটা মিউটেশন হবে, যাতে সে কিছুটা মডেলের মতো হবে। কিন্তু তার প্রজাতির বাকিরা স্বাভাবিক থাকবে। ফলে সে বাকিদের চেয়ে সামান্য বেশি বেনিফিট পাবে, বাকি দশ জন শিকার হলেও তার শিকার না হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে, সে প্রজনন করবে, তার এই মিউটেশন সন্তানে পাস হবে।
প্রত্যেক সন্তানের সাথে একই ঘটনা ঘটবে। যখন ওই প্রজাতির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জীবের মধ্যে মিউটেশনটা ছড়িয়ে যাবে, তখন দেখা যাবে যে এই মিউটেশনওয়ালা গ্রুপ বাকিদের চেয়ে ভালোই বেশি সুবিধা পাচ্ছে। তখন বাকিরা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকবে। এবার সবার মাঝে ওয়ি মিউটেশনটা আছে, এইবার আরেকটা মিউটেশন হবে যার ফলে মিমিক প্রজাতিকে আরেকটু মডেলের মতো দেখাবে।
আবারও একই ঘটনা ঘটবে, এভাবে চলতে চলতে যখন মিমিক যথেষ্ট পরিমাণে অনুকরণ করে ফেলবে, মানে যখন তার মিমিক্রির উদ্দেশ্য মোটামুটি যথেষ্ট পরিমাণে হাসিল হবে, তখন আর অতিরিক্ত মিমিক্রির মিউটেশন ওই প্রজাতিতে ফিক্স হওয়ার প্রয়োজন নেই।
মিমিক কে যে হুবহু মডেলের মতো হতে হবে তেমন কথা নেই, উদ্দেশ্য হাসিলের মতো মোটামুটি হলেই হচ্ছে।
এখানে প্রক্রিয়াটাকে মারাত্মক ওভার-সিমপ্লিফাই করছি। এখানে কোন ধরনের জিনে মিউটেশন হবে, কীভাবে হবে, মিমিক্রি কত ধাপে হবে, ইত্যাদি নিয়ে অনেক ঝামেলাপূর্ণ আলোচনা আছে। তাই সেগুলো এভয়েড করলাম আপাতত।
মিমিক্রিকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মিমিকের উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে, মডেলের ধরনের ওপর ভিত্তি করে, মিমিক আর মডেলের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে, ইত্যাদি ইত্যাদি। সেসব ভাগ-বিভাগ নিয়ে আলোচনা করবো পরের পর্বে। আপাতত এইটুকুই।
পর্ব-৩৮: অনুকরণের বিবর্তন(২)
মিমিক্রি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যদি তা আত্মরক্ষার জন্য হয়, তাহলে তাকে বলবো ডিফেন্সিভ মিমিক্রি।
এখন, একটা ক্ষতিকর শিকারির থেকে আত্মরক্ষার জন্য মিমিকের মডেল কে হতে পারে? নিশ্চই কোনো “আতেল” প্রাণি হবে না, যাকে দেখে শিকারি আরো তেড়ে আসবে! মডেল হবে আরো ক্ষতিকর কোনো প্রাণি, যাকে দেখে শিকারির “চাচা আপন প্রাণ বাঁচা” স্মরণে আসবে।
তো, এই ডিফেন্সিভ মিমিক্রির কতগুলো প্রকারভেদ আছে, সেগুলো আলোচনা করবো।
প্রথমেই আসে Batesian mimicry. এখানে মিমিক তার মডেলের মতো দেখায় বা আচরণ করে,আর মডেল হলো এমন কোনো প্রাণি, যাকে শিকারি খেতে চায়না, কারণ খেলে তার ক্ষতি হবে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মিমিক শুধু মডেলের মতো দেখায়, কিন্তু মডেলের মতো সে শিকারির ক্ষতি করতে পারেনা।মানে “A sheep in wolf’s clothing” এর মতো ব্যাপার আরকি।
আসলে ঘটে কি,প্রথমে শিকারি মডেলকে খায় । ফলে কোনো না কোনো ক্ষতি হয়, খাবার পর বুঝতে পারে যে একে খাওয়া উচিত হয়নি, ফলে সে পরবর্তীবার শিকার করার সময় ওই মডেলকে এড়িয়ে চলে। এবার এই সুবিধা নেয় মিমিক।সেও মডেলের মতো সাজে, ফলে শিকারি দূর থেকে দেখলে তাকেও মডেল মনে করে এড়িয়ে চলে।
কিন্তু সমস্যা আছে, এই পদ্ধতি তখনই কাজে দেয়, যখন মডেলের সংখ্যা মিমিকের চেয়ে বেশি হয়। কারণ ভাবুন, যদি মিমিকের সংখ্যা বেশি হয়ে যায়, তাহলে এই সম্ভাবনা বেড়ে যাবে যে শিকারি কোনো একদিন মিমিককে মডেল ভেবে খেয়ে ফেলবে। তখন কী হবে ? শিকারিতো মনে করবে যে সে মডেল প্রজাতিকে খেয়েছে, কিন্তু আসলেতো খেয়েছে মিমিককে।
আর মিমিকতো শিকারির কোনো ক্ষতি করতে পারেনা, ওপরেই বলেছি। ফলে সেই শিকারি মনে করবে যে এই মডেল প্রজাতিতো ক্ষতিকর না! এতে মডেল আর মিমিক, উভয়েরই ক্ষতি হবে।মিমিকের ক্ষতি হবে বেশি।
তাই, প্রকৃতিতে যতক্ষণ মডেল বেশি আর মিমিক কম থাকে, ততক্ষণ এই মিমিক্রি ভালো কাজে দেয়।
এবার, Mullerian mimicry. এখানে, উভয় মিমিক আর মডেলের কমন একটা শিকারি থাকে, ব্যাটেশিয়ানের মতোই, কিন্তু উভয়েরই এমন কিছু ট্রেইট থাকে যা শিকারির জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু ব্যাটেশিয়ানে মিমিকের কোনো ক্ষতিকর ট্রেইট ছিলোনা।
এবার, দেখা যায় কী মডেল আর মিমিক একে অন্যের সেইসব ট্রেইটের মিমিক্রি করে! তাই এখানে এদেরকে আর মডেল-মিমিক বলা হয়না, এদের বলে কো-মিমিক।
প্রথমে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছিলেন না যে কেন এরা একে অন্যের মিমিক্রি করবে? উভয়েইতো ক্ষতিকর। তাহলে এই অতিরিক্ত মিমিক্রি হয়ে লাভ কী?
তারপর তাদের মাথায় এলো, যদি শিকারি ওই দুই কো-মিমিক প্রজাতির মধ্যে কনফিউজ হয়ে যায়, তাহলে এক প্রজাতির প্রাণিকে খাবার পরে সে ওই দুই প্রজাতির কাওকেই পরেরবার খেতে চাইবেনা।কারণ দুইজনই একই রকম দেখতে। এতে উভয় প্রজাতির সার্ভাইভাল রেট বেড়ে যায়। আর এজন্যই এর বিবর্তন হয়েছে। অনেক সুন্দর একটা ম্যাথমেটিকাল মডেলও আছে এর, যেটা সবারই বোধগম্য হওয়ার মতো সহজ, কিন্তু আপাতত ওটায় গেলাম না আর।
মুলেরিয়ান মিমিক্রিতে কিন্তু শিকারিরও উপকার হয়, কারণ এক প্রজাতিকে টেস্ট করেই সে দুইটা প্রজাতিকে এভয়েড করে চলবে। ফলে অপর প্রজাতিকে চিনতে এর আলাদা করে আরেকবার টেস্ট করা লাগেনা।ফলে ক্ষতিও একবারই হয়, দুইবারই হয়না। এতে সে ও বেনিফিট পায়।
শিকারি দুইটা প্রজাতির কথা আর আলাদা করে স্মরণে রাখেনা, যেহেতু উভয়ে একই রকম দেখতে। তাই মানসিক শ্রমও কম হয়। এজন্য মুলেরিয়ান মিমিক্রি তিনটা প্রজাতির জন্যই মঙ্গলজনক।
এরপর আছে Emsleyan/Mertensian mimicry. এই মিমিক্রিটা একটু আজব, আলাদা আর বুঝতে কঠিন। কারণ, এখানে মিমিক তার মডেলের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। ওপরে বলেছিলাম যে একটা প্রাণি তার চেয়ে ক্ষতিকর কোনো প্রাণির মতো সাজতে পারলেই শিকারি তাকে এড়িয়ে চলবে। কিন্তু এখানে একটা বেশি ক্ষতিকর প্রাণি তার চেয়ে কম ক্ষতিকর কারো মিমিক্রি করে।
কিন্তু এমন কেন হয়?
ধরুন, একটা প্রজাতি মারাত্মক ক্ষতিকর, এতই ক্ষতিকর যে শিকারি একে খাওয়া মাত্রই মারা যায়। যখন শিকারি তার শিকারকে খাওয়ার সাথে সাথে মারা যাচ্ছে, তখন সে আর ওই শিকারকে ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করার সময় পাচ্ছেনা। ফলে শিকারি প্রজাতির মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠছে না।
কারন সে তো চেনারই সময় পাচ্ছেনা, ফলে বারবার আক্রমণ করছে, শিকার করার পর মরে যাচ্ছে। কেউই জানতে পারছে না যে অমুক প্রজাতি ক্ষতিকর, ওকে আক্রমণ করা যাবেনা। এতে কিন্তু শিকার প্রজাতিরই বেশি ক্ষতি হচ্ছে, কারণ সে বারবার শিকারে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু যদি শিকারি তাকে চেনার সুযোগ পেত, তবে বারবার আক্রমন করতোনা।
এজন্য সেই শিকার প্রজাতি কী করে ? তার চেয়ে কম ক্ষতিকর কোনো প্রজাতির মিমিক্রি করে। কারন কম ক্ষতিকর প্রজাতি শিকার হবার পরেও শিকারিকে মেরে ফেলে না, ফলে শিকারি তাকে চেনার যথেষ্ট সময় পায় ও পরবর্তীবার আক্রমণ করেনা।ফলে এমন একটা প্রজাতির মিমিক্রি করলে বেশি ক্ষতিকর প্রানিটিও বারবার আক্রমণের হাত থেকে বেঁচে যায়। এজন্যই এই অদ্ভুত ধরনের এমস্লেয়ান মিমিক্রির বিবর্তন ঘটেছে।
পর্ব-৩৯: অনুকরণের বিবর্তন(৩)
গতপর্বে ডিফেন্সিভ মিমিক্রি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজ কিছু সাধারণ শ্রেণিবিভাগ নিয়ে আলোচনা করবো।
Wasmannian mimicry: এখানে মডেল মিমিকের কলোনিতেই থাকে বা বাসার আশেপাশে থাকে। এইটুকুই। এই নিয়ে আসলে আর বেশি কিছু বলার নেই। মডেল উপযুক্ত যে কেউ হতে পারে, কিন্তু যখন মডেল হোস্টের বাসার আশেপাশে থাকে তখন তাকে এই বিশেষ নামে ডাকা হয়। আর এক্ষেত্রে মডেলরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সোশ্যাল ইনসেক্ট হয়। সোশ্যাল প্যারাসাইটিজমে এই নিয়ে কিছুটা আ্লোচনা করছিলাম।
Vavilovian mimicry: এই মিমিক্রিটা ঘটে মানুষের কারণে আর মানুষের দ্বারাই, কিন্তু মানুষ ইচ্ছা করে এটা করেনা। মানুষের অজান্তে বা অনিচ্ছায় এটা ঘটে।অর্থাৎ এটা একপ্রকার অনিচ্ছাকৃত আর্টিফিশিয়াল সিলেকশন বা সিলেক্টিভ ব্রিডিং এর ফলাফল।অনিচ্ছাকৃত বলে অনেকে এটাকে আর্টিফিশিয়াল না বলে ন্যাচারাল বলতে চেয়েছেন।
কৃষকরা ফসল চাষ করেন, আর জমিতে হুধু ফসল না, আগাছাও জন্মায়। যখন কৃষকরা ফসল তুলে বীজ উৎপাদন করেন, তখন তার মধ্যে অনেকসময় আগাছার বীজ থেকে যায়। এটাই স্বাভাবিক নয় কি? ভুল করে কয়েকটা আগাছার বীজ থেকে যেতেই পারে। এখন কৃষক যদি একটু খেয়াল করেন, তাহলে তিনি এইসব বীজ বেছে ফেলে দিতে পারবেন।কিন্তু রক্ষা পাবে কোন বীজগুলো? যারা দেখতে আসল ফসলের মতো ও দূর থেকে দেখে যাদের আলাদা করা যায়না।
ফলে এধরনের আগাছা বেঁচে যায়। যত নতুন প্রজন্ম আসে, তত বেশি মিমিক হও্য়া বীজগুলো বেঁচে যেতে থাকে। ফলে একসময় খুব ভালো করে দেখলেও এসব আগাছার বীজকে ফসলের বীজ থেকে আলাদা করা যায়না। এভাবেই ভ্যাভিলোভিয়ান মিমিক্রি ঘটে।
অনেকে ভ্যাভিলোভিয়ান মিমিক্রিকে ডিফেন্সিভ মিমিক্রির পর্যায়ে ফেলতে চান, কারণ এই মিমিক্রি ডেভেলপ্ না হলে আগাছার বীজগুলো ফেলে দেয়া হতো আর সেগুলো নষ্ট হয়ে যেতো।
ভ্যাভিলোভিয়ান মিমিক্রির মাধ্যমে অনেক আগাছাই এমন বিবর্তিত হয়েছে যে তা ডমেস্টিকেটেড খাদ্যশস্যে রূপান্তরিত হয়েছে।তখন এই আগাছাকে আর আগাছা বলেনা, সম্মান করে “সেকেন্ডারি ক্রপ” বলা হয়।
সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো Rye , যা Wheat এর মিমিক। প্রথমদিকে এই Rye অপ্রয়োজনীয় হলেও এই ভ্যাভিলোভিয়ান মিমিক্রির ফলে দিন দিন তা Wheat এর মতো হয়ে গিয়েছে, আর এখন একে নানান খাদ্য উপাদান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
Gilbertian Mimicry. এর বিশেষত্ব হলো, এর মডেলরা হলো প্যারাসাইট আর মিমিক হলো হোস্ট। প্যারাসাইট থেকে বাঁচতে হোস্ট মিমিক্রি করে, খোদ প্যারাসাইটের মিমিক্রি! একটা উদাহরণ দিলে ভালো বোঝা জাবে।
Passiflora নামক জেনাসের একধরনের উদ্ভিদ, এদের ফুলগুলো দেখতে অদ্ভুত সুন্দর। এদের দেহে বিশেষ কিছু ধরনের টক্সিন উৎপাদিত হয় ,যা বিভিন্ন উদ্ভিদভোজী প্রাণিকে এদের থেকে দূরে রাখে, বিশেষ করে কীট-পতঙ্গ কে। যেমন-প্রজাপতি।
কিন্তু Heliconius জেনাসের প্রজাপতিরা বিশেষ ধরনের এনজাইম ডেভেলপ করেছে বিবর্তনের মাধ্যমে, যা এদেরকে লার্ভা অবস্থায় ওই টক্সিন ভাঙতে সাহায্য করে।
এই প্রজাতির প্রজাপতির লার্ভা আবার ক্যানিবালিস্টিক,মানে এরা স্বজাতিকে ভক্ষণ করে। ফলে হয় কি, একই স্থানে যদি অনেকগুলো ডিম থাকে, তাহলে আগে যেই লার্ভাগুলো বের হবে, তারা পরের লার্ভাগুলোকে খেয়ে ফেলবে। এজন্য এই প্রজাপতিরা তাদের সন্তানের সার্ভাইভাল রেট বাড়ানোর জন্য খালি জায়গায় ডিম পাড়ে, যেখানে আগে থেকে অন্য কোনো ডিম নেই।
এই সুযোগ নিয়েছে ওই Passiflora ! এই উদ্ভিদদের পাতার কাছে কিছু বিশেষ ধরনের বর্ধিত অঙ্গ বিবর্তিত হয়েছে যা দেখতে প্রজাপতির ডিমের মতো।ফলে প্রজাপতিরা দূর থেকে দেখে মনে করে ওখানে আগে থেকেই অন্য কারো ডিম আছে, তাই নিজের সন্তানকে বাঁচাতে সে অন্য জায়গায় ডিম পাড়ে। আর এই গাছ বেঁচে যায়।
এখানে উদ্ভিদটা হলো মিমিক আর হোস্ট, প্রজাপতিটা হলো মডেল আর প্যারাসাইট। এখানে ঘটেছে গিলবারটিয়ান মিমিক্রি।
এই উদাহরণটা কিন্তু আরেকটা বিষয়ও বুঝিয়ে দেয়, তা হলো বিবর্তন চির-চলমান আর উদ্দেশ্যহীন একটা প্রক্রিয়া।
বিবর্তনের যেসব সাধারণ উদাহরণ দেয়া হয়, “ সবুজ মাঠে বাদামি কচ্ছপ, তাই কচ্ছপরা সবুজ রঙে বিবর্তিত হবে”, এই ধরনের উদাহরণগুলো বিবর্তনকে একটা উদ্দেশ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার ভ্রম তৈরি করে, এখানে উদ্দেশ্য হলো কচ্ছপের আত্মরক্ষা।
কিন্তু বিবর্তনতো এমন না।
গিলবার্টিয়ান মিমিক্রির উদাহরণটায় দেখুন, উদ্ভিদ প্রাণি থেকে বাঁচতে টক্সিন বিবর্তিত হয়েছে, প্রাণি আবার সেই টক্সিন থেকে বাঁচবে বলে এনজাইম বিবর্তিত হয়েছে, আবারো উদ্ভিদ সেই প্রাণি থেকে রক্ষা পেতে মিমিক্রির আশ্রয় নিয়েছে!
বিবর্তন এখানে কারো পক্ষে নেই, উভয় পক্ষই বিবর্তিত হয়েছে, মানে বিবর্তন উদ্দেশ্যহীন। একবারমাত্র বিবর্তন হয়ে থেমে যায়নি, উদ্ভিদ টিকেছে বলে কি প্রাণি টেকার চেষ্টা করবেনা? তাই বারবার বিবর্তন হয়েছে,সবার বিবর্তন হয়েছে, বিবর্তন চিরচলমান।
আরেকটা বিষয়ও বোঝা গেলো, সেটা হলো বিবর্তনের পেছনে কাজ করে র্যান্ডম মিউটেশন, একেবারেই র্যান্ডম। কারণ ,উদ্ভিদের টক্সিনের বিরুদ্ধে যখন প্রজাপতি এনজাইম ডেভেলপ করলো, তখন উদ্ভিদ কিন্তু টক্সিনের টক্সিসিটি বাড়ায়নি বা নতুন কোনো টক্সিন ডেভেলপ করেনি! কমন সেন্স তো সেটাই বলে, যে, আগেরবার যখন টক্সিন তৈরি হয়েছিলো, এইবারও তাহলে তেমনই কিছু হবারর কথা! কিন্তু না! সে করলো মিমিক্রি! যা টক্সিনের সাথে একেবারেই অসংলগ্ন!
কেন এমন হলো?
র্যান্ডমনেস!
প্রথমবার টক্সিন তৈরির মিউটেশন হয়েছিলো দেখে টক্সিন তৈরি হয়েছিলো, কিন্তু এইবার তা হয়নি, এইবার এমন একটা মিউটেশন হয়েছে যা মিমিক্রির দিকে যায়, তাই মিমিক্রি হয়েছে! সবকিছুই কি র্যান্ডমনেসের প্রমাণ নয়?
অবশ্যই হ্যা! বিবর্তন ঘটে র্যান্ডম মিউটেশন এর কারণে।
এরপর আছে Browerian Mimicry.এটা একপ্রকার Automimicry.অর্থাৎ এখানে মিমিক নিজের প্রজাতিরই অন্য কাওকে মডেল বানায়। মানে উভয়ে একই প্রজাতির আরকি।কেন এমন হয়?
একই প্রজাতিতে অনেকসময় বিশেষ কিছু বৈশিষ্টয়ের কারণে দুইটা বা তার চেয়ে বেশি আলাদা দল তৈরি হয়। যেমন মৌমাছিদের মধ্যে রানী মৌমাছি আর কর্মী মৌমাছি। অনেক সময় দেখা যায় যে এইক্ষেত্রে একদল আরেকদলের চেয়ে শিকার কম হয়, তখন ওই আরেকদল ,একদলের মিমিক্রি করে।দুইদলই কিন্তু একই প্রজাতির।এই মিমিক্রির আর বাদবাকি সবকিছু ব্যাটেশিয়ান মিমিক্রির মতো।
পর্ব-৪০: অনুকরণের বিবর্তন(৪)
এমন না যে শুধু আত্মরক্ষার জন্যই মিমিক্রি হয়। অনেক সময় প্রাণিরা শিকার করার জন্য বা অন্যের ক্ষতি করে নিজের উপকার করার জন্যও মিমিক্রির আশ্রয় নেয়। একেই বলে Aggresive Mimicry.
যেই মিমিক্রিতে কোনো প্রিডেটর, প্যারাসাইট বা প্যারাসাইটয়েড(এরাই মিমিক) তাদের শিকার বা হোস্টকে আক্রমণ করতে এমন কোনো প্রাণির বা অন্য এমন কিছুর(মডেল) মিমিক্রি করে যেটা শিকার বা হোস্টের কছে ক্ষতিকর না, তাকে এগ্রেসিভ মিমিক্রি বলে।
সহজ কথায় এক্ষেত্রে মডেল হলো এমন কিছু, যা শিকার বা হোস্টের কাছে উপকারী বা নিউট্রাল ধরনের, মানে ক্ষতিকর না হলেই হলো।এক্ষেত্রে পরিস্থিতিভেদে মডেল উপকৃত,অপকৃত বা অপ্রভাবিত থাকতে পারে।মিমিকের তো উপকার হচ্ছেই।কিন্তু বেচারা শিকার বা হোস্ট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এইযে শিকার বা হোস্ট, এদেরকেবলে সিগন্যাল রিসিভার। যেকোনো মিমিক্রিতেই , যার কারণে মিমিক্রি হয় বা যাকে প্রভাবিত করতে মিমিক্রি ঘটে, সে হলো সিগন্যাল রি্সিভার। কারণ সে ই মিমিকের থেকে প্রাপ্ত সিগন্যাল কে মডেলের থেকে প্রাপ্ত সিগন্যালের সাথে গুলিয়ে ফেলে, সে যাতে গুলিয়ে ফেলে সেজন্যই মিমিক্রি সংঘটিত হয়, এই গুলিয়ে ফেলার মাধ্যমেই মিমিক উপকৃত হয় আর ওয়ি সিগন্যাল রিসিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ডিফেন্সিভ মিমিক্রিতে মিমিক ক্ষতিকর প্রাণির অনুকরণ করে, মানে মডেলের ক্ষতিকর সিগন্যালের অনুকরণ করে। সিগন্যাল রিসিভার মিমিকের থেকে প্রাপ্ত সিগন্যাল কে মডেলের সিগন্যাল মনে করে,এতে সে মিমিককে ক্ষতিকর প্রাণি মনে করে তার থেকে দূরে দূরে থাকে, ফলে মিমিক রক্ষা পায়।
আর এগ্রেসিভ মিমিক্রিতে মিমিক ভালো সিগন্যালের অনুকরণ করে, অর্থাৎ মডেল সিগন্যাল রিসিভারের কাছে ক্ষতিকর না। ফলে সিগন্যাল রিসিভার (শিকার বা হোস্ট) মিমিক হতে প্রাপ্ত সিগন্যালকে আর ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করতে পারে না, ভালো মডেলের সিগন্যাল হিসেবে চিহ্নিত করে, ফলে মিমিকের কাছে চলে আসে আর শিকার হয় বা আক্রান্ত হয়।
সিগন্যাল রিসিভার নিয়ে আগেই লেখা উচিত ছিলো, মনে ছিলোনা।
আশা করি বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন।
এগ্রেসিভ মিমিক্রিতে অনেক সময় মিমিক এমন কিছুর মিমিক্রি করে, যা সিগন্যাল রিসিভারের জীবন-ধারণের জন্য একেকবারে অপরিহার্য । এই মডেল হতে পারে প্রজননের সঙ্গী, পুষ্টিকর খাদ্য ইত্যাদি। অবশ্যই এমন কিছু হতে হবে যা দেখা মাত্র সিগন্যাল রিসিভার আর লোভ সামলাতে পারবেনা, দৌড়ে চলে আসবে, এতই গুরুত্বপূর্ণ কিছু।
কারণ কম গুরুত্বের কিছু হলে রিসিভার রিস্ক নিতে চাইবেনা, কারণ তাদের মধ্যে ততটুকু স্মৃতি থাকে যার ফলে তারা মনে রাখতে পারে এই লোভের ঠ্যালায় এক সময় জীবন নিয়ে টানাটানি বেধে গিয়েছিলো।তাই মডেল এমনকিছু হতে হবে যা দেখে সিগন্যাল রিসিভার আসবেই আসবে, আর সেই “অতি লোভে তাঁতি নষ্ট” ঘটনা মনে করতে পারবেনা বা মনে করার সময়টুকু পাবেনা।
এক ধরনের কচ্ছপ আছে, Aligator snapping turtle.
এদের জিহ্বার সামনের অংশ দেখতে Worm এর মতো, গোলাপি রঙের আর আকৃতিও ঠিক ওরকম। এরা পানিতে নেমে জিহ্বা বের করে নাড়াচাড়া করতে থাকে। ফলে মাছ মনে করে যে কোনো পোকা, সে দ্রুত খেতে আসে, আর পোকা মনে করে জিহ্বার কাছে আসা মাত্রই কচ্ছপ মাছটাকে খেয়ে ফেলে।
কিছু কিছু সাপও তার লেজ আর জিহ্বা কে এভাবে ব্যবহার করে থাকে।
কিছু কিছু কার্নিভোরাস উদ্ভিদ, যারা পোকা-মাকড়কে বন্দি করে তাদেরকে হজম করে পুষ্টি শুষে নেয়, এরা অনেকসময় বিশেষ ধরনের তড়িৎচুম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে , উজ্জ্বল রঙের মাধ্যমে পোকা-মাকড়কে আকৃষ্ট করে। এটাকেও এগ্রেসিভ মিমিক্রির মধ্যে আনা যায়।
ক্লিনিং সিম্বায়োসিস এর কথা মনে আছে নিশ্চই?
সেখানেও অনেক সময় শিকারি মাছেরা বা প্যারাসাইটরা ক্লিনারদের মিমিক্রি করে ক্লিনিং স্টেশনে গিয়ে বসে থাকে, যখনই ক্লায়েন্ট মাছ ক্লিন হতে আসে, সে খপ করে তাকে ধরে ফেলে। শিকারি হলে খেয়ে ফেলে আর প্যারাসাইট হলে আক্রান্ত করে।
এখানে দেখা যাচ্ছে যে সিগন্যাল রিসিভার নিজেই মিমিকের কাছে গিয়েছে।তবে এর উল্টোটাও হয়।
অনেক সময় মিমিক এমন কিছুর মিমিক্রি করে যাতে সিগন্যাল রিসিভার তাকে পাত্তা না দেয়, মানে তার উপস্থিতিই টের না পায়। ফলে মিমিক ধীরে ধীরে রিসিভারের দিকে এগোতে থাকে, যথেষ্ট কাছে গেলে আক্রমণ করে। এই ঘটনাকে ফলে মিমেসিস।
এখানে মিমিক সিগন্যাল রিসিভারের কাছে যাচ্ছে।
কিছু কিছু প্যারাসাইট নিজের হোস্টের শিকারের মিমিক্রি করে। মানে মডেল হলো সিগন্যাল রিসিভারের শিকার, আর মিমিক হলো সিগন্যাল রিসিভারের প্যারাসাইট।সিগন্যাল রিসিভার হলো হোস্ট। ফলে হোস্ট নিজের প্যারাসাইটকে শিকার মনে করে খেয়ে ফেলে, তারপর প্যারাসাইট হোস্টের দেহের ভেতরে গিয়ে বংশবিস্তার করে, বৃদ্ধি পায়।
লিউকোক্লোরিডিয়াম নামক ফ্লাটওয়ার্মরা সংবার্ড নামক পাখিদের অন্ত্রে গিয়ে বাস করে।এই ফ্লাটওয়ার্মের ডিম পাখির মলের সাথে বের হয়ে যায়, সেই মল আবার খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এম্বার স্নেইল নামক শামুকরা। এই শামুক কাজ করে ইন্টারমিডিয়েট হোস্ট হিসেবে।
শামুকের দেহের ভেতর ওয়ি প্যারাসাইটের লার্ভা বেড়ে ওঠে।এভার জীবনধারণের জন্য একে পাখির অন্ত্রে পৌছাতেই হবে, যেকোনো ভাবেই হোক। কিন্তু সমস্যা হলো, ওই সংবার্ডরা শামুক খায়না। এই প্যারাসাইট করে কি, বিশেষ একটা প্রক্রিয়ায় শামুকের চোখে প্রবেশ করে। শামুকের চোখের অংশটুকু দেহের থেকে বর্ধিত থাকে, এই প্যারাসাইট সেটাকে আরো বর্ধিত করে্ আর এর বৈশিষ্ট্য হলো, এই ফ্লাটওয়ার্মের রঙ অনেক উজ্জ্বল, আর রা খুব দ্রুত গতিকে Pulse করতে পারে। শামুকের চোখে প্রবেশ করে এরা তাই করে।
আবার এই ফ্লাটওয়ার্মরা Affecting Host behaviour এ সক্ষম। মানে এরা হোস্টের আচরণকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। এই শামুকরা সাধারণত আর্দ্র অন্ধকার জায়গায় বাস করে। কিন্তু এই প্যারাসাইট একে সূর্যের আলোতে নিয়ে যায়। ফলে এই সংবার্ড শামুকের চোখে প্যারাসাইটের উজ্জ্বল রঙ আর দ্রুত Pulse দেখে একে অন্য কোনো পোকা মনে করে খেয়ে ফেলে।
বাস!
প্যারাসাইটের উদ্দেশ্য হাসিল।সে পাখির অন্ত্রে পৌছে গিয়েছে, এবার সেখানে ডিম পাড়বে আর একই প্রক্রিয়া ঘটতে থাকবে!
বিবর্তন প্রাণিজগতে কত অদ্ভুত অদ্ভুত বৈচিত্র সৃষ্টি করেছে !
এই গেলো এগ্রেসিভ মিমিক্রি নিয়ে কথা-বার্তা।
একরকম মিমিক্রিকে বলা হয় অটোমিমিক্রি। এক্ষেত্রে মিমিক নিজের দেহেরই কোনো বিশেষ ওংগের মিমিক্রি নিজের দেহে ঘটায়। যেমন- কিছু কিছু আপের লেজ সেই সাপেরই মাথার মতো দেখতে, ফলে পেছন থেকে কোনো শিকারি আক্রমণ করতে ভয় পায়।এটা অটোমিমিক্রি।
প্রজননের স্বার্থেও মিমিক্রি ঘটে, যাকে বলে রিপ্রোডাক্টিভ মিমিক্রির আবার বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে।
কিছু স্ত্রী ফুলরা নিজের প্রজাতির পুরুষ ফুলের মিমিক্রি করে। এই পুরুষ ফুলরা পলিনেটরদেরকে নেক্টার দিয়ে থাকে।
তাই পলিনেটররা সেই লোভে চলে আসে, ফলে পুরুষ ফুলের পলেন স্ত্রী ফুলে প্রবেশ করে।এটা কিছুটা চিটিং ও বটে, কারণ স্ত্রী ফুলরা পলিনেটরদের সাথে ছলনা করছে, নেক্টারের লোভ দেখিয়ে কাছে আনছে পলেন পাও্যার উদ্দেশ্যে, কিন্তু নেক্টার দিচ্ছেনা। যাই হোক, এই মিমিক্রিকে বলে ব্যাকেরিয়ান মিমিক্রি।
আবার আছে ডডসোনিয়ান মিমিক্রি। এক্ষেত্রেও সব ব্যাকেরিয়ান মিমিক্রির মতোই, শুধু মডেল আর মিমিক ফুলদ্বয় আলাদা প্রজাতির। আলাদা প্রজাতির হলে লাভ কী? পলেন দিয়ে প্রজননতো হবে না।
আসলে একটা স্থানেতো এক প্রজাতির ফুল থাকেনা। সব রকমের ফুলই থাকে, তাই পলেন ছড়াতে আর গ্রহণ করতে পারলেই হলো। দেখা যায় যে । ওই স্থানের পলিনেটররা মডেল ফুলের প্রতি আকৃষ্ট হয় বেশি, তখন মিমিকরা তার মিমিক্রি করে।
মিমিক্রি নিয়ে আমাদের সব কথাবার্তা শেষ। পাশাপাশি সিম্বায়োসিস নিয়েও যে দীর্ঘদিন আলোচনা করলাম, তাও শেষ। সিরিজের অর্ধেকে সম্ভবত সিম্বায়োসিসের আলোচনায়ই কেটে গিয়েছে! যাই হোক, আগামী পর্বে নতুন বিষয়ে ঢুকবো।
অনেক সময় দুটো একেবারে ভিন্ন প্রজাতি, যাদের মাঝে বিন্দুমাত্র যোগযোগ নেই, সম্পর্ক নেই, তাদেরকে দেখে মনে হয় যে একে অন্যের মিমিক্রি করছে। কীভাবে ?
Convergent Evolution! আমাদের আগামী পর্বের আলোচনার বিষয়।