পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রানী কোনটি?
বাঘ? সিংহ? সাপ? নাকি মানুষ!
অনেকের মনে হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রানী হয়ত মানুষ। হ্যাঁ ফিলোসফিকাল দৃষ্টিতে দেখতে গেলে অবশ্যই মানুষ, তবে স্ট্যাটিস্টিকালি না। স্ট্যাটিস্টিকালি পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রানি হচ্ছে মশা। ২০১২ সালের United Nations Office on Drugs and Crime এর রিপোর্ট অনুযায়ী বছরে বিশ্বে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ খুন হয়। আর এক বছরে মশা বাহিত রোগে সাড়া বিশ্বে মারা যায় সাত লাখ পঁচিশ হাজার মানুষ (WHO Report)।
সো মশা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রানী।
প্রতিবছর আমাদের দেশে শত শত কোটি টাকা খরচ হয় এই মশা নিধন করতে। মশার হাত থেকে বাঁচতে প্রচলিত পদ্ধতিগুলো হল কয়েল, মশার স্প্রে, রিপেলেন্ট ক্রিম ব্যবহার। আর সরকারিভাবে নেয়া উদ্যোগগুলো হয় মশার আবাসস্থল ধ্বংস করা, জনসচেতনতা তৈরি। কিন্ত এসব কোন পদ্ধতিই তেমন একটা কার্যকর হয়ে উঠেনি।
বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই একটা কার্যকর পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টায় ছিলেন যেটার মাধ্যমে ম্যাসিভলি মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। দীর্ঘদিনের গবেষণায় তারা এমন একটা সাফল্যও পেয়েছে। সেটা হচ্ছে মশার জেনেটিকাল মডিফিকেশন।
এখানে একটা ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট আছে। পুরুষ মশা কিন্ত কামড়ায় না, কেবল স্ত্রী মশাই কামড়ায়। কাজেই কোনভাবে যদি এই স্ত্রী মশা কমিয়ে ফেলা যায় তবে এই মশাবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পাবে লাখ লাখ মানুষ।
জিন মডিফিকেশনের কাজটা করা হয়েছে এডিস মশার একটা প্রজাতির উপরে। এডিস মশার এই প্রজাতিটি মানুষের মধ্যে জিকা, চিকনগুনিয়া, ডেঙ্গু ও পীতজ্বরের মতো প্রাণঘাতী রোগ ছড়ায়। কাজেই এই প্রজাতিটিকে নির্মূল করা গেলেই মশাবাহিত রোগ থেকে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে যাবে।
কেবল স্ত্রী মশা মানুষকে কামড়ায়; তাই জিন বদলে দেওয়া পুরুষ এডিস মশা পরিবেশে ছাড়ার পরিকল্পনা করা হয়। জিন বদলে দেওয়া এসব পুরুষ মশার সঙ্গে স্ত্রী মশার মিলনে যে স্ত্রী মশা জন্মাবে, সেগুলো মানুষকে কামড়ানোর মতো বয়সে আসার আগেই মারা যাবে এবং যেসব পুরুষ মশা জন্মাবে সেগুলোর মধ্যেও বদলে দেওয়া জিন থাকবে জন্মগতভাবে।
এভাবে ধারাবাহিকভাবে স্ত্রী এডিস মশার সংখ্যা কমিয়ে ফেলা হবে। জিন মডিফিকেশনের এই কাজটি করেছে যুক্তরাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্রিটিশ-ভিত্তিক সংস্থা অক্সিটেক। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ৭৫ কোটি (৭৫০ মিলিয়ন) বেশি জিন বদলে দেওয়া মশা ছাড়ার পরিকল্পনার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
জুরাসিক এক্সপেরিমেন্ট:
জেনেটিক্যালি মডিফায়িড মশা পরিবেশে ছাড়ার পক্ষে-বিপক্ষে বিগত কয়েক বছর ধরেই বিতর্ক চলছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক অনুমোদনের পর পরিবেশবাদী গ্রুপগুলো এর প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে। তারা এটাকে জুরাসিক পার্ক এক্সপেরিমেন্টের সাথে তুলনা করেছে। তাদের এই কনসার্নের কারনটা অবশ্য অনুধাবনযোগ্য।
স্বাভাবিকভাবে জেনেটিক্যালি মডিফায়িড এই পুরুষ মশাগুলোর স্ত্রী মশাকে বন্ধ্যা করে দেয়ার কথা। কিন্ত সেরকম নাও হতে পারে। জেনেটিকাল ব্যাপার স্যাপারগুলো নিয়ে এখনো বিজ্ঞানের জানাশোনা অনেক কম। এরকমও হতে পারে এই জিন এডিট করা মশাগুলো আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, পারে সুপার মশা হয়ে উঠতে যাদেরকে প্রচলিত ওষুধ দিয়ে মারা যাবে না। এই প্রসঙ্গে জুরাসিক পার্ক মুভির একটা বিখ্যাত ডায়লগের কথা স্মরণ করা যেতে পারে।
ড. ম্যালকম ডায়নোসরগুলো রিপ্রোডাকশনে সক্ষম হবে না এই স্টেটমেন্ট শুনে একটা কথা বলে যে ‘Life finds a way’। আমরা হয়ত মশার পুরো প্রজাতিটি বিলুপ্ত করার খেলায় নামছি, কিন্ত এরকম হতে পারে মশাগুলোর মধ্যে জিনগত কিছু পরিবর্তন আসতে পারে যা তাদেরকে আরো প্রতিকূল পরিবেশে সারভাইভ করতে সাহায্য করবে, Coz Life Finds a Way ….
লেখকঃরায়হান আহামেদ