ইতিহাসঃ আর্কিওলজিকাল ইনভেস্টিগেশন অনুযায়ী সর্বপ্রথম প্রায় 2000খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে মাদাগাস্কারে মানুষের পদচিহ্ন রাখার প্রমাণ পাওয়া যায়। মাদাগাস্কারের অবস্থান আফ্রিকার খুব কাছে হওয়ায় এখানকার মানুষের আচার-আচরণে এবং সাংস্কৃতিক চর্চায় আফ্রিকান প্রভাব ষ্পষ্ট।
যদিও জীবনধারনের নানা পর্যায়ে এশীয় বিভিন্ন ভাবধারায় চর্চাও পরিলক্ষিত হয়। পৃথীবির আর কোন স্থানে মানুষের জীবন-যাপনে এশীয় আর আফ্রিকান সংস্কৃতির এমন ধরনের ক্রসওভার পরিলক্ষিত হয় না।
মাদাগাস্কারে ইউরোপীয় বসতি স্থাপনেরও অনেক আগে আরবের ব্যবসায়ীরা মাদাগাস্কারে আসার প্রমান পাওয়া যায়। মাদাগাস্কার সেসময়ে আরব বণিকদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক হাব ছিলো। ১০ম খ্রিস্টাব্দের দিকে মাদাগাস্কারের মানুষেরা সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্মের সাথে পরিচিত হয়।
পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম এই দ্বীপটির নামকরন করেন মাক্রো পোলো । ১৫শ শতকে আস্তে আস্তে এখানে সর্বপ্রথম ইউরোপীয়ানদের আগমন ঘটে। পর্তুগাল এর নাবিক ডিয়াগো ডিয়াস সর্বপ্রথম একজন ইউরোপীয় যিনি কিনা মাদাগাস্কার দ্বীপে পা রেখেছিলেন। তিনিই এই দ্বীপের আবিষ্কারক। তার সম্মানার্থেই মাদাগাস্কারের উত্তরাঞ্চলের নাম রাখা হয়েছে “Diego Suarez’ ।
১৮৯৪সালে মাদাগাস্কার ফ্রেঞ্চ উপনিবেশ এর অন্তর্ভূক্ত হয়। ১৯৯৬সালে সম্পূর্ন মাদাগাস্কারকে একটি একক কেন্দ্রীয় সরকারের পরিপূর্ন নিয়ন্ত্রণাধীন করে। ১৯১৮সালে সর্বপ্রথম মাদাগাস্কার এর মানুষেরা ফ্রেঞ্চ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। ১৯৪৭সালে প্রায় ৮০হাজার মাদাগাস্কার এর নাগরিককে হত্যা করা হয় মাদাগাস্কারে ফ্রেঞ্চ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্ররিবাদ করার জন্য।
দীর্ঘ ৬৬বছরের পরাধীনতার পর ১৯৬০সালে ফ্রান্স হতে স্বাধীনতা লাভ করে মাদাগাস্কার। স্বাধীনতা লাভের পরেও একটা দীর্ঘ সময় মাদাগাস্কারে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিলো।
ভৌগোলিক অবস্থানঃ
প্রানী বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ এই দেশটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তর দ্বীপ।গ্রীনল্যান্ড, নিউ গিনি আর বর্নিও এর পর এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপ। উল্লেখ্য ইন্দোনেশিয়ার পরে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপরাষ্ট্র। এই দ্বীপটিকে আফ্রিকান মহাদেশের মূলভূখন্ড হতে আলাদা করেছে মোজাম্বিক চ্যানেল। এই দ্বীপটি আফ্রিকার মূল ভূখন্ড হতে প্রায় ৪৩০কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।মাদাগাস্কারের কোষ্টলাইন প্রায় ৪৮২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। দ্বীপটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫৭০ কিলোমিটার এবং এর দ্বীপটির গড় প্রস্থ প্রায় ৫৭০কিলোমিটার। দ্বীপটির আয়তন ৫,৮৭,২৯৫বর্গ কিলোমিটার।
ইকোলজিঃ
দ্বীপটির পূর্বাঞ্চল মূলত রেইনফরেস্টে আবৃত।পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিনাঞ্চল তুলনামূলক শুষ্ক এবং ট্রপিকাল ফরেস্টে আবৃত।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতি আর প্রানীকূলের সন্ধান পাওয়া যায় এই দ্বীপটিতে।
অদ্ভুতুড়ে আর বৈচিত্র্যময় প্রানীর দেখা মেলে এখানে।সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এখানে যেসব প্রানীকূল বা উদ্ভিদকূলের দেখা পাওয়া যায়, তাদের অধিকাংশের দেখাই পৃথিবীর অন্যকোথাও পাওয়া যায় না। যার ফলে মাদাগাস্কারে যেই উদ্ভিদ বা প্রানী পাওয়া যায় তাদের অধিকাংশই এন্ডেমিক। এত বৈচিত্র্যময় জীবকূলের সমাবেশের জন্য এটি বর্তমানে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ইকোলজিকাল হটস্পট এ পরিনত হয়েছে।
এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাদাগাস্কারের প্রায় ৯৬% ভাস্কুলার উদ্ভিত এন্ডেমিক, ৪৫%ফার্ন এন্ডেমিক, পাম জাতীয় উদ্ভিদ গুলো ৯৭% এন্ডেমিক, ৮৫% অর্কিড এন্ডেমিক, মাদাগাস্কারে পাওয়া যায় এমন ৯০%সরীসৃপই এন্ডেমিক, মাদাগাস্কারে পাওয়া যায় এমন উভচরদের ১০০% এ এন্ডেমিক, ৩৭%পাখি আর ৭৩% বাদুর, যাদের কে মাদাগাস্কারে পাওয়া যায় এরা এন্ডেমিক।
এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে মাদাগাস্কারে যেই জীবকূল পাওয়া যায় তা অন্যান্য পৃথিবীর স্বাভাবিক জীবকূলের মতো অতোটাও সহজ বা স্বাভাবিক নয়, যার ফলে মাদাগাস্কারের একটা আলাদা ইকোলজিকাল ভ্যালু তৈরি হয়।
মাদাগাস্কারের প্রানীকূলঃ
মাদাগাস্কারের প্রানীকূল পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় বললে কোন অংশে ভূল হবে না। এই দ্বীপটি এমন এমন সব প্রানীর আবাসস্থল যাদের সচরাচর পৃথীবির অন্য কোন অঞ্চলে দেখা যায় না। উল্লেখ্য এখানকার ৯০% উদ্ভিদ আর প্রানীকূল এন্ডেমিক,অর্থাৎ এই অঞ্চল ছাড়া অন্য কোন অঞ্চলে এইসব প্রানী কিংবা উদ্ভিদের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। এই দ্বীপের প্রানীগুলোর অধিকাংশই একটু আলাদা ধরনের হয়।
এদের স্বকীয়তার মধ্যেও যেন এক অদ্ভুতুড়ে নতুনত্ব বিদ্যমান।এই দ্বীপে প্রানীগুলোর মধ্যে বিবর্তনের ধারা স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়।কিছু কিছু প্রানী আছে যাদের মধ্যে একাধিক প্রজাতির বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।যেমন,”ফসা(Fossa)” প্রানীটির কথা ধরা যাক-
একে দেখতে অনেকটাই বেজি,কুকুর আর বেড়ালের সংকরের মতো মনে হয়। প্রানীটি দৈর্ঘে প্রায় ছয় ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এর লেজের দৈর্ঘ্য এর মূল দেহের দৈর্ঘ্যের কাছাকাছি। এদের মাথা খানিকটা বেড়ালের মতো,আকারে ছোট। এদের থাবা অনেকটাই কুকুরের মতো,কান খানিকটা গোলাকার।
এরা মাদাগাস্কারের অন্যতম প্রধান শিকারি। এরা দিনে এবং রাতে উভয় সময়েই শিকার করে থাকে। এদের ডায়েটের অনেকটাই আসে লেমুর শিকার এর মাধ্যমে।
এরা খুবই চটপট করে গাছে উঠতে পারে। পুরুষ ফসাদের চেয়েও মেয়ে ফসারা বেশি বলিষ্ঠ। এরা একাকি জীবন যাপন করতে বেশি পছন্দ করে।
লেমুর(Lemur) মাদাগাস্কারের আরেকটি পরিচিত প্রানী। এটির চোখগুলো বড় বড়। এর মুখ দেখতে খানিকটা শেয়ালের মতো আর শরীর অনেকটাই বানরের মতো। এদের একটি লম্বা লেজ আছে। এদের ঘ্রান শক্তি প্রখর এদের দৃষ্টি শক্তির তুলনায়।
এদের চোখ অনেকটাই রাতে চলাচল করার জন্য উপযোগী। এরা খুবই নিরীহ,ভীতুপ্রকৃতির দলপ্রিয় প্রানী। এদের প্রায় ১০৫এর বেশি প্রজাতি বিদ্যমান। এরা নিশাচরী। প্রজাতিভেদে এদের ওজন ৩০গ্রাম(মাউস লেমুর) থেকে ৯কেজি(ইন্দ্রি) পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের প্রধান খাদ্য মূলত ফুল,ফল,পাতা।বনভূমি ধংস করা,জলবায়ু পরিবর্তন সহ নানা কারনে প্রানীটি বিপন্ন।
প্যানথার ক্যামেলিয়ন (Panther Chameleone) হলো একধরনের রঙিন গিরগিটি যা মাদাগাস্কারের আরেক বাসিন্দা। এদের দৈর্ঘ্য গড়ে ১৭সেমি এর মতো হয়ে থাকে। মেয়ে প্যানথার ক্যামেলিয়নরা দৈর্ঘ্যে পুরুষ প্যানথার ক্যামেলিয়ন দের চেয়ে ছোট হয়ে থাকে। পুরুষ প্যানথার ক্যামেলিয়নদের গায়ের রঙ মেয়ে প্যানথার ক্যামেলিয়ন এর বেশি রঙিন হয়ে থাকে। এদের জীবন কাল আনুমানিক ৫ থেকে সাত বছর।
টমেটো ফ্রগ (TOMATO FROG) হলো মাদাগাস্কারের আরেকটি অন্যতম এন্ডেমিক প্রানী। পুরুষ ব্যাঙগুলো হলুদ-কমলা রঙা আর মহিলা ব্যাঙ গুলো লাল-কমলা রঙা হয়ে থাকে। জীবনের বেশির ভাগ সময় এরা পাতা এবং মাটির নিচে ঘুপটি মেরে বসে থেকে কাটিয়ে দেয়। এদের চামড়া হতে একধরনের বিষাক্ত বিষ বের হয় যা এদের আত্নরক্ষার অন্যতম অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। এরা সাধারনত লম্বায় ৬০ থেকে ৯০ মিলিমিটার এর মত হয়ে থাকে। পুরুষ ব্যাঙদের চেয়ে মেয়ে ব্যাঙ গুলো খানিকটা বড় হয়ে থাকে।
এংগোনোকা টরটয়েজ (Angonoka Tortoise) হলো মাদাগাস্কারের আরেকটি এন্ডেমিক প্রানী। ধারনা করা হচ্ছে প্রানীটির মাত্র চারশটি জীবন্ত ফসিল প্রকৃতিতে বিদ্যমান। এদের খোলসের রঙ খানিকটা হালকা বাদামী।ছেলে কচ্ছপদের দৈর্ঘ্য ৪১.৪২ সেন্টিমিটার এর মতো হয়ে থাকে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য ৩৭ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ছেলে এবং মেয়ের ওজন যথাক্রমে ২৩পাউন্ড এবং ১৯পাউন্ড এর মতো হয়ে থাকে। এই প্রজাতর কচ্ছপগুলোর মধ্যে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা খানিকটা আকারে বড় হয়ে থাকে।
মাদাগাস্কাকান ফ্লাইং ফক্স (Flying Fox) হলো আরেকটি এন্ডেমিক প্রানী। একে মাদাগাস্কার ফ্রুট ব্যাটও বলা হয়। এদের প্রধান আবাসস্থল হলো মাদাগাস্কারের সাবট্রপিকাল এবং ট্রপিকাল জঙ্গল। এর খাদ্যতালিকায় আছে ডুমুর,নানারকন ফল এবং পাতা। এরা মাদাগাস্কারের সবচেয়ে বড় বাদুর।যাদের শরীরের দৈর্ঘ্য ২৩.৫ হতে ২৭সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এদের ডানার বিশালতা প্রায় ১০০ থেকে ১৫০সেমি। এদের বুকের দিকটার রঙ বাদামি।বাকি পাখার রঙ কালোমতোন। পুরুষ বাদুরদের মাথা মেয়ে বাদুরদের চেয়ে কিঞ্চিৎ বড়।
অতীব সুন্দর পাখিটর নাম ব্লু কুউয়া (Blue Coua)। এটিও মাদাগাস্কারের এন্ডেমিক। খুবই বিমোহিত আর সুন্দর পাখিটির চোখের চারদিকের খানিকটা জায়গায় কোন পালক নেই। কোকিল পরিবার ভূক্ত হওয়ায় এর মধ্যে কোকিল পাখির অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান। যেমনঃ খানিকটা বড় পা,লম্বা লেজ,বড় পাখা। এরা দৈর্ঘ্যে প্রায় ৪৮ থেকে ৫০ সেমি এর মতোন হয়ে থাকে। এদের গায়ের রঙের অধিকাংশই নীল রঙের হওয়ার এদের অনেক সুন্দর দেখা যায়।
এইরকম আরো অনেক অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত প্রানীর বিচরনস্থল পৃথিবীর এই ৪র্থ বৃহত্তর দ্বীপটি।
কয়েকটা প্রানীর নাম উল্লেখ না করলেই নয়,সেগুলো হলো, এসিটি(Asity) পাখি, ভাঙা (Vanga) পাখি, বপিস (Boophis) ব্যাঙ, পারসনস ক্যামেলিয়ন (Parsons Chameleon) , রেড আউল (Red Owl) , গোল্ডের ম্যান্টেলা (Golden Mentella) ইত্যাদি।
মাদাগাস্কারের উদ্ভিদকূলঃ
মাদাগাস্কারের প্রানীদের মতো এখানকার উদ্ভিদকূলও অনেক বৈচিত্র্যময় বাকি পৃথীবির অন্যান্য উদ্ভিদরাজীর তুলনায়। পুরো মাদাগাস্কার জুড়ে প্রায় ১১০০০ এর মতো উদ্ভিদ আছে যাদেরকে শুধুই এই মাদাগাস্কার দ্বীপে পাওয়া যায়।
বাওবা গাছ মাদাগাস্কারের অন্যতম অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন গাছ। এই বর্গের অন্তর্ভুক্ত প্রায় নয়টি প্রজাতির মধ্যে ছয়টিই প্রজাতিই মাদাগাস্কারের স্থানীয় গাছ। এই ছয়টি প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে থাকা প্রজাতিটির বৈজ্ঞানিক নাম Adansonia za, এর স্থানীয় নাম Bozy, Bojy, Boringy, Bozeby ইত্যাদি নামে ডেকে থাকে।
এরা লম্বায় প্রায় ৩৩ থেকে ১৩১ ফিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর ব্যাসার্ধ ক্ষেত্রেবিশেষ ২০ফুট পর্যন্ত হতে পারে। উদ্ভিদের পাতা গুলো ৫-৮টি লোব এ ভাগ করা। প্রতিটি পাতা লম্বায় প্রায় ৫থেকে ১০ সে.মি এবং প্রস্থে ১.৫সেমি থেকে ২.৫সেমি পর্যন্ত হতে পারে। মাদাগাস্কারের নর্দান রিজিওনের বাওবা গাছ গুলো মাদাগাস্কারের অন্যান্য রিজিওনের চেয়ে বড় হয়ে থাকে। সেখানার গাছগুলোর পাতা লম্বায় প্রায় ২০সেমি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বাওবা গাছগুলো প্রায় তিন হাজার বছর বাচতে পারে। এদেরকে উল্টো গাছও বলা হয় কারন এর মাথার ডালপালা গুলোকে অনেকটাই বিন্যাসিত গাছের শেকড়ের মতো দেখায়।
বিসমার্ক পাম ট্রি হলো মাদাগাস্কারের আরেকটি স্থানীয় উদ্ভিদ যা প্রায় ৩০থেকে ৬০ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ঝড়ঝঞ্জার ফলে গাছটি সহজেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে। গাছটি সহজেই খরা এবং লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে।এদের পাতা বাড়ির ছাদ, দেয়াল দেয়ার কাজে বাবহার করা হয়। তেতো সাবু তৈরি করা যায় এই গাছ থেকে, যা অনেকেই খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে।
মাদাগাস্কারের স্থানীয় কলা যার স্তানীয় নাম ENSETE PERIRI CHEESEMAN। এরা বর্তমানে খুবই বিপন্ন। এদের উৎপাদন পুরো মাদাগাস্কের একটা নির্দিষ্ট অংশে হওয়ায় এরা অধিক বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এরা মাদাগাস্কারের শুষ্ক ট্রপিকাল বনাঞ্চলে জন্মে থাকে। এই গাছগুলো বিপন্ন হওয়ার অন্যতম কারনগুলোত মধ্যে আছে কৃষির জন্য বনাঞ্চল ধংস করণ এবং এক ধরনের ফাংগাল রোগ যা খুব সহজেই মাদাগাস্কারের স্থানীয় কলা গাছের ক্ষতি সাধন করে।
অক্টোপাস ট্রি ,মাদাগাস্কারের আরেকটি নান্দনিক এন্ডেমিক উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ গুলো সাধারনত মাদাগাস্কারের দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলে জন্মায়। এরা সাধারনত শুষ্ক বনভূমিতে বেশি জন্মায়। এদের দেহ কাটায় আবৃত আর পাতা ও কান্ড রসালো হওয়ায় এরা সহজেই শুষ্ক আবাহাওয়ায় নিজেকে টিকিয়ে নিতে পারে।
মাদাগাস্কারের প্রায় ১২০০০হাজারের মতো উদ্ভিদ রয়েছে যার ১০টির একটিই হলো অর্কিড। মাদাগাস্কারে প্রাপ্ত অর্কিডদের মধ্যে প্রায় ৮৫% আবার এন্ডেমিক। এমনই একধরনের অর্কিড হলো ডারঊইন্স অর্কিড।এদের আকৃতি অনেকটাই ছয়কোনী তারার মতো, এদের নেকটার স্পার খানিকটা মূল দেহ হতে বের হয়ে এসে এদেরকে অনন্য সৌন্দর্য দান করে।
ট্রাভেলার ট্রি হলো মাদাগাস্কারের আরেকটি অনন্য সুন্দর গাছ। এটিকে ট্রাভেলার ট্রি বলা হয় কারন এর পাতার গোড়ায় থলে মতোন স্থানে গাছ জরুরি সময়ে ব্যাবহারের জন্য পানি জমিয়ে রাখে।
ফলে ভ্রমনকারীরা যদি কখনো ভ্রমনে গিয়ে তৃষ্ণায় ভোগেন এবং আশেপাশে যদি কোন ট্রাভেলার পাম ট্রি থাকে তারা সহজেই তাদের তৃষ্ণা দূর করতে পারেন। এরা প্রায় ২৬ফিট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। গাছের মাথায় কলাপাতার মতো পাতা মেলে থাকা ময়ূয়ের পাখার মতো হয়ে সজ্জিত থাকে।
এছাড়াও এরকম আরো অনেক বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ মাদাগাস্কারে বিদ্যমান যারা মাদাগাস্কারের প্রকৃতিকে অনন্য অসাধারণ করে তুলছে সর্বদা।
বিপন্ন প্রকৃতিকূল,প্রকৃতি সংরক্ষন এবং আসন্ন চ্যালেঞ্জঃ
মাদাগাস্কার প্রাণ ও প্রকৃতির এক অপার মিলনক্ষেত্র। এখানকার প্রাণোচ্ছলতা যেকোন দেউলিয়া মনে এনে দেয় অপার প্রশান্তি। কিন্ত ক্রমশই মাদাগাস্কারের এই প্রাণ ও প্রকৃতি ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে অগ্রগামী হচ্ছে। এর অন্যতম কারন হচ্ছে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা।
১৯৫০সালে যেখানে এখানকার জনসংখ্যা ছিলো ৪১লাখ ৪৩হাজারের মতো সেখানে ১৯৭৩সালে জনসংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৭৯লাখ ৯৬হাজারের মতো।১৯৫০সালের আগে এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিলো ১% এর কম,১৯৫০থেকে ১৯৫৫সাল পর্যন্ত তা ছিলো ২.৬% এবং ১৯৬০সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিলো প্রায় ৩%।
এর থেকে বোঝাই যাচ্ছে গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি হটস্পট হিসেবে স্বীকৃত এই দেশটি ক্রমান্বয়ে মানুষের ভারে ভারী হয়ে উঠছে। বাড়তি এই মানুষের মৌলিক অধিকার আহরণের জন্য ক্রমান্বয়ে মানুষ বনভূমির ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। কৃষিকাজের জন্য বনভূমি পোড়ানো হচ্ছে।
আগেই বলা হয়েছে,বন্যপ্রাণী সংরক্ষনের অন্যতম প্রধান অন্তরায় হলো কৃষিকাজের জন্য বনভূমি পোড়ানো। ম্যানগ্রোভ বনভূমি গুলো চিংড়ি চাষের জন্য নষ্ট করা হচ্ছে। তাছাড়া এখানকার মানুষের প্রোটিনের জোগানের অধিকাংশই পূরন হয় স্থানীয় বন্যপ্রাণীর মাংস হতে। এছাড়া বন্যপ্রানীদের অবৈধ পাচারের ফলেও দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে বন্যজীবন।
এক পরিসংখ্যান এ দেখা গিয়েছে ১৯৫০সালে যেখানে মাদাগাস্কারের পুরো আয়তনের ২৭% বনভূমিতে সম্পূর্ণ ঢাকা ছিলো ২০০০সালে এসে তা দাঁড়ায় মাত্র ১৬% এ।
মাত্র ৫০বছরে প্রায় ৪০% বনভূমি হারিয়ে যায়,যা খুবই শঙ্কার কারণ। আগেই বলেছি, মাদাগাস্কার হলো পৃথবীর অন্যতম বৈচিত্র্যময় প্রানী আর উদ্ভিদদের আবাসস্থল। তাই বনভূমি রক্ষা না করলে বৈচিত্র্যময় এই প্রাণ গুলো খুব অদূরেই হারিয়ে যাবে।
ক্রমবর্ধমান মানুষের হাত থেকে বনভূমি আর প্রানীকূলকে রক্ষার চেষ্টা শুরু হয়েছিলো সেই ১৯২৭সালে। তখন ফ্রেঞ্চ কলোনিলায় অথোরিটি সর্বপ্রথম বন্যপ্রানী ও বনভূমি সংরক্ষণ শুরু করে। শুরুর দিকের এই সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রায় ৫লাখ ৬০হাজার ১৮১হেক্টর বনভূমি এই সংরক্ষিত হয়েছিলো।
মাদাগাস্কার সরকার সংরক্ষণ এলাকা বাড়ানোর জন্য “SAPM-SYSTEM OF MADAGASCAR’S PROTECTED AREAS” প্রোগ্রাম চালু করে যা মাদাগাস্কার সরকারের পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের আয়োতাধীন ছিলো। এই প্রোগ্রামটির মূল উদ্দেশ্য ছিলো “DURBAN VISION” এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যা ছিলো মূলত ২০০৩থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে PROTECTED AREA network ১.৮মিলিয়ন থেকে ৬মিলিয়ন এ উন্নীত করা।
বন্যপ্রানীদের যদি সঠিক সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হয় তবে কয়েকটি জিনিসের ওপর নজর দিতে হবে। বন্যপ্রানীদের নিরাপত্তায় যে আইন প্রচলিত আছে তার সঠিক এবং কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে। মানুষের জীবিকা এবং জীবন ধারণে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।
হাস,মুরগী,মাছ কিংবা খাবার উপযোগী চাষযোগ্য প্রোটিনের ব্যাবস্থা করার মাধ্যমে খাবারের উদ্দেশ্যে যেসব বন্যপ্রানী শিকার করা হয় তা কমাতে হবে। মাদাগাস্কারের অতি উচ্চ ইকোলজিকাল ভ্যালু সম্পর্কে স্থানীয় মানুষদের আরো বেশি সচেতন করতে হবে।
মাদাগাস্কারের স্থানীয় আইনশৃঙখলা বাহিনী কে প্রানীদের অবৈধ শিকার ও রপ্তানি হওয়া রোধ করতে হবে।
ভালো থাকুক প্রাণ,ভালো থাকুক প্রকৃতি,প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেবো সবাই একই প্রকৃতিতে।
প্রকৃতি সমান- সবার জন্যে।