মানুষের আগ্রাসনের ফলে দিনে দিনে ধংস হচ্ছে আমাদের জীববৈচিত্র।পরিবেশ নিধনের সাথে সাথে আমরা ক্রমাগত ধংস করছি বনাঞ্চলে বাসকরা অসংখ্য বন্য প্রানীদের আবাসস্থল।
ধংস হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিতে হাজার বছর ধরে চলমান খাদ্যশৃংখল।যার প্রভাব এখন স্পষ্ট।কয়েক হাজারেরও বেশি প্রানী আজ বিলুপ্তির পথে।এদের মধ্যে আমাদের অহংকার বেঙ্গল টাইগার সহ প্রকৃতিতে বাস করা সব গুলো বিগ ক্যাটরাও আজ বিলুপ্তির পথে।আজ আমরা বিলুপ্তির পথে থাকা এসব বিগ ক্যাটদের সম্পর্কে খানিকটা জানবো।
বেঙ্গল টাইগার বা রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Panthera tigris )ঃ
বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের জাতীয় পশু হিসেবেই মূলত পরিচিত ।এটি সাধারণত দেখা যায় বাংলাদেশ ও ভারতে। এছাড়াও নেপাল,ভূটান, ও দক্ষিণ তিব্বতের কোন কোন অঞ্চলে এই প্রজাতির বাঘ দেখতে পাওয়া যায়। বাঘের উপপ্রজাতিগুলির মধ্যে বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যাই সর্বাধিক।
বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা অনধিক ৪৫০ টি,ভারতীয় সরকারের এক হিসেব অনুসারে ভারতে বেঙ্গল টাইগারের বর্তমান সংখ্যা ১,৪১১ টি,নেপালে আছে১৫৩-১৬৩ টি ও ১০৩ টি ভূটানে ।কয়েকদশক আগেও এদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই বাঘের বিচরন ছিলো।
১৯৬০ এর দশকে ভাওয়াল গড়,ঢাকার মধুপুরে বাঘের অবাধ বিচরন ছিলো।২০০৪সালের শুমারি অনুসারে এদেশে বাঘের সংখ্যা ছিলো ৪৫০টি।কয়েক বছর বাঘের সংখ্যা নিন্মমুখী হলেও বর্তামানের এক রিপোর্ট অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বাংলাদেশের সুন্দরবনে।বর্তমানে সারা বিশ্বে বাঘের মোট সংখ্যা ৩০০০এর মতো যার অধিকাংশই ভারতীয় উপমহাদেশে।
এই প্রানীটিকে ইতি মধ্যেই আইসিবিএন এর রেড লিস্টের অন্তর্ভুক্ত। টিসিএম এর ব্যাবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে দিন দিন এর ব্যাবহার কমছে।হয়তো শতকের শেষ দিকে প্রানীগুলোকে আমরা পুরোপুরিই হারিয়ে ফেলতে চলেছি।
[সোর্স]
সিংহ(Panthera leo)ঃ
সিংহ ফেলিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত প্যানথেরা গণের চারটি বিগ ক্যাটের একটি। সিংহেদের দুটি উপপ্রজাতির একটি হল আফ্রিকান সিংহ অপরটি হলো এশীয় সিংহ।
আফ্রিকান সিংহ মোটামুটি আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এদের প্রতুলতা থাকলেও ভারতীয় সিংহ শুধুমাত্র ভারতের গির অভয়ারণ্যে পাওয়া যায়। তাই সংখ্যাধিক্যের দরুন সিংহ বলতে বর্তমানে শুধু আফ্রিকান সিংহদেরকেই বোঝায়।আফ্রিকান সিংহদের সংখ্যা বর্তমানে ত্রিশ হাজারের কাছাকাছি হলেও এশীয় সিংহদের সংখ্যা ২০১৫সালের হিসেন নাগাত ৫২৩টির মতো।
পুরুষ সিংহদের ওজন গড়ে ১৫০ থেকে ২৫০কেজি এবং ম্যে সিংহদের ওজন গড়ে ১২০ থেকে ১৮২কেজির মতো হয়ে থাকে।১৯৭৫ সালে আফ্রিকান সিংহের সংখ্যা যেখানে ২.৫লাখের মতো ছিলো বর্তমানে তা ৩০০০০কোটায় এসে ঠেকেছে।এরাও আইইউসিএন এর রেড লিস্টের অন্তর্ভুক্ত।
চিতাবাঘ (Panthera pardus)ঃ
এদেরকে অনেকে গুল বাঘও বলে থাকেন।এ প্রাণীটি দেেখা যায় সাব সাহারান আফ্রিকান অঞ্চল জুড়ে। দুনিয়ায় প্রজাতিটি আশঙ্কাজনক হারে কমে আসছে আবাসস্থল হ্রাস,খাবার সংকট ও চোরাশিকারের ফলে।
সে কারণে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা আইইউসিএন চিতাবাঘকে প্রায়-বিপদগ্রস্থ বলে ঘোষণা করেছে। হংকং,সিঙ্গাপুর,তিউনিসিয়া সহ বিভিন্ন দেশে আঞ্চলিক ভাবে চিতাবাঘ আজ বিলুপ্ত। প্যান্থেরা গণের মোট চারটি অনেক বড় বিড়ালের মধ্যে চিতাবাঘই সবচেয়ে ছোট।অন্য বড় তিনটি বিড়াল হলো হল সিংহ,বাঘ আর জ্যাগুয়ার।পৃথিবী ব্যাপি চিতাবাঘদের মৃত্যু হার দিন দিন আশংকাজনক হারে বাড়ছে।
ভারতে ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন সোসাইটির হিসেব অনুযায়ী ২০১৮ সালে ৪৬০ এবং ২০১৭ সালে ৪৩১টি চিতা বাঘ ভারতে মৃত্যু বরন করে রোড এক্সিডেন্ট,মানুষের স্বেচ্ছাচারীতার জন্য মৃত্যুবরন করেন।বর্তমানে সারা বিশ্বে এদের সংখ্যা সাত হাজারের থেকে একটু বেশি।হয়তো বেশিদিন এদেরকেও হয়তো আমরা হারিয়ে ফেলবো।
জাগুয়ার (Panthera onca) ঃ
জাগুয়ার চিতাবাঘের মতই গায়ে ছাপওয়ালা। জাগুয়ার এদের থেকে অনেক বলিষ্ঠ ও বৃহৎ।শুধু আমেরিকা মহাদেশীয় ভূখণ্ডেই দেখতে পাওয়া যায় জাগুয়ারদেরকে।এরা প্রায় আশি ধরনের প্রানী শিকার করতে পারে যার মধ্যে কুমিরও বিদ্যমান রয়েছে।
এদের স্বাভাবিক জীবনকাল ১২-১৫ বছর।আমেরিকাতে এরাই একমাত্র বিগ ক্যাট।বাঘ আর সিংহের পরে বিগক্যাট্যদের মধ্যে এরা আকৃতিতে সর্বোচ্চ বৃহত্তম।আবাসস্থল এর অপ্রতুলতা,অবৈধ বানিজ্য,চোরা শিকার সহ নানা কারনে এরা আজ বিপদাপন্ন।আইইউসি এর রেড লিস্টে এরা সামিল।
চিতা (Acinonyx jubatus) ঃ
ফেলিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী এই চিতা।চিতার সাথে আমরা প্রায়ই চিতাবাঘকে গুলিয়ে ফেলি।চিতা আর চিতাবাঘের সাথে মূল পার্থক্য হলো চিতা আসিনোনিক্স গোত্রের অন্তর্ভুক্ত আর চিতাবাঘ প্যানথেরা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ।
চিতা পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম স্থল প্রাণী যাদের সর্বোচ্চ বেগ ঘন্টায় প্রায় ৯০-১০০কিমি/ঘন্টায়।এক পরিসংখ্যান অনুসারে সারা বিশ্বে এখন মাত্র কয়েক হাজার চিতাই বেচে আছে।সংখ্যাটি ৭হাজারের থেকে কিঞ্চিত বেশি।তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো অধিকাংশ চিতার(৭৭%) আবাসস্থলই সংরক্ষিত বন্যপ্রানী আবাসস্থলের বাইরে।তাই সহজেই তারা মানুষের হাতে পড়ে প্রান হারাচ্ছে।এই প্রানীগুলোও আইইউসিএন এর রেডলিস্টের অন্তর্ভুক্ত।
[সোর্স২]
কুগার (Puma concolor)ঃ
কুগার হলো বড় বিড়াল জাতীয় একটি হিংস্র প্রাণী। কুগার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন,পাহাড়ি সিংহ, পুমা, প্যান্থার, পাহাড়ি বিড়াল বা ক্যাটামাউন্ট প্রভৃতি ।
এদের আবাসস্থল উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকায়। ইয়ুকোন প্রভিন্স(কানাডা) থেকে শুরু করে দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ আন্দিজ পর্বতমালা পর্যন্ত এর বিস্তৃতি।সবধরনের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হওয়ায় আমেরিকার বেশির ভাগ অঞ্চলেই কুগারদের দেখা মেলে। জাগুয়ারের পর এটি নতুন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বিড়াল।এদের উপপ্রজাতির সংখ্যা প্রায় ছয়টি।২০১১সালে যুক্তরাষ্ট্রে পূর্বাঞ্চলীয় কুগার বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়।বর্তমানে এদের অবস্থাও সংকটাপন্ন।এরাও আইইয়সিএন এর রেডলিস্টের অন্তর্ভুক্ত।
লিখাঃপ্রীতম মজুমদার