প্রথমেই প্রশ্ন আসে যে সেই পৃথিবীতে কী কঅরে এমিনো এসিড উৎপন্ন হলো? আর যেহেতু আমরা হাইড্রোথার্মাল ভেন্টকেই প্রাণের বিকাশের জায়গা ধরেছি, তাই এমিনো এসিডকেও আগে সেখানেই গঠিত হতে হবে, তারপর না হয় প্রোটিন গঠন করবে।লস্ট সিট ভেন্টের বেশ কাছে থেকে প্রাপ্ত পাথরের নমুনায় বিজ্ঞানীরা এমইনো এসইড পেয়েছেন।ভেন্টের দেয়ালের অতিক্ষুদ্র ছিদ্রগুলো ন্যানোরিয়েক্টরের কাজ করেছিল।
আর আয়রনপূর্ণ কাদা তার প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিল। ফলে গঠিত হয়েছিল ট্রাইটোফান এমিনো এসিড।বিক্রিয়াটা ছিল ফ্রিডেল-ক্রাফটস টাইপ রিয়েকশন।এখানে কার্বন রিং এর সাথে শাখা-প্রশাখা যুক্ত হয়।যা এমিনো এসিড এর গঠনের অনুরূপ।তাছাড়া, প্রাইমর্ডিয়াল স্যুপ পর্বে আমরা জেনেছিলাম যে ইউরি-মিলার এক্সপেরিমেন্টও এমিনো এসিড তৈরি করেছিল।
যদিও সেটা ভেন্ট হাইপোথিসিসের বিরুদ্ধে, কিন্তু তাও প্রাচীন পৃথিবীতে এমিনো এসিড গঠনের পক্ষে প্রমাণ স্বরূপ।বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর আগেও পৃথিবীতে প্রায় ১০ রকম এমিনো এসিড উপস্থিত ছিলো, যারা ভাজ হতে সক্ষম প্রোটিন তৈরি করতে পারে।এমন প্রোটিনরাই কোষের মেটাবোলিক এক্টিভিটিতে সাহায্য করেছিল বলে তাদের ধারণা।
প্রথম যে প্রাণের রূপ টা ছিল, সেটা ছিল অবশ্যই মাইক্রোস্কোপিক, কোষের মতো অর্গানিজম, যেটা রেপ্লিকেট বা নিজের প্রতিলিপি তৈরিতে সক্ষম ছিল আর নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর যোগ্যতা রাখত। মানে, পৃথিবীতে প্রাণের শুরুটা ছিল সাদা-মাটা টাইপের।
মাঝখানে আরেকটা কথা বলা দরকার, পৃথিবীতে কোনটা আগে তৈরি হয়েছে, মানে নিউক্লিক এসিড আগে, প্রোটিন আগে নাকি মেমব্রেন আগে, তা নিয়ে হাজারো হাইপোথিসিস আছে, নিউক্লিক এসিডের মধ্যে আবার ডিএনএ আগে না আরএনএ আগে তা নিয়েও দ্বন্দ্ব আছে। সেগুলো আমি আরো পরের পর্বে আলোচনা করব। কারণ আমাদের উদ্দেশ্য প্রাণের গঠন বোঝা।
যেইটাই আগে হোক আর যেইটাই পরে হোক, হলেই হলো। কারণ শেষমেষ তারা একটা জিনিসই তৈরি করবে,প্রাণ! তাই আপাতত আমরা প্রত্যেকটার আলাদা আলাদা করে গঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া জানব। তো, আগের কথায় ফিরে যাই, বিজ্ঞানীদের বিস্তারিত গবেষণা এটাই বলে যে, একটা হ্যালোফিল এনভায়রনমেন্ট বা লবণাক্ত পরিবেশ প্রোটিন তৈরি হওয়ার মানে এমিনো এসিড ভাজ হওয়ার জন্য আদর্শ।
যদি এমিনো এসিড ভাজ না হতো তাহলে প্রোটিন সেইসব কাজ করতে পারত না যেগুলো জীবনকে সঠিক ভাবে চালনার জন্য অপরিহার্য। প্রোটিনের ভাজ হওয়া একে একটা গোলাকার আকৃতি দিতে সহায়তা করে, যার ফলে প্রোটিন অন্যান্য প্রোটিনের সাথে যুক্ত হতে পারে, নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া করতে পারে আর তার চারপাশের পরিবেশকে কাজে লাগাতে পারে।
এমন অনেক উপযুক্ত জায়গা আছে যেখানে প্রাণের বিকাশ ঘটে থাকতে পারে।যেমন- এক্সট্রিমোফিল, বা চরম পরিবেশের জীব, এরা উচ্চ তাপ-চাপ-শীত-অম্ল বা ক্ষারীয় পরিবেশে বেচে থাকতে পারে, আর প্রাণকে যদি তেমন একটা পরিবেশে টিকে থাকতে হয়, তাহলে প্রোটিনের ভাজ হঅওয়া আবশ্যক।
আবার, এরও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে মহাকাশ থেকে উল্কা-ধূমকেতু পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছে, তাদের মাধ্যমেও এইএমিনো এসিড পৃথিবীতে আসা সম্ভব। এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, আমি বলছিনা যে প্রাণ মহাকাশে বিকশিত হয়ে পৃথিবীতে কোনোভাবে এসেছে,(এই হাইপোথিসিসের নাম প্যান্সপারমিয়া),আমি এইটা বলছি যে ওই এমিনো এসিড হয়তো মহাকাশ থেকে এসে থাকতে পারে। আসলে আমি না, গবেষকরা বলছেন।
বর্তমানে মানবদেহ ২০ টা সাধারণ এমিনো এসিড ব্যবহার করে থাকে এর সকল প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরির জন্য।এদের মধ্যে ১০ টা বায়োসিন্থেটিক পদ্ধতিতে বা জৈবিকভাবেই উৎপন্ন হয়, যেই পদ্ধতিতে প্রাণের বিবর্তন হয়েছিল। আর বাকি দশটা, যেটাকে বলা হয় প্রি-বায়োটিক সেট বা বাংলায় বললে হয় প্রাক-জীবনীয় সেট। এই সেটটা কোনো প্রকার জৈবিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই শুধুমাত্র কেমিক্যাল রিয়েকশনের মাধ্যমে তৈরি করা যায়।
গবেষকরা ছোট ছোট পেপটাইড গঠনকারী উপাদান দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন যে এরা অবিরতভাবে নিজেদেরকে নির্দিষ্ট আর জটিল কিছু আকৃতি দিতে পারে। যেই বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন, তার নাম টপ-ডাউন সিমেট্রিক ডিকন্সট্রাকশন। এখন তাদের গবেষণা হলো এই নিয়ে যে, সেই উপাদানগুলো মাত্র ওই প্রাক-জীবনীয় সেটের ১০ টা এমিনো এসিড দিয়ে তৈরি হতে পারে কিনা, আর পারলেও ভাজ হতে সক্ষম কিনা।
গবেষকদের দল এখন পর্যন্ত ১২ টা এমিনো এসিড দিয়ে গঠিত প্রোটিনে ভাজ হওয়ার সক্ষমতা পেয়েছেন। যেটা তাদের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮০ শতাংশ।কিন্তু বিজ্ঞান এতে সন্তুষ্ট নয়, সে শতভাগ সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত, “চলছে খেলা, চলবে”।আরো গবেষণা চলল, যে কীভাবে কোনো প্রোটিন আরএনএ অথবা ডিএনএ ছাড়া নিজে নিজেই সংশ্লেষিত হতে পারে? কারণ ডিএনএ আর আরএনএ তে প্রোটিন সংশ্লেষণের তথ্য বা নির্দেশিকা সংরক্ষিত থাকে, আর সেটা অনুযায়ী প্রোটিন কাজ করে।
এবার আরেকদল বিজ্ঞানী গবেষণা করে ধারণা দিলেন ডেপসিপেপটাইডের।ডেপসিপেপ্টাইড কি জিনিস, তা বোঝার আগে পেপটাইড কী জিনিস সেটা বোঝা দরকার।আগের পর্বে এই নিয়ে বলেছিলাম,তাই মনে থাকার কথা, তাও একবার মনে করিয়ে দেই,এমিনো এসিডের ছোট ছোট চেইনকে বলে পেপটাইড।
যখন এই চেইন অনেক লম্বা হয়ে যায়, তখন একে বলে পলিপেপটাইড আর তারপর ভাজ হয়ে নানা আকৃতি গঠন করলে প্রোটিন। জীবন্ত কোষ একটা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যেখানে ডিএনএ এর মাধ্যমে এমিনো এসিডগুলো নির্দিষ্ট একটা মাধ্যমে যুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট কিছু পেপটাইড তৈরি করে আর সেগুলো যুক্ত হয়ে হয় প্রোটিন।
সুতরাং, কোষে প্রোটিনের কাজ করার জন্য এই মধ্যস্থ পলিপেপ্টাইড চেইন গুলোকে হতে হবে আঠালো সুতার মতো, যারা জড়িয়ে-পেচিয়ে কার্যকরী আকৃতির প্রোটিন তৈরি করবে। প্রাণের একদম আদি রূপ, যেখানে না ছিল কোষ, না ছিল ডিএনএ, সেখানে পলিপেপটাইড গঠন হওয়ার জন্য এমিনো এসিডের কোনোভাবে একে অপরের সাথে যুক্ত হওয়ার দরকার ছিল, কিন্তু এই পেপ্টাইড চেইন গুলো গঠিত হওয়া বেশ কঠিন।
আরেকধরনের বন্ধন, যাকে বলে ইস্টার বন্ধন, এরা খুব সহজে গঠিত হতে পারে। ইস্টার হলো এমন একটা জৈব যৌগ যা কোনো এসিডের হাইড্রোজেনকে এল্কাইল অথবা অন্য কোনো জৈব যৌগ দ্বারা স্থানান্তর করে পাওয়া যায়। এই ইস্টার বন্ড বা বন্ধনগুলো খুব সহজে এমিনো এসিডের সাথে প্রায় একই ধরনের যৌগ, হাইড্রক্সি এসিডের বন্ধন তৈরি করতে সক্ষম।
এই হাইড্রক্সি এসিড এতটাই এমিনো এসিডের মতো যে, মাঝে মাঝে এরা এমিনো এসিডের বদলে কাজ করতে পারে। তো, গবেষকরা তিনটা এমিনো এসিডের সাথে তিনটা হাইড্রক্সি এসিড মিশিয়ে দিলেন একটা জলীয় দ্রবণে। আর তারা গঠন করল ডেপসিপেপ্টাইড, যা হলো এমিনো এসিডের আর হাইড্রক্সি এসিডের লম্বা চেইন যাদেরকে সবিরতভাবে ধরে রাখে ইস্টার আর পেপ্টাইড বণ্ড। এই হাইড্রক্সি এসিডগুলো কাজ করেছে সেই চেইনগুলোকে একসাথে আটকে রাখার জন্য, যা অন্যথায় গঠন করা বেশ কঠিন হতো।
আর হাইড্রোথার্মাল ভেন্টের পর্বে বলেছিলাম যে ভেন্টের দেয়ালের মধ্যে মাইক্রোস্কপিক ছিদ্র থাকে যার মধ্যে থাকে পানি-শোষণকারী বিভিন্ন ধরনের পদার্থ, যার ফলে সেখানে ভেজা-শুকনো, উভয় পরিবেশ একটা চক্রাকারে থাকা সম্ভব, আর এই পরিবেশে বিভিন্ন যৌগ ঘনীভূত হয়ে আরো জটিল জটিল যৌগ গঠন করতে পারে। প্রোটিনের ক্ষেত্রে একই কথা, গবেষকরা ওই পানির দ্রবণে একবার একটু শুষ্ক, আরেকবার একটু ভেজা, এমন পরিবেশ বারবার তৈরি করে দেখেছেন যে ডেপসিপেপ্টাইড গুলো আরো উন্নত হচ্ছিল।
আবার, সেই দ্রবণের পানির তাপমাত্রা রাখা হয়েছিল, ৫৫-৮৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে। হ্যা, এটা ভেন্টের তাপমাত্রা। ইস্টার বণ্ড ভাঙা তুলনামূলক সহজ। তাই, সেই গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যে চেইনগুলোর হাইড্রক্সি এসিডের দিকে এসে এমিনো এসিডগুলো ধরে রাখার প্রবণতা বেশি, যারা শক্তিশালী পেপ্টাইড বণ্ড দ্বারা যুক্ত ছিল ফলে, চেইনগুলো আরো বেশি রূপ-বদল করে আরো বেশি এমিনো এসিড এর সাথে যুক্ত হতে পারত দীর্ঘস্থায়ী হয়ে।
আবার মাঝে মাঝে হাইড্রক্সি এসিডগুলো তাদের পার্টনার এমিনো এসিডের চেইন ছেড়ে দিচ্ছিল, আর নতুন এমিনো এসিড সেই জায়গায় যুক্ত হচ্ছিল, সেখানে তারা দৃঢ় ভাবে অবস্থান করেছিল।এমনকি, কিছু সংখ্যক ডেপসিপেপ্টাইড চেইনে শেষমেষ শুধুমাত্র এমিনো এসিডই থেকে গেল।
আর হাইড্রক্সি এসিডের শুধু চিহ্নমাত্র অবশিষ্টাংশ ছিল।আর প্রায় সাড়ে ছয়শ রকমের ডেসিপেপ্টাইড তৈরি হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন, প্রত্যেকটক এসিড এর মাত্র ১০ টা করে নিলেই ১০ ট্রিলিয়ন, মানে ১০,০০০,০০০,০০০,০০০ টা ডেসিপেপটাইড তৈরি হতো।আচ্ছা,তাহলে ডেপসিপেপ্টাইড না হয় তৈরি হলো, এবার এগুলো ভাজ হতে হবে, মানে ফোল্ডেবিলিটি থাকতে হবে, নাহলে প্রোটিন তৈরি হবে না।
কিন্তু এটাতো নিউক্লিক এসিডের সাহায্য ছাড়া অসম্ভব। তাহলে প্রথম প্রোটিনগুলো কীভাবে তৈরি হলো? ১৯৮৫ সালে একদল গবেষক এই সমস্যার একটা আপাত সমাধান দেন। এখানে বলা হয় যে, একটা প্রোটিনের মধ্যে এমইনো এসিডের ক্রম প্রোটিনটা কীভাবে ভাজ হবে, তা নির্দেশ করে।এই মডেলের নাম তারা দেন হাইড্রোফোবিক পোলার প্রোটিন ফোল্ডিং মডেল।
এখানে প্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন গঠনকারী ২০ টা এমিনো এসিডকে ২ টা সাব-ইউনিটে ভাগ করা হয়। একটা হলো পোলার বা আহিত মনোমার আর আরেকটা নন-পোলার বা অনাহিত মনোমার।এই মডেল অনুযায়ী, এই দুই ধরনের মনোমারগুলো একটা দ্বি-মাত্রিক জালির প্রত্যেক ছেদবিন্দুতে বসে নির্দিষ্ট ক্রম অনুযায়ী একটা চেইনকে ভাজ করতে পারে, মানে অনেকটা চেকারবোর্ডের ওপর তাদেরকে সংলগ্ন বর্গক্ষেত্রগুলোর ওপরে বসানোর মতো।
কোন বর্গে কোনটা থাকবে, সেটা নির্ভর করে নন-পোলার বা হাইড্রোফোবিক মনোমার গুলোর জট পাকানোর টেন্ডেন্সির উপর, যাতে তারা পানি থেকে দূরে থাকতে পারে।এই তত্ত্ব দিয়ে অনেককিছু অনেককটাই ব্যাখ্যা করা যায়। তো প্রশ্নটা ছিল কী? কোন জিনিসটা আত্ম-নির্ভরশীন ছিল, মানে নিজেই কোষের ভেতরের কাজগুলো করতে পারত?
আর উত্তরটা আমরা পেলাম প্রোটিন। যাকে বলা যায় ফোল্ডেবল পলিমার বা ফোল্ডেমার।উপরে আলোচিত মডেলে গবেষকরা হাইড্রোফোবিক আর হাইড্রোফিলিক কতগুলো মনোমারের একটা সেট উৎপাদন করতে পেরেছেন।যেগুলোতে ছিল সম্ভব সকল পোলার আর নন-পোলারের বিন্যাস। সর্বোচ্চ ২৫ টা এমিনও এসিড পর্যন্ত লম্বা ছিল এগুলো। তবে, সম্পূর্ণ ক্রমের মাত্র ২.৩% মিলে জটিল ফোল্ডেমার গঠন করেছিল আর তাত ১২.৭%, মানে সম্পূর্ণটার মাত্র ০.৩% ভাজ হয়ে এমন আকৃতি গঠন করেছিল, যা একটা হাইড্রোফোবিক অংশ বাইরের দিকে যুক্ত রেখেছিল।
এখন, গবেষকরা কেন হাইড্রোফোবিক অংশটাকেই বাইরে চাচ্ছেন? কারণ আমরা জানি যে হাইড্রোফোবিক রা পানি থেকে দূরে থাকতে চায়, তাই, যদি একটা হাইড্রোফোবিক অংশ বাইরে পানির সাথে থাকে, তাহলে যদি আশেপাশে আরো কোনো হাইড্রোফোবিক অংশ পানতে ভাসমান থেকে থাকে, তাহলে তারা পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে নিজেদের মাঝে পানিশূণ্য পরিবেশ তৈরি করতে চাইবে।মানে, এইযে চীন-ভারত প্রায় একটা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছে, এখন পাকিস্তান এর সুযোগ নিতে পারে।
ওদিকে চীনও ভারতের শত্রু, এদিকে পাকিস্তানও ভারতের শত্রু, এবার তারা দেখা গেল এক হয়ে মাঝখানের ভারতে আক্রমণ করল। এভাবেই, দুইটা হাইড্রোফোবিকেরই শত্রু পানি, এবার তারা যুক্ত হয়ে মাঝখানের পানিকে সরাবে।তাই, ওই জটিল গঠনের বাইরের দিকে একটা হাইড্রোফোবিক প্যাচ বা অংশ থাকলে এটা অন্য একটা হাইড্রোফবিক অংশ যুক্ত যৌগকে বা এমিনো এসিডের ক্রমের চেইনকে আকর্ষণ করবে। এবার, শুধু এই দুইটাতে কাজ হবে না।
লাগবে আরেকটা শুধু হাইড্রোফোবিক অংশ, যেটা কোনো চেইনের সাথে যুক্ত না। একটা অণু মাত্র। এবার, যদি এমন সিংগেল একটা হাইড্রোফোবিক অণু আর একটা ২য় হাইড্রোফোবিক অংশযুক্ত চেইন একই সাথে ওই প্রথম হাইড্রোফোবিক প্যাচ এ এসে যায়, তাহলে থার্মোডাইনামিক্সের নিয়ম অনুযায়ী তারা তিনজনই যুক্ত হয়ে যাবে।
এক কথায়, প্রথম প্যাচ বা অংশটা এমিনো এসিড পলিমারদের জন্য লম্বাকরণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে, মানে পলিমারকে দীর্ঘ করতে সহায়তা করবে। এবার, সেই এক্সপেরিমেন্টে দেখেছিলাম যে খুবই কম সংখ্যক পলিমার এমন ঘটাতে পারে।সেই কম সংখ্যকদের মধ্যে আবার কয়েকজন “অটোক্যাটালাইটিক সেট” তৈরি করে। এর বাংলাটা ঠিক জানি না, কিন্তু এটা বোঝায় যে, যারা এমনি এমনি প্রভাবিত করতে পারে।এখানে, ফোল্ডেমার গুলো প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে নিজেদের প্রতিলিপি তৈরি করাকে প্রভাবিত করে।
অনেকসময় একাধিক ফোল্ডেমার যুক্র হয়ে মিউচুয়াল ক্যাটালাইসিস তৈরি করে।মানে, তারা একে অপরকে গঠন করতে প্রভাবক হিসেবে বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। এমনদের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। ধরি, হাজারে একটা। কিন্তু সেই ভেন্টে মাত্র হাজারটা ছিল না। ছিল ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন।তাহলে,এতক্ষণে আমরা জানলাম যে এভাবেই প্রোটিন নিজেকে সংশ্লেষণ করতে সক্ষম ছিল কোনো সাহায্য ছাড়া।
তাহলে পরে আরএনএ আর ডিএনএ কীভাবে সংশ্লেষণের জন্য প্রোটিনের জায়গা নিল?আসলে প্রোটিনের আত্ম-সংশ্লেষণের এই প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল, যেটা আরএনএ আরো সহজে করতে পারে। তাই সে টিকে গেছে আর প্রোটিন এই কাজ বাদ দিয়েছে।
লিখাঃতাহসিন আহমেদ অমি