যখন খুব দ্রুত একটা পাখি আপনার দিকে উড়ে আসে, তখন আপনি কি করেন? খুব তাড়াতাড়ি সরে যান, তাই তো? এই তাড়াতাড়ি সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা নিতে আপনাকে আপনার মস্তিষ্ক সাহায্য করে। আমাদের চোখে যে তথ্যটা আসে, সেটা আসলে প্রথমে আমাদের অপটিক স্নায়ু থেকে আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছায়, এরপর আমাদের মস্তিষ্ক ঐ তথ্যটাকে নিয়ে চিন্তা করে এবং সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের সাহায্য করে।
পৃথিবীর প্রায় ৯৫% প্রাণীরই চোখ আছে। এর মধ্যে কিছু কিছু প্রাণীর চোখ খুবই সাধারণ কাজ করে। যেমনঃ আলো আর অন্ধকারে সাড়া দেয়া।
কিছু কিছু প্রাণীর চোখের অবস্থান মানুষের মতোই, খুব কাছাকাছি দুটি চোখ অবস্থান করে যেন দৃষ্টির গভীরতাটা বেশি হয়। কিন্তু কিছু প্রাণীর চোখ বেশ দূরে অবস্থান করে এবং মাথার বিপরীত দুই পাশে থাকে। এভাবে তাদের দৃষ্টিসীমার আওতাধীন এলাকা অনেক বৃদ্ধি পায়। এতে তাদের শিকার বা শিকারিকে সহজেই খুঁজে বের করতে সহজ হয় যেমনঃ ইঁদুর।
চোখের ভিতরের যে অংশটা আলোক সংবেদনশীল, সে অংশটির নাম রেটিনা। ক্যামেরাতেও এইরকম রেটিনা থাকে যা আলো পেলে প্রতিক্রিয়া দেখায়।
রেটিনার ভিতরে দুই ধরণের কোষ থাকে। এক ধরণের কোষ আলোর রং নির্ণয় করে। আরেক ধরণের কোষ খুব কম আলোয় দেখতে সাহায্য করে।
চোখের যে অংশটা আমাদেরকে বিভিন্ন বস্তুকে ফোকাস করতে সাহায্য করে, সেটার নাম লেন্স। লেন্সের মাধ্যমেই আমরা দূরের ও কাছের বিভিন্ন বস্তুকে স্পষ্ট দেখতে পাই।
চোখের মাঝে অবস্থিত গোল গাঢ় অংশটির নাম পিউপিল বা চোখের মণি। আলোর তীব্রতা অনুযায়ী এটি ছোট কিংবা বড় হয়।
পিউপিলের চারপাশে অবস্থিত রঙ্গিন অংশটির নাম আইরিশ। আইরিশ পিউপিলের ছোট বা বড় হওয়া আকারকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর রং লাল, নীল, বাদামি বিভিন্ন রকম হতে পারে।
প্রাণিজগতে ভিন্ন ভিন্ন সদস্যের ভিন্ন ভিন্ন রকমের চোখ আছে। যেমন মানুষের চোখ একটি মাছির চোখের চেয়ে আলাদা। মাছির চোখ সহজেই দ্রুত চলাচল নির্ণয় করতে পারে, যেটা মানুষের চোখ পারে না।
মানুষের চোখের ভেতরে একটি ব্লাইন্ড স্পট নামক ছোট অংশ আছে, যেখান থেকে অপটিক স্নায়ু রেটিনার মধ্যে দিয়ে চলে গেছে। মানুষের একটি চোখ একটু কম দেখলে অন্য চোখ সেটুকু পূরণ করে দেয়, তাই একটি চোখের সীমাবদ্ধতা অতটা বোঝা যায় না।
দূরের বা কাছের বস্তুকে স্পষ্টভাবে দেখতে সমস্যা হলে কন্টাক্ট লেন্স বা চশমা ব্যবহার করা হয় যার ফলে দীর্ঘ দৃষ্টি বা হ্রস্ব দৃষ্টি এর সমস্যা ঠিক হয়ে যায় এবং স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়।
মাতৃগর্ভে ভ্রুণ গঠন শুরুর দু’সপ্তাহ পরে চোখ তৈরী হওয়া শুরু হয়।
চোখের পাতা বা eyelash গুলির আয়ু ৫ মাস।
এক ব্যক্তির জীবনকালে চোখের পাতাগুলির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৮ ফুট হয়।
চোখের মণি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একই মাপের থাকে।
কর্নিয়া হল একমাত্র টিস্যু, যাতে রক্ত নেই।• আমাদের মোট স্মৃতিশক্তির ৮০ শতাংশই আমাদের চোখে দেখা।
অন্ধ ব্যক্তিরাও স্বপ্ন দেখেন। তবে, জন্মান্ধ হলে তা পারেন না।• মানব দেহে মস্তিষ্কের পর চোখই হল সব থেকে জটিল অঙ্গ।
আমাদের চোখের মণির মাত্র ১/৬ অংশ দেখতে পাওয়া যায়।
মানুষের চোখ প্রায় ১ কোটি রং বুঝতে পারে।
যদি মানুষের চোখ একটি ক্যামেরা হত তবে তার ক্ষমতা ৫৭৬ মেগাপিক্সেলস।
উটপাখীর চোখ তার মস্তিষ্কের চেয়েও বড়।
বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের চোখ এখন পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটিতে সুরক্ষিত অবস্থায় রাখা হয়েছে।•
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, সূর্যের তাপে আপনার চোখ বার্ণ হতে পারে!
গিরগিটি তার দুটি চোখ একই সাথে ভিন্ন ভিন্ন দিকে ঘুরাতে পারে।
মানুষ এমন এক প্রজাতির প্রাণী, যারা কারো চোখ দেখেই তার ভাবভঙ্গি বুঝে নিতে পারে।
ডলফিন এক চোখ বন্ধ করে ঘুমায়।
আপনি চোখ বন্ধ না করে কখনই হাঁচি দিতে পারবেন না।
২০১৪ সালে তাইওয়ানের একজন ছাত্র একটানা ৬ মাস কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করার ফলে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আমরা জানি বক চোখে ঠোকর দেয়। কিন্তু কেন? সাধারণত বক যখন আপনার চোখে তারই প্রতিবিম্ব বা ছবি দেখে তখন অন্য বক ভেবে তাকে আঘাত করার জন্য ঠোকর দেয়।
চোখ শ্রষ্ঠার অমূল্য দান। অন্ধ ব্যক্তিরা জগতের বিভিন্ন সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হয়। তাই সকলের উচিৎ বেশি বেশি করে চোখের যত্ন নেয়া। নিয়মিত চোখের যত্ন নিন। ফ্যাশনের জন্য নিন্মমানের লেন্স ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার সাময়িক সৌন্দর্য যেন সারাজীবনের জন্য ভয়াবহ কিছু না ঘটায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
লিখাঃনাজিফা তাসনিম