কিছুমাস আগে “Thadam” নামের একটা তামিল মুভি দেখছিলাম, মুভির কাহিনি বেশি কিছু বলতে চাই না। জমজ ভাই একজন ইন্জিনিয়ার ইজিল ভদ্র সভ্য। অন্যজন সম্পূর্ণ আলাদা বখাটে কাভিন।
একটা খুন হয় ও যাকে খুন করা হয় তার বাড়ি থেকে বেশ কিছু টাকা মিসিং হয়ে যায়। খুনের আলামত ইজিল এর পক্ষে থাকায় পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে আসে ও পুলিশ তাকে কোর্টে হাজির করার আগ মুহূর্তে কাভিনকে অন্য পুলিশরা ছোট একটি অপরাধে একই থানায় নিয়ে আসে। আর কাভিনকে দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।খুনী কে সেটা বের করতে হলে পুলিশের প্রমানের দরকার যা তাদের কাছে নেই। শুরু হয় চোর পুলিশ খেলা। এবার খুনী কে কাভিন নাকি ইজিল? নাকি অন্য কেউ?
মুভির লাস্টে এসে পুরো ধাক্কা খেলাম পরিচালক সাহেব দারুণ টুইস্ট দিয়ে গেছে শেষে।চোর পুলিশ খেলায় শেষের দিকে মহিলা পুলিশের মাথা চক্কর দিয়ে উঠে।||
উপরের যে মুভির স্পয়লারটি পড়েছেন!সেটি আইডেন্টিক্যাল টুইন বা অভিন্ন যমজ নিয়ে কাহিনী আগানো।
আমাদের আইডেন্টিকেল টুইন বা অভিন্ন যমজ সম্পর্কে জানতে হলে আগে জানতে হবে টুইন বা যমজ কি!
আরো জানতে হবে আইডেন্টিক্যাল আর নন আইডেন্টিক্যাল টুইনের মধ্যে পার্থক্য কি!
আমাদের আশেপাশে অনেক যমজ ভাইবোন আছে।কোনো যমজের চেহারা আংশিক মিলে তো কোনো যমজের চেহারা পুরোপুরি মিলে যায়।হতে পারে ভাই-ভাই,বোন-বোন অথবা ভাই-বোন।আমার জমজ বন্ধু আছে নাম সিয়াম আর শিহাব।তাদের গত আটবছরে আমি কখনো আলাদা করে চিনতে পারিনি কোনটা সিয়াম আর কোনটা শিহাব!এরা কেন হয়? কিভাবে হয়? আর কিই বা বলা হয় তাদের আসুন উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।
প্রথমেই আসি যমজের সংজ্ঞায়, “কখনো একসাথে দুটি বা তার বেশিসংখ্যক শিশু জন্মগ্রহণ করতে পারে যাদের জমজ শিশু বলা হয়”
যমজ বা টুইন দুইধরণের হতে পারে।যথাঃ-
১.আইডেন্টিক্যাল টুইন বা অভিন্ন যমজ।
২.নন আইডেন্টিক্যাল টুইন বা ভিন্ন যমজ।
আইডেন্টিক্যাল টুইনঃ-
একটি জাইগোট প্রথম বিভাজনের সময় ক্লিভেজ থেকে আলাদা হয়ে দুইটি কোষ সৃষ্টি করে।সেই দুইটি কোষ আবার আলাদা আলাদা নতুন ক্লিভেজ গঠন করে নতুন শিশুর জন্ম হয়।এরা একই লিঙ্গবিশিষ্ট হয় অর্থ্যাৎ সবসময় বোন-বোন অথবা ভাই-ভাই হবে।এদের চেহারা প্রায় একইরকমের হয়ে থাকে।
এখন ক্লিভেজ কি?
যে প্রক্রিয়ায় জাইগোট মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে অসংখ্য ভ্রুনকোষ সৃষ্টি করে তাকে ক্লিভেজ বা সম্ভেদ বলে।আর ক্লিভেজে সৃষ্ট প্রতিটি কোষকে বলে ব্লাস্টোমিয়ার।আইডেন্টিক্যাল টুইনের ক্ষেত্রে জাইগোটের প্রথম মাইটোসিস বিভাজনে একটি থেকে যে দুইটি কোষ সৃষ্টি হয় সে দুইটি কোষ আলাদা হয়ে দুইটি ব্লাস্টোমিয়ার সৃষ্টি করে।সেই আলাদা ব্লাস্টোমিয়ার থেকে পরবর্তীতে নতুনভাবে আলাদা আলাদা ক্লিভেজ সংগঠিত হয়ে আলাদা শিশু জন্ম নেয়।এদের উত্তরাধীকার সূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যবলিও প্রায় একই থাকে।
এবার আসি ভিন্ন যমজ বা নন আইডেন্টিক্যাল টুইনে,
নন-আইডেন্টিক্যাল টুইনঃ-
দুটি পৃথক ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে দুটি জাইগোট উৎপন্ন হলে এ দুটি জাইগোট থেকে দুটি শিশুর জন্ম হয়।এদের বৈশিষ্ট্যবলি কিন্তু হুবহু একই হয়না!
বরং মিল থাকতে পারে,আবার নাও থাকতে পারে।চেহারার মিল তেমন বেশি পরিলক্ষিত হয়না।এরা দুইভাই,দুইবোন অথবা একটি ভাই ও একটি বোনও হতে পারে।
এবার আসি আইডেন্টিক্যাল আর নন আইডেন্টিক্যাল টুইনের মূল পার্থক্যগুলোতে।
১.আইডেন্টিক্যাল টুইন আসে একটি জাইগোট থেকে।Mono মানে এক।একটি জাইগোট থেকে আসা টুইন আইডেন্টিক্যাল টুইন,একে মনোজাইগোটিক টুইন ও বলা হয়।আর নন আইডেন্টিক্যাল টুইন আসে দুইটি জাইগোট থেকে।ডাই মানে দুই।দুইটি জাইগোট থেকে আসা টুইন হলো নন আইডেন্টিক্যাল বা ডাইজাইগোটিক টুইন।
২.আইডেন্টিক্যাল টুইনদের লিঙ্গ একই হবে।হতে পারে ভাই-ভাই কিংবা বোন-বোন।কখনোই ভাই-বোন বিপরীত লিঙ্গ নিয়ে এরা জন্মগ্রহণ করেনা।আর নন আইডেন্টিক্যাল টুইনরা একইলিঙ্গ কিংবা বিপরীত লিঙ্গ উভয়ই হতে পারে।ভাই-ভাই,বোন-বোন বা ভাই-বোন হতে পারে।
৩.আইডেন্টিক্যাল টুইনদের চেহারা হবহু মিল পাওয়া যায়।অপরদিকে নন আইডেন্টিক্যাল টুইনদের চেহারায় মিল থাকেনা।
৪.আইডেন্টিক্যাল টুইনরা নিজেদের ডিএনএ কোড শেয়ার করে(কারণ এরা একই শুক্রাণু ও ডিম্বাণু থেকে সৃষ্ট)ফলে ডি এন এ টেস্ট করিয়েও এদের আলাদা করব চেনাটা মুশকিলের হয়ে পড়ে।অপরদিকে নন আইডেন্টিক্যাল টুইনরা নিজেদের ডিএনএ কোড শেয়ার করেনা।(কারণ এরা আলাদা আলাদা শুক্রাণু,ডিম্বাণু থেকে সৃষ্ট)।
কিছু আইডেন্টিক্যাল টুইন ও তাদের ঘটনাঃ-
১.যমজ মা যারা একই দিনে জন্মনিয়েছেন আবার একই দিনে জন্মদান করেছেন।অ্যাইমি আর অ্যাশলি নেলসনের ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই হয়েছিলো।অ্যাক্রনের ওহিও হসপিটালে একইদিনে দুইঘন্টার ব্যবধানে তারা আলাদা আলাদা পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।
২.ইংল্যান্ডের লিংকনশায়ারের একটি স্কুলে ২০ জোড়া যমজ একই সাথে অধ্যায়ন করতো।
৩.আইডেন্টিক্যাল টুইন ৩৫ বছর পরে পুনরায় মিলিত হয়েছিল,
জন্মের সময় পৃথক হওয়া এবং পৃথক পিতা-মাতার দ্বারা গৃহীত হওয়া সত্ত্বেও,পলা বার্নস্টেইন এবং এলিস শেইন একইরকম জীবনযাপন করেছিলেন।তারা উভয়েই তাদের উচ্চ বিদ্যালয়ের সংবাদপত্র সম্পাদনা করেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র পড়াশোনা করেছিলেন এবং লেখক হয়েছিলেন।কিন্তু অভিন্ন যমজরা এগুলির কোনও কিছুই বুঝতে পারেনি যতক্ষণ না তারা ২০০৩ সালে ৩৫ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ করেছিলেন।তারা যা খুঁজে পেয়েছিল তা হল তাদের বিচ্ছেদ ইচ্ছাকৃতভাবে ছিল, লালন বনাম প্রকৃতি সম্পর্কিত একটি বিতর্কিত গবেষণার অংশ।
তাদের বিচ্ছেদের সত্যটি তাদের দত্তক পিতামাতার কাছ থেকে গোপন করা হয়েছিল এবং শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী গবেষণার সমাপ্তি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় সংরক্ষণাগারটিতে জেনে রেখেছিলেন যে এটি সমালোচিত হবে। যদিও আমরা প্রকৃতি বনাম লালিত বিতর্ক (বা ঠিক কীভাবে তিনি বার্নস্টেইন এবং শেইইনের জীবনকে অনুসরণ করেছিলেন) গ্রহণ করেছিলেন তা আমরা জানি না, যমজরা নিজের সিদ্ধান্তে এসেছেন।
“এলিসের সাথে দেখা হওয়ার পরে, এটি অনস্বীকার্য যে জেনেটিক্স একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে – সম্ভবত ৫০ শতাংশেরও বেশি,” বার্নস্টেইন টেলিগ্রাফকে বলেন। “সংগীত বা বইয়ের প্রতি এটি কেবল আমাদের স্বাদই নয়; এটি এর বাইরেও রয়েছে তার মধ্যে আমি একই বুনিয়াদি ব্যক্তিত্ব দেখতে পাই এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের বুঝতে হয়েছিল যে আমরা বিভিন্ন জীবন ইতিহাসের মানুষ।”
৪.চেহারায় তো একই আইডেন্টিক্যাল টুইন পরীক্ষায়ও হবহু একইরকম নাম্বার!
আইডেন্টিক্যাল টুইন ব্রায়ান এবং রস ডেভল এইরকম ঘটনা ঘটান।কলেজের এট্রান্স পরীক্ষা,এসএটি,এসিটি এর মত জাঁদরেল পরীক্ষাগুলোতেও তারা একই নম্বর পেয়ে এসেছেন।২০০৮ সালের এসিটি পরীক্ষায়ও তারা হবহু একই নাম্বার পেতে সক্ষম হন।
৫.আশ্চর্যজনক ভাবে আলাদা আলাদা এক্সিডেন্টে ২০০৪ সালে মাইকেল কক এবং এলিয়ট আইডেন্টিক্যাল টুইন একই দিনে তাদের বাঁ হাত ভেঙে ফেলেন।
৬.এক দম্পতির দুইজোড়া আইডেন্টিক্যাল টুইন থাকার ও নজির রয়েছে মানে একসাথে চারটা বাচ্চা তাও দুইজোড়া আইডেন্টিক্যাল! স্টিফেন এবং বেলোয়িন দম্পতি ৭ জুন ২০০৫ সালে এদের জন্মদান করেন।বেলোয়িন লরেন,সারাহ,বেঞ্জামিন,স্যামুয়েল নামে চার চারটি বাচ্চা একমিনিট অন্তর অন্তর প্রসব করেন। এদের দুইজোড়াই আবার ছিলো আইডেন্টিক্যাল!
ফ্যাক্টস এবাউট আইডেন্টিক্যাল টুইনসঃ-
১.আইডেন্টিক্যাল টুইনের ফিংগারপ্রিন্টে মিল থাকলেও হবহু কিন্তু একইরকম হবে না।
২.আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে সবচেয়ে বেশি আইডেন্টিক্যাল টুইনের জন্ম হয়ে থাকে।সেখানে ১০০ জন্মগ্রহণের ৪.৫ টিই জমজ হয়ে থাকে।
৩.আইডেন্টিক্যাল টুইনরা সবসময় একই জিনগত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ও হয়না।
৪.যমজে সন্তানের মায়েরা বেশিদিন বাঁচতে পারে।
৫.যে মায়েরা আইডেন্টিক্যাল টুইন সন্তানের অধিকারী তাদের বেশিরভাগই লম্বা হয়ে থাকেন।
৬.৪০ শতাংশ যমজ তাদের নিজেদের মধ্যে কথা বলার জন্য নিজস্ব মাধ্যম তৈরি করে নেয়।
৭.মানুষ যমজদের চিনতে না পারলেও শরীরের ঘ্রাণ শুঁকে যমজদের আলাদাভাবে চিনতে পারে কুকুর।
৮.সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান: অনেকেই জেনে অবাক হবেন, সাম্প্রতিককালে যমজ সন্তান জন্মের হার অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। ১৯৮০ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত এই বৃদ্ধির হার ৭৬ শতাংশ। ১৯৮০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সদ্যভূমিষ্ঠ প্রতি ৫৩ শিশুর মধ্যে একজন যমজ হত। ২০০৯ সালের হিসেবে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি ৩০ জনে একজন। এর কারণ কি? গবেষকদের মতে, প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বর্তমান বিভিন্ন চিকিৎসা-প্রচেষ্টা অধিক ব্যবহার। একই সঙ্গে ত্রিশোর্ধ মহিলাদের মধ্যেও দিন দিন যমজ সন্তান জন্মদানের প্রবণতা বাড়ছে।
আইডেন্টিক্যাল টুইন চরিত্রের কিছু মুভিঃ-
Adaptation (film)
Adhurs
Ali Cengiz Oyunu
Austin Powers: International Man of Mystery
Austin Powers in Goldmember
Basket Case (film)
Basket Case 2
Basket Case 3: The Progeny
The Black Room (1935 film)
Blood Rage
The Boondock Saints
The Boondock Saints II: All Saints Day
The Brighton Twins
Bromance: My Brother’s Romance
The Brothers Schellenberg
Cash (2010 film)
Creature with the Blue Hand
Dangerous Twins
Dead Ringers (film)
Despicable Me 3
Double Impact
Droopy’s Double Trouble
Dual Alibi
Duel of Karate
È arrivato mio fratello
Everybody Has a Plan
Evil Dead Trap
Father Figures
The Flying Matchmaker
Gemini (1999 film)
Give Me Your Hand (film)
Hare Ram
His Lordship (1936 film)
The Identical
Judwaa
Kleinruppin Forever
Kodi (film)
The Krays (film)
Leaves of Grass (film)
Legend (2015 film)
Love Hotel in Tyrol
Maattrraan
The Man in the Iron Mask (1998 film)
Mersal (film)
Nazi Agent
One Two Bato, Three Four Bapor
The Other (1972 film)
Our Relations
The Peach Tree
Pokiri Raja
Ang Probinsyano (film)
Pagbabalik ng Probinsyano
Ram Aur Shyam
Rivals for the World Record
Der Schuh des Manitu
The Spiderwick Chronicles (film)
Start the Revolution Without Me
Stuck on You (film)
The Suite Life Movie
Super Mario Bros.: Peach-Hime Kyushutsu Dai Sakusen!
The Third Walker
Triplets on Board
Twelve Hearts for Charly
Twin Dragons
Twin Falls Idaho (film)
Twins (1988 film)
Twisted Pair (film)
The Two Who Stole the Moon
Vel (film)
Vellai Roja
Village of Dreams
রেফারেন্স এবং তথ্যসূত্রঃ-
- উচ্চমাধ্যমিক জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র-গাজী আজমল(এডিশন-জুনঃ-২০১৯) পৃষ্ঠা নংঃ-২৭৫,২৭৮
- gap.med.miami.edu
- wikipedia.org/wiki/Twin
- healthychildren.org
- premierhealth.com
- bypass.theweek.com
- nationalgeographic.com
- wikipedia.org
লিখাঃ-শিহান মাহফুজ।