এখন পর্যন্ত পঞ্চাশ মিলিয়ন মানুষের বেশি কোবিড আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী । মারা গেছে ১.৩ মিলিয়নের বেশি । প্রতিদিন তা বাড়ছেই । একা আমেরিকাতেই বর্তমানে প্রতিদিন আক্রান্তের হার লক্ষের কাছাকাছি !
এ পর্যন্ত সারা বিশ্বের একশোর বেশি প্রতিষ্ঠান নতুন করোনা ভাইরাস severe acute respiratory syndrome coronavirus 2 যা সংক্ষেপে SARS-CoV-2 নামে পরিচিত, তার ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টায় নেমেছে ।
বছরের শুরুতে COVID-19 যখন বিশ্বব্যাপী তার মরণ থাবা বসানো শুরু করেছে, তখনই ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রূপ, আমেরিকান মডার্না এবং চীনের সিনভেক মার্চেই কাজে নেমে পড়েছিল ভ্যাকসিন বানাতে ।
কিন্তু এই মুহূর্তে ডিসেম্বর কিংবা বছরের শুরুতেই সবচেয়ে সফলতার খবর নিয়ে আসছে আমেরিকান বিখ্যাত ওষুধ কোম্পানি Pfizer ।
জুলাইয়ের দিকে তারা দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু করেছিল এবং একইসাথে জুলাইয়ের শেষের দিক থেকে থেকে তৃতীয় ধাপের কিছু কিছু কাজ শুরু করে দিয়েছিলো ।
ফাইজারের ভ্যাকসিনটি এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে সফল এবং কার্যকারিতার দিক থেকে ৯০% কার্যকরী । অন্য সব ভ্যাকসিনের তুলনায় যা সত্যিকার অর্থে একটি বিশাল সাফল্য ।
অক্টবরেই থার্ড স্টেজের ট্রায়াল শেষ করেছে Pfizer । নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তার ফলাফলও প্রকাশ করেছে । তৃতীয় স্টেজে তারা ৪৩ হাজার ভিলান্টিয়ারের মধ্যে ৩৮ হাজারের উপর প্রয়োগ করে Placebo এবং আক্রান্তের পরিবর্তনগুলো পর্যবেক্ষণ এবং তুলনা করে দেখেছে যে – নব্বইভাগ বয়স্ককে মুমূর্ষু অবস্থা কিংবা হসপিটালে ভর্তি অথবা সরাসরি মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছে ভ্যাকসিনটি ।
ফাইজারের এই ভ্যাকসিনটির ১৫০ টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে ছয়টি দেশে । শুধু আমেরিকার ৩৯ টি স্টেটে বিভিন্ন বয়সের উপর প্রয়োগ করে পরীক্ষা করা হয়েছে ।
ভ্যাকসিনের নব্বইভাগ কার্যকারিতার দাবি, যা ভ্যাকসিনের পরীক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রাপ্তি । কারণ অনেক ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ কিংবা ষাট ভাগের মতো কার্যকরী হলেও তাকে প্রয়োগের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ভাবা হয় ।
Pfizer এর সাথে জার্মানির আরেক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান BioNTech যৌথভাবে এই ভ্যাকসিন কাজে গবেষণা করছে । ফাইজার পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ ওষুধ কোম্পানি ।
প্রথম স্থানে জনসন এন্ড জনসন । ভারতের সিপাহী বিপ্লবেরও আগে 1849 এ ফাইজার নিউ ইয়র্কে তার যাত্রা শুরু করে । পঞ্চম বৃহৎ ওষুধ কোম্পানি AstraZeneca যৌথভাবে অক্সফোর্ড এবং জেনার গ্ৰুপের সাথে কাজ করছে ।
অক্সফোর্ডের তৃতীয় ধাপের কাজের বিস্তারিত জানা যাবে এ মাসের শেষের দিকে । জনসন এন্ড জনসনও ভ্যাকসিন দৌড়ে এগিয়ে আছে । তবে তাদেরকে পেছনে ফেলে ফাইজার এখন সবচেয়ে বেশি আলোর মুখ দেখাচ্ছে ।
Pfizer এর ভ্যাকসিনটি আপাতত নাম BNT162b2 । এটি মূলত করোনাভাইরাসের একটি ক্ষুদ্র অংশ । নতুন করোনা ভাইরাসকে পুরোপুরি নির্জীব না করে তার ভেতরে থাকা mRNA এর একটি ক্ষুদ্র অংশকে ভ্যাকসিন হিসাবে কৌশলে ব্যবহার করা হয়েছে । অনেক ভ্যাকসিন পুরো কোনো ভাইরাসের কিছু অংশকে নির্জীব করে ব্যবহার করা হয় ।
ফাইজারের ভ্যাকসিনের এটাও একটি সুবিধা যে – খুব অল্প অংশ ব্যবহার করার কারণে তার সাইড ইফেক্ট বলতে গেলে খুবই কম এবং ভ্যাকসিন উৎপাদন খুব দ্রুত করা সম্ভব ।
অলরেডি ব্রিটিশ সরকার ফাইজার থেকে ৩০ মিলিয়ন ডোজ কেনার চুক্তি করে ফেলেছে । ডিসেম্বরের মধ্যে ইর্মাজেন্সি ব্যবহারের অনুমতি পেলে ক্রিসমাসের আগেই প্রয়োগ করা হতে পারে এই ভ্যাকসিন ।
তবে এখনো কিছু অমীমাংসিত সমস্যা রয়ে গেছে ।
তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে পর্যাপ্ত সংখ্যক দেহে পরীক্ষা করলেও সময়টি কিন্তু পর্যাপ্ত নয় । ভ্যাকসিনটি যে এন্টিবডি তৈরী করে তা কতদিন পর্যন্ত সত্যিকার অর্থে ভাইরাসকে আক্রমণ করে দমন করতে পারে তার সময়কালটি এখনো স্পষ্ট নয় ।
যার ফলে একবার শরীরে প্রয়োগ করার কতদিন পর্যন্ত তা শরীরকে ভাইরাসমুক্ত রাখতে পারে, তার সত্যিকার ডাটা অনুপস্থিত । তবে শক্তিশালী এন্টিবডি তৈরির ক্ষমতা ভ্যাকসিনটিকে অগ্রগামী এবং নব্বইভাগ কার্যকরী করে রেখেছে ।
আশা করা যায় আগামী বছরের শুরুতে পৃথিবী একটি নতুন বছর শুরু করবে Pfizer এর BNT162b2 ভ্যাকসিনটি দিয়ে ।
সূত্র :
1. Pfizer
2. BBC
3. BioNTech
4. Guardian
© অপূর্ব চৌধুরী । চিকিৎসক এবং লেখক । জন্ম বাংলাদেশ, বসবাস ইংল্যান্ড ।