গুগল সম্পর্কে এই তথ্যগুলো কি আপনি জানেন?

জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের বয়স এ মাসে ৪ সেপ্টেম্বরে বাইশ বছর হয়। সারাবিশ্বে কোটি কোটি মানুষ গুগল ব্যবহার করছেন। ইন্টারনেট কার্যক্রমে গুগল ১টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এখন গুগল শুধু একটি সার্চ ইঞ্জিন নয়,এক বিশাল প্রযুক্তি কোম্পানি।

গুগল প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ৪০ হাজার অনুসন্ধানের জবাব বের করে। যার মানে সাড়ে ৩ বিলিয়ন অনুসন্ধান
করে। ( ফোর্বসের হিসাব )

১৯৯৯ সালে ল‍্যারি ও সের্গেই গুগলকে ১ মিলিয়ন ডলারে বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সেটা কেনার মতো কোনো গ্রাহক ছিল না।এমনকি দাম কমিয়ে দেওয়ার পরেও কোন গ্রাহক মেলেনি।এখন গুগলের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ডলার।কেউ কেউ হয়তো সেই সুযোগ হাতছাড়া করার জন্য এখন আফসোস করতেই পারে।
গুগলের মৌলিক আদর্শ গুলোর একটি “কখনো দুষ্টতে পরিনিত হয়ো না।” কিন্তু কোম্পানিটিতে সেই আদর্শ এখনো আছে কিনা,সেই বিবেচনা ও সিদ্ধান্ত গুগল ব্যবহারকারীদের।

গুগল হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভিজিটেড ওয়েবসাইট।ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই অন্তত: একবার হলেও এই ওয়েবসাইটে ঘুরে গেছেন।

গুগলের প্রতিষ্ঠাতা স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি’র দুইজন ছাত্র ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন।তাঁরা প্রথম গুগল শুরু করেছিলেন।তারা প্রতিষ্ঠানের প্রথম নাম দিয়েছিলেন ব্যাকরাব।অর্থাৎ যে পদ্ধতিতে একটি ওয়েবসাইট আর একটি ওয়েবসাইটকে খুঁজে বের করে।সেগুলোর অতীত লিংকের উপর নির্ভর করে ওয়েবপেজে র‍্যাংকিং নির্ধারণ করে তাকেই বলা হয় ব্যাকরাব।
তাদের উদ্দেশ্য ছিলো এমন একটা ওয়েবসাইট তৈরি করা,যাতে তার মাধ্যমে অন্য ওয়েবপেজগুলোর তুলনামূলক তালিকা করা যায়।
অন্য ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে সংযুক্ত করাই হবে এর মূল ভিত্তি।

গুগল শব্দের উৎপত্তি গুগোল(googol)থেকে।
বলা যায়,গুগল নামটি গাণিতিক হিসাবের ভুল করে গুগোল লেখার মাধ্যমে এসেছে।
একটি বিশেষ সংখ্যার নাম। ১ এর পিঠে ১০০ টি শূন্য বসালে যা হয় তাই।কিন্তু কেন ল্যারি আর সের্গেই এই নামটি বেছে নিয়েছিলেন?
এ নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে যে, একজন প্রকৌশলী বা ছাত্র আসল নামের বদলে এই ভুল বানানটি লিখেছিলেন।সে ভুল নামই পুরো দুনিয়ার সামনে চলে আসে।বাঁকিটা ইতিহাস।
তাদের ওয়েবসাইটে যে বিপুল পরিমাণ তথ‍্য-উপাত্ত, ঘাঁটাঘাঁটি -অনুসন্ধান করবে -সেটাই এই নাম দিয়ে বুঝাতে চেয়েছিলেন।

প্রথম গুগল ডুডল অর্থাৎ গুগলের হোমপেজে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা দিনের স্মারক হিসেবে যে ছবি ব্যবহৃত হয় তা,১৯৯৮ সালে তৈরি করা হয়েছিল।বার্নিং ম্যান নামের একটি উৎসব উদযাপনের জন্য।গুগলের প্রতিষ্ঠাতারা এর মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন যে,কেন তারা অফিসে অনুপস্থিত।

গুগলের সবচেয়ে স্মরণীয় ডুডলগুলোর অন্যতম হচ্ছে চাঁদে পানির আবিষ্কার এবং জন লেননের ৭০ তম জন্মদিন উদযাপন। জন লেননের ডুডলটি ছিল প্রথম ভিডিও ডুডল। ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট অফিসের বাইরে বার্তা যোগাযোগের মাধ্যমে প্রথম গুগল ডুডল চালু হয়।বিশেষ বিশেষ দিন বা ব্যক্তিত্বের উপলক্ষে বিশেষভাবে করা শিল্প গুগলের চেহারায় ভেসে ওঠে।

প্রথম গুগল সার্ভার রাখা হয়েছিল লেগো দিয়ে তৈরি একটি কাস্টম কেসে।

গুগলের হেডকোয়ার্টার গুগোলপ্লেক্স নামে পরিচিত।এটি ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত।

গুগলপ্লেক্স টি-রেক্স জাতীয় একটি ডাইনোসরের বিশাল মূর্তি আছে।যার উপর প্রায় অসংখ্য প্লাস্টিকের তৈরি গোলাপি ফ্লেমিঙ্গো বসে থাকতে দেখা যায়।গুজব আছে যে,এটা হচ্ছে কর্মচারীদের প্রতি এক সতর্কবার্তা তারা যেনো গুগলকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে না দেন।

গুগলই হচ্ছে প্রথম বড় প্রযুক্তি কোম্পানি,যারা তাদের কর্মচারীদের বিনামূল্যে খাবার পরিবেশন করেন।এমনকি কর্মচারীদেরকে তাদের পোষা কুকুর অফিসে নিয়ে আসতে দেয়া হয়।

গুগলের হেডকোয়ার্টারটি বিশাল এবং সবুজে ঘেরা।ঘাস কাটার জন্য লন-মোয়ার মেশিন ব্যবহার করা হয় না।আশ্চর্যের বিষয় হলো,গুগল অন্যত্র থেকে ছাগল-ভেড়া ভাড়া করে নিয়ে আসে।

২০০১ সালে চালু করা হয় গুগল ইমেজ-সার্চ।যার অনুপ্রেরণা ছিলো ২০০০ সালের গ্র‍্যামি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে জেনিফার লোপেজের পরা সবুজ পোশাক।এটি গুগলের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ-এ পরিণত হয়েছিলো।

গুগলের নিজস্ব ই-মেইল সেবা জি-মেইলের কথা ২০০৪ সালে ১ এপ্রিল ঘোষণা করা হয়। ১এপ্রিল
“এপ্রিল ফুলস ডে “- ভেবে অনেকেই রসিকতা ভেবেছিলেন।

গুগলকে একটি ক্রিয়াপদ হিসেবে( “গুগল করা” অর্থে ) প্রথম অভিধানে ২০০৬ সালে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।মিরিয়াম ওয়েবস্টার অভিধানে লিখেছিলো গুগল করা মানে হচ্ছে “ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব থেকে কোন তথ্য অনুসন্ধান করার জন্য গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করা।”

২০০৬ সালে ইউটিউব গুগল পরিবারের সদস্য হয়। গুগল দেড়শ কৌটি ডলারেরও বেশি দামে ইউটিউবকে কিনে নেয়।এখন ইউটিউবের ব্যবহারকারী প্রায় ২০০ কৌটি।প্রতি মিনিটে ইউটিউবে আপলোড হয় ৪০০ ঘন্টার ভিডিও।

গুগলের একজন ইঞ্জিনিয়ার ২০০৯ সালে একবার ইন্টারনেট ব্যবস্থা ধসিয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি দুর্ঘটনাবশত গুগলের ব্লকড ওয়েবসাইটের রেজিস্ট্রিতে ফরওয়ার্ড স্লাশ(/) চিহ্নটি যোগ করে ফেলেছিলেন।যেহেতু প্রায় প্রতিটি ওয়েবসাইটেই ” / ” চিহ্নটি আছে,তাই সে সময় অনলাইনে কোনো ওয়েবসাইটেই ঢোকা যাচ্ছিলো না।

গুগল সার্চে ১৫% অনুসন্ধানই হচ্ছে একেবারে নতুন, যা আগে কখনো সার্চ করা হয়নি।

গুগল ২০১৮ সালের এপ্রিলে প্রথম কোম্পানিতে
পরিণত হয়,যারা শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করেছে।এর অর্থ হচ্ছে,তারা প্রতি এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করার সাথে সাথে এক
কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করছে।

গুগলের আসলে ৬ টি জন্মদিনে আছে।কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা শুধুমাত্র ২৭ সেপ্টেম্বরকেই জন্মদিন হিসেবে পালন করবে।

গুগলের হাতে নানা রকম কূটকৌশল আছে।
যেমন- আপনি যদি এস্কিউ( Askew ) শব্দটি ইংরেজিতে সার্চ করেন,দেখবেন পুরো পেজটায় একদিকে কাত হয়ে গেছে।আসলে গুগলের সবকিছুই ব্যবসা নয়।সেখানে অনেক মজার ব্যাপার আছে।
যেমন- askew এই শব্দটি গুগলে লিখে দেখতে পারেন।

অ্যাপোলো ১১- তে চড়ে মানুষ চাঁদে পাঠাতে যতোটুকু কম্পিউটিং ক্ষমতা ব্যবহৃত হয়েছিলো,
এখন মাত্র একটি গুগল-সার্চে প্রায় সেই পরিমাণ কম্পিউটিং ক্ষমতা কাজে লাগানো হয়।

গুগল এখন শুধু একটি সার্চ ইঞ্জিন নয়।ভবিষ্যতে এখানে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা,স্ট্রিমিং ভিত্তিক গেম খেলার ব্যবস্থা।এমনকি ড্রাইভারবিহীন গাড়ি।

ক্রমবর্ধমান ব্যবসায় বিশ্বে গুগল জি-মেইল,
গুগল-ম্যাপস,গুগল-ড্রাইভ,গুগল-ক্রোম এসবের বাইরেও ২০১০ সাল থেকে গুগল প্রায় প্রতি সপ্তাহেই একটি করে কোম্পানির মালিক হচ্ছে।অ্যান্ড্রয়েড,ইউটিউব,ওয়ায,অ্যাডসেন্স এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক এখন গুগল।
এরকম ৭০ টি কোম্পানি রয়েছে গুগলের।