Anti-mask movement নামে একটা আন্দোলন চলতেছে গত কয়েক মাস ধরে। আমেরিকা এবং ইউরোপের অনেক দেশে হাজার হাজার মানুষ এই আন্দোলন করতেছে।
এরা নিজেরা মাস্ক পরে না , অন্যকেও মাস্ক পরতে নিরুতিসাহিত করে।
বিচিত্র সব স্লোগান লিখে নিয়ে তারা মিছিল মিটিং করে। তাদের স্লোগানের মধ্যে আছে, My body my choice, Muzzle me not, Un-mask the truth, গরুর মুখের ঠুলি মানুষের মুখে নয় ইত্যাদি।
এরা বিচ্ছিন্ন কেউ নয়। মোটামুটিভাবে সংগঠিত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কিংবা কনস্পাইরেসি থিওরিস্ট সেলিব্রেটিরা এদেরকে সমর্থন দিচ্ছে।
এদেরকে বুঝানোর জন্য বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে, কোনো লাভ হচ্ছেনা। তারা বলছে, মাস্ক পরলে উপকারের বদলে ক্ষতি হয় বেশি। সুতরাং, মাস্ক পরা যাবেনা।
এদের মধ্যে অনেকগুলা ছোট ছোট উপগ্রুপ আছে। কেউ কেউ মনে করেন – করোনা নামে কিছু নাই। সবই গুজব।
মাস্ক পরিয়ে, লক ডাউন দিয়ে সবাইকে ঘরে আটকে রাখার প্লান করছে চাইনিজ ইলুমিনাতিরা।
আরেকটা গ্রুপ মনে করে, হ্যা,করোনা ভাইরাস নামে একটা জিনিস আছে, তবে এটা WHO এর কথামত এত ড্যাঞ্জারাস কিছুনা। হুদাই এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নাই।
একটা গ্রুপ মনে করে,হ্যা,করোনা একটা ভয়ংকর ছোয়াচে রোগ। কিন্তু আমার যা মন চায় ,আমি তাইই করব। মাস্ক না পরে ন্যাংটা হয়ে ঘুরে বেড়াতে মন চায় আমার। সরকার এর উচিত হবেনা, আমাকে জোর করে মাস্ক পরানো।
এইরকম আরো অনেক সাব গ্রুপ আছে Anti masker দের মধ্যে।
( বিস্তারিত )
এদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে মানুষ করার জন্য অনেকেই চেষ্টা করছেন। কাজ হচ্ছেনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এদেরকে COVIDidiot বলে ট্রল করা হয়। রাজনৈতিক নেতা, সেলিব্রেটি, মডেল, মিউজিশিয়ান, খেলোয়াড় — সবাই এদেরকে বুঝাচ্ছে। কিন্তু, “বোঝেনা, সে বোঝেনা”. 🙂
খৃষ্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু, পোপ ফ্রান্সিস পর্যন্ত এদেরকে আহবান করেছেন, এন্টি মাস্ক আন্দোলন তুলে নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসায় চলে যেতে।
( নিউজ )
কোনো লাভ হয় নাই। যেসব খৃষ্টান এই ‘এন্টি মাস্ক আন্দোলন’ চালাচ্ছেন, তারা মনে হয় পোপের চাইতেও বড় খৃষ্টান 🙂
বাংলাদেশে এমন সংগঠিত ভাবে মাস্ক বিরোধী ( বা লক ডাউন বিরোধী, বা ভ্যাক্সিন বিরোধী, বা করোনা বিরোধী) কোনো আন্দোলন রাস্তায় নামেনি। তবে অসংগঠিত ভাবে অনেকে এমন চিন্তা ভাবনা করছেন।
পোপ ফ্রান্সিস এর মতই, ধর্মগুরুরা এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের প্রচুর জনপ্রিয়তা আছে, মানুষ তাদের কথা বিশ্বাস করে। গুজব প্রশমন করে তারা মানুষকে সঠিক তথ্য জানাতে পারে।
আল মুতমাইন্নাহ হাসপাতালের ফেবু পেজের পোস্ট দেখে ওদের মনোভাব এমন বলেই মনে হল। নামে এটা “মা ও শিশু” হাসপাতাল হলেও গত কয়েক মাসে এদের পেজ থেকে করোনা সংক্রান্ত অনেক পোস্ট দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে, গত জুলাই মাসে আল মুতমাইন্নাহ হাসপাতাল সরকারের বিরুদ্ধে আইনী নোটিশ পাঠিয়েছিল। বলেছিল,সরকার বাধ্যতামূলক ভাবে মাস্ক ব্যবহারের আদেশ দিতে পারেনা। যে ডাক্তারের ইচ্ছা, সে মাস্ক পরবে, যার ইচ্ছা নাই, সে মাস্ক পরবে না
( বিঃদ্র ঃ – মুতমাইন্নাহ আরবি শব্দ। مُطْمَئِنَّة। এর অর্থ প্রশান্ত,নির্মল।)
দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের কয়েকজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ত্ব নিজেরাই গুজব ছড়ান।
করোনা আসার পর অনেক ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব অনেক ধরনের গুজব ছড়াচ্ছিলেন। ছোয়াচে রোগ নামে কিছু নাই, মুসলমানদের করোনা হতে পারেনা, বাংলাদেশে করোনা আসবে না, করোনা আল্লাহর সৈনিক-শুধুমাত্র অমুসলিম রাই এতে আক্রান্ত হবে — ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন গুজব শোনা যাচ্ছিল তাদের কাছ থেকে।
তাদের অনেক ভক্তরা এসব কথা শুনে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই ঘোরাফেরা করতেন।
কিছুদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আড়াইবাড়ীর পীর সাহেব মাওলানা গোলাম সারোয়ার সাঈদী মারা গেছেন। মাত্র ৫২ বছর বয়স হয়েছিল তার। করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন দুই সপ্তাহ আগে।
এই পীর সাহেব বলেছিলেন, ওজু করলে করোনা ভাইরাস ধ্বংস হয়ে যাবে[ভিডিওর ১৭ মিনিটে ]
( প্রকৃত ফ্যাক্ট হচ্ছে, সাবান দিয়ে হাত ধুইলে করোনা ভাইরাস মরে যায়। সাবান ছাড়া হাত ধুইলে /ওজু করলে করোনা ভাইরাস মরেনা)
১৮/১৯ তম মিনিট এ বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং তথ্য পেলাম। তিনি সিম্পল সেন্টেন্সে কিছু না বলে কমপ্লেক্স সেন্টেন্স এ কথা বলছেন। সামারি মোটামুটি এইরকম —
” করোনা কোনো ছোয়াচে রোগ না। এটা আল্লাহর গজব। যে যে নামাজ পড়েনা, তার এই রোগ হবে। তোমরা তাড়াতাড়ি নামাজ পড়তে যাও, তওবা করো। যিনি করোনার গজব দিয়েছেন, তিনিই গজব থেকে মুক্ত করতে পারবেন।”
জানিনা, আড়াইবাড়ি হুজুর নিজে এই গজবে আক্রান্ত হলেন কেন !!
তার মৃত্যু আমাদের চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিল , করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুসলিম-অমুসলিম, পরহেজগার-বেনামাজী সবাই ই মরছে।
যারা যারা ভুল তথ্য দিয়ে, গুজব ছড়িয়ে মানুষকে মিসগাইড করেছেন, বা এখনো করছেন, দোয়া করি আল্লাহপাক যেন তাদেরকে কঠিন আজাব দেন।
ধর্মীয় ব্যক্তিত্ত্ব ছাড়াও, অন্য অনেক কনস্পাইরেসি থিওরিস্ট নিজেদের গুজব কে শক্তিশালী করার জন্য ধর্মীয় রেফারেন্স ব্যবহার করেন।
Razib Ahmed নামের এই লেখক কে দেখুন। তিনি “করোনা-কোরান রোজা নামাজ” নামে একটি বই লিখেছেন। এই বইয়ের মার্কেটিং হিসেবে, প্রতিদিন তিনি করোনা সম্পর্কিত আজব আজব তথ্য জানিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।
তার একটা স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট দিলাম। একটা স্ট্যাটাসেই কি কি গুজব ছড়াচ্ছেন তিনি, দেখুন।
১. ছেলেরা দাড়ি রাখলে সেটাই মাস্কের কাজ করবে, আলাদা মাস্ক পরার দরকার নাই।
( করোনা ভাইরাস ঢুকতে পারে নাকের ছিদ্র দিয়ে। মাস্ক এ সূক্ষ ছিদ্র থাকে , ৫০ ন্যানোমিটার বা তার চেয়েও সূক্ষ ছিদ্র। এই সাইজের ছিদ্র দিয়ে বাতাস ঢুকতে পারে, কিন্তু করোনা ভাইরাস ঢুকতে গেলে তার পাছা আটকে যায় 🙂 । আর ঢুকতে পারেনা ভিতরে।
লং টাইম একই মাস্ক ইউজ করতে থাকলে ছিদ্র বড় হয়ে যায়। তখন সেটা করোনা আটকাতে পারেনা।
দাড়ি,গোফ বা অন্য কিছু নাককে আটকাতে পারেনা। এবং এদের মধ্যবর্তী ছিদ্র কয়েক মিলিমিটার বা তার চেয়েও বড় হতে পারে। এই ছিদ্রের মধ্যে করোনা ভাইরাসের ভুড়ি আটকায় না, ফলে সে সহজে কিলবিল করে ঢুকে যেতে পারে 🙂
মেয়েদের তো দাড়ি ওঠেনা, তারা করোনা ঠেকাবে কিভাবে? মিস্টার রাজিব আহমেদ সে উপায় বলেন নাই।
প্রাচীন মিশরীয় রাণী নেফারতিতি তার দেশের ক্ষমতা দখল করে সিংহাসনে বসেছিলেন। প্রাসাদের ধর্মগুরুরা তখন ফতোয়া দিলেন, যার দাড়ি নাই, সে ফেরাউন হতে পারবে না। নেফারতিতি তখন নকল দাড়ি ব্যবহার শুরু করেছিলেন।
সিনেমার অভিনয়ের জন্য অনেক সময় নকল দাড়ি ব্যবহৃত হয়। এসকল দাড়ি মেয়েরা পরলে কি করোনা ঠেকানো যাবে? 🙂
২. সব সময় ওজু করে থাকলে করোনা ভাইরাসে সংক্রমনের সম্ভাবনা কম।
( গোলাম সারোয়ার সাঈদীর কাহিনী উপরে বলেছি)
৩. মাস্ক পরে নামাজে দাড়ানো উচিত না। এতে ধর্মীয় নির্দেশ অমান্য করা হয়।
( অধিকাংশ ইসলামিক স্কলার বলছেন, মাস্ক পরে নামাজ পড়া জায়েজ।।এখানে ইসলামী শরীয়তের কোনো বরখেলাপ হবেনা। বায়তুল মোকাররম সহ সব বড় মসজিদেই মাস্ক পরে ইমাম সাহেব নামাজ পড়াচ্ছেন, মুসল্লিরা মাস্ক পরে নামাজ পড়ছে।)
- মাস্ক পড়লে নামাজ হবেনা- ওলামা লীগ : আমাদের সময়
-
এখন মাস্ক পরে নামাজ পড়া জায়েজ: কালের কন্ঠ
তার অন্যান্য স্ট্যাটাস ঘাটলে আরো অনেক গুজব খুজে পেতে পারেন।
বাংলাদেশের স্থানীয় একজন কোভিডিয়ট কে বোধহয় আমরা পেয়ে গেছি।
আপনার জানামতে আছে নাকি আর কেউ?
——
আন্তর্জাতিক কয়েকজন কভিডিয়ট /করোনাবলদ দের নিয়ে একটা সিরিজ লিখেছিলাম। পর্বগুলা দেখে বলুন তো, বাংলাদেশের কোনো ক্যারেক্টারের সাথে এদের কারো মিল কি খুজে পান?
পর্ব ১ – জার্মানিতে লক ডাউন বিরোধী মিছিল
পর্ব ২- মায়ানমারের পাদ্রী রেভারেন্ড ডেভিড লাহ
পর্ব ৩- ভারতের মন্ত্রী
পর্ব ৪- ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট
পর্ব ৫- কোরিয়া আর অস্ট্রেলিয়ার পেশেন্ট ৩১
পর্ব ৬- করোনা ঠেকাতে ভারতে নরবলি
মুফতি ইব্রাহিম ভ্যাক্সিনের বিরোধীতা করেছিলেন। পড়ুন এখানে।