অস্ট্রেলিয়ার একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সুফিয়ান খলিফা বলেছেন, অক্সফোর্ডের বানানো করোনার ভ্যাক্সিন হারাম। কারন, এই ভ্যাক্সিন বানানো হচ্ছে একজন মায়ের ভ্রুন এর কোষ থেকে।
তিনি মুসলমানদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন,তারা যেন এই হারাম ভ্যাক্সিন নেওয়া থেকে বিরত থাকে।
মানব দেহের ভ্রূনের কোষ (স্টেম সেল) নিয়ে বিতর্ক অনেক পুরনো। রক্ষনশীল খৃষ্টান, বা অন্যান্য ধর্মের অনেকেও স্টেম সেল নিয়ে গবেষনা করা, বা চিকিতসা হিসেবে স্টেম সেল ব্যবহার করতে নিষেধ করে।
অক্সফোর্ড এবং এ্যাস্ট্রাজেনকা যৌথ উদ্যোগে যে ভ্যাক্সিন বানাচ্ছে, সেই ভ্যাক্সিনগুলাকে একটা পর্যায়ে ফিটাল কোষ এর মধ্যে ঢুকিয়ে বড় করা হয়। পরে, পরিপক্ক হয়ে গেলে সেখান থেকে ভ্যাক্সিন বের করে প্যাকেট করা হবে।
এই ফিটাল কোষ ( foetal cell) গুলা নেওয়া হয়েছিল গর্ভপাত করা এক নারীর গর্ভের কোষ থেকে।
গর্ভপাত করা, কিংবা সেই সব কোষ নিয়ে গবেষণা করা বা চিকিতসার কাজে লাগানো নিয়ে ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব দের ভিন্নমত আছে।
অবশ্য ইংল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী গর্ভপাত বৈধ,এবং স্টেম সেল নিয়ে গবেষনাও বৈধ। সকল আইন কানুন মেনেই এই ভ্যাক্সিনের কাজ চলছিল।
মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপিকে উদ্ধৃত করে ইউএনবির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভ্যাকসিন হালাল কিনা তা নিয়ে এক ধরনের দ্বিধা ও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে মুসলিম দেশগুলো।
বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী পরিবহণের সময় ভ্যাকসিন যাতে নিরাপদ এবং কার্যকর থাকে তা নিশ্চিত করতে শুয়োরের মাংস থেকে প্রাপ্ত জেলাটিন ব্যবহারের যে রীতি রয়েছে, এতেই আপত্তি এসব দেশগুলোর।
এতে বলা হয়েছে, গত অক্টোবরে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার একদল কূটনীতিক করোনাভাইরাসের টিকা সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত করতে চীনে যান।
তবে সেসময় বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি ভ্যাকসিন হালাল হবে কিনা, বিশেষ করে ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত শুয়োরের মাংস থেকে প্রাপ্ত জেলাটিন ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।
জানা গেছে, বিশ্বের বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি বিশেষ করে সুইজারল্যান্ডের ওষুধ কোম্পানি “নোভার্টিস” এর মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া ভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি “এজে ফার্মা” বছরের পর বছর ধরে শুয়োরের মাংস বা চর্বি থেকে প্রাপ্ত জেলাটিনের ব্যবহার ছাড়া ওষুধ উৎপাদনের কাজ করছে।
যদিও কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরিতে শুয়োরের কোনও উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে এ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
ব্রিটিশ ইসলামিক মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. সালমান ওযাকার এ প্রসঙ্গে জানান, চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য, ব্যয়ের সামঞ্জস্যতারক্ষার জন্য ভ্যাকসিন তৈরিতে এ উপাদান বছরের পর বছর ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
তবে ভ্যাকসিন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখনও অনুমোদন পায়নি এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পূর্ব-নির্ধারিত কয়েক মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের চুক্তির ফলে ইন্দোনেশিয়ার মতো বিশাল মুসলিম জনসংখ্যার কিছু দেশ জেলাটিনমুক্ত ভ্যাকসিন পাবে না।
প্রসঙ্গত, ইন্দোনেশিয়া কোভিড ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে দেশটির সরকারের পক্ষ স্পষ্টই বলে দেওয়া হয়েছে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহ এবং শংসাপত্র প্রক্রিয়ায় মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বকারী দল থাকবে।
এ নিয়ে শুধু মুসলিমরাই নয় ও সংকটে পড়তে হচ্ছে গোঁড়া ইহুদিদেরও, এমনটি জানান ডা. ওয়াকার।
এ বিষয়ে রাব্বি ডেভিড স্টেভ নামে ইসরায়েলের এক ধর্মীয় নেতা বলেন, “ইহুদি আইন অনুসারে, শুয়োরের মাংস খাওয়া নিষেধ তবে যদি ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয় তবে তাতে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।”
২০১৮ সালে ইন্দোনেশীয় ওলেমা কাউন্সিলের পক্ষ থেকে একদল ইসলাম বিশেষজ্ঞ হাম ও রুবেলার টিকাকে হারাম বলে ঘোষণা দেয়। এরফলে দেশটিতে হামের মাত্রা বাড়তে থাকে। বর্তমানে দেশটি হামের দিক থেকে বিশ্বে তৃতীয়তম অবস্থানে রয়েছে।
আরেক মুসলিম দেশ মালয়েশিয়াতেও টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে হালাল কিনা এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। তবে বর্তমানে দেশটির সরকার এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
এমনকি টিকা না নিলে জেল-জরিমানার মুখেও পড়তে হয় দেশটির নাগরিকদের। পাকিস্তানেও পোলিওর ভ্যাকসিন না দিলে অভিভাবকদের জেল-জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে।
যদিও দেশটিতে বর্তমানে ক্যানসিনো বায়োলজিকসের ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শেষ পর্যায়ে আছে। বাংলাদেশে সিনোভ্যাক বায়োটেকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তবে অর্থায়ন সংক্রান্ত বিরোধের কারণে আটকে রয়েছে প্রক্রিয়াটি। উভয় দেশেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
মুসলিম দেশগুলোর উদ্বেগ প্রসঙ্গে ডা. ওযাকারের মতে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাই এ বিষয়ে সরকারের স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। একইসঙ্গে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করছেন এ বিশেষজ্ঞ।
কিছুদিন আগে ” ভ্যাক্সিন ব্যবহারের বিরোধীতা করছেন যারা” শিরোনামে একটি আর্টিকেলে লিখেছিলাম।
এটা লিখতে গিয়ে দেখলাম, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় কারনে অনেকে ভ্যাক্সিনের বিরোধীতা করেছিলেন।
ভ্যাক্সিনের মধ্যে শুয়রের চর্বি কিংবা মদ/অ্যালকোহল দেওয়া থাকলে সেটা হারাম হবে — এমন ফতোয়া আগেও দেওয়া হয়েছিল।
পোলিও বা অন্যান্য রোগে মারা যাওয়া হচ্ছে ভাগ্যের লিখন। ভ্যাক্সিন দেওয়া হলে সেই ভাগ্যের লিখন বদলে যাবে।
লোকটা তাহলে আর মরবে না। ঈশ্বর একটা লোকের ভাগ্যে যা লিখেছে, ভ্যাক্সিন দিয়ে সেই ভাগ্য বদলানো উচিত হবে না — এমন লজিক ও শুনেছে বিশ্ব।
ভারতে মোদির আমলেই একবার গুজব উঠেছিল,যে যে ভ্যাক্সিন নিবে, তার আর বাচ্চা হবে না। মোদি সরকার এইভাবে মুসলিম দের নির্বংশ করার ষড়যন্ত্র করছে।
সারা বিশ্বের সব দেশ পোলিও মুক্ত হলেও পাকিস্তান আর আফগানিস্তান পোলিওমুক্ত হচ্ছে না। কারন এই দুই দেশে তালেবানরা পোলিও ক্যাম্প করতে দিচ্ছে না। এ কারনে এই দুই দেশ পোলিও মুক্ত হচ্ছে না। ফলে বিশ্ব ও পোলিও মুক্ত হচ্ছে না।
বাংলাদেশ বা অন্য দেশ যতই ‘বাদ যাবে না একটি শিশুও’ বলে পোলিও টিকা খাওয়াক না কেন, এই দুইটা দেশের জন্য বিশ্বে পোলিও জীবানু রয়েই যাচ্ছে।
করোনা ভ্যাক্সিন এর ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার সুফিয়ান খলিফার মত আরো কয়েকজন ইমাম, বা বিভিন্ন ধর্মের/সম্প্রদায়ের অন্য আরো কয়েকজন নেতা যদি করোনার ভ্যাক্সিন নিতে রাজি না হয়,তখন উপায় কি হবে?
ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার একজন আর্চবিশপ, এ্যন্থনি ফিশার, একই কারনে ভ্যাক্সিন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম একশো বছর আগেই বকে গিয়েছিলেন,
বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে আমরা তখনো বসে
বিবি তালাকের ফতোয়া খুজি কেতাব কোরান চষে
———
তথ্যসূত্র –