মানুষের ব্রেইনের একটা প্রবনতা আছে, যার ফলে মানুষ এলোমেলো কিছু জিনিসের মধ্যে থেকে পরিচিত প্যাটার্ন খুজে বের করে। এই প্রবনতাকে প্যারেডোলিয়া/প্যারাইডোলিয়া/প্যারাডোলিয়া (Pareidolia) বলে। ( সঠিক উচ্চারন কি হবে?!!)
দুইটা বিন্দু বা ছোট বৃত্ত পাশাপাশি থাকলেই আমরা সেটাকে মানুষের চোখ মনে করার চেষ্টা করি। দুই চোখের মাঝে লম্বা একটা দাগ থাকলে তো কথাই নাই, নাক চুখ মিলিয়ে আস্ত একটা মানুষ বানিয়ে ফেলি।
প্রাচীণকালের জ্যোতিষীরা আকাশের তারা দেখে দেখে সেগুলার মধ্যে বাঘ ,সিংহ, শেয়াল, ভাল্লুক, কাকড়া ইত্যাদি বিভিন্ন শেপের প্যাটার্ন খুজে বের করতেন। সেই প্যাটার্নের নাম অনুসারে আকাশের তারকামন্ডলী/রাশিচক্রের নাম রাখা হয়েছিল নেষ (ভেড়া, বৃষ (মহিষ), সিংহ, কর্কট (কাকড়া) ইত্যাদি ।
আমরা, আমজনতা সবচেয়ে বেশি প্যারাডোলিয়া দেখি আকাশের মেঘের মধ্যে । মেঘের বিভিন্ন প্যাটার্নের মধ্যে হাতি, বিড়াল, মানুষ –বহু কিছুর মিল খুজে পাই ।
রাতে , কম আলোতে এলোমেলোভাবে রাখা কম্বল বা কাপড়চোপড় দেখে ভয় পেয়ে চমকে উঠি। ভাবি , ওখানে কি কোনো মানুষ বসে আছে !
অনেক সময় ধর্মীয় আবেগের বশে অনেকে এলোমেলো জিনিসের মধ্যে ধর্মীয় ছবি খুজে পান। যীশুর ছবি, ভার্জিন মেরির ছবি , ত্রিশুলের ছবি বা আরবিতে আল্লাহু শব্দের সাথে অনেকে অনেক জায়গায় মিল খুজে পান। এগুলা সবই প্যারেডলিয়া । এর মধ্যে অলৌকিকতা বা আর কোনো কিছুর সম্পর্ক নাই।
( wiki/Pareidolia )
আজ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে এমন একটা প্যারেডোলিয়া।
বান্দরবনের অমিয়াখুমে এমন একটা জায়গা পাওয়া গেছে , যাকে নরমাল ম্যাপে কোনো প্যাটার্ন দেখা যায়না। কিন্তু স্যাটেলাইট ইমেজে , গাছপালা সহ দেখলে , এবং একটু ঘুরালে আরবি اللّٰه (Allah) শব্দটার মত দেখায়।
আবার হিন্দুদের ত্রিশুলের সাথেও মেলানো যায় প্যাটার্নকে।
হাতের আঙ্গুলের সাথেও মেলানো সম্ভব।
ক্রিকেটের ৩ টা স্ট্যাম্পের সাথেও মেলানো সম্ভব।
কুন্ডলী পাকানো সাপ ও দেখতে পারেন।
যে ব্যক্তি যে ধরনের চিন্তা বেশি করে, সে সেই ধরনের প্যারিডোলিয়া বেশি দেখে। যে পশুপাখি ভালোবাসে, সে মেঘের মধ্যে হাতি দেখে। যে খৃস্টান ধার্মিক, সে টোস্টে যিশুর ছবি দেখে ।
মুসলিম ধার্মিক হয়তো আরবি ক্যালিগ্রাফি দেখে। হিন্দু ধার্মিক সেখানে ত্রিশূল,ওম বা তার ধর্মের অন্য কোনো প্যারেডোলিয়া দেখবে। ( আমার এক ফ্রেন্ড সব কিছুর মধ্যে অশ্লীল জিনিসপত্র খুজে পেত 🙂 )
যাই হোক, গুগল ম্যাপে শুধু বান্দরবন না, বিশ্ব ব্যাপীও বিভিন্ন জায়গায় অনেক প্যারেডোলিয়া দেখা যায়। এই লিংকে দেখুন ,বিভিন্ন প্রকার মুখ দেখা যাচ্ছে গুগল ম্যাপে।
These Are The Surprisingly Human Faces Lurking In Google Maps Landscapes
সময় থাকলে আপনি নিজেই গুতায়া গুতায়া আরো অনেক প্রকার প্যারেডোলিয়া আবিষ্কার করতে পারেন
২.
কখনো কখনো , এই ধরনের প্যারেডোলিয়াকে অলৌকিক দাবি করে অনেকে গুজব ছড়ায় ।
অনেকে আবার ইচ্ছা করে প্যারাডোলিয়ার গুজব ছড়ায়। ইচ্ছা করে ফটোশপে নিজের টার্গেটড়েড ছবি বানায়, বা গাছের ডালপালা বাকা করে নিজের ইচ্ছামত শেপে সাজিয়ে ছবি তোলে। এসব ছবি ছড়িয়ে পরে গুজব ছড়ানো হয়।
লাখ লাখ বছর ধরে মানুষ চাঁদের গায়ে চরকা কাটা বুড়ির চেহারা কল্পনা করে এসেছে। কিন্তু ২০১৩ সালে গুজব উঠেছিল, চাঁদের গায়ে যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে দেখা যাচ্ছে ।
রাশিয়ার দাগেস্তানে আলি নামের এক বাচ্চার কথা শোনা যায়, যার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আরবিতে আল্লাহ কিংবা বিভিন্ন আরবি আয়াত ভেসে উঠছিল। আরবি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আরবি বাক্যগুলাতে বানান ভুল রয়েছে ।
এটা যদি আল্লাহর কুদরত হত, বা আল্লাহ নিজে এগুলা লিখতেন ,তাহলে নিশ্চয়ই বানান ভুল হত না । বাচ্চাটার মা নিজেই জাফরান বা মেহেদি দিয়ে এগুলা লিখেছে বলে ধারনা সাংবাদিকদের ।
আড়ং এর শাড়ি নিয়েও কয়েক বছর আগে হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল। আড়ং এর একটি শাড়ির এক জায়গায় নাকি আরবি اللّٰه (Allah) শব্দটার মত ডিজাইন করা হয়েছে।
বলা বাহুল্য , শাড়ির ওই ডিজাইনের সাথে অনেক কিছুর সাদৃশ্য খোজা সম্ভব। কিন্তু , ওই ডিজাইনের সাথে আল্লাহ এর নাম মিলিয়ে ‘আড়ং বয়কড় কর্মসূচী” পালন করেছিল অনেকে ।
বান্দরবনের অমিয়াখুমের এই এলাকাকে ঘিরেও এখন নতুন চক্রান্ত শুরু হতে পারে। স্থানীয় আদিবাসীদেরকে সরিয়ে , বনবিভাগের জমি জবর দখল করে মসজিদ, মাদ্রাসা বা অন্যান্য স্ট্রাকচার বানিয়ে জায়গা দখল করার চেষ্টা হতে পারে আগামি কয়েকদিনে।
—–
প্যারিডোলিয়া সম্পর্কে আরো জানতে এই বাঙলা আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন
https://blog.mukto-mona.com/2012/08/04/28062/