কখনও কি এমন হয়েছে,যে আশে পাশের সব কিছুই ঠিক আছে তবুও অজানা এক কারনে কিছুই ভালো লাগছে না, সকল কাজের প্রতিই ইচ্ছা হারিয়ে যাচ্ছে,এমন কি জীবনের প্রতিও মায়া বা ভালোবাসা ও হারিয়ে গেছে এবং অতি দুশ্চিন্তা মনের মধ্যে ভর করেই আছে ।
জীবনে খারাপ সময় তো আসে আবার ভালো সময়ের আগমনে চলেও যায়। কিন্তু এ যেনো চলে যাওয়ার নয়।সময়ের সাথে সব কেমন যেনো উল্টো হয়ে যাচ্ছে!
ছোট, বড় যে কোনো ব্যর্থতা থেকে এমন মানসিক অবস্থা হতে পারে,এছাড়া আকাংখিত কোন কিছু না পাওয়ার পর বা পছন্দের বা কাছের মানুষের চলে যাওয়ার পর অনেক দিন পর্যন্ত ভালো না লাগা রয়েই গেছে।এবং এ যেনো ক্রমে বেড়েই চলছে।
এছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত অতীত,অপমান, একাকিত্ব ও হতে পারে এমন অবস্থার কারন।
বর্তমান আধুনিক যান্ত্রিক জগতে এমন মানসিক অবস্থার মুখে অজান্তেই লাখোমানুষ ধাবিত হচ্ছে।এমনও রোগী আছে যারা বছরের পর বছর এ সমস্যা নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে কিন্তু জটিল পর্যায়ে চলে যাওয়ার কারনে সেরে ওঠা হচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে ৩০০ মিলিয়ন এর বেশি মানুষ এই সমস্যার মধ্যে রয়েছে(পরিসংখান২০১৫) ।
এবং এক গবেষনায় দেখা গেছে ১০% এর বেশি আমেরিকার মানুষ ডিপ্রেশনের শিকার ।এবং আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত দেশের মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি ঝুকিপূর্ণ অবস্থানে আছে।
ডিপ্রেশনের কারনে কেউ হারাচ্ছে জীবনের শান্তি,প্রিয় মানুষ,চাকরি,ব্যবসা , এমনকি নিজের জীবন।
যদিও সকল মন খারাপ,দুখ,ও ভালো না লাগা ডিপ্রেশন নয়।কিন্তু বাহ্যিক লক্ষন গুলো অনেক টা একই রকম।
ডিপ্রেশন বর্তমান যুগের এক বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। ভালো সংবাদ এই যে প্রযুক্তি ও চিকিৎসার উন্নয়নে এর চিকিৎসা ও অনেক সহজতর হয়ে গেছে,শুধু দরকার সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ।
এবং পাশাপাশি এই রোগ সংক্রান্ত কিছু তথ্য জেনে রাখা দরকার।
এর প্রেক্ষিতে এই আর্টিকেল এ জানবো ডিপ্রেশন কি ও কেন হয় ,ডিপ্রেশনের প্রভাব,ডিপ্রেশনের প্রাকারভেদ ও লক্ষন এবং ডিপ্রেশনের চিকিৎসা।
১.ডিপ্রেশন কি ও কেন হয়?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র দেওয়া নিয়মাবলী (গাইডলাইন) অনুযায়ী, অবসন্ন মন (‘লো মুড’), শক্তিহীনতা (‘লো এনার্জী’) এবং উৎসাহহীনতা (‘লো ইন্টারেস্ট’)-কে ডিপ্রেশনের আওতায় ফেলা হয়েছে।
ডিপ্রেশন একটি মানসিক সমস্যা যা (ভালো না লাগা,অনাগ্রহীতা,মনোযোগহীনতা,মনের অজানা অশান্তি, আরো অনেক মানসিক বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত)।
যা স্বভাবিক মন খারাপ ও অনাগ্রহীতা দিয়ে শুরু হয় কিন্তু সময়ের সাথে ডিপ্রেশন নামক রোগে পরিনিত হয়।
ডিপ্রেশন একজনের সমগ্রজীবনে এক থেকে বেশ কয়েকবার হতে পারে।
ডিপ্রেশন হয় ২টি কারনে
১.বায়োলজিকাল প্লেজার হরমোন নামে পরিচিত ডোপামিন (dopamine), এন্ডোরফিন (endorphin), সেরোটোনিন (serotonin), অক্সিটোসিন (oxitocin) এর অভাবের কারনে ডিপ্রেশন হতে পারে।
এছাড়া মেটাবলিজম,শারীরিক রাসায়নিক ক্রিয়ার ভারসাম্যহীনতার কারনেও হতে পারে।
এছারা ব্রেইন স্ট্রাকচার,মাদক,শৈশবের কোনো ট্রমা ও হতে পারে ডিপ্রেশনের কারন।
সবশেষে জেনেটিক সমস্যার কারনেও হতে পারে ডিপ্রেশন, যেমন বংশগত ডিপ্রেশন বা মানসিক সমস্যা ।
২.সাইকোলজিকাল ডিপ্রেশন হতে পারে অতিরিক্ত স্ট্রেস ভরা কাজকর্ম থেকে।
এছাড়া যদি কোনো মানুষ অতিরিক্ত ভাবে নিজের অতীত ভবিষ্যত সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা (নেগেটিভ ভিউ) নিয়ে চিন্তিত থাকে কিংবা কোনো কাজে বার বার ব্যর্থ হতে থাকে তার থেকেও ডিপ্রেশননের জন্ম হতে পারে খুব সহজেই |
হতে পারে চাকরি হারানোর ফলে বা চাকরি না পাওয়ার ফলে, কাছের মানুষের চলে যাওয়ার ফলে, হতে পারে অবহেলা, অপমান, এবং উদ্দেশ্য ও আনন্দহীন অনিশ্চিত জীবন যাপনের ফলে।
শারীরিক অপুর্ণতা যেমন কম উচ্চতা,কালো হওয়া, মোটা হওয়া, চুল না থাকা ও গোপন শারীরিক সমস্যার কারনে কনফিডেন্স এর অভাব থেকেও ডিপ্রেশন হতে পারে। পাশাপাশি বডি শেইমিং এর শিকার ও একটি কারন হতে পারে ডিপ্রেশনের ।
জীবন কে অতিরিক্ত কঠিন ও সিরিয়াস ভাবে নেওয়ার কারনে জীবনের আনন্দগুলো শেষ হয়ে যায় এবং এরপর যে কোনো ধরনের ব্যর্থতা নিয়ে আসে ডিপ্রেশন ।
এ ছারাও ছোট বড় ট্রাজেডির কারনে ও হতে পারে ডিপ্রেশন । যদিও দেখা যায় ডিপ্রেশনের জন্য এরকম একের অধিক কারন থাকে।
যেকোনো বয়সের মানুষ ডিপ্রেশনে পড়তে পারে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে ডিপ্রেশনের শিকার ১৬-২৫ বছর বয়সীরা বেশি হয়।এবং এর প্রভাব অনেক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে এবং শেষ পরিনিতি অনেক ভয়ানক ও হতে পারে।
২.আসলেই কি ডিপ্রেশন?
যে রোগগুলিকে ডিপ্রেশন বলে ভুল ভাবা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন শারীরিক রোগজনিত অবসাদ, নেশা ও নেশার বস্তুজনিত অবসাদ, পরিস্থিতির কারণজনিত অবসাদ।
এর সাথে রোজকার ভালো-না-লাগা বা বহু প্রচলিত কথা ‘মুড সুইং’ তো আছেই। কিন্তু যেটা মনে রাখা দরকার সেটা হল ডিপ্রেশন রোগটি অনেক বেশি জটিল, সুদূর প্রভাব বিস্তারকারী, এবং অনেক বেশী ক্ষতিকারক, যদি না সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে, যখন ডিপ্রেশন এত তীব্র হয় যে তাতে বাস্তব ভিত্তিহীনতা অবধি এসে যায়।
বাস্তবে যা সত্যি নয়, সেরকম ধারণা মনের মধ্যে তৈরি হয় এবং রোগীর দৈনন্দিন জীবন সেই ধারণার দ্বারা পরিচালিত হয়।
সাধারন উদাসীনতা বা খারাপ লাগা জীবনে ভালো কিছু মুহুর্ত যেমন ঈদ,পুজা,চাকরি পাওয়া,আড্ডা এলেই চলে যায়,কিন্তু ডিপ্রেশন যেনো সহজে ছাড়তে চায় না রোগীকে।
ডিপ্রেশন এর কারনে যে কোন কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যায়।এবং কোনো কিছুই ভালো লাগে না।এমনকি মানুষের মানসিক ও শারীরিক ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।যার প্রভাবে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও জাতীয় জীবনে এক বিরুপ প্রভাব পরে ।
৩. ডিপ্রেশনের প্রকারভেদ ও লক্ষন প্রকারভেদঃ
চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডিপ্রেশন বা ডিপ্রেশিভ এপিসোডকে সাধারণত দুইভাগে ভাগ করা হয় – মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার (Major Depressive Disorde) এবং পারসিস্টেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার (persistent Depressive Disorde)
ডিপ্রেশনের গভীরতারও প্রকারভেদ রয়েছে– অল্প (মাইল্ড), মাঝারী (মডারেট), বা গভীর (সিভিয়ার)।
এছাড়া আরো ২ ভাগে ভাগ করা যায় ঘটনার কারনের উপর ভিত্তি করেঃ
এক্সোজেনাস- মূলত কোনো ঘটনা বা ট্রমাঘটিত কারণে এই অবসাদ ঘটে থাকে।
এন্ডোজেনাস- এই অবসাদের নির্দিষ্ট কারণ নেই, রোগী নিজেও বুঝতে পারেন না এই অবসাদ কেন হচ্ছে।
ডিপ্রেশনের লক্ষনঃ
ডিপ্রেশনের প্রকারভেদ বেশকিছু থাকলেও লক্ষনগুলো প্রায় একই। ডিপ্রেশনের লক্ষন গুলো সাধারণত স্বাভাবিক মন খারাপ,উদাসীনতা,অসস্থি ভাব দিয়ে শুরু হলেও এর লক্ষন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং ডিপ্রেশন ও গভীর হতে থাকে।
ডিপ্রেশনে সাধারনত একটি বা দুটি লক্ষন দেখা যায় না,এক সাথে বেশকিছু লক্ষন ও সমস্যার ফলশ্রুতিই হলো ডিপ্রেশন।কিন্তু কমপক্ষে ২ সপ্তাহ লক্ষন গুলো থাকলে ডিপ্রেশন হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
তাই কিছু লক্ষন দেখা দিলে অবহেলা না করে সেল্ফট্রিটমেণ্ট বা কাউন্সিলিং নেওয়া শুরু করা দরকার।
ডিপ্রেশন এর কিছু লক্ষন নিচে তুলে ধরা হলো।
১. অনুভূতিগুলো বেশিরভাগ লুকিয়ে রাখাঃ
ডিপ্রেশনে থাকা ব্যক্তি সাধারনভাবে তার মনের কথা ও অনুভুতিগুলো নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রাখে।তার অনুভুতি গুলো নিজের মধ্যে রেখে তিলে তিলে কষ্ট পেতে থাকে। সমস্যা নিয়ে ভাবাটাও তারা ভয় পায়। যতদিন পারা যায় পালিয়ে বেড়ায় এবং সমস্যাগুলোকে এর চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত বাড়তে দেয়। কোনো মন খারাপ বা কষ্টের অনুভূতিকে প্রকাশ করে না, কারণ তারা ভয় পান যে তা বেরিয়ে এলে কোনোভাবেই নিজেকে সামলাতে পারবে না, অনুভূতিগুলোকে তাই দমিয়েই রাখা হয়।
২. ভালো বা খারাপ- কোনোটাই না থাকাঃ
ডিপ্রেশনে থাকা ব্যক্তি বেশিরভাগ সময় বুঝতেই পারে না যে সে খারাপ আছে নাকি ভালো আছে।কেমন যেন অসস্থিবোধ কাজ করে সবসময়।
৩.ঝুকিপূর্ণ জীবন যাপনে সাচ্ছন্দ্য ভোগঃ
ডিপ্রেশনে আক্রান্তদের, বিশেষত পুরুষদের মধ্যে কোনো কারন ছাড়াই ঝুঁকি নেবার প্রবণতা বেড়ে যায়। খুব জোরে গাড়ি চালানো, পথ চলতে অন্যমনস্কতা, অতিরিক্ত ধূমপান কিংবা মদ্যপান, জুয়া খেলা, নিজেকে বা অন্যকে আঘাত করা ইত্যাদি ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ দেখা দেয়।
“যা ঘটে ঘটুক”- এ ধরনের একটা আচরণ দেখা দেয় ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষের মধ্যে। দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই তারা এড়িয়ে যায়, সামাজিক সম্পর্কে অবনতি দেখা দেয়, নিঃসঙ্গতা পেয়ে বসে।
তারা নিজের অজান্তেই এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে ডুবে যায় এবং নিজের জীবনের অনেক ক্ষতি করে ফেলে।
৪.কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলাঃ
নিজের পছন্দের কাজগুলো আর করা হয় না।লেখাপড়ায় ও একদম মন বসে না,জোর করে পড়ার চেস্টা করলেও বেশিক্ষণ পারা যায় না।
নিজের সৃজনশীলতার সাথে সম্পর্কিত কোনো কাজ, যেমন ছবি আঁকা, ছবি তোলা, গান গাওয়া, লেখালেখি, নাচ,খেলাধুলা করা ইত্যাদি সব ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়া এবং একসময় আর না করা ডিপ্রেশনের একটি মারাত্মক লক্ষণ।
যে কাজ গুলো একসময় নিত্যদিনের সাথী ছিলো সেই কাজ গুলো করতে ও ভালো লাগে না।
৫. চিন্তা-ভাবনায় অস্পষ্টতা ও সিদ্ধান্তহীনতাঃ
আগের মতো চিন্তা ভাবনা আর আসে না,যা আসে সবই নেগেটিভ। একটা অস্পষ্টতা ও ভয় কাজ করে। কথায় যুক্তি কিংবা আবেগ দুটোরই প্রবল অভাব, কথা বলা কমে যাওয়া, কথা খুঁজে না পাওয়া ইত্যাদি ডিপ্রেশনের লক্ষণ। এ সময় মানুষ প্রচন্ড সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। কী খাবে, কোথায় যাবে, কী কিনবে এসব সিদ্ধান্ত নেয়াও বেশ কঠিন কাজ বলে মনে হয়, অন্যান্য সিদ্ধান্ত ও সমস্যা নিয়ে ভাবা তো দুরের কথা।
৬.ঘুম এর সমস্যাঃ
বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় ঘুম কম হওয়া,এমন হয় যে অনেকক্ষন বিছানায় শুয়ে থাকার পর ও ঘুম আসছে না, এছাড়া ঘুম হলেও একটু পর পর ভেঙ্গে যাওয়া। আর খুব কম পরিমান রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক বেশি ঘুম হওয়া কিন্তু ঘুম শেষে ফ্রেশ না লাগা ও নিজেকে আরো এনার্জিহীন মনে হওয়া।
৭.সব সময় মন খারাপ থাকাঃ
এ যেনো ডিপ্রেসড রোগীর চিরসাথী হয়ে যায়।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বোঝাই যায় না যে কেনো ভালো লাগছে না। এবং অবসাদের কারনে নিজেকে অকর্মা ও শক্তিহীন মনে হয়।কিছুতেই আর মন উচ্ছাসিত হয় না।মুখের হাসি যেনো চিরকালের জন্য ছুটি নিয়ে নেয়।
৮. মনোযোগ ও চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলাঃ
এ সময় মনোযোগ একদমই থাকে না।নিজের প্রতিদিন করা কাজ যেমন চাকরি,ব্যবসা , লেখাপড়া,খেলাধুলা এগুলো করার ইচ্ছাও শেষ হয়ে যায়।এমনকি চিন্তা করার ক্ষমতাও শেষ হয়ে যেতে থাকে।
৯.শক্তিহীনতা ও কনফিডেন্সে হারিয়ে ফেলাঃ
এ সময় হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয় যার কারনে মানসিক শক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে।পাশাপাশি খাবার এর অনিয়ম ডেকে আনে শারীরিক শক্তিহীনতা।এবং কনফিডেন্সের অনেক অভাব দেখা যায় এ সময়। পাশাপাশি নিজেকে মূল্যহীন ও বোঝা বলে মনে হয়।
১০.খাদ্যাভ্যাস এর পরিবর্তনঃ
এ সময় বেশিরভাগ দেখা যায় খাবারের অরুচি।যার কারনে শারীরিক মেটাবলিজমে সমস্যা হয়,যা ডিপ্রেশন কে প্রবল করতে সাহায্য করে,পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক সমস্যা তৈরী করে। কিন্তু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবনতা যা শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয়।
১১.অতিরিক্ত রাগ ও খিটখিটে মেজাজঃ
ডিপ্রেশন ভুক্ত রোগীর মেজাজ প্রায় সবসময়ই খিটখিটে থাকে এবং অল্পতেই রেগে যাওয়ার প্রবনতা অনেক। যার কারনে ছোট কোনো বিষয় নিয়ে রাগারাগি করে এবং কিছু রোগী এর কারনে নিজেকে অপরধী ভেবে আরো বেশি ডিপ্রেশনে পরে যায়।
অবশেষে একজন নিরানন্দ ডিপ্রেশনভুক্ত মানুষ শারীরিক মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আত্নহত্যার দিকে ঝুকে যায়।
৪. ডিপ্রেশনের চিকিৎসা
অনেক মানুষ ধারনা করে থাকেন যে এটি ব্যক্তিগত দুর্বলতা, এই রোগ একা একাই সেরে যায় এবং ঔষধ নিলে হয়তো সারাজীবন নিতে হয়। এইসব ধারনার কোনো সত্যতা নেই।
সঠিক সময়ে যদি চিকিৎসা করা হয় তাহলে জটিলতা ছাড়াই মুক্তি পাওয়া সম্ভব ডিপ্রেশন থেকে। ডিপ্রেশনের প্রাকারভেদ অনুসারে এর চিকিৎসা হয়ে থাকে।
সাধারনত এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমে অল্প (মাইল্ড), এর পর মাঝারী (মডারেট) এবং শেষে গভীর (সিভিয়ার) ডিপ্রেশনে ধাবিত হয়।তাই দেরি ও অবহেলা না করে যতদ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
ডিপ্রেশনের চিকিৎসা কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।যেমন প্রাকৃতিক, মেডিসিন ,ও থেরাপি।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে প্রাকৃতিক চিকিৎসা যে কোনো স্টেজের রোগীর জন্য কার্যকর এবং মনোবিজ্ঞানীরা কাউন্সিলিং এ প্রাকৃতিক চিকিৎসার কথাই বলে থাকে । কিন্তু মাঝারি ও গভীর ডিপ্রেসড রোগীর জন্য মেডিসিন, এবং থেরাপির দরকার হয়ে থাকে।
এজন্য ডিপ্রেশনের লক্ষন দেখা দিলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।
প্রাকৃতিক চিকিৎসাঃ
যে ব্যক্তির মধ্যে ডিপ্রেশনর কিছু লক্ষন কিছুদিন যাবত দেখা যাচ্ছে বা মাইল্ড ডিপ্রেশনে এ আক্রান্ত বা যে ব্যক্তি অল্প কিছুদিন ধরে এই সমস্যার মধ্যে আছে তার জন্য,এই রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের কিছু উপায় নিচে তুলে ধরা হলো।
যদিও সকল স্তরের ডিপ্রেসড রোগীর ক্ষেত্রে এই ট্রিটমেন্ট কার্যকরী।
১. অপ্রাপ্তি ও অপুর্নতা গুলোকে ভুলে বাস্তবতার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা।জীবনে যা পাওয়া সম্ভব না তার পেছনে ছুটে কি হবে এমন টা ভেবে,নিজের যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা।জীবন কে সহজ ভাবে চিন্তা করা।প্রতিযোগিতামুলক কাজ এবং চিন্তা থেকে বের হয়ে আসা।
২. নিজেকে সময় দেওয়া, প্রকৃতির সাথে একটু সময় কাটানো,ছোট বেলার বন্ধু বান্ধবের সাথে ছোটদের মতো খেলাধুলা,হাসাহাসি করা মন ভালো করতে পারে।
৩. পরিবারের সাথে সময় কাটানো, এক সাথে ঘুরতে যাওয়া বা চুরুইভাতি এর মতো কিছু বিষয় অনেক উপকারী।
৪. এছাড়া যদি কারো সাথে কোনো কারনে বিরোধ থেকে থাকে তাহলে হাসিমুখে তার সাথে বিরোধ টা মিটিয়ে নেওয়া প্রশান্তি দিতে পারে।পাশাপাশি রিলেশনশিপ নিয়ে সমস্যা থাকলে মিটিয়ে নেওয়া উত্তম, সম্ভব না হলে এ থেকে অনেক দুরে গিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়া ।
৫. সবার আগে জীবন ও প্রশান্তি তাই কিছুদিনের জন্য ব্যস্ত জীবন থেকে অবসর নেওয়া।
৬. খুজে বের করা নিজের আনন্দের কাজ এবং সেই কাজটি করা।
৭. যান্ত্রিক সোসাল মিডিয়া থেকে দুরে গিয়ে প্রাকৃতিক মিডিয়ায় থাকা,যেমন নদী, পাহাড় ,গ্রাম এ কাছের মানুষের সাথে গিয়ে সময় কাটানো অনেক উপকারে আসবে।
৮. প্রতিদিন ব্যায়াম এই সময় অনেক উপকারী,এ ছারা নাচ,গান,মুভি ও উপকারে আসে কিন্তু সব কিছুই লিমিটে থাকতে হবে।আর পর্যাপ্ত ঘুম ব্রেইন কে সুস্থ রাখবে এবং সুস্থ হতে সাহায্য করবে।
৯. দরকার হলে খাদ্যাভ্যাস এ পরিবর্তন আনা।মানব শরীরের জন্য সঠিক মাত্রায় প্রোটিন,শর্করা,লিপিড,মিনারেলস,পানি ও ভিটামিন দরকার।তাই একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা।
১০. ভিটামিন B-12, ভিটামিন B-6 , ভিটামিন-D ব্রেইন এর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ সব ভিটামিন যেসব খাবারে আছে সেই খাবার বেশি খাওয়া।
১০. ধর্মীয় আনুগত্য ও স্রষ্টার উপাসনা অনেকটাই প্রশান্তি দেয় ও মন কে হালকা রাখে।পাশাপাশি সেবামুলক কাজ যেমন পথশিশু,বয়স্ক মানুষ,শারীরিক সমস্যাভুক্ত মানুষদের জন্য সাধ্যমতো খাবার ব্যবস্থা করে সামনে দাড়িয়ে তাদের খাওয়ানো ও মানসিক শান্তি দিতে পারে।
১১.পর্নগ্রাফি,হস্তমুইথন ও মাদকাসক্তি থেকে দুরে থাকতে হবে। এতে হরমোনাল ও ডাইজেস্টিভ ক্রিয়া স্বাভাবিক থাকবে, যা মানসিক ও শারীরিক অবস্থার উন্নতি করবে।
উপরে বর্নিত কাজগুলোর মাধ্যমে ধীরে ধীরে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া এবং চিরচেনা হাসিখুশি প্রানবন্ত জীবন আবার ফিরে পাওয়া সম্ভব।
মেডিসিনঃ
১.Antidepressant
2.Antianxiety
3.Antipsychotic
ডিপ্রেশনে চিকিৎসকরা এই ধরনের মেডিসিন দিয়ে থাকে,যা রোগীর চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস এবং প্লেজার হরমোন উৎপাদন ও আরো রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে তোলে।
যদিও অনেক চিকিৎসকের মতে মেডিসিনের কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তাই ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিসিন নেওয়া উচিত।
থেরাপিঃ
সাইকোথেরাপি, লাইট থেরাপি, CBT(cognitive Behavioural Therapy ) ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপির মাধ্যমে অতি সহজে এবং খুব কম সময়ে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
লেখকঃ
মিজান মিয়া
বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
References:
1. Review paper of Research Journal of Recent science / Depression-A Review, Iyer k.and KhanZ.A (school of Biosciences and Technolog, Vellore Institute of Technolog, Vellore, TamilNadu, India)
2.Wang et al. Use of mental health services for anxiety, mood, and substance disorders in 17 countries in the WHO world mental health surveys. The Lancet. 2007; 370(9590):841-
3. http://archpsyc.jamanetwork.com/article.aspx?articleid=20867
4. https://roar.media/bangla/main/awareness/8-warning-signs-of-depression
5. https://www.psychiatry.org/patients-families/depression/what-is-depression
6. https://www.medicalnewstoday.com/articles/8933.
7. https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/depression.
8. Medically reviewed by Timothy J. Legg, PhD, PsTheraRN,CPH on www.Healthline.com
9. https://www.ncbi.nlm.nih.gov
10. https://www.mhanational.org/conditions/depression