ছবিটা ১৯২৭ সালের সোলভেই কনফারেন্সের। ছবিতে যে ২৯ জন বিজ্ঞানীকে দেখা যাচ্ছে, তারা সবাই এক প্রজন্মের বিজ্ঞানী।
এই ২৯ জনের ১৭ জনই নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তাদের প্রত্যেকের বিগ আইডিয়া ছিলো। ইমপ্যাক্টফুল ওয়ার্কস ছিলো। আমি লক্ষ করেছি, এই জেনারেশনের মৃত্যুর পর পৃথিবীতে অস্বাভাবিক মাত্রায় বিজ্ঞানের বাণিজ্যিকীকরণ ঘটেছে।
এ বাণিজ্যিকীকরণের ফলে বিগ আইডিয়ার যে ধারা পিথাগোরাস ও অ্যারিস্টোটলের সময় থেকে চলে আসছিলো, তার মৃত্যু হয়েছে।
পৃথিবীতে এখন লাখ লাখ পিএইচডি উৎপাদিত হচ্ছে, কিন্তু কোনো গ্রাউন্ডব্রেকিং আইডিয়া তৈরি হচ্ছে না।
বিজ্ঞানীরা মেশিন ও জার্নালসর্বস্ব হয়ে পড়ছেন। ছাত্র/ছাত্রীদের জোর করে গবেষণা করানো হচ্ছে। স্রেফ একটি জার্নাল আর্টিক্যাল প্রকাশ করার জন্য অনেকে গাধার খাটুনি খাটছেন।
ফলে ‘বিজ্ঞানী’ শব্দটি তার মহিমা হারিয়েছে। গবেষণা এখন অনেক দেশেই চাকুরির মতো রুটিন ওয়ার্ক হয়ে উঠেছে। এক গবেষক টেনে লম্বা করছেন আরেক গবেষকের লেজ।
অধিকাংশ জার্নাল আর্টিক্যাল এখন পাদটীকাসর্বস্ব। আর্টিক্যালটিতে অথরের নিজস্ব বক্তব্য কী, তা বুঝতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র হাতে নিতে হয়।
অত্যন্ত ট্রিভিয়াল বিষয় নিয়ে পিএইচডি করা হচ্ছে, যার কোনো প্রয়োজন নেই।
বিগ আইডিয়ার জন্য দরকার বিগ সলিটিউড। কিন্তু কোনো সুপারভাইজরের অধীনে এভাবে মেশিনের মতো খাটলে বিগ সলিটিউড পাওয়া সম্ভব নয়।
বহু অপ্রয়োজনীয় ও ট্রিভিয়াল বিষয় নিয়ে ল্যাবগুলোতে সময় এবং অর্থ নষ্ট করা হচ্ছে।
এতে প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়তো হচ্ছে, কিন্তু বিজ্ঞান বলতে আমি যা বুঝি, তার অবনমন ঘটছে। ল্যাবগুলোতে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট প্রজেক্টে টাকা দিচ্ছে।
টাকা দেয়ার সময় শর্ত দিচ্ছে, এই এই বিষয়ে গবেষণা করতে হবে! অর্থাৎ যে বিষয়ে গবেষণা করলে প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক প্যাটেন্ট সৃষ্টি করতে পারবে, কেবল সেসব বিষয়েই তারা টাকা দিচ্ছে।
এভাবে মুক্ত ও স্বাধীন বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব নয়। এটি কেবলই অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তির বিস্তার ঘটাবে। কোনো বিগ আইডিয়া মানবজাতি পাবে না।
বিজ্ঞানী সম্প্রদায় যে ধীরে ধীরে রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের ভাড়াটে শ্রমিকে পরিণত হচ্ছেন, এ বিষয়টিও অনেকে টের পাচ্ছেন না।
রাষ্ট্রপ্রধান ও মিলিটারি জেনারেলরা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক মাত্রায় বিজ্ঞানকে ব্যবহার করছে। বিজ্ঞানীদের চিন্তার স্বাধীনতা সুকৌশলে সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।
তরুণ গবেষকদের তারা ভাড়াটে বিজ্ঞানী হিশেবে ব্যবহার করছে। লম্বা বেতনের ফাঁদে এ তরুণরা অনায়াসেই বাঁধা পড়ে যাচ্ছে। কেউই বুনো ও অ্যানার্কিক থাকছে না।
হ্যাঁ, প্রজেক্টভিত্তিক গবেষকের প্রয়োজন আছে, কিন্তু পৃথিবীর সব গবেষকই যদি এরকম গোয়ালঘরে ঢুকে পড়েন, তাহলে তো মুশকিল!
কিছু বুনো বিজ্ঞানী তো আমাদের দরকার। সবাই যদি এরকম ক্যাপিটালিস্ট হয়ে ওঠেন, তাহলে ভবিষ্যতে আমরা বিজ্ঞানী ডাকবো কাকে?
রাজনীতিক ও মিলিটারিস্টদের ভাড়াটে শ্রমিককে বিজ্ঞানী ডাকবো? মেকানিস্টিক জীবন যে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সুখের সাথে সাংঘর্ষিক, এটি আমাদের বুঝতে শিখতে হবে।
—মহিউদ্দিন মোহাম্মদ