হ্যালো…2441139 বেলা বোস তুমি শুনতে পাচ্ছো কি?” বেলা বোস যদি টেলিফোন প্রেমের আইকন হন। তাহলে তাঁর জনক অবশ্যই গ্রাহাম বেল এবং তাঁর ‘তথাকথিত’ প্রেমিকা।
কারণ বলা হয় তাঁরা সেই যে হ্যালো বলা চালু করেছিলেন। আজও প্রায় সব মানুষ ফোন ধরেই প্রথমে হ্যালো কথাটিই বলে থাকেন।শুধু তাই নয় এখন স্মার্টফোন কানে দিয়েও লোকে সেই হ্যালো বলেন!
এখনও যে কোনও প্রেমিক ফোনের ওপারে থেকে যতবার হ্যালো বলেন, ততবার বেল ও মার্গারেটের ভালোবাসার কাহিনী কি উচ্চারিত হয় !! সারা বিশ্ব প্রতিদিনে কোটি কোটি কল হচ্ছে। আর প্রত্যেকবারই উচ্চারিত হচ্ছে গ্রাহাম বেলের সেই অজানা প্রেমিকার নাম!
প্রতিটি হ্যালোতে লুকিয়ে অজানা অচেনা প্রেমের সেই কাহিনী। গল্পটা কেমন? গল্প আপনার আমার মতোই,খুব সাধারণ। তবে টেলিফোনের আবিষ্কর্তা প্রথমবার ফোন তুলে কোনও কথা বলে থাকলে সেটা আর অসাধারণ থাকে না। আর সেটাই হয়ে গিয়েছে ইতিহাস।
শোনা যায় গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিস্কারের পর প্রথম ফোন কলটি করেছিলেন তাঁর গার্লফ্রেন্ডকে। তাঁর সেই প্রেমিকার নাম নাকি ছিল মার্গারেট হ্যালো। বিজ্ঞানী তাঁর প্রেমিকার নাম ধরেই সম্বোধন করেছিলেন। বলেছিলেন ‘হ্যালো’। আর এখন নাকি সেটাই আজ সবার মুখে মুখে ফেরে। ফোন তুলেই ‘হ্যালো’………।
তবে গবেষকরা বলছেন যে, এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত কাহিনী। প্রথমত, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল যাকে বিয়ে করেছিলেন তার নাম ম্যাবেল গার্ডিনার হুবার্ড। বিয়ের পর তার নাম হয় ম্যাবেল বেল। এছাড়াও এ পর্যন্ত কোনো সত্যিকারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বেলের তথাকথিত প্রেমিকা মার্গারেট হ্যালো সম্পর্কে।
সুদর্শন যুবক গ্রাহামের অন্য কোনো হ্যালো নামক সুন্দরীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এমন কোনো প্রমাণ ও ইতিহাসের কোথাও পাওয়া যায় না।আর যদিও থেকেও থাকে তবে তিনি সত্যি হ্যালো বলেছিলেন কি না তাও জানার উপায় নেই!
কারণ এখনকার মতো তখন কোনো কল রেকর্ড করার ব্যাপার স্যাপার আবিষ্কার হয় নি। আর যা যায় যায় তিনি টেলিফোনের আলাপচারিতার শুরুতে হ্যালো নয় বলতেন ahoy! !
তাহলে হ্যালো কথাটি কথা থেকে এলো ?
আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করলেও ‘হ্যালো’ সম্ভাষণটি বলার প্রচলন তৈরি করেছিলেন বৈদ্যুতিক বাতির আবিষ্কর্তা থমাস আলভা এডিসন। ১৮৭৭ সালের ১৮ জুলাই থমাস আলভা এডিসন ‘প্রিন্সিপাল অব রেকর্ডেড সাউন্ড’ আবিষ্কার করেন।
সে সময়ে তার পরীক্ষানিরীক্ষার কাজে তিনি যে শব্দটি বারবার উচ্চস্বরে ব্যবহার করেছিলেন তা হলো ‘Halloo’। আর এই শব্দটিই তিনি প্রথম তার উদ্ভাবিত ‘পেপার সিলিন্ডার ফনোগ্রাফ’ যন্ত্রে রেকর্ড করেছিলেন। এই শব্দটি সেসময়ে ব্যবহৃত হতো মূলত কোনো ব্যক্তির মনোযোগ আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে।
বলা হয়ে থাকে যে, শব্দটির বারংবার ব্যবহারের ফলে একসময় তা বিকৃত এবং পরিবর্তিত হয়ে ‘হ্যালো’ “Hello “তে পরিণত হয়। অনেকে আবার বলে থাকেন শব্দটির মূল আবিষ্কারক ছিলেন এডিসন নিজেই। কিন্তু ১৮৭৭ সালের অনেক আগে থেকেই ‘হ্যালো’ শব্দটির প্রচলন ছিল। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি অনুযায়ী, সর্বপ্রথম ‘হ্যালো’ শব্দটির ব্যবহার লিপিবদ্ধ হয় ১৮২৭ সালে যা এখন থেকে প্রায় ২০০ বছরের কিছুটা কম সময় আগেই।
তবে এটা সঠিক যে থমাস আলভা এডিসনের সেই ‘হ্যালো’ শব্দটির রেকর্ড করার মাধ্যমেই সকল ক্ষেত্রে টেলিফোনে সম্ভাষণ স্বরূপ এটির প্রচলন শুরু হয়ে যায়।
তাহলে ফোন তুলে প্রথম কি বলেছিলেন গ্রাহাম বেল? তথ্য বলছে, তিনি তাঁর সহকারি থমাস ওয়াটসনকে বলেছিলেন।, ‘মিঃ ওয়াটসন, এদিকে আসুন। আপনাকে আমি দেখতে চাই।’
লিখাঃপঞ্চানন মণ্ডল
তথ্যসূত্র-