DARK সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যাখ্যা।
[ফিজিক্স লেসন]
DARK আর দশটা সাধারণ সিরিজের মত সহজ কিংবা লিনিয়ার না। ঘুম ঘুম চোখে দেখতে বসেছেন আর মাথা না ঘামিয়ে সহজেই ডার্কের সব বুঝে যাবেন তা কিন্তু মোটেও আশা করবেন না!
মাইন্ডবেন্ডিং এ সিরিজটির প্লট, অনগোয়িং, এন্ডিং সবকিছুরই বেইসে রয়েছে ফিজিক্সের কিছু অ্যাকচুয়াল এবং হাইপোথিসিসের যৌক্তিক প্রয়োগ।
ডার্কের স্টোরি বিল্ডআপের যে সৌন্দর্য্য তার আড়ালে রয়েছে টাইম ট্রাভেল, হিগ্স-বোসন/গড পার্টিক্যাল, শ্রোডিঞ্জারের থট এক্সপেরিমেন্টসহ ওয়ার্মহোলের মত ফিজিক্সের কিছু যুগান্তকারী চিন্তাভাবনা।
লেখাটিতে এই টার্মগুলোর সাথে আমরা পরিচিত হবো এবং ডার্কের সাথে এগুলো কিভাবে সম্পর্কিত সেটি নিয়েও জানার চেষ্টা করবো।
এবং শেষে অবশ্যই থাকছে ডার্কের বেশ কিছু মোস্ট ওয়ান্টেড প্রশ্নোত্তর।
SPOILER ALERT ⚠️
প্রথমেই টাইম ট্রাভেল দিয়ে শুরু করছি।
টাইম ট্রাভেল যদিও এখনো হাইপোথিসিস, তাও এই নিয়ে মোটামুটি দুটি কমন থিওরী আছে-
১) প্যারেলাল ইউনিভার্স থিওরী (ফিজিক্স):
এই থিওরী অনুসারে আপনি ট্রাইম ট্রাভেল করে শুধুমাত্র অন্য আরেক ইউনিভার্সে যেতে পারবেন। মানে আপনি যে অবস্থায় আছেন, ঠিক সে অবস্থায় ফিরে যেতে পারবেন। তবে তা অন্য ইউনিভার্স।
ধরেন আপনি আপনার দাদাকে মারতে চান। টাইম ট্রাভেল করে তাকে মারতে পারবেন, তবে তা অন্য এক রিয়েলিটিতে বা ইউনিভার্সে।
২) নভিকোভ’স সেলফ থিওরি (পুরো কাল্পনিক):
এই থিওরী অনুসারে আপনি আপনার অতীত / ভবিষ্যতে ফিরে যেতে পারবেন। তবে কোন কিছুর পরিবর্তন করতে পারবেন না।
ধরুন আমি অতীতে গিয়ে আমার বাবার জন্মের আগেই আমি আমার দাদাকে মারতে চাই। কিন্তু তা পারবো না। কারণ?
আমি যদি অতীতে গিয়ে দাদাকে মেরেই ফেলি, তাহলে আমার বাবার জন্ম কিভাবে হবে!? আমার বাবা না আসলে আমি কিভাবে বর্তমানে এগজিস্ট করবো!?
এজন্য এই থিওরি অনুসারে আপনি অতীতে গেলেও কোন পরিবর্তন সম্ভব নয়।
ডার্কে জোনাস একবার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু আল্টিমেটলি পারে নাই। নোয়াহ এসে বাধা দেয়। কারন লুপে তার ফিউচার এগজিস্ট করছিলো।
আবার সে তার বাবা মিকেলকে ২০২০এ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু পারেনাই। বড় জোনাস, নোয়ার কারনে। আর মিকেলকে তখন নিয়ে আসলে তার জন্মই তো হতোনা!
এবার টাইম ট্রাভেলের খুবই প্রয়োজনীয় টার্ম – প্যারাডক্স নিয়ে বলি।
প্যারাডক্স জিনিসটা আসলে কি?
১. ধরেন সাপ তার লেজ খাচ্ছে। সাপ তার লেজ মানে নিজেকে খাচ্ছে।
এখন আপনি এখানে কোনটি ভাববেন?
সাপ নিজেকে খেয়ে বেঁচে থাকছে নাকি নিজেকে খেয়ে নিজেকেই মারছে?
২. ডিম আগে না মুরগি আগে?
এটির উত্তরও দুটোই হতে পারে।
ঠিক এই ধরনের অবস্থাকে বলে প্যারাডক্স।
টাইম প্যারাডক্সের একটি গুরুত্বপূর্ন টাইপ হচ্ছে বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স। [ প্রিডেস্টিনেশন এবং ডার্কের খুবই গুরুত্বপূর্ণ টার্ম এটি]
বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স কি?
এটা টাইম ট্রাভেলের মধ্যে একটা হাইপোথেটিক্যাল লুপ যেখানে একটি ঘটনা দ্বিতীয় কোনো ঘটনার জন্ম দেয়, কিন্তু এই দ্বিতীয় ঘটনাটিই আবার প্রথম ঘটনাটি ঘটার একচুয়াল কারণ!
এটার কোনো কেন্দ্র নেই। ঠিক ঠিকানা নাই। কোথায় শুরু আর কোথায় শেষ কিছুই বোঝা যায়না।
যেমন ধরুন, ডার্ক সিরিজে এলিজাবেথ আর নোয়াহ বিয়ে করে শার্লটের জন্ম দেয় ২০৪১ সালে। পিচ্চি শার্লটকে চুরি করে টাইম ট্রাভেল করিয়ে ১৯৭৩ সালে টানহাউসের কাছে দিয়ে আসা হয়। টানহাউস পালক দাদার মতনই শার্লটকে লালন পালন করে।
পরবর্তীতে শার্লট পিটারকে বিয়ে করে এবং তাদের ঘরে ২য় মেয়ে হয়। সে মেয়েই এলিজাবেথ!
সেই এলিজাবেথ বড় হয়ে আবার জন্ম দেয় শার্লটের! এবং এভাবে চলতেই থাকে!
মানে এলিজাবেথ জন্ম দেয় শার্লটকে। সেই শার্লটই আবার জন্ম দেয় এলিজাবেথের!
এখানে ঠিক কোনটি আগে ঘটেছিলো?
এই প্রশ্নের আসলে কোনো উত্তর নেই! এখানে ১ম ঘটনাটিই ২য় টির জন্ম দেয়, আবার ২য় ঘটনা ই জন্ম দেয় প্রথমটার!
এটিই বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স!
Schrödinger’s Cat:
ধরুন একটা বাক্সে একটা বিড়াল আছে। বাক্সটার ভিতরে বিষের শিশিও আছে।
আপনি বাক্সটা খোলার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ভাববেন বিড়ালটা মরে যেতেও পারে, বেঁচেও থাকতে পারে।
মানে পসিবিলিটি ৫০-৫০।
ধরেন বাক্স খোলার পর দেখলেন বিড়ালটি মরে গেছে। মানে এখানে দুটি পসিবিলিটির মধ্যে একটিই টিকে আছে। রেগুলার ফিজিক্স এটিই বলে।
কিন্তু কোয়ান্টাম ফিজিক্স বলে যে, একই সময়ে দুটি পসিবিলিটিই টিকে থাকা সম্ভব!
দুটো বাস্তবতাই একই সময়ে বিরাজ করবে।
১. বিড়ালটি মারা গেছে,
২. বিড়ালটি মারা যায়নি।
এই দুটি পসিবিলিটিই বাস্তবতা হয়ে টিকে থাকবে।
যখন বাক্সটা খোলা হয় তখন একটি বাস্তবতা সরে গিয়ে অন্যটি টিকে থাকে।
দুটো অবস্থা ই একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে বিরাজ করতে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন পথে চলে এবং ভিন্ন পরিণতি গেইন করে।
কোয়ান্টাম ডিকোহেরেন্স পরিণতি দুটোকে একসাথে ঘেঁষতে দেয়না।
এখান থেকে প্যারেলাল ইউনিভার্স কন্সেপ্টটি নিয়ে বলা যায়।
মানে বিড়ালটি একই সময়ে এক ইউনিভার্সে বেঁচে থাকবে, অন্য ইউনিভার্সে মারা যাবে।
ডার্কে টানহাউস এই কন্সেপ্টই চিন্তা করেছেন তার ছেলে মারা যাওয়ার পর।
উনার ছেলে উনার উপর রাগ করে বউ-বাচ্চাসহ বাড়ি থেকে চলে যায় এবং গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যায়। তিনি তার ছেলেকে খুবই ভালোবাসতেন এবং এই মৃত্যু মেনে নিতে পারেন নাই।
তাই তিনি শ্রোডিঞ্জারের কথা মাথায় নিয়ে উপায় খুঁজতে লাগলেন।
এখানে উনি কোয়ান্টাম ইন্টেংগেলমেন্ট অনুযায়ী দুটি পসিবিলিটির কথা ভেবেছেন –
১। এই জগতে তার ছেলে রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে এক্সিডেন্টে ফ্যামিলি সহ মারা যায়।
২। অন্য জগতে ছেলে রাগ করে বের হয়ে যায় না। আর ফ্যামিলি মেম্বার রাও মারা যায় না।
তিনি ভেবেছেন তার ছেলে এই জগতে মারা গেলেও অন্য প্যারালেল জগতে ঠিকই বেঁচে আছে।
এখন এই প্যারালেল জগত, যেখানে তার ছেলে বেঁচে আছে সেটি অপ্ট করতে পারলেই তার ছেলেকে ফিরে পাবেন তিনি। এই প্যারালেল ওয়ার্ল্ড গেইন করতে তিনি ১৫বছর গবেষণা করে অবশেষে মেশিন আবিষ্কার করেন।
কিন্তু একটি প্যারালাল জগত আনতে গিয়ে এই মেশিন তার মূল জগতকে বিভাজিত করে ফেলে এবং সৃষ্টি হয় দুটো নতুন জগতের!
এই নতুন দুটি জগতই আবার একটি আরেকটার প্যারালেল।
ডার্ক সিরিজটার সকল সমস্যার শুরু হয় এখান থেকেই!
ওয়ার্মহোল:
১৯৩৫ সালে আইনস্টাইন তার একজন সহকর্মী নাথান রোজেনের সাথে যখন জেনারেল থিওরী অব রিলেটিভিটি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলেন তখন তারা একটি বিচিত্র সমাধান পেয়েছিলেন।
যদি স্পেসটাইমকে যথেষ্ট বাঁকানো যায় তাহলে অনেক দূরের দুটি অংশ বাঁকা হয়ে এত কাছাকাছি চলে আসতে পারে যে একটা ছোট ফুটো দিয়ে সেই অংশ দুটি জুড়ে দেয়া সম্ভব।
এটিই আইনস্টাইন-রোজেন ব্রিজ নামে পরিচিত। পরে পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার এর নামকরন করেন ওয়ার্মহোল ।
এটি এখনও একটি হাইপোথিসিস।
ওয়ার্মহোলের ভিতর দিয়ে শুধু যে বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্বের দুটি স্থান শর্টকার্ট করে ফেলা যাবে তা নয়- সময় পরিভ্রমণও করা যাবে। মানে আপনি অতীত কিংবা ভবিষ্যতে ভ্রমণ করতে পারবেন। প্যারেলাল ইউনিভার্স এগজিস্ট করলে এতেও ট্রাভেল করা যেতে পারে।
ওয়ার্মহোল সৃষ্টি আর স্ট্যাবল রাখতে যেই হিউজ পরিমাণ এনার্জি এবং ডার্ক এনার্জি প্রয়োজন তার জন্য এটা ন্যাচারালি সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।
গড পার্টিক্যাল/ হিগস- বোসন কণা:
যেকোনো বস্তুরই ভর থাকে। যদি প্রশ্ন করা হয় বস্তুর এই ভর থাকার কারণ কি? এই ভর কিভাবে তৈরী হয়?
ফিজিক্সের স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুযায়ী, মহাবিশ্বের প্রতিটা বস্তুর কনিকাসমূহের ভর সৃষ্টির প্রাথমিক ভিত্তি হচ্ছে এক অদৃশ্য কণা। ১৯২৪ সালে আইনস্টাইন এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু এটির ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
এরপর ১৯৬৪ সালে হিগস তাত্ত্বিকভাবে এমন এক কণার ধারণা দেন যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে।
অবশেষে ২০১২ সালে সার্নের গবেষকরা এই কণা আবিষ্কার করেন।
হিগস ফিল্ডের কোয়ান্টাম এক্সাইটেশানের মাধ্যমেই এই পার্টিক্যাল তৈরী করা হয়েছিলো।
এর ভর 125 GeV. এর কোনো চার্জ নেই।
বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন এই পার্টিক্যালরা চারপাশে ক্ষেত্র ছড়িয়ে রাখে, যেটাকে তাঁরা নাম দিয়েছেন হিগস ফিল্ড। মহাবিশ্বের জন্মের পর যখন বস্তু কণিকাগুলো (কোয়ার্ক, ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন) জন্ম নিচ্ছে, তার আগেই হিগস বোসনরা কাজ করতে শুরু করেছে। তৈরি করেছে তাদের চারপাশে হিগস ফিল্ড। সেই ফিল্ডের ভেতর যখন কণিকারা প্রথমবার প্রবেশ করে, তখনই আসলে ফয়সালা হয়ে গিয়েছে তাদের নিয়তি। অর্থাৎ কণাগুলো কতটুকু ভারী হবে কিংবা আদৌ ভর লাভ করবে কিনা, সে সব জেনে যাচ্ছে ওই হিগস ফিল্ডের সঙ্গে ইন্টার্যাকশান করতে গিয়ে!
হিগস ফিল্ডের মধ্যে যে কণা যত বেশি মিথস্ক্রিয়ায় জড়াবে ফিল্ডের সঙ্গে, তার ভর তত বেশি হবে। কোয়ার্ক কণা হিগস ফিল্ডের সঙ্গে ইলেকট্রনের চেয়ে অনেক বেশি মিথস্ক্রিয়ায় জড়ায়। তাই কোয়ার্কের ভর ইলেকট্রনের চেয়ে বেশি।
আবার আলোর কণা ফোটনের গতি অনেক বেশি, চার্জ শূন্য। তাই খুব সহজেই হিগস ফিল্ডকে ফাঁকি দিতে পারে, মিথস্ক্রিয়া না করেই বেরিয়ে যেতে পারে বিনা বাধায়। তাই ফোটনের ভর প্রায় শূন্য।
স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, উচ্চ শক্তিস্তরে গড পার্টিক্যাল ভারসাম্যহীন হয়ে উঠতে পারে। অস্থিতিশীল অবস্থায় এলে তা ধ্বংসাত্মক ভ্যাকুয়্যম অবক্ষয় তৈরী করে যাতে স্পেস-টাইম নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। মানে মহাবিশ্ব ধ্বংসও হতে পারে!
গড পার্টিক্যাল ১০০বিলিয়ন GeV এর বেশি শক্তি অর্জন করলে মেগা স্ট্যাবল অবস্থায় পৌছায়।
এই অবস্থায় অনেক আকস্মিক ঘটনা ঘটতে পারে।
এই কণা দিয়ে টাইম ট্রাভেল অদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে কিছু বিজ্ঞানী ধারণা দেন।
Large Hadron Collider নামের একটি এটম স্মেশার যেটির দাম প্রায় ৪বিলিয়ন, (সাইজ ২৭কিমি!) তা দিয়ে হিগস বোসন কণা তৈরী সম্ভব। এই কণার ভর বাড়িয়ে শক্তি অর্জন যদি কন্ট্রোল করা যায় তা হিগস সিংলেট সৃষ্টি করতে পারে। এই হিগস সিংলেট স্পেস-টাইমে জাম্প করে হিডেন ডাইমেনশানে ট্রাভেল করে পুনরায় আমাদের ডাইমেনশানে ফিরে এসে অতীত বা ভবিষ্যতে ট্রাভেল করতে পারে।
কেবল পার্টিক্যালটি দ্বারাই এই ট্রাভেল সম্ভব।
এবার প্রশ্নে চলে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: পাওয়ারপ্ল্যান্টের হলুদ ব্যারেলগুলোর ভেতর কি ছিলো যা বার্নড ডপলার, ক্লডিয়া এবং পরবর্তীতে আলেকজান্ডার হাইড করতে চেয়েছিলো?
– ১৯৮৭ সালের দিকে বার্নড ডপলার ক্লডিয়াকে জানায়, সামারে নাইট শিফটে ভলিউম কন্ট্রোল সিস্টেমে একটি দূর্ঘটনা হয়। একটি টিউবে হাইড্রোজেন গ্যাস ভরে যাওয়াতে, ক্যামিক্যাল ফিড ইন সিস্টেমে জং ধরে গিয়েছিলো।
এরপর সেটা ব্লাস্ট হয়।
রেডিওএক্টিভ ম্যাটেরিয়াল লিক হয়েছিলো। তবে খুব কম।
তারা রেডিওএক্টিভ ওয়েস্টগুলো ব্যারেলে ভরে পাওয়ারপ্ল্যান্টের ভেতর একটি কেইভে লুকিয়ে রাখে।
লুকিয়ে রাখার কারণ?
কমাস আগেই চেরনোবিল পাওয়ারপ্ল্যান্টে ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটে, এখন তাদের এই ছোটখাটো দুর্ঘটনা জানাজানি হলে পাওয়ারপ্ল্যান্ট বন্ধও হয়ে যেতে পারে। তাই এটা হাইড রাখা হয়।
পাওয়ারপ্ল্যান্টে ইউরেনিয়ামের চেইন বিক্রিয়ার ফলে যে বাইপ্রোডাক্ট প্রডিউস হয় তার মধ্যে সিজিয়াম-১৩৭ একটি।
তাই এখানে ধরে নেয়াই যায়, ব্যারেল গুলোয় সিজিয়াম ছিলো।
এরপর ক্লডিয়া ইয়ং আলেকজান্ডারকে দিয়ে ব্যারেলগুলোকে গুহার ভেতর মেটালিক ডোর দিয়ে ঢালাই করে দেয়।
কিন্তু পরবর্তীতে ক্লডিয়া জানতে পারে বার্নড তাকে মিথ্যা বলেছিলো। ভলিউম কন্ট্রোলের তথ্যগুলো নিরীক্ষা করে সে দেখে সবকিছু স্বাভাবিক ছিলো।
ঠিক কি ঘটেছিলো বার্নডকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে বার্নড জানায়, ঘটনার পর তিনি নমুনা নিয়ে দুইবার পরীক্ষা করে বিশ্লেষন করেছিলেন। কিন্তু ফলাফলগুলো স্বাভাবিক ছিলোনা।
এটি ১৯৬৪ সালে হিগসের গড পার্টিক্যাল নিয়ে পরীক্ষার ফলাফলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
এই পার্টিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে ক্লডিয়া পরে জানতে পারে এর ভর 125GeV, যা গড পার্টিক্যালের ভরের সমান।
সেই হিসেবে ব্যারেলগুলোর ভিতরে আসলে হিগস বোসন পার্টিক্যালও ছিলো।
কিন্তু এই পার্টিক্যালগুলো তো ইলেমেন্টারি পার্টিক্যাল এবং খুবই ক্ষুদ্র। তা ব্যারেলের ভেতর থাকাও যৌক্তিক না। হয়ত সিজিয়াম ছিলো এবং সিজিয়াম এটম উচ্চশক্তিতে ডাইভার্টেড হয়ে তখন হিগস-বোসনে কনভার্ট হচ্ছিলো।
এই ঘটনার সোর্স কি তা পুরোপুরি স্পষ্ট না।
১৯৮৬ সালের ২১শে জুন “আননোউন” এর তিনটি ভার্সন ই দুই ওয়ার্ল্ডে যায় এবং পাওয়ারপ্ল্যান্টের ভলুইম কন্ট্রোল সিস্টেমে ঢুকে কিছু একটার সুইচ অন করে হাইয়ার ভ্যালুতে অপারেট করে। ধরে নেয়া হয় সেসময় ই এই পার্টিক্যালগুলো ক্রিয়েট হয়। আবার সেদিনই ট্যানহাউস এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে প্যারালাল ওয়ার্ল্ড ক্রিয়েট করে।
প্রশ্ন: উইন্ডেন কেইভের ভেতর আসলে কি ছিলো যা মানুষদের টাইম ট্রাভেল করাচ্ছিলো?
-ওয়ার্মহোল। এটি ঠিক বাংকারের নিচে লোকেটেড।
উইন্ডেন কেইভের মেইন প্রবেশপথ ফরেস্টে এবং বাকিটা পাওয়ারপ্ল্যান্টের কাছে। প্রবেশপথ দুটি আগে কানেক্টেড ছিলো, কিন্তু ১৯৮৭সালে ক্লডিয়া মেটাল ডোর দিয়ে সিইল্ড করে দেয়।
প্রশ্ন: কিভাবে ওয়ার্মহোল ক্রিয়েট হলো কেইভের ভেতর?
১৯৮৬ সালের সামারে ট্যানহাউস দুটো প্যারালেল ওয়ার্ল্ড ক্রিয়েশনের এক্সপেরিমেন্টটি চালায় বাংকারের ভেতর।
এসময় হিউজ পরিমান এনার্জি ও ডার্ক এনার্জি রিলিজ হয়ে বাংকারের ঠিক নিচের দিকে, মানে কেইভের ভেতর ফ্লো করে যার কারণে ওয়ার্মহোল সৃষ্টি হয়।
সিক মন্ডুসরা এটা জানার পর মেটাল ডোর দিয়ে এটি বন্ধ করে রেখে দিয়েছিলো একটি “ট্রিকুয়েট্রা” সিম্বল দিয়ে, যেখানে ল্যাটিন ভাষায় লেখা – Thus the world is created.
একবার এই দরজা খুললে তা ম্যান মেইড “প্যাসেজ” এ নিয়ে যায় এবং ওয়ার্মহোলের ইফেক্টে সৃষ্ট শাখপথ দেখা যায় যা ১৯৫৩, ১৯৮৬, ২০১৯ এই তিনটি সালের সাথে সংযুক্ত।
২০১৯ থেকে গেলে ডান পাশের প্যাসেজটি ১৯৮৬ তে নিয়ে যাবে। (জোনাস একেবারে প্রথমে এই পথটিই ফলো করে)
আর বাম পাশের প্যাসেজে গেলে ১৯৫৩। ( উলরিখ এটি ব্যবহার করে এবিং মাইনকা চিপায় আটকে পড়ে! -_- )
প্রশ্ন: এডাম কেন দুই ওয়ার্ল্ডেই অ্যাপোক্যালিপ্স বা ধ্বংসাযজ্ঞ ঘটাতে চেয়েছিলো?
-পাওয়ারপ্ল্যান্টের ব্যারেলগুলো খুললে এতে থাকা গড পার্টিক্যালগুলো রিলিজ হয় এবং মুহুর্তের মধ্যে এদের ভর হিউজ পরিমানে বেড়ে হয়তো প্রায় মিলিয়ন GeV তে পৌছায়! এতে স্পেস-টাইম ফেব্রিক আর স্ট্যাবল থাকেনা আর অ্যাপোক্যালিপ্স ঘটে।
এতে রিলিজ হওয়া উচ্চ ভরশক্তি গেইন করা গড পার্টিক্যালগুলো এডাম ইউজ করে পোর্টাল বানাতে।
দুইটা জগতেরই ফ্যামিলির ট্রির অরিজিন ছিলো জোনাস আর মার্থার ছেলে “আননোউন”।
অর্থ্যাৎ, আননোউনই এই দুই জগতের সংযোগস্থাপনকারী।
এজন্য এডাম ভেবেছিলো প্রেগন্যান্ট মার্থাকে ডিস্ট্রয় করলেই দুই ওয়ার্ল্ডের ইতি টানা যাবে।
দুই ওয়ার্ল্ডেরই অ্যাপোক্যালিপ্সের সময় রিলিজ হওয়া এনার্জি পোর্টালে চালু করেই মার্থাকে ডিস্ট্রয় করতে চেয়েছিলো এডাম।
যদিও এডামের এই ধারণা পরে ভুল প্রমাণিত হয়।
আবার এই পার্টিক্যাল ইউজ করে বানানো পোর্টাল ব্যবহার করে অতীত কিংবা ভবিষ্যতের যে কোনো ডিসায়ার্ড টাইমেই ট্রাভেল করা যায়।
লুপ ঠিক রাখতে ইভা আর এডামের এটা খুবই দরকার ছিলো।
কারণ আগের বানানো টাইম মেশিন কিংবা কেইভের ওয়ার্মহোল দিয়ে শুধু ৩৩বছর আগে পরে ট্রাভেল করা যেতো।
কিন্তু এখন এই পোর্টাল দিয়ে ৩৩ বছরের জট ভেঙ্গে যেকোনো টাইমেই ট্রাভেল করা যাবে।
দুই ওয়ার্ল্ডেই লুপ ঠিক রাখার পাশাপাশি এ কারণেও অ্যাপোক্যালিপ্স ঘটা জরুরী ছিলো।
Note: আগের বানানো টাইম মেশিনে ফুয়েল হিসেবে সিজিয়ামের আইসোটোপ Cs-137 ব্যবহার করা হয় যা হিগসফিল্ড সৃষ্টি করে ওয়ার্মহোল ক্রিয়েট করতো।
প্রশ্ন: সিক মুন্ডুস কি? এর উদ্দেশ্যই বা কি?
-প্রাথমিকভাবে এটা প্রতিষ্ঠা করেছেন ট্যানহাউজ বংশের অ্যানসেস্টর, প্রায় ২০০ বছর আগে। তার স্ত্রী মারা যাবার পরে তাকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে। এটাই পরে অ্যাডামরা অ্যাডপ্ট করে।
তখন এটা হয়ে যায় সিক্রেট টাইম ট্রাভেলার সোসাইটি। এডাম এটা লিড করতে থাকে খুব সম্ভবত ১৯২০ সালের আগ থেকে।
এর পার্পাস? টাইম কন্ট্রোল করে টাইম লুপের এন্ড আনা, এপিক্যালিপ্স ঘটানো এবং সো কল্ড প্যারাডাইস প্রতিষ্ঠা করা। -_-
প্রশ্ন: জোনাসকে সেকেন্ড ওয়ার্ল্ডে নিয়ে এক পর্যায়ে মার্থা গুলি করে মারে, তারপরেও ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডে জোনাস বেঁচে থাকে কিভাবে?
এবং মধ্যবয়স্ক জোনাস কেন মনে করতে পারে না যে মার্থা ওকে অ্যাপোক্যালিপ্স থেকে বাঁচাতে আসছিল?
– এডামের জগতে অ্যাপোক্যালিপ্সের দিন মার্থা মারা যায় এডামের গুলিতে।
সেইসময় জোনাসের জন্য কোয়ান্টাম ইন্টেংগেলমেন্ট অনুযায়ী ২ টা পসিবিলিটি থাকে।
১। প্যারালেল ওয়ার্ল্ডের মার্থা এসে জোনাসকে নিয়ে যাবে।
২। প্যারালেল ওয়ার্ল্ডের মার্থা আসবে না।
জোনাস তার বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ড বাংকার এ লুকিয়ে বাঁচবে।
১ম পসিবিলিটিতে জোনাস মারা যায়।
২য় পসিবিলিটিতে জোনাস ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডে বেঁচে থাকে।
যেহেতু সে প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে যায়নি, তাই ২য় মার্থার কথা তার মনে থাকার কথা না।
প্রশ্ন: ক্লাউডিয়া কিভাবে লুপ ভাঙ্গার নিয়ম বুঝলো?
-যখন অ্যাপোক্যালিপ্স হয় তখন সামান্য সময়ের জন্য টাইম ফ্রিজ হয়ে যায়।
এই তথ্য ব্যবহার করে ইভা ওয়ার্ল্ডের মার্থা তার বিভিন্ন ভার্সনকে মুভ করিয়ে লুপটা চালু রাখে।
ক্লডিয়া নিজেও এই নলেজ গেইন করার পরে একটা ভার্সনকে পাঠায় নোয়ার হাতে খুন হতে, যেটা সবসময় হয়ে আসছে। আর আরেকটা ভার্সনকে উল্টা দিকে পাঠায় অ্যাডামের কাছে।
ক্লাউডিয়ার মেইন ভার্সন ফিউচার থেকে বুঝতে পারে দুই জগতেই ওর মেয়ে রেগিনা ক্যান্সারে মারা যায়।
এজন্য সে আগেই ট্রন্টেকে বলে ক্যান্সারে আক্রান্ত রেগিনাকে ধুকে ধুকে কষ্ট পেয়ে মরার আগেই বালিশ চাপা দিয়ে মারতে। ট্রন্টে রেগিনাকে তাই মেরে ফেলে।
ক্লাউডিয়া ওর মেয়ের মৃত্যুর কষ্ট মেনে নিতে পারেনি।
৩৩বছর ধরে দুই জগতের লুপের অরিজিন খুজতে থাকে।সে নিজে দুই ওয়ার্ল্ডের ফ্যামিলি ট্রি সাজিয়ে স্টাডি করতে গিয়ে পেয়ে যায় টানহাউস ফ্যামিলি। দুই জগতের টানহাউস নিয়ে ডিটেইলস স্টাডি করে সে ধীরে ধীরে বুঝতে পারে মূল জগত ডাইভার্ট হয়ে এই দুই জগত তৈরীর ঘটনা। তারা সবাই এই গেরার পুরো অংশ নয়। দুটো জগতই হচ্ছে ক্ষত যেটা অন্য কিছু থেকে জন্মেছে।
যারা দুই জগতেই লুপের মধ্যে আছে তারা মূল জগতে বাঁচবেনা। রেগিনার বাবা বার্নড হওয়ার কারণে রেগিনা লুপের মধ্যে নেই। তাই রেগিনা মূল জগতে বেঁচে থাকবে।
দুটো জগতে আসলে তেমন কোনো পার্থক্য ছিলোনা। ঘটনাগুলো হয়ত একইভাবে বা একইসময়ে ঘটেনি, কিন্তু সবসময়ই ঘটেছে। দুই জগতের কেউই নিয়তি থেকে পালাতে পারেনাই।
ক্লাউডিয়া বুঝতে পারে মূল জগতে শুধুমাত্র জোনাস আর মার্থাকে দিয়েই এক্সেস করা যাবে। তাই সে দুই জগতের জোনাস ও মার্থাকে পাওয়ার জন্য লুপ কন্টিনিউ রাখে। ক্লাউডিয়াই আসলে ইভা এবং এডামকে অপারেট করিয়েছিলো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে। শেষ পর্যন্ত লুপ কন্টিনিউ রাখার জন্য।
প্রশ্ন: এন্ডিং সিনে ডিনার পার্টিতে দেখা যায় হ্যানাহ, রেগিনা, পিটার, ক্যাথারিনা, হলাররা ছাড়া বাকিরা নেই। কিন্তু কেন?
– মূল জগতে তারাই থাকবে না – কোনো না কোনোভাবে যাদের জন্ম টাইম ট্রাভেলের লুপ থেকে।
যেমন ধরেন, উলরিখ। ওরা বাবা ট্রন্ট। ট্রন্টের বাবা অরিজিন লুপের অংশ। ওর মা এগনেস। যার মা সিলিয়াও আবার লুপের অংশ।
তাই উলরিখ ও তার সন্তানরাও মূল জগতে থাকবেনা।
আর আলেকজ্যান্ডার মূল ওয়ার্ল্ডে থাকবে কিন্তু এই মেইন ফ্যামিলি ট্রিতে আসবেনা। কারণ, রেগিনার সাথে ওর দেখা হয়ই উলরিখের জন্য। উলরিখ আর ক্যাথেরিনা রেগিনাকে মারতে যাচ্ছিলো আর সেটা প্রতিহত করতে আসে আলেকজান্ডার। উলরিখের এগজিস্টেন্সই না থাকলে রেগিনার সাথে আলেকজ্যান্ডারের দেখা হবেনা।
* আননোউন কেন কিছু মানুষগুলোকে খুন করেছিলো? কার হয়ে করেছিলো?
আননোউন ইভার হয়েই এই খুন আর বাকি কাজ গুলো করছে।
এর প্রধান কারন, এডাম বিশ্বাস করতো লুপটা ডেস্ট্রয় করার একমাত্র উপায় হলো কেন্দ্র (আননোউন) কে মেরে ফেলা। মানে প্রেগনেন্ট অবস্থায় মার্থাকে মারা।
ইভা তা চায়নি, তাই লুপ কন্টিনিউ রাখতে আননোউনকে এডামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।
মোট তিনজনকে ওরা খুন করে।
বার্নড ডপলার, গুস্তাব ট্যানহাউস, জেসমিন।
ওরা বার্নড ডপলারকে মারার কারণ ওর থেকে চাবি নিয়ে দুই ওয়ার্ল্ডেরই পাওয়ারপ্ল্যান্টে ঢুকে ভলুইম কন্ট্রোল সিস্টেমে অপারেট করে পরবর্তীতে গড পার্টিক্যাল সৃষ্টি করা।
১৮৯০ এর দিকে গিয়ে গুস্তাভ টানহাউসকে মারার কারণ –
জোনাসরা ১৮৮৮তে আটকে যাওয়ার সময় গুস্তাভ ওদের থেকে জানতে পারে যে ভবিষ্যতে টাইম ট্রাভেল এগজিস্ট করবে।
এজন্য আননোউনরা ওকে মেরে ফেলে যাতে সে ওয়ার্ল্ডে টাইম ট্রাভেলের সিক্রেট রিভিল না করতে পারে।
৮৬তে গিয়ে পাওয়ারপ্ল্যান্টের সেক্রেটারি জেসমিন, যে কিনা ক্লাউডিয়ার হয়ে কাজ করতো তাকে কেন মারছে তা শিওর না!
আবার দেখা যায়, একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে থ্রেইট দিয়ে পাওয়ারপ্ল্যান্ট বিল্ডের অনুমতির পেপারে সাইন নেয় ওরা, কারণ উনি পাওয়ারপ্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন না।
পরে তা বার্নড ডপলারকে দিয়ে আসে আর সে পাওয়ারপ্ল্যান্ট বিল্ড করে যেটা লুপের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এবার আসি ফ্যামিলি ট্রি নিয়ে কিছু কনফিউজিং প্রশ্ন নিয়ে।
*নোয়া ও এগনেসের প্যারেন্টস কে?
– বার্তোশ ও সিলিয়া।
* সিলিয়ার প্যারেন্টস কে?
– হ্যানা ও ইগন। (হ্যানার ১৯৫৩ তে ট্রাভেল)
* শার্লোটের প্যারেন্টস কে?
– নোয়াহ এবং এলিজাবেথ :/
*রেগিনার আসল বাবা কে?
– বার্নড ডপলার। -_-
তা কিভাবে?
লাস্ট এপিসোডে রেগিনার গ্রেইভের সামনে ট্রন্টে ক্লডিয়াকে বলেছিলো যে “এতগুলো বছর আমি বিশ্বাস করেছিলাম যে রেগিনা আমার মেয়ে”
ক্লাউডিয়া বলেছিলো যে সে নিজেও তা চেয়েছিলো।
কিন্ত সেটা না হওয়ায় একরকম ভালোই হয়েছে। না হয় রেগিনা লুপের মধ্যে পড়ে যেতো।
মানে ট্রন্টে রেগিনার বাবা না এটা এতে স্পষ্ট।
ক্লাউডিয়া ছোট থেকেই বার্নডদের বাড়িতে যাওয়া আসার সময় বার্নড ওকে অন্যচোখে দেখতো। খেয়াল করেছেন হয়তো।
জিনিসগুলো ইনডিরেক্টলি বুঝাইছে ডার্কে।
ইভেন বড় হওয়ার পর ক্লাউডিয়াকে পাওয়ারপ্ল্যান্টের ডিরেক্টরও বানিয়ে দেয় সে।
আর ডার্কের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের ফ্যামিলি ট্রিতেও বার্ন্ডকে রেগিনার বাবা হিসেবেই দেখাইছে।
*এগনেসের হাসবেন্ড/ ট্রন্টের বাবা কে?
– জোনাস ও মার্থার ছেলে। অরিজিন বা আননোউন যে নামেই ডাকেন। [ঠোটকাটা যে তিনজনকে সিজন ৩ এ একসাথে দেখতে পান]
সিজন ৩ এপিসোড ৪ এর ওপেনিং সিকুয়েন্স খেয়াল করলে দেখবেন এটা ইমপ্লাই করা হয়েছে সুন্দর করে। আননোউন ট্রন্টেকে কনফ্রন্ট করার পরে বলে সে তার মা অ্যাগনেসকে চেনে।
আননোউন ট্রন্টকে বলে ” আমার কোনো নাম নেই, কিন্তু তোমার নামটা আমি ঠিক করেছিলাম”
এবং সব শেষে একটা ব্রেসলেট দিয়ে বলে এটা তার মায়ের। এখান থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় আননোউনই ট্রন্টের বাবা।
*সিজন ২ এর একেবারে শুরুতে ১৯২১ সালের একটি সিন দেখায়। যেখানে গুহা খনন করার সময় ছেলেটি অন্য লোকটিকে হত্যা করে। এরা কারা?
– নোয়াহ্ এবং ওর বাবা বার্তোজ।
বার্তোজ এডামের স্বর্গ লাভের উপর বিশ্বাস ছেড়ে দিয়েছিলো। তাই এডামের ইঙ্গিতেই নোয়াহ ওর বাবাকেই খুন করে।
*কে মিকেলকে গুহার পাশ থেকে গায়েব করে ১৯৮৭সালে দিয়ে আসছিলো?
– জোনাস।
* ম্যাডস, ইয়াসিন, এরিক নামের ছোট বাচ্চাগুলাকে কে গায়েব করেছিলো? কেন করেছিলো? কেনই বা মৃত এরা?
– নোয়াহ। ইচ্ছাকৃতভাবে মারেনি।
নোয়া তখন একটা টাইম মেশিন বানানোর চেষ্টা করছিলো। এজন্য টেস্ট সাবজেক্ট হিসেবে এই ছেলেদের ব্যবহার করেছিলো। প্রথমদিকে এজন্য ইলেক্ট্রোফাইড হয়ে তাদের মুখের উপরিভাগ এরকম বার্ন হয়ে যায়। কিন্তু হেলগা এখানে সারভাইভ করতে পেরেছিলো।
আর ১৯৮৬ সালে নোয়াহ হেলগাকে দিয়ে ম্যাডসকে চুরি করিয়েছিলো।
এবার আসি ডার্কের এন্ডিং ব্যাখ্যা নিয়ে।
সবাই বুঝতে পেরেছেন যে গ্যারোর মূলে ছিলো ট্যানহাউজের ছেলের রাগ করে বাড়ি থেকে বের হওয়া এবং এক্সিডেন্ট করে মারা যাওয়াটা।
এজন্যই ট্যানহাউজ ছেলেকে ফিরে পেতে প্যারালেল জগত বানানোর চিন্তা করে। এবং পরে সৃষ্টি হয় গেরোর।
তাহলে প্যারালেল জগত দুইটার মানুষ খুনাখুনির এত প্যাচানো লুপ থেকে কিভাবে বের হওয়া যায়?
উপায়টা হচ্ছে মূল জগত টিকিয়ে রাখা। আর এটি টিকিয়ে রাখলেই প্যারালেল জগতের আর অস্তিত্ব থাকবেনা।
এখন মূল জগত টিকিয়ে রাখতে কি করতে হবে?
ট্যানহাউজের ছেলেকে এক্সিডেন্টের আগে বুঝিয়ে সুজিয়ে বাড়িতে পাঠাতে হবে। এজন্য মার্থা ও জোনাসকে মূল জগতের ১৯৭১ সালের এদিনে পৌছাতে হবে।
মূল জগত শুধু জোনাস ও মার্থার মাধ্যমেই অ্যাকসেসিবল।
কারণ, তাদের মাধ্যমেই এই দুই ওয়ার্ল্ডের অরিজিন আননোউন ছেলের উৎপত্তি। তারাই কি-ফ্যাক্টর এখানে।
এখন টাইম মেশিন দিয়ে সরাসরি মূল জগতের এই দিনে পৌছানে যাবেনা, কারণ টাইম ট্রাভেল করা সম্ভব শুধুমাত্র প্যারালেল জগতে কিংবা একই জগতের অতীত বা ভবিষ্যতে। তার উপর মূল জগতই বিভাজিত হয়ে এই দুইটি জগতে কনভার্টেড হয়ে আছে।
তাহলে উপায় কি?
প্রথমে জোনাস ও মার্থাকে ১৯৮৬ সালের ২১শে জুন পৌছাতে হবে যেদিন তাদের প্যারাল্যাল জগত সৃষ্টি হয়েছিলো।
এসময় টানহাউসের এক্সপেরিমেন্ট থেকে কেইভের ভেতর সৃষ্টি হওয়া ৩ জগতকে সংযোগকারী স্পেসটাইম ব্রীজ সৃষ্টি হয়। সেই ব্রীজে পৌছে মূল জগতের স্পেসে আসতে হবে। সেখান থেকে টাইম ট্রাভেল করে মূল জগতের ১৯৭১ সালের সেইদিনে পৌছে টানহাউসের ছেলেকে বাড়িতে ফেরত পাঠাতে হবে।
ঠিক এই কাজটিই জোনাস এবং মার্থা করেছিলো।
এক্সিডেন্ট না হলে প্যারেলাল জগত সৃষ্টি হয়না। প্যারালেল জগত ক্রিয়েট না হলে জোনাস- মার্থা এগজিস্টই করবেনা। তাই তারা ছাই হয়ে ভ্যানিস হয়ে যায়।
মোটকথা ওরা ওদের জীবন একরকম সেক্রিফাইস করেছে।
আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে ব্রীজের মধ্যে শুধু একজনের জন্য অরিজিনাল ওয়ার্ল্ডের পথ বের হচ্ছিলো না। জোনাস ও মার্থা দুজনই যখন তাদের ডেস্টিনড টাস্ক অর্থাৎ একে অপরের বাচ্চা ভার্সনের সাথে দেখা হয়েছে তবেই রাস্তাটা বের হয়েছে।
এর মানে দাঁড়ায়, দুজনই ছোট থাকতে ওদের ফিউচার ভার্সনকে দেখতে পায়।
খেয়াল করবেন জোনাস যখন সেকেন্ড ওয়ার্ল্ডে মার্থাদের ক্লাসরুমে ঢুকে, মার্থা ওকে বলেছিলো “তোমায় যেন কোথায় দেখেছি”।
এই দেখা হবার বিষয়টায় জোনাস ও মার্থার মধ্যে একরকম স্বর্গীয় প্রেম হয়েছে, কিন্তু এটা ঘটেছে এই কারনেই। পুরো জিনিসগুলা যেহেতু কানেক্টেড তাই এটার প্রভাব আমরা সিরিজে আগেই দেখেছি কিন্তু কারনগুলো দেখলাম শেষের সিনগুলোতে এসে।
ব্রীজটাকে আমার কাছে 4D ট্যাসার্যাক্টের মত লেগেছে। ব্রীজে ওরা ওদের ছোটবেলার ভার্সনকে দেখার সিনটা ঠিক যেন Intersteller মুভিতে কুপার যখন ছোট মার্ফকে দেখেছিলো সেই সিনের মতই। 🙂
কুপার তখন ব্ল্যাক হোলের ট্যাসার্যাক্টের ভিতরে ছিলো।
শেষ!
আপাতত আর কিছুই আসতেছেনা মাথায়। -_-
ক্রিস্টোফার নোলান, ডেভিড লিঞ্চরা যেমন অডিয়েন্সের ব্রেইন নিয়ে খেলতে পছন্দ করেন,
Baran bo Odar ও তার ডার্ক নিয়ে এদিক দিয়ে কম যাননি!
ডার্কের IMDB Rating – 8.8
সাই-ফাই এবং বিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য অবশ্যই এটি মাস্টওয়াচ সিরিজ।
ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ!💜
– মেহরাজ মাহমুদ
ডাউনলোড লিংক