বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী। বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ।
১৯৪৩ সালে হাতে আঁকা দুর্ভিক্ষ চিত্রমালার মাধ্যমে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের কাছে হয়েছেন বিখ্যাত। তার ছবি যেন কথা বলে। তিনি বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রশিল্পের জনক জয়নুল আবেদিন।

তার বিখ্যাত শিল্পকর্মগুলো হলো: ১৯৫৭-এ নৌকা, ১৯৫৯-এ সংগ্রাম, ১৯৬৯-এ নবান্ন, ১৯৭০-এ মনপুরা, ১৯৭১-এ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ম্যাডোনা ইত্যাদি।
তাঁর আঁকা ছবির সংখ্যা আনুমানিক ৩ হাজারেরও বেশি যেগুলো দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিখ্যাত সংগ্রহশালা ও ব্যক্তিগত কালেকশনে আছে।
১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর জয়নুল আবেদিন ময়মনসিংহ জেলার কেন্দুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ।
তিনি ১৯৭৬ সালের ২৮ মে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। জয়নুল আবেদিনের নাম দেশ বিদেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বুধ গ্রহের বুকে।
কিন্তু এতক্ষণ তাঁর যে পরিচয় দেখলাম সেখানে তো তাঁকে বিজ্ঞানী বা গবেষক বলে মনে হলো না। তাহলে জয়নুল আবেদিনের নাম কিভাবে বুধ গ্রহে পৌঁছে গেল? সেই গল্পই এখন শোনা যাক।

২০০৪ সালে নাসা বুধগ্রহ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য ম্যাসেঞ্জার (Messenger) নামক একটি মহাকাশযান পাঠায়। ২০০৮ সালে মহাকাশযানটি বুধ গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যায়।
একে ফ্লাইবাই বলা হয়। বুধগ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাবার আগে ম্যাসেঞ্জার মহাকাশযানটি পৃথিবীকে একবার, শুক্রকে দুইবার এবং বুধগ্রহকে ঘিরে তিনবার ফ্লাইবাই সম্পন্ন করে।
বুধকে ঘিরে প্রথম দুটি ফ্লাইবাইয়ের সময় যানটি গ্রহের উত্তর অঞ্চলের পৃষ্ঠে অনেকগুলো গর্ত ও আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ আবিষ্কার করে।
আবিষ্কৃত গর্ত ও জ্বালামুখের মধ্যে অন্যতম বড় একটি জ্বালামুখের নাম রাখা হয় ‘আবেদিন ক্রাটার বা আবেদিন জ্বালামুখ‘।

চল্লিশের দশকে সায়েন্স ফিকশন লেখকদের প্রবল প্রভাব জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মহাকাশ গবেষণায় ব্যাপক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
তারই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ১৯১৯ সাল থেকে চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহের গর্ত ও জ্বালামুখের নাম সায়েন্স ফিকশন লেখকদের নামে করার একটি রীতি প্রচলন করে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিয়ন।
সেই কারণে জুলভার্ন, এইচজি. ওয়েলস, আলেক্সান্দার বেলায়েভসহ অনেক লেখকের নামেই চাঁদ ও মঙ্গলের জ্বালামুখের নাম রাখা হয়েছে।
পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন এই ধারাকে আরও বিস্তৃত করে।
শুধু সায়েন্স ফিকশন লেখক আর বিজ্ঞানীদের নামে নয়, যারা মানবসভ্যতার মানবিক বোধ ও উপলব্ধিকে গভীরতর করেছে সেসব শিল্পী-সাহিত্যিকের নামেও করার একটি উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ অনুভব করে মানুষ।
তাই আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, বুধগ্রহের গর্তগুলোর নাম করবেন বিখ্যাত শিল্পী ও সাহিত্যিকদের নামানুসারে।
আইএইউয়ের(IAU) নিয়ম অনুসারে বুধ গ্রহের নতুন আবিষ্কৃত প্রতিটি গর্ত ও জ্বালামুখের নাম এমন কোন শিল্পীর নামে হতে হবে,যিনি ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বিখ্যাত ছিলে এবং গর্ত ও জ্বালামুখ আবিষ্কারের অন্তত ৩ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেছেন।
২০০৯ সালে ৯ জুলাই মানবসভ্যতার মানবিক মূল্যবোধ ও উপলদ্ধিকে গভীরতর করার প্রেক্ষিতে একটি জ্বালামুখের নামকরণ হয়েছে আবেদিন জ্বালামুখ।
আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতি (IAU) নামটি অনুমোদন করেন। আবেদিন জ্বালামুখটির ব্যাস ১১৬ কিলোমিটার। এর ভিত্তি বেশ মসৃণ। আবেদিন জ্বালামুখের আশেপাশে আছে অনেক ছোট ছোট গর্ত ও জ্বালামুখ।
বুধে আবিষ্কৃত জ্বালামুখের নামকরণে অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে আছেন লিও টলস্টয়ের নামে ৫১০ কিলোমিটার ব্যাসের ‘টলস্টয় বেসিন‘, সঙ্গীতজ্ঞ বিঠোফেনের নামানুসারে ৬২৫ কিলোমিটার ব্যাসের ‘বিঠোফেন বেসিন‘।
শুধু বিজ্ঞানী এবং শিল্পীদের নামেই এই নামকরণ করা হয়নি। বিজ্ঞানে তাপের একক ক্যালরি দিয়েও নামকরণ হয়েছে।
বুধের সবচেয়ে বড় জ্বালামুখের নাম হচ্ছে ১৫৫০ কিলোমিটার ব্যাসের ‘ক্যালরিস বেসিন’।
সূত্র: ইউনিভার্স টুডে ডট কম, উইকিভিজুয়ালি ডট কম, নাসা