স্বপ্ন নিয়ে সবচেয়ে সুন্দর কথাটি বলেছিলেন ড. এ পি জে আব্দুল কালাম স্যার,”স্বপ্ন তা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখ,স্বপ্ন তো তা যা তোমায় ঘুমোতে দেয় না।”
কালাম স্যারের কথার মাহাত্ম্য মোটামুটি আমরা সবাইই জানি।তবে উনি যেই স্বপ্নবাজদের কল্পনায় রেখে কথাটি বলেছেন সেইসব স্বপ্নবাজদের খুজে পাওয়া এখন প্রায় দুস্করই বলা চলে।
তবে জেগে জেগে নয়,ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও যদি কেউ স্বপ্ন দেখে তবে তার মাহাত্ম্যও কিন্ত কম নয়।বিজ্ঞানীরা আজও সন্দিহান কিভাবে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার মতো পুরো ব্যাপারটি সংঘটিত হয়।
স্বপ্নের ধরনগুলোর মধ্যে বিভিন্নতা খুব করে লক্ষ্য করা যায়।কখনো কখনো স্বপ্ন খুব মজার হয় তো কখনো খুব ভয়ের,কখনো খানিকটা বেদনা কিংবা কষ্টের হয় তো কখনো রোমান্টিক।
আসলে স্বপ্নের বিভিন্নতার সাথে আমাদের বাস্তব জীবনের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ।
অস্ট্রিয়ান মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড সর্বপ্রথম স্বপ্ন নিয়ে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দিয়েছিলেন।ফ্রয়েডের মতে স্বপ্ন আর অন্য কিছুই নয় এরা মূলত আমাদের ভেতরে চাপা বাসনাগুলোকে আমাদের নিজেদেরকে অবগত করার সংকেত বিশেষ।
স্বপ্ন সাধারনত আমাদের অবচেতন মন আমাদেরকে সমাজে অগ্রহনযোগ্য এমন সব আমাদের চিন্তা এবং আকাঙ্খাগুলোর সাথে অবগত করায়।উনার মতে সমাজে সবচেয়ে দমিত আকাঙ্ক্ষা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মানুষে অবৈধ যৌন আকাঙখা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মনের মধ্যে চাপা প্রতিবাদসমূহ।
এই অনুভুতি গুলোই আমাদের স্বপ্নে সবচেয়ে বেশি প্রতিফলিত হয়।
অর্থাৎ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ আমাদের স্বপ্নকে যে প্রভাবিত করে তা ফ্রয়েড তার তত্ত্বে পরোক্ষ ভাবে বলেছেন।উনার মতে, মানুষের স্বপ্নে দেখা প্রতিটি বস্তুর সাথেই মানুষের মনের মধ্যে দমিত ইচ্ছা গুলোর সম্পর্ক রয়েছে।
যেমন,কেউ যদি স্বপ্নে কোন টানেলের মধ্য দিয়ে একটি ট্রেনকে প্রবেশ করতে দেখেন তবে তা যথাসম্ভব স্বাপ্নিকের মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা যৌন মিলনের ইচ্ছাকে প্রতিনিধিত্ব করছে।তবে ফ্রয়েড বলেছিলেন,”কখনো একটি সিগারেট, শুধুই একটি সিগারেটকেই প্রতিনিধিত্ব করে।”অর্থাৎ,স্বপ্নে সবসময় অর্থবহ হয় না।
ফ্রয়েডের এক স্টুডেন্ট ছিলো,যিনিও স্বপ্ন নিয়ে বিস্তর গবেষনা করেছিলেন।কার্ল জাঙ এর স্বপ্ন নিয়ে চিন্তাধারা ফ্রয়েডের থেকে খানিকটা আলাদা ছিলো।উনি যদিও স্বপ্নের ফিজিলজিকাল ব্যাখ্যার সাথে দ্বিমত পোষন করেন নি।
স্বপ্ন নিয়ে উনার দেয়া থিওরিকে বলা হয় “JUNGIAN DREAM THEORY”.
আমাদের স্বপ্নগুলো আপাতপক্ষে অনেক জটিল মনে হতে পারে আমাদের কাছে।আমাদের মনে হতে পারে আমাদের স্বপ্নগুলো যেন একটা গোলকধাঁধা,যেন সবকিছু অস্পষ্ট।’ “JUNGIAN DREAM THEORY “ অনুসারে স্বপ্ন আমাদের কাছে যতটুকু না অস্পষ্ট,তার থেকেও বেশি স্পষ্ট।
এই থিওরি অনুসারে স্বপ্ন আমাদের বাস্তব জীবন এবং অবচেতন মনকে একত্রিত করার কাজটি করে থাকে।যে প্রক্রিয়াকে উনি “INDIVIDUATION” বলে আখ্যায়িত করেছেন।
১৯৭৭সালের দিকে আমেরিকান সায়েকাট্রিস্ট এলেন হবসন এবং রবার্ট ম্যাকার্লি স্বপ্নের উৎপত্তি নিয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গ্রহন যোগ্য হাইপোথিসিস প্রকাশ করেন।যাকে “ACTIVATION SYNTHESIS HYPOTHESIS” বলা হয়।
এই হাইপোথিসিস অনুযায়ী,আমাদের ঘুমের REM পর্যায়ে আমাদের আমাদের ব্রেইনস্টেমের মধ্যে বিদ্যমান সার্কিটগুলো একটিভ হয়ে যায়।
একবার,এই সার্কিট একটিভেট হয়ে গেলে ব্রেইনের লিম্বিক সিস্টেমও একটিভেট হয়ে যায়।আমাদের ব্রেইনের লিম্বিক সিষ্টেম আমাদের ইমোশন, সংবেদনশীলতা এবং স্মৃতি নিয়ন্ত্রন করে।
আমাদের ব্রেইনের থালামাস, হাইপোথালামাস, হিপ্পোক্যাম্পাস, এম্যাগডালা,বেসাল গ্যাংলিয়া আমাদের ব্রেইনের লিম্বিক সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত।বলা যায় ব্রেইনের এই অংশগুলো একত্রিত হয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাংশন রেগুলেট করে।
লিম্বিক সিস্টেমের একটিভেশনের পরপরই আমাদের ব্রেইন আমাদের অবচেতন মনে চলা ইন্টারনাল একটিভিটিকে ব্যাখ্যা করে এবং সেগুলোর সরল রূপায়ন করে যাকে আমরা স্বপ্ন বলে আখ্যায়িত করি।
পুরো ব্যাপারটা যদি সহজ ভাবে বুঝতে যাই তবে,
“স্বপ্ন হলো কতগুলো ছন্দবদ্ধ ইলেকট্রিকাল ইম্পালস এর ছন্দবদ্ধ চিত্রায়ন।আর এই জটিল প্রক্রিয়াটি আমাদের ব্রেইনের লিম্বিক সিস্টেম কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়।”
স্বপ্ন সম্পর্কে আমাদের ভালো ভাবে বুঝতে হতে হলে আমাদের ঘুম নিয়ে কিঞ্চিত জানতে হবে,ঘুমের পর্যায়গুলো নিয়ে অন্তত আমাদের সাধারন ধারনা থাকতে হবে।
আমাদের ঘুমের মূলত দুটি পর্যায় রয়েছেপ্রথমটি হল NON-REM পর্যায় এবং দ্বিতীয়টি হলো REM পর্যায়।
REM এর পুরো অর্থ হলো র্যাপিড আই মুভমেন্ট।ঘুমের একটা পর্যায়ে এসে আমাদের চোখ প্রচুর মুভমেন্ট করে।সেই পর্যায়টাকেই REM পর্যায় বলে।
প্রথম পর্যায় অর্থাৎ NON-REM পর্যায়কে তিনটি স্টেজে( কখনোবা চারটি স্টেজে) ভাগ করা হয়েছে।
NON-REM SATAGE-1:এই স্টেজটি মূলত আমাদের ঘুমের সবচেয়ে ক্ষনস্থায়ী পর্যায়।এই স্টেজের স্থায়িত্ব ৫-১০মিনিট।এই স্টেজে আমাদের ব্রেইনে থিটা ওয়েভ তৈরী হয়,যা এক ধরনের দুর্বল ব্রেইন ওয়েভ।এই স্টেজ হতে মানুষ ধীরে ধীরে গভীর ঘুমে প্রবেশ করে।
NON-REM STAGE-2:এই স্টেজ বিশ মিনিটের মতো স্থায়ী।এই স্টেজে এসে মানুষ আসে পাশের পরিবেশ সম্পর্কে কম সচেতন হয়ে পড়ে।মানুষের বডি টেম্পারেচার কমে যায়।হার্ট রেট এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের হার নরমাল হতে শুরু করে।
NON-REM STAGE-3: এই স্টেজে এসে আমাদের শরীররের মাসেল আস্তে আস্তে রিল্যাক্স করা শুরু করে।ব্লাড প্রেসার এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের হার ধীরে ধীরে ড্রপ করতে থাকে থাকে।এই স্টেজ থেকেই আমাদের ব্রেইন ডেল্টা ওয়েভ প্রডিউস করা শুরু করে।যা আমাদের কে গভীর ঘুমে নিয়ে যায়।
REM পর্যায়ঃএই স্টেজে এসে আমাদের ব্রেইন তুলনামূলক ভাবে প্রচুর একটিভ হয়ে যায়।মূলত এর কারন ব্রেইনের লিম্বিক সিস্টেমের একটিভেশন।এই স্টেজে আমাদের বডি মাসেল রিল্যাক্সড অবস্থায় থাকে।আমাদের চোখ চারদিকে বিক্ষিপ্ত ভাবে মুভ করতে থাকে।মূলত আমরা এই স্টেজেই স্বপ্ন দেখি।আমাদের সম্পূর্ন ঘুমের প্রায় বিশ পার্শেন্ট অর্থাৎ প্রায় ৯০মিনিট এর মতো আমরা এই স্টেজে কাটাই।
REM STAGE শেষ হওয়ার পরেই আমরা পুনরায় NON-REM STAGE -1 এ ফিরে আসি।এরপরই ধীরে ধীরে আমাদের ঘুম ভাঙে।
আচ্ছা,আপনি কখনো আপনার দেখা স্বপ্ন পুরোপুরি মনে রাখতে পেরেছেন?পারেন নি তাই না।আসলে স্বপ্নকে পুরোপুরি মনে রাখা কখনই সম্ভব না।
আমাদের স্বপ্ন দেখা শেষ হওয়ার পর যখন আমরা ধীরে ধীরে চেতন জগতে ফিরি,তখন আমাদের ব্রেইন একধরনের নিউরোট্রান্সমিটারের ফ্লো তৈরি করে,যা আমাদের স্বপ্ন দেখার স্মৃতিকে রীতিমতো ভাসিয়ে নিয়ে যায়,বলা যায়।এই নিউরোট্রান্সমিটারের নাম হলো সেরাটোনিন।
নিউরোট্রান্সমিটার জিনিসটাকে যদি সহজ বাংলায় বলি তাহলে একে অনুভূতি সঞ্চারক ক্যামিকেল পার্টিকেল বলা যায়।যা আমাদের ব্রেইন কর্তৃক নিসৃত হয়।যেমনঃআমরা যখন অতি আনন্দিত হই আমাদের ব্রেইন ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরন করে।
স্বপ্নের প্রকারভেদ বহু হলেও সবচেয়ে আলোচিত স্বপ্নের প্রকার হলো লুসিড ড্রিম।আমরা যারা ক্রিস্টোফার নোলানের ইনসেপশন মুভিটি দেখেছি,তারা জানি কিভাবে মুভির অভিনেতারা তাদের স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রন করেছিলো।এই গল্পটি খানিকটা মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি প্রজেক্টের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন।
বাস্তবিক পক্ষে স্বপ্নকে কিঞ্চিত নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব।তবে সবার পক্ষে নিজের স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়।তবে কিছু উপায় রয়েছে যে উপায়গুলো প্রাকটিস করার মাধ্যমে আমরা লুসিড ড্রিমার হতে পারি।
যেমন,আমরা আমাদের চারপাশের পরিবেশের দিকে তাকিয়ে সচেতন চিত্তে নিজেকে প্রশ্ন করতে পারি,”আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো?”
পরিবেশের উপর ভিত্তি করে যদি বারবার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি,তবে এটা এক সময় এই প্রশ্ন করার ব্যাপারটি আমাদের অভ্যেসে পরিনত হবে।যার ফলে স্বপ্নের মধ্যেও এই অভ্যেসে বজায় থাকবে।
ধরুন আপনি স্বপ্নে আকাশে ঊড়ছেন,পরিপার্শ্বের ওপর ভিত্তি করে আপনি নিজেকে প্রশ্ন করে বুঝতে পারলেন আপনি বাস্তবে নেই,স্বপ্নে আছেন।ব্যাস,এই চেতনা টুকুই আপনার স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য যথেষ্ঠ।
আমরা সচরাচর কিছু কমন স্বপ্ন দেখি।এসব কমন স্বপ্ন গুলো সাধারনত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘটে চলা বিভিন্ন অনুভুতির সাথে সম্পর্কযুক্ত।যেমন,ধরুন আমাদের দেখা অধিকাংশ স্বপ্ন গুলোই আমাদের দুঃখ,হাসি,স্ট্রেস,ভয়,ভালোবাসা এসব অনুভূতির সাথে সম্পর্কযুক্ত।
আমাদের দেখা সবচেয়ে কমন স্বপ্নগুলো হলো,
১)কেউ হয়তো তাড়া করছে
২)আপনি আকাশে উড়ছেন
৩)যৌন আবেদনময় স্বপ্ন
৪)মৃত কোন ব্যাক্তিকে হয়তো আপনি পুনরায় মেরে ফেলছেন
৫)আপনি হয়তো কোথাও হারিয়ে গিয়েছেন
৬)আপনার পুরো শরীর হয়তো প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে কিংবা আপনি কথা বলতে পারছেন না।
৭)বস্ত্রহীন হয়ে চলাফেরা করার স্বপ্ন
এছাড়াও আরো অনেকগুলো কমন স্বপ্ন রয়েছে।
কার্ল জাং একবার বলেছিলেন,”Who looks outside, dreams; who looks inside, awakes.”
উনি উনার হাইপোথিসিসে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন,”আমাদের স্বপ্ন গুলো আপাত পক্ষে আমাদের কাছে অনেক কিছু লুকায় মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি এর চেয়েও অনেক বেশি কিছুই আমাদের কাছে প্রকাশ করে।”
আমাদের প্রতিটা স্বপ্নই কমবেশি অর্থবহ।তবে স্বপ্নকে অর্থবহ হতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই।
ধরুন আপনি এমন একটি স্বপ্ন দেখলেন যেখানে আপনাকে কেউ তাড়া করছে।এর যথাসম্ভব মানে হতে পারে আপনি আপনার লাইফের কোন ঘটনাকে এভোয়েড করার চেষ্টা করছে।কিন্ত আপনার সাবকনসিয়াস মাইন্ড চাচ্ছে যে আপনি সমস্যাটাকে এভোয়েড না করে সমস্যাটার ফেস করুন।
কখনো কি এমন স্বপ্ন দেখেছেন যে আপনি কোন পাহাড় বা কোন বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে পড়ে যাচ্ছেন?এর সম্ভাব্য মানে এটা হতে পারে যে আপনি হয়তো আপনার নিজের ওপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছেন।তাছাড়া,এই স্বপ্ন আপনার জীবনের উদ্বেগ এবং উতকন্ঠাগুলোকেও চিহ্নিত করার ইঙ্গিত দেয়।
নিজেকে বস্ত্রহীন অবস্থায় যদি কোন স্বপ্নে দেখতে পান তবে তা হতে পারে আপনার ভেতরে লুকিয়ে থাকা অন্য কাউকে কিংবা নিজেকে নিয়ে ইনসিকিউরড ফিল করা,শেইম ফিলিং এবং ভালরানেবল অনুভূতির ইঙ্গিত।
স্টুডেন্ডরা প্রায়ই নিজেদের স্টাডি নিয়ে খুব খুব দুশ্চিন্তায় থেকে পরীক্ষায় ফেইল করার স্বপ্ন দেখে।তবে নন স্টুডেন্টদের কেউ যদি পরীক্ষায় ফেইল করার স্বপ্ন দেখে তবে তা হতে পারে নিজ কর্মক্ষেত্রে অসফল হওয়ার দুশ্চিন্তার ইঙ্গিত।
“আপনি ঘুম থেকে উঠলেন,ফ্রেশ হলেন,ব্রেকফাস্ট করলেন।আস্তে ধীরে রেডি হয়ে অফিসের জন্য বের হলেন।”
কিছুক্ষন পরই বুঝতে পারলেন,এমন কিছুই হয় নি।আপনি আসলে স্বপ্ন দেখছিলেন।এমন ধরনের স্বপ্ন দেখার সম্ভাব্য কারন হতে পারে আপনি হয়তো সে দিনটি নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত এবং আপনি চাইছেন দিনটিকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে দিনটিকে ফেস করতে।
স্বপ্নে কখনো সাপ দেখেছেন?যদি দেখে থাকেন তবে তা হতে পারে আপনার মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কোন ভয়ের ইঙ্গিত।
যদি কখনো নিজেকে কোন স্বপ্নে উড়তে দেখে থাকেন তবে বুঝে নেবেন বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ দুরকম ভাবেই আপনি খুশি এবং আনন্দিত।
যদি কখনো স্বপ্নে দেখেন যে আপনি কাউকে খুন করছেন তবে এর সম্ভাব্য মানে হতে পারে আপনার মধ্যে থাকা কোন চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
এছাড়াও এমন আরো স্বপ্ন রয়েছে যাদের সম্ভাব্য বাখ্যা রিসার্চাররা দাড় করানোর চেষ্টা করেছেন।
ফ্রেঞ্চ ভাষায় একটা শব্দ আছে,”Deja vu”.বাংলাতে এর মানে দাড়ায়,ধরুন আপনি নতুন একটা জায়গায় গিয়েছেন,যেখানে আগে কখনো যান নি,তবুও আপনার মনে হচ্ছে জায়গাটাকে আপনার খুব চেনা চেনা।এই ব্যাপারটিকেই ‘Deja vu” বলা হয়।
খুব সহজে বলতে গেলে,এমনটি হওয়ার কারন আমাদের ব্রেইনের মেমরি ডিজফাংশন।আমরা যা দেখি,যা শুনি কনসিয়াসলি কিংবা আনকনসিয়াসলি সেই ইনফরমেশনগুলো আমাদের ব্রেইনে যায়।যার ফলে আমাদের ব্রেইনের কাছে এনাফ ইনফরমেশন সবসময় থাকে আমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাই না কেন,সেখানকার সিনারিওর সাথে হুবুহু মিল সম্পন্ন একটি সিনারিও তুলে ধরার।
“Deja vu” ব্যাপারটির ক্ষেত্রে মূলত কোন না কোন ভাবে আমরা পুর্বের কোন সময়ে বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে অবগত ছিলাম।কিন্ত বর্তমানে এসে,পুর্বে অবগত থাকার ব্যাপারটি ব্রেইনের সাময়িক মেমরি ডিজফাংশনের কারনে সম্পূর্ণ মনে না রাখতে পারায়, আমাদের কাছে ব্যাপারটি ধাধার মতো মনে হয়।
গড়ে আমরা সবাইই লাইফের একটা সময়ে এসে “Deja vu” এর শিকার হই।
স্বপ্ন নিয়ে কিছু ফ্যাক্ট আছে যা সত্যিই অবাক করার মতো।
”বাচ্চারা বড়দের তুলনায় বেশি দুঃস্বপ্ন দেখে।”
“গর্ভবতী মহিলাদের দেহে হরমোনাল চেঞ্জএর কারনে উনারাও সাধারন মহিলাদের তুলনায় বেশি দুঃস্বপ্ন দেখেন।তাছাড়া উনারা ভিভিড ধরনের স্বপ্ন যেসব স্বপ্ন দেখার ফলে উনারা ঘুমের REM পর্যায়ে এসে হটাৎ করে জেগে ওঠেন,এমন ধরনের স্বপ্ন বেশি দেখেন।এসব স্বপ্ন মনে রাখা অনেক সহজ।”
”স্বপ্ন দেখে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া হতে পারে আপনার মধ্যে লুকায়িত থাকা দুঃশ্চিন্তা,উদ্বেগ কিংবা হতাশার বহিঃপ্রকাশ।”
”সচরাচর আমাদের স্বপ্নগুলো পাচ থেকে দশ মিনিটের মতো স্থায়ী হয়ে থাকে।”
”নয় থেকে এগারো বছরের মেয়েরা ঔ একই বয়সের ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি স্যোশালি ডিস্টার্বিং স্বপ্ন দেখে।”
”বিশ থেকে ত্রিশ বছরের মধ্যে ৮০%মানুষের স্বপ্নগুলো কালারফুল হয়।ষাটোর্ধ্ব মানুষদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা মাত্র ২০% এর মতো।”
আসলে আমাদের স্বপ্নের ব্যাপ্তি অনেক বিশাল।সেই প্রাচীনকাল থেকেই স্বপ্ন নিয়ে মানুষের আগ্রহের সীমানেই।যুগে যুগে নানা সভ্যতায় স্বপ্নের নানা মানে দাড় করানো হয়েছিলো।এখনো আমাদের সমাজে স্বপ্ন নিয়ে মানুষের কল্পনার সীমা নেই।সীমাহীন এই রহস্যময় ব্যাপারটি এখনো ততটাই মানুষকে ভাবায় যতটা ভাবিয়েছিলো সেই হাজার বছর আগে।স্বপ্নবাজদের স্বপ্ন সত্যি হোক,সত্যি হোক কোটি মানুষের একটি মহামারিহীন মুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন।
লিখাঃপ্রীতম মজুমদার(চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ)