টিভি সিরিয়াল গেম অফ থর্ন্স দেখেছেন? প্রধান ক্যারেক্টার জন স্নোর বুকে ছুরি ঢুকিয়ে তাকে মেরে ফেলে Alliser Thorne এবং নাইটস ওয়াচের আরো কয়েকজন বিদ্রোহী ( সিজন ফাইভ, লাস্ট এপিসোড)
জন স্নোকে বাচানোর জন্য তখন ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান লেডি মেলিসান্ড্রে কে ডাকা হয়। সে তার জানা সকল ব্ল্যাক ম্যাজিক জন স্নোর শরীরের উপর প্রয়োগ করে।
(ব্ল্যাক ম্যাজিকগুলার মধ্যে আছে মন্ত্র পড়া, চুল কেটে দেওয়া, বুকে চাপ দেওয়া ইত্যাদি) ডেডবডিটা কবর না দিয়ে একটা ফাকা ঘরে রেখে অপেক্ষা করা হয়,কি ঘটে দেখার জন্য।
ব্ল্যাক ম্যাজিক প্রয়োগের কয়েক ঘন্টা পরে জন স্নো হঠাত করে বেচে ওঠে। ঘুম থেকে ওঠার মত করেই সে ধড়মড় করে জেগে ওঠে, যেন কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছিল ( সিজন সিক্স,প্রথম এপিসোড)
বাস্তব জীবনেও জন স্নোর মত এমন কিছু কিছু ঘটনা ঘটে। ডাক্তার রোগীকে মৃত ঘোষনা করে। রোগীর আত্মীয় স্বজন তাকে নিয়ে কবর দিতে চলে যায়। কিন্তু একটু পরে দেখা যায়, ডেডবডি মৃত নয়,তার হাত পা নড়তেছে,কথা বলতেছে।
ডাক্তাররা একে ল্যাজারাস সিন্ড্রম বলে চিহ্নিত করেছেন। এই ক্ষেত্রে রোগীর হৃদপিন্ড বন্ধ হয়ে যায়। CPR বা অন্য কোনো চেষ্টাতেও হৃদপিণ্ড আর চালু হয়না। সব প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থ হয়,তখন রোগীর হৃদপিন্ড আবার অটোমেটিকালি চালু হয়ে যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটা খুবই বিরল ঘটনা। ১৯৮২ সালের পর থেক ডাক্তাররা মেডিকেল সায়েন্সে একে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ১৯৮২ এর পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৮ টা ল্যাজারাস সিন্ড্রম কে চিহ্নিত করা গেছে।(সোর্স)
তবে ডাক্তার রা বলছেন, অনেক ল্যাজারাস এর কেস অচিহ্নিত থেকে যায়। বা ১৯৮২ সালের আগে অনেক ল্যাজারাস সিন্ড্রমের ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং, এটা কতটা বিরল, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়না।
একটা ঘটনা শেয়ার করি।
১৯৯৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ইংল্যান্ডের হান্টিংডন শহরের নিকটবর্তী স্টোনলি ৬১ বছর বয়স্ক ডাফনে ব্যাঙ্কস সুইসাইড করেন। দীর্ঘদিন বিষন্নতায় ভুগছিলেন তিনি।
তাকে তার বিছানায় অচেতন অবস্থায়া আবিষ্কার করেন তার স্বামী ক্লড ব্যাঙ্কস । ডাকা হয় পারিবারিক ডাক্তার ডেভিড রবার্টকে । তিনি এসে মিসেস ব্যাঙ্কস কে মৃত ঘোষনা করেন ।
কয়েক ঘন্টা পরে তাকে নেওয়া হয় হিঞ্চিংব্রুক হাসপাতালের মর্গে , তার ডেডবডি সংরক্ষন করার জন্য । তার শবদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয় কেন ডেভিসনের কাছে ।
কেন ডেভিসন হলেন একজন আন্ডারটেকার । তার কাজ ডেডবডিকে গোসল দেওয়া,কাপড়চোপড় পরানো,কবার খোড়া ইত্যাদি ।
তিনি মৃতদেহটিকে প্রস্তুত করে একটি একটি রেফ্রিজারেটিং ট্রে তে উঠানো শুরু করেছিলেন (যেখানে ডেডবডিটি পরবর্তী কয়েক দিন সংরক্ষিত থাকবে ,কবর দেওয়ার আগ পর্যন্ত) । ঠিক এই সময় তিনি ডাফনে ব্যাঙ্কস এর গলা থেকে মৃদু ঘড়ঘড়ানি শুনতে পান । তিনি মিসেস ব্যাঙ্কস এর কবজি পরীক্ষা করলে সেখানেও শিরার চলাচল লক্ষ্য করেন । দ্রুত তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয় । সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি ।(সোর্স)
গতকাল শুক্রবার, ঢাকা মেডিকেল কলেজে মৃত ঘোষিত এক নবজাতক জীবিত হয়ে উঠেছে।
শুক্রবার, ভোর ৪-৪৫ মিনিটে শাহিনুর আক্তার জন্ম দেন এই বাচ্চাকে। বাচ্চাটা প্রি ম্যাচিওরড ছিল,মাত্র সাড়ে ৬ মাসের প্রেগ্ন্যাসির পরেই ডেলিভারি হয়েছিল। ডাক্তার কোনো হার্টবিট বা পালস না পেয়ে বাচ্চাটাকে মৃত ঘোষনা করেন।
ডেডবডি নিয়ে বাবা ইয়াসিন মোল্লা আজিমপুর কবরখানায় যায়। কিন্তু সেখানে কবর দেওয়ার খরচ অনেক বেশি দেখে সে রায়েরবাজার বছিলা কবরখানায় যায়। সেখানে কবর খোড়া হয়।
ট্রেডিশনাল কাফনের কাপড় পরানো হয়নি, জাস্ট একটা গ্লাভস এর কার্টুনে বাচ্চাটা ছিল। বাবা ইয়াসিন মোল্লা হঠাত খেয়াল করল, কার্টুনের মধ্যে বাচ্চাটা নড়ছে।
দ্রুত তাকে আবার ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হল। এখন সেখানেই চিকিতসা চলছে। বাচ্চাটার এখনো কোনো নাম রাখা হয়নি।(সোর্স)
এইরকম ঘটনা আজই প্রথম নয়। এর আগেও মৃত ঘোষিত বাচ্চারা জেগে উঠেছে কয়েকবার।
২০২০ সালের জানুয়ারি মাসেই চুয়াডাংগায় হাজরাহাটি গ্রামের জিনিয়া বেগম এক মেয়ে সন্তান প্রসব করেন। ডাক্তার তাকে মৃত হিসেবে ঘোষনা দেন। কিন্তু মা সেই মৃত বাচ্চাকে কোলে নিলেই বাচ্চা টা নড়ে ওঠে।(সোর্স)
২০১৬ সালে গালিবা হায়াত নামের এক বাচ্চার কথা খুব আলোচিত হয়েছিল। ফরিদপুর এ মৃত ঘোষিত এই বাচ্চাকে কবরখানায় নিয়ে জীবিত পাওয়া যায়। ফেসবুক সেলিব্রেটি সোলায়মান শুখন তখন হেলিকপ্টার এর সাহায্যে এই বাচ্চাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
সদ্য ভূমিষ্ট নবজাতকের ছোট শরীরে পালস খুজে পেতে অনেক সময় সমস্যা হয়। প্রিম্যাচিওরড বা কম ওজন সম্পন্ন বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরো বেশি হয়। ডাক্তারদের অভিজ্ঞতার অভাব ও অনেক সময় দায়ী হয়। কাজেই, এই বাচ্চাগুলোর হৃদপিন্ড ”পুরাপুরি বন্ধ ছিল,পরে চালু হয়েছে”, নাকি ডাক্তাররা হার্টবিট খুজে পাননি,সেটা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।
ডাক্তারদের নীতিমালা অনুযায়ী, কতক্ষন অপেক্ষা করে রোগীকে মৃত ঘোষনা করা যাবে, কি কি জিনিস চেক করতে হবে, সম্ভাব্য ভুল এড়ানোর জন্য নতুন করে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে দেখতে পারেন জাফরুল মবিন এর এই ব্লগে
নবজাতক বাদে, বয়স্কদের ক্ষেত্রে মরার পর আবার জ্যান্ত হওয়ার উদাহরন আছে অনেক।
এই করোনা কালেই, ২৩ই শে মে আমেরিকার ১২ বছর বয়সী কিশোরী জুলিয়েট ডেলিকে ডাক্তাররা মৃত ঘোষনা করেছিলেন। কিন্তু পরে আবার তার হৃদপিণ্ড চালু হয়।(সোর্স)
বাংলাদেশের কয়েকটা ইন্টারেস্টিং খবরের দিকে আসি।
ক) ১৮ই মে ২০১৫ তারিখে ৫০ বছর বয়সী রাশিদা বেগমকে ভীষণ অসুস্থ্ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ই মে ২০১৫ সাড়ে সাতটার দিকে হাসপাতালের চিকিৎসকগণ তাকে মৃত ঘোষণা করে।ওইদিন সকাল ১০টার দিকে তার লাশ বাড়িতে আনা হয়। মৃত রাশিদা বেগমের লাশ
গোসল করানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হলে তখনই গা ছিম ছিম হওয়ার ঘটনা ঘটে। হঠাৎই মৃত রাশিদা বেগম জেগে উঠলে উপস্থিত সবাই চমকে উঠেন এবং খেয়াল করেন যে রাশিদার গা বেশ গরম ও নিঃশ্বাস নিচ্ছেন।
রাশিদার ভাগিনা-ভাগনির কাছে মৃত রাশিদা পানিও চেয়েছেন এবং তা পান করেন। পানি পান করার কিছুক্ষণ পরই ফের মারা যান রাশিদা বেগম। হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তাররা তার শরীরে জীবনের কোনো লক্ষন খুজে পাননি।
খ) ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর ঢামেকে ভর্তি করা হয়েছিলো অজ্ঞাতপরিচয় (৪৫)এক নারীকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ভবনের ৮০২ নং ওয়ার্ডের ৭ নং ইউনিটে তাকে রাখা হয়েছিলো চিকিৎসার জন্য।দু’দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডবয় বেলাল মৃত ঘোষণার কাগজপত্র নিয়ে মর্গ অফিসে যান।
মর্গ অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা নূরে আলম বাবু মৃত ঘোষণার কাগজপত্র গ্রহণ করে আজিজ নামে এক কর্মীকে মৃত নারীর লাশ আনতে পাঠান।বেলালকে নিয়ে আজিজ লাশ আনতে গেলে লক্ষ্য করেন, ‘মৃত’ নারীর হাত-পা নড়ছে।
এতে পুরো ওয়ার্ডসহ ঢামেক জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। ওই নারীকে আবারো হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয় ।৫ই ডিসেম্বর ওই মহিলা মারা যান ।
অপুষ্টি এবং দুর্বলতার কারনে তিনি মারা গিয়েছিলেন বলে ডাক্তাররা জানান ।(সোর্স)।এই ঘটনাগুলোর কোনোটাকেই বাংলাদেশের কোনো ডাক্তার ল্যাজারাস সিন্ড্রম বলে মতামত দেন নি। তবে লক্ষনগুলা অধিকাংশই মিলে যায়।
.বাইবেলের বুক অফ জন এ খুব ইন্টারেস্টিং একটা গল্প আছে। সেখানে বলা আছে, যীশু তার এক মৃত অনুসারীকে আবার জ্যান্ত করে তুলেছিলেন।
সেই অনুসারীর নাম ছিল Lazarous ( বাংলা বাইবেলে তাকে লাসার বলে অনুবাদ করা হয়েছে)
বুক অফ জন এর চ্যাপ্টার ১১ এ ঘটনাটা বর্ননা করা হয়েছে এভাবে —
৩৮ লাসারকে য়েখানে রাখা হয়েছিল, যীশু সেই কবরের কাছে গেলেন। কবরটি ছিল একটা গুহা, যার প্রবেশ পথ একটা পাথর দিয়ে ঢাকা ছিল।
৩৯ যীশু বললেন, ‘ঐ পাথরটা সরিয়ে ফেল।’সেই মৃত ব্যক্তির বোন মার্থা বললেন, ‘প্রভু চারদিন আগে লাসারের মৃত্যু হয়েছে। এখন পাথর সরালে এর মধ্য থেকে দুর্গন্ধ বের হবে।’
৪০ যীশু তাঁকে বললেন, ‘আমি কি তোমায় বলিনি, যদি বিশ্বাস কর তবে ঈশ্বরের মহিমা দেখতে পাবে?’
৪১ এরপর তারা সেই পাথরখানা সরিয়ে দিল
৪৩ যীশু জোর গলায় ডাকলেন, ‘লাসার বেরিয়ে এস!’
৪৪ মৃত লাসার সেই কবর থেকে বাইরে এল। তার হাতপা টুকরো কাপড় দিয়ে তখনও বাঁধা ছিল আর তার মুখের ওপর একখানা কাপড় জড়ানো ছিল। যীশু তখন তাদের বললেন, ‘বাঁধন খুলে দাও এবং ওকে য়েতে দাও।’
এটা কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা, নাকি সেন্ট জন যীশুর মহীমা বাড়ানোর জন্য বানিয়ে বানিয়ে এই গল্পটা বলেছেন,সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।।
অনেক বিশ্বাসী খৃষ্টান অবশ্য দাবি করেন, বাইবেলের এই বর্ননা পড়েই ডাক্তাররা গবেষণা করে করে ল্যাজারাস সিন্ড্রম আবিষ্কার করেছেন। তারা আরো দাবি করেন , বাইবেলের মধ্যেই সব জগতের জ্ঞান নিহিত আছে।
বাইবেল নিয়ে বেশি বেশি গবেষণা করলেই নতুন নতুন কিছু আবিষ্কার করা যাবে।
তবে ডাক্তাররা এই দাবির সাথে একমত নন। তারা বিভিন্ন রকম রোগ বা সমস্যা নিয়ে প্রতিনিয়তই গবেষণা করছেন। একটি দুটি রোগের বর্নণা হয়তো বাইবেল বা প্রাচীণ কোনো গ্রন্থের সাথে মিলে যাচ্ছে, কিন্তু অন্যান্য হাজার হাজার রোগের কোনো বর্ননা তো বাইবেলে পাওয়া যাচ্ছেনা।
আধুনিক চিকিতসাবিজ্ঞানীরা বাইবেলের এই বর্ননাকে শ্রদ্ধা করে, এই ধরনের ‘মৃত রোগীর জীবিত হওয়ার ঘটনাকে’ যীশুর ওই মৃত শিষ্যের নাম অনুসারে Lazarous syndrome রেখেছেন।
একইভাবে, বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে নামকরনের জন্য প্রাচীণ অনেক সাহিত্য থেকে সাহায্য নেওয়া হয়।
যেমন – হেমোরারের ইলিয়াড মহাকাব্য থেকে অনুপ্রানিত হয়ে, মানুষের পায়ের একটি হাড়ের নাম রাখা হয়েছে একিলিস। ( ইলিয়াড মহাকাব্যে বলা আছে, গ্রীক বীর একিলিস এর পায়ের ওই হাড়ে আঘাত করলেই সে মারা যাবে। শরীরের অন্য কোথাও আঘাত করলে মরবে না।
গ্রীক নাট্যকার সফেক্লিস এর একটা বিখ্যাত নাটক ছিল- কিং ইডিপাস। এই নাটকের রাজা, ইডিপাস,নিজের বাবাকে খুন করে, এবং নিজের মা কে বিয়ে করে।
সাইকোলোজিতে এই ধরনের একটা মানসিক রোগ পেয়ে মনোবিজ্ঞানীরা তার নাম রেখেছেন ইডিপাস কমপ্লেক্স। ( এই রোগে আক্রান্ত রোগী নিজের বাবাকে শত্রু ভাবে এবং মায়ের সাথে যৌন মিলন করতে চায়।)
শেক্সপিয়ার এর ওথেলো নাটকের কাহিনীর মতই, সাইকোলজি তে ওথেলো সিনড্রোম নামে একটা রোগ আছে,যেখানে বয়ফ্রেন্ড – গার্লফ্রেন্ড রা হুদাই সন্দেহ করে।
Lazarus Syndrome-এর কিছু কারণ বিজ্ঞানীরা সনাক্ত করার চেষ্টা করেছেন, যদিও কোনটিই শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত হল, ভিক্টিমের বন্ধ হয়ে যাওয়া হৃৎপিন্ড কোনভাবে এপিনেফ্রিন হরমোনের প্রভাবে পুনরায় শক্তি অর্জন করে, এবং পাম্পিং শুরু করে।
উল্লেখ্য, এপিনেফ্রিন হরমোন হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তনালীর মধ্য দিয়ে এয়ার প্যাসেজ তৈরী করে ঠিকভাবে রক্ত চলাচলের জন্যে।
( বর্তমানে অনেক মৃত রোগীকে বিভিন্ন ডোজের এপিনেফ্রিন ইঞ্জেকশন দিয়ে জীবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাফল্য এখনো পাওয়া যায়নি। সঠিক ডোজ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে)
আরেকটি হাইপোথিসিস হল, কার্ডিও-পালমোনারী রিসাসিটেশনের কারণে হার্টে যে চাপ সৃষ্টি হয়, তার ফল হিসেবেই এটি হয়ে থাকে।
অর্থাত, CPR প্রয়োগের ফল তাতক্ষনিকভাবে পাওয়া যায়না, কিংবা বোঝা যায়না। পরবর্তীতে সেটা বোঝা যায়।
পুনর্জীবনের শুরুতে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে হাঁটুর কাঁপুনি, ঘাড় ও বাহুর লোম দাঁড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি। ভিক্টিমের হাত বিছানার ওপর থাকলে সাধারণত তা আপনাতেই উঠে বুকের ওপর আড়াআড়ি ভাবে থাকে, এরপর খুব ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস দেখা যায়।
এ পর্যন্ত Lazarus Syndrome এর লক্ষণ দেখে অন্তত ষোলজন নার্স এবং দুজন ডাক্তার জ্ঞান হারিয়েছেন, অন্তত তিনজন মহিলা ভয়ের আধিক্যে স্ট্রোক করেছেন।
অস্ট্রিয়ায় এক গ্রামে একজন ভিক্টিমকে জীবন ফিরে পাবার পরও জোর করে মাটি চাপা দেয়া হয়েছিল, কারণ গ্রামবাসীর ভাষ্যমতে, “শয়তান মৃতদেহ দখল করেছিল। ওকে বাচিয়ে রাখলে অনেক ক্ষতি হবে। মেরে ফেলতে হবে, যত দ্রুত সম্ভব।”
জোর করে এভাবে পুনর্জীবন প্রাপ্তদের মেরে ফেলার ঘটনা গত শতাব্দীতে অন্তত পাঁচবার ঘটেছে।
রবীন্দ্রনাথের ‘জীবিত ও মৃত’ গল্পতেও একই ধরনের পরিস্থিতি আছে । কাদম্বরী দেবী মারা গিয়েছিলেন কলেরায় । ছোয়াচে রোগ বলে তার আত্মীয় স্বজন তাকে দ্রুত দাহ করানোর ব্যবস্থা করেছিল । শ্মশানে তার আত্মীয়স্বজনেরাও কেউ যায়নি ।
প্রফেশনাল ডোমরা কাদম্বরীর মুখে অল্প একটু আগুন লাগিয়েই চলে যায় । তারা অযথা জালানি কাঠ অপচয় করতে চায়নি । সেই রাতে নামল বৃষ্টি । বৃষ্টিতে চিতার আগুন নিভে গেল । কাদম্বরী জ্ঞান ফিরে পেলেন । সিচুয়েশন বুঝতে পেরে নিজের বাসায় ফিরে এলেন ।
কিন্তু তার নিজের বাসায় কেউ তাকে গ্রহন করল না । সবাই বলল ,’তুমি কাদম্বরীর ভূত। প্রেতাত্মা । তুমি চলে যাও । আমাদের ভয় দেখিও না ‘ । কাদম্বরী কাউকেই কনভিন্স করতে পারলেন না । মনের দুঃখে তিনি পুকুরে ডুব দিয়ে সুইসাইড করলেন । গল্পের শেষ লাইন হল–কাদম্বরী মরিয়া প্রমান করিল যে সে মরে নাই ।
তবে যখন থেকে মেডিকেল সাইন্স এই “মৃত ব্যক্তির জ্যান্ত হয়ে যাওয়াকে” একটি Syndrome বলে আখ্যা দিয়েছে, তারপর থেকে এরকম অপ্রত্যাশিত ঘটনা তেমন ঘটেনি। বরং গত পঞ্চাশ বছরে এমন অনেক রোগীকে দ্রুত আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। কুসংস্কারের শিকার হতে হচ্ছে না আর কাউকে।
ল্যাজারাস সিন্ড্রমে একজন ভিক্টিম কতো সময় পর বেঁচে উঠবে, কিংবা পরবর্তীতে কতোদিন বেঁচে থাকবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়না। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ছয়দিন পর একজন মানুষ বেঁচে উঠেছিলেন, যাকে হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছিল।
এবং Lazarus Syndrome-এ আক্রান্ত হওয়ার পর সর্বোচ্চ এগারো বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার রেকর্ড পাওয়া গিয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে , পুনর্জীবন প্রাপ্তরা পরবর্তীতে বেশিদিন বাচেনা। (বাংলাদেশের গালিবা হায়াত প্রায় ৪ দিন পর মারা গিয়েছিল। ঢাকা মেডিকেলের আজকের এই বাচ্চার দীর্ঘ জীবন কামনা করি)
ল্যাজারাস সিনড্রোম বাদেও মৃত মানুষ জ্যান্ত হওয়ার আরেকটা উপায় আছে । মেডিকেলের পরিভাষায় একে বলে সাসপেন্ডেড এনিমেশন । খুব ঠান্ডার ভিতরে মানুষ পড়ে গেলে এই ধরনের সাসপেন্ডেড এনিমেশন অবস্থায় চলে যেতে পারে।
এই সময় মানুষের ফুসফুস,হৃদপিন্ড সব কিছুই খুব ধীরে ধীরে কাজ করা শুরু করে । ফলে লোকটির ক্ষুধা তৃষ্ণা কিছু পায়না , এবং লোকটি মারাও যায়না।
২০০৬ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে নিখোজ ছিলেন জাপানী ভদ্রলোক মিছুটাকা উচিকোশি । প্রকৃতপক্ষে তিনি পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন । এক্সিডেন্ট করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকেন পাহাড়েই ।
প্রচন্ড ঠান্ডায় তার বডি চলে যায় সাসপেন্ডেড এনিমেশন পর্যায়ে । ২৪ দিন পরে একজন পথিক এসে তাকে উদ্ধার করে । সাসপেন্ডেড এনিমেশন অবস্থা থেকে তিনি বেচে ফিরে আসেন।(সোর্স)
গেম অফ থর্ন্স এ মেলিসান্ড্রে ব্ল্যাক ম্যাজিক দিয়ে মৃতকে জীবিত করার চেষ্টা করেছিল। বাস্তব জীবনেও এমন অনেক পীর/ফকির/সন্যাসী মানুষের বিশ্বাস কাজে লাগিয়ে মৃত মানুষকে জ্যান্ত করার দাবি করে । সাধারন মানুষ এদের বিশ্বাস করে অনেক সময় টাকা পয়সাও দেয় , কিন্তু মৃত মানুষ এর জীবন আর ফেরত পায়না । কয়েকটা ঘটনা শোনাই।
ক) ২০১১ সালের জুন মাস । ঘটনাস্থল পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রাম । গ্রামের বাসিন্দা জাকির মুন্সীর স্ত্রী মাসুদা বেগম (৩৬) দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস রোগে ভুগে ৬ জুন সকালে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
একইদিন দুপুরে তার মৃতদেহ মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।দাফনের দু’দিন পর অর্থাৎ ৯ জুন সকালে ওই বাড়ির সামনে হাজির হয় ভণ্ড পীর লাইলী বেগম ও তার দুই সহযোগী। বাড়ির সামনে গিয়ে লাইলি লোকজনকে বলতে থাকে,
‘বান মেরে হত্যা করা হয়েছে মাসুদাকে। সে মরে নাই। ওরে আমি আবার জীবিত করতে পারমু।’
লোকজন জানায়, দুপুরে লাইলী ও তার দুই সহযোগী কবরের ওপরের মাটি সরিয়ে দেয়। এরপর লাশের মাথা থেকে কাফনের কাপড় খুলে ফেলে, পানি ছিটিয়ে দেয়। এরপর ভণ্ড পীর ধ্যানে বসেন এবং ঘোষণা দেন, ‘দুই ঘণ্টা পরে লাশ জ্যান্ত হবে।’
খবরটি মোবাইলের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে সহস্রাধিক উৎসুক মানুষ জড়ো হয় কবরের সামনে। ২ ঘন্টা পরেও মাসুদা জীবিত না হলে স্থানীয় লোকজন লাইলী ও তার সহযোগীদের গণধোলাই দিতে শুরু করে। পালিয়ে যায় লাইলীর দুই সহযোগী। পরে পুলিশ এসে লাইলীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।(সোর্স)
খ) ১৪ই সেপ্টেমবর ২০০৯। লক্ষ্মীপুরে সদর উপজেলার শাকচর ইউনিয়নের পশ্চিম শাকচরের সাপের কামড়ে মাসুদ নামে এক যুবককের মৃত্যু হয়। মাসুদ স্থানীয় তাজল ইসলাম এর ছেলে ও পানের ব্যবসায়ী।
১৪ তারিখ সোমবার রাতে ঘর থেকে বের হয়ে মাসুদ পাশ্ববর্তী বিলে মাছ শিকার করতে যান। এসময় চিৎকার শুনে পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন মাসুদ পড়ে আছে। পরে তার ডান পায়ে একটি ক্ষত চিহ্ন দেখে তারা নিশ্চিত হন মাসুদকে সাপে কেটেছে।
প্রথমে সদর ও পরে চট্রগ্রামের একটি হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন।মঙ্গলবার রাতে বাড়ীতে এনে মাসুদকে দাফন করার পূর্বে গোসল করাতে গিয়ে দায়িত্বরতরা অপারগতা প্রকাশ করেন।
তাদের মতে মাসুদ জীবিত তাই তারা গোসল করাতে পারবেনা বলে জানিয়ে দেন বলে জানান এলাকাবাসি।তার লাশ বাড়িতে আনা হলে ‘মাসুদ মরে নাই, বেঁচে আছে’ এমন দাবি তোলেন একই উপজেলার চররমণী গ্রামের ওঝা রৌশন আলী।
এরপর থেকে মাসুদের লাশটি বাড়ির উঠানে একটি চেয়ারে বসিয়ে মাথায় থালাবাটি, পায়ে মুরগির বাচ্চা ও কোমরে সাদা কাপড় বেঁধে তন্ত্রমন্ত্র চালান ওঝা রৌশন আলী।
স্থানীয়রা চার দিনে মাসুদকে সুস্থ দেখতে না পেরে রৌশন আলীর তন্ত্র-মন্ত্রের প্রতি আস্থা হারিয়ে খবর দেন ভোলার লালমোহনের দুই ওঝাকে। কিন্তু তারাও সুবিধা করতে পারেনি ।(সোর্স)
গ) ২০১৪ সালের ২১শে জুন। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামে সাপের কামড়ে মৃত কাঠমিস্ত্রি কামরুল ইসলামকে (৪০) জীবিত করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। মৃত্যুর ১০ ঘণ্টা পর কথিত ওঝা হাজার মানুষের সামনে নানা ফন্দিফিকির করেও মৃতকে জীবিত করতে পারেননি।
শেষে ওঝা আজিল হক পালিয়ে রক্ষা পেয়েছেন।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯শে জুন বৃহস্পতিবার সকালে ছাতিয়ান গ্রামের শেখপাড়ার আইতাল আলীর ছেলে কাঠমিস্ত্রি কামরুল ইসলামকে বিষধর সাপে কামড় দেয়।
পরে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ওঝা আজিল হক সাপে কাটা রোগী জীবিত করতে পারেন- এমন কথা শুনে নিকটাত্মীয়রা তাঁকে খবর দেয় ।আজিল ঘটনাস্থলে বিকেলে পৌঁছে প্রথমে মৃতদেহের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাঁচানো সম্ভব বলে দাবি করেন।
কিন্তু এর আগেই কামরুলের কাফন পরানো হয়েছিল। গ্রামের কবরস্থানে কবর খোঁড়াও শেষ পর্যায়ে।এ সময় ওঝার কথামত মৃতদেহ থেকে কাফনের কাপড় খুলে লুঙ্গি পরিয়ে ২০-২৫ মিনিট লেপ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। লাশ উঁচুতে রেখে নিচে কাঠ জ্বালিয়ে ধুপ ছিটানো হয়। এরপর আগুনের তাপ দেওয়া হয়।
এতেও জীবিত না হওয়ায় ওঝার নির্দেশে লাশ লেপে জড়ানো অবস্থায় হাত দিয়ে ঘোরাতে থাকেন স্থানীয় সাত-আটজন। প্রায় ২০ মিনিট এমন করার পর কোন ফল না পাওয়ায় মৃতদেহ প্যাচানো লেপের উপর ঝাঁকুনি দিতে থাকে।
আগুনের তাপে ইতিমধ্যেই লাশের বিভিন্ন স্থান পুড়ে যায়।হঠাৎ কবিরাজ বললেন , ৮০ ভাগ বেঁচে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। নাক মুখ দিয়ে রক্তক্ষরন হচ্ছে, আরো জোরে ঝাঁকুনি দিতে হবে।
কিছুক্ষন পর কবিরাজ লাশের মুখ ও মাথা পরীক্ষা করে ১০ মিনিট সময় চাইলেন স্থানীয় মানুষের কাছে।এদিকে ১০ মিনিট সাধনা শেষে ওঝা বলেন, আর এক ঘণ্টা আগে তাঁকে আনা হলে রোগী বাঁচানো যেত। এ সময় মানুষ ক্ষুব্ধ হলে ওঝা পালিয়ে যান ।(সোর্স)
ঘ) ২১শে অক্টোবর ২০১১। ভোলা সদরের বাপ্তা ইউনিয়নের মুছাকান্দি গ্রামে মৃত মানুষকে জীবিত করার চেষ্টা করেছিলেন এক ওঝা। তার এই মৃত মানুষ জীবিত করা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল সারা ভোলায়।
বাপ্তা ইউনিয়নের মুছাকান্দি গ্রামের সরকার বাড়িতে গত ২০১১ সালের সেপ্টম্বর মাসে শরিফ (১১) নামে এক শিশুর সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়।মৃত্যুর ১ মাস পর শরিফের মা সহ তার বিভিন্ন স্বজনরা স্বপ্নে দেখেন শরিফ কবরের মধ্যে জীবিত আছে এবং সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য ছঠফঠ করছে।
এর পর শরিফের মা মুন্সিগঞ্জের বাদল ওঝার শরণাপন্ন হয়। ওঝা তার এক শিষ্যকে ভোলায় পাঠান শরিফের কবর দেখার জন্য যে কবর ভিজা রয়েছে কিনা। যদি কবর ভেজা থাকে তাহলে শরিফকে জীবিত করা সম্ভর হবে।
শিষ্য এলাকায় আসার পরেই খবরটা ভাইরাল হয়। জাতীয় পত্রিকায় চলে আসে। এরপরে ওই কবিরাজ বা শিষ্য সে এলাকায় আসে নাই।(সোর্স)
একটু সামারি করার চেষ্টা করি।
ক) মৃত ঘোষিত কোনো রোগী হঠাত করে জীবিত হয়ে উঠলে, বাই ডিফল্ট ডাক্তারকে গালাগালি না করে মেডিকেল ব্যাখ্যা জানার চেষ্টা করুন।
খ) এমন ঘটনা কোনো ভূত,পিশাচ, শয়তান বা অলৌকিক কারনে ঘটেনা।
গ) ব্ল্যাক ম্যাজিক বা জাদু মন্ত্র দিয়ে কিংবা বাণ মেরে মৃত ব্যক্তিকে জ্যান্ত করা যায়না।
ঘ) অনেক ওঝা -কবিরাজ দাবি করে, তারা মৃতকে জীবিত করতে পারবে, কিন্তু কেউ প্রমান করে দেখাতে পারেনি। এদেরকে বিশ্বাস করে প্রতারিত হবেন না ।
ঙ) ল্যাজারাস সিন্ড্রম নামে খুবই বিরল একটা রোগ/সিন্ড্রম আছে। এই ক্ষেত্রে রোগীর হৃদপিন্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরে আবার চালু হয়। বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ৩৮ টা ল্যারাস সিন্ড্রমের ঘটনা জানা গিয়েছে।
লিখাঃজহিরুল ইসলাম