ঢাকায় প্রথম মাংকিপক্স সনাক্ত হয়েছে এমন খবর ছড়াচ্ছে কোন প্রমান ছাড়া। যার নামে শেয়ার করা হচ্ছে সে নিজেই বলেছে সে এই খবর ছাপায় নাই।
সাধারনভাবেই অনেকেই খুবই আতংকিত। তো আসলে এটা কী, হলে কী হয়, আর ঝুঁকি কতটুকু? আসার আগেই জেনে নেই
১. ১৯৯০ সালে বিলুপ্ত হয় স্মলপক্স। সেই স্মলপক্সের ফ্যামিলি – অর্থপক্সভাইরাসের – একটা মেম্বার এই মাংকিপক্স।
২. ১৯৫৮ সালে প্রথন এই ভাইরাস দেখা যায় বানরের মধ্যে, যেখান থেকে নাম আসে মাংকিপক্স।
১৯৭০ সালে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কংগো তে প্রথম মানুষের শরীরে সনাক্ত হয়
৩. ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সালে অনেক স্মলপক্সের টিকা প্রদান কর্মসুচি চলছিল রোগটাকে বিলুপ্ত করার জন্যে।
তখন দেখা গিয়েছিল যে এই টিকা দেয়ার কারনে মানুষের মাংকিপক্সের বিরুদ্ধেও কিছুটা প্রটেকশেন পেত।
স্মলপক্স বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে আবার কিছু কিছু জায়গায় মাংকিপক্স বেড়িয়ে আসে।
৪. দুইটা ভ্যারিয়েন্ট আগে জানা ছিল – একটা কংগো থেকে, একটা পশ্চিম আফ্রিকা থেকে।
কংগো ভ্যারিয়েন্টে প্রায় ১০% মৃত্যুর হার – যেটা অনেক কে খুব ভয়ে ফেলে দিচ্ছে। কিন্তু পশ্চিম আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্টে মৃত্যুর হার ১%।
ইউরোপে এ পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে পশ্চিম আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্ট, তথা কম ভয়াবহটা।
এটাও মনে রাখতে হবে যে যেই গ্রামগুলোতে মাঝে মাঝেই ধরা পরে এই রোগ, সেখানে তেমন সাস্থ্যব্যবস্থা নাই, তাই উন্নত সাস্থ্য ব্যবস্থায় ইন শা আল্লাহ এর চেয়ে অনেক কম মানুষের মৃত্যু হবে।
৫. সাধারনত মাংকিপক্স ছড়ায় পশু থেকে মানুষের কাছে – যেমন কাঠবিড়ালি, ইদুর ইত্যাদি।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একটা আউটব্রেক হয়েছিল একটা কুকুরের মাধ্যমে। সেই কুকুর কে রাখা বয়েছিল ইদুরের সাথে যার থেকে ট্রান্সমিশান হয়।
৬. এবারের আউটব্রেকটা অন্য রকম কারন কখনো এত দেশে একি সাথে এত ভাইরাস ছড়ায় নাই। এর মানে, মনে হচ্ছে যে ভাইরাস এখন মানুষ থেকে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে।
এ পর্যন্ত ইউরোপে বেশ কিছু কেইস দেখা গিয়েছে যাদের পশ্চিম আফ্রিকা ভ্রমনের কোন হিস্ট্রি নাই।
৭. উপসর্গ গুলো কি কি? – জ্বর (১০০.৪ ডিগ্রি ও উপরে) এর সাথে মাথা ব্যাথা, গা-হাত-পা ব্যাথা এবং প্রচন্ড ক্লান্ত লাগা।
এর সাথে সাধারনত কিছু লিম্ফ নোড (লসিকা গ্রন্থি) ফুলে যায়।
জ্বরের ৪-৫ দিন পর আসে একটা র্যাশ যেটা গোটা গোটা হয়ে ওঠে- কিছুটা জলবসন্ত বা চিকেনপক্সের মত কিন্তু সাইজে আরেকটু বড়।
শুরু হয় মুখ বা যৌনাঙ্গে তারপর ছড়িয়ে পরে শরীরে।
৮. কোভিডের তুলনা সংক্রমনের হার এখনো অনেক কম কিন্তু শুন্য নয়। মানুষ থেকে মানুষ ছড়ায় কয়েক ভাবে – এই চর্ম গোটা গুলোর স্পর্শে আসলে। অসুস্থ রোগীর ব্যবহৃত কাপর বা বেডশিট থেকে।
কাশি বা হাঁচির মাধ্যনে। সেক্সুয়াল ট্রান্সমিশান প্রমানিত না হলেও এর সম্বাভনা আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সব চেয়ে বেশি ঝুকি রুগির একদম কাছের মানুষের – যারা তার সাথে ঘুমায়, তার কাপড়-বেডশিট পরিষ্কার করে ইত্যাদি। এর পর অনেক ঝুঁকি সাস্থ-কর্মিদের। পিপিই জরুরি।
৯. এক্সপোজড হওয়ার ৫-২১ দিন পর উপসর্গ শুরু হয়। ৭ নং পয়েন্টে বলেছি উপসর্গ গুলো কি কি হয়
১০. অধিকাংশ মানুষের কিছুটা খারাপ লাগলেও কোন সমস্যা ছাড়াই ভাল হয়ে যায় ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে। কিছু মানুষের সিরিয়াস হতে পারে।
সিরিয়াস হওয়ার কারন সাধারনত অন্যান্য জীবানূ চান্স নিয়ে ঝাপিয়ে পরা (মেডিকেল টার্মটা সেকেন্ডারি ইনফেকশান)।
ফুসফুস এর ইনফেকশান (নিউমোনিয়া), ব্রেইন এর (এনকেফালাইটিস), চোখের (বিশেষ করে কর্নিয়ার) এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে যাওয়া ইনফেকশান (সেপসিস) এর কারনেই সিরিয়াস রোগ হয়। এই সব গুলো কমপ্লিকেশানই ম্যানেজ করা যায় যদি ভাল সাস্থ্য ব্যবস্থা থাকে।
১১. এটা প্রথম আউটব্রেক না। ২০১০ সাল থেকে বেড়ে আসছে। ২০২০ সালে কংগো তে ৪,৬০০ কেইস পাওয়া গিয়েছিল মাংকিপক্সের।
২০১৭ থেকে ৫০০+ কেইস পাওয়া গিয়েছে নাইজেরিয়াতে। ২০০৩ সালে ৭০টা কেইস পাওয়া গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে।
১২. বেশি করে পানি খাওয়া ও প্যারাসিটামল খেয়েই অধিকাংশ মানুষ পার পেয়ে যাবে। কমপ্লিকেশান হলে তার স্পেসিফিক কিছু ওষুধ লাগতে পারে।
একটা লাইসেন্স করা ওষুধ আছে যেটা স্মলপক্সে ব্যবহৃত হয়েছিল কিন্তু পৃথিবীর তেমন কোথাও উৎপাদন নাই – আর আরো অনেক চিকিৎসা লাগবে।
স্মলপক্স এর ভ্যাকসিন ৮৫% প্রটেকশান দেয়। যদিও আমরা যারা অনুর্ধ্ব-৪০, তারা কেউ এই টিকা পাইনাই।
মাংকিপক্সের বিরুদ্ধে আগে থেকেই একটা ভ্যাকসিন আছে যদিও উৎপাদন নাই। যেহেতু
১৩. নতুন আউটব্রেক নিয়ে অনেক কিছুই অজানা। এটা কি একটা নতুন ভ্যারিয়েন্ট যার কারনে আগের চেয়ে বেশি ছড়াচ্ছে?
জানি এটা তেমন সংক্রমক না কিন্তু কতটা সংক্রমক? এর মৃত্যুর হার কত?
স্মলপক্স ভ্যাকসিন কি আদৌ আগের মত প্রটেকশান দিবে? এটা কি মহামারি আকার ধারন করতে পারে? এমন অনেক অনেক প্রশ্নের কোন জবাব নাই।
আজ যা লিখেছি তা একদম সীমিত ডাটার উপর বেইজ করা। নতুন তথ্য আসলে এবং আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়লে আরো জানতে পারব ইন শা আল্লাহ।
কোন ভবিষ্যৎবানি করবনা কারন আমরা কেউ জানিনা।
যে ভবিষ্যৎবানি করবে ধরেই নিবেন সে না জেনে কথা বলছে। আমি তেমন স্তংকিত না এবং মনে হয় যে বেশি সিরিয়াস হবেনা, কিন্তু বুকে হাত দিয়ে এ কথা বলার সাহস নাই। আরো ডাটা আসুক, তারপর দেখা যাবে।
Dr. Raiiq Ridwan
Specialty Registrar, Emergency Medicine
Cambridge University Hospitals
Undergraduate Clinical Supervisor
University of Cambridge