আচ্ছা,একটা শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রথমবার ঠিক কতো বছর বয়সে তাকে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় ?
নিশ্চয়ই ভাবছেন ৫-৬ বছর হবে হয়তো।
একদমই না,একটা শিশু যখন জন্ম নেয় তার ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তাকে একটা পরীক্ষা দিতে হয়।
একই পরীক্ষা দুইবার;
জন্মের ১ম ও ৫ম মিনিটে।
এটি সাধারণত হাসপাতালে বা ক্লিনিকে জন্ম নেয়া শিশুদের ক্ষেত্রেই করা হয়।মাত্র দশ নম্বরের একটি পরীক্ষা বা স্কোরিং।
পাঁচটা প্রশ্ন।
প্রত্যেকটি প্রশ্ন দুই নম্বর করে।এখানে যদি শিশুটি ৭-১০নম্বর পায়,তাহলে এ পরীক্ষায় সে ভালোভাবে উত্তীর্ণ মানে সে নবজাতক বেশ সুস্থ এবং ঠিকঠাক।
যাইহোক,এটিকে বলা হয় অ্যাপগার
APGARস্কোর/Apgar Test.
১৯৫২ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেস্থেসিয়ার প্রফেসর ডা.ভার্জিনিয়া অ্যাপগার এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন।
এবার ব্যাপারটাকে একটু সহজভাবে দেখা যাক;
★A(Apearence) মানে হচ্ছে বাহ্যিক গায়ের রঙ।নবজাতক শিশুটির গায়ের রঙ যদি স্বাভাবিক থাকে মানে গোলাপি বর্ণের হয় সেক্ষেত্রে সে পাবে পূর্ণ নম্বর মানে হচ্ছে ২।
এবার যদি দেখা যায় নবজাতকের শরীর
গোলাপি/স্বাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও তার হাত এবং পায়ের রঙ নীলাভ;তাহলে বোঝা যায়,তার হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম এখনও সম্পূর্ণভাবে হচ্ছে না।এক্ষেত্রে সে পাবে ১ নম্বর।এবং যদি নবজাতকের পুরো শরীরের বর্ণই নীলাভ/ফ্যাকাশে থাকে।
মানে তার হৃদপিণ্ড থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পরিবাহিত হচ্ছে না।সেক্ষেত্রে সে কোনো নম্বর পাবে না মানে স্কোর ০।
★ P(Pulse) সোজা বাংলায় হৃদস্পন্দন।
এখানে যদি নবজাতকের হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ১০০ এর অধিক হয়;এর মানে হচ্ছে তার পালস/হৃদস্পন্দন ঠিকঠাক আছে।অতএব শিশুটি পূর্ণ নম্বর পাবে,মানে ২।
আর যদি প্রতি মিনিটে তার হৃদস্পন্দনের সংখ্যা ১০০ এর কম হয়,তাহলে বুঝতে হবে শিশুটির হৃদস্পন্দন
স্বাভাবিকের তুলনায় কম।সুতরাং সে নম্বর পাবে ১।আর যদি তার হৃদস্পন্দন না থাকে তাহলে সে পাবে ০ নম্বর।
★ G(Grimace) সহজভাবে বললে ব্যাপারটা দাঁড়ায়
নবজাতককে যে কোনোভাবে খোঁচা দেয়া/উদ্দীপিত করা এবং তার প্রতিক্রিয়াটা নিরূপণ করা।
যদি আপনার উদ্দীপনার বিপরীতে নবজাতক পর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম হয় বা খুব জোরে কান্না করে তার মানে সে স্বাভাবিক আছে।
সুতরাং সে পূর্ণ ২ নম্বরই পাচ্ছে।
আর যদি তার প্রতিক্রিয়াটা স্বাভাবিকের তুলনায় খুবই কম হয়,সেক্ষেত্রে সে পাবে ১ নম্বর।এবং আপনার উদ্দীপনার বিপরীতে যদি সে কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া না দেখায় তাহলে সে পাবে ০।
★A(Activity) এটি দিয়ে মূলত নবজাতকের শারীরিক স্থিতিস্থাপকতা বা সাচ্ছন্দ্যবোধ ব্যাপারটা বোঝায়।যেমন বলা যেতে পারে,তার হাত পা স্বাভাবিক নাড়াচাড়া করা যাচ্ছে কিনা কিংবা কোনোরূপ বাঁধা আসে কিনা।
এক্ষেত্রে যদি সে স্বাভাবিক নাড়াচাড়া করতে পারে তাহলে পাবে ২ নম্বর পাবে।আর যদি শুধুমাত্র হাত/পা,স্বাভাবিকের তুলনায় খুবই সামান্য নাড়াচাড়া করতে পারে তাহলে সে পাবে ১ নম্বর।এবং নবজাতকের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যদি নিস্তেজ থাকে,কোনোরূপ নড়াচড়া করতে না পারে সেক্ষেত্রে সে পাবে ০।
★R(Respiration ) বা শ্বাসপ্রশ্বাস;যদি তার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে,উচ্চস্বরে কাঁদতে পারে তাহলে সে পূর্ণ নম্বরই পাবে মানে ২।
এবার যদি তার শ্বাসপ্রশ্বাস খুবই ধীর,অনিয়মিত হয় এবং বেশ আস্তে কান্না করে;তাহলে সে পাবে অর্ধেক নম্বর মানে ১।শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ থাকলে সে পাবে ০।
নবজাতক যদি এই দশ নম্বরের পরীক্ষায় ৭ এর কম পায় তাহলে সে অনুযায়ী দ্রুত তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
যেমন নিঃশ্বাসের রাস্তা পরিষ্কার করা,শরীর শুষ্ক করা অথবা নবজাতককে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র(NICU) তে প্রেরণ করা।
মাত্র ১১ শতাংশ নবজাতক
জন্মের প্রথম মিনিটেই পূর্ণ স্কোর তথা ১০ নম্বর পায়।
তবে এটি আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায়।পাঁচ মিনিটের মাথায় ৮৯ শতাংশ এবং দশ মিনিটের মাথায় ৯৭ শতাংশ নবজাতক পূর্ণ নম্বর লাভ করে।
লেখকঃহাসিবুর রহমান ভাসানী
Reference:
কিডসহেলথ