দীর্ঘ ৩৪৩ বছর গবেষণার পর শুক্রাণু নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বিজ্ঞানীদের। তাদের দাবি, শুক্রাণু সাঁতার কাটতেই পারে না। সাঁতার তো দূরে থাক শুক্রাণুরা ওই ভাবে দু’পাশে লেজ নাড়াতেই পারে না।
তাহলে ডিম্বাণু অবধি পৌঁছাতে এতটা পথ পাড়ি দেয় কীভাবে? সেটি নিয়েই বিস্তারিত জানানো হয়েছে লাইভ-সাইন্স.কম এর একটি গবেষণা প্রতিবেদনে। সেখানে অ্যান্থনি ভন লিউয়েনহুক বলেছিলেন, শুক্রাণুরা পাকা সাঁতারু, ইল মাছের মতো সাঁতার কাটতে পারে। ১৬৭৮ সালের ১৮ মার্চ এই তত্ত্ব সঠিক মনে করেছিল বিজ্ঞানী।
প্রথম অণুবীক্ষণযন্ত্র (মাইক্রোস্কোপ) আবিষ্কার করে লিউয়েনহুক তখন অণুজীবদের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন। মানব শরীরের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম রক্তজালক, রক্ত কণিকা, স্নায়ুকোষের কথা বলেছেন। ১৬৭৭ সালে তিনি টু-ডি মাইক্রোস্কোপে দেখান মানুষের শরীরে গোল মাথা ও লম্বা লেজওয়ালা ঠিক প্রাণীর মতোই জিনিস আছে যা সাঁতার কাটতে পারে। নতুন জীবন তৈরির রহস্যের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। সেই লম্বা লেজওয়ালা জিনিসের নাম হয় শুক্রাণু যাকে বিজ্ঞানী বলেছিলেন ‘লিভিং অ্যানিমাকিউল’।
লিউয়েনহুক টু-ডি মাইক্রোস্কোপে যা দেখেছিলেন এখনও টু-ডি অণুবীক্ষণযন্ত্রে পরীক্ষা করলে সাঁতার কাটতেই দেখা যায় শুক্রাণুদের। বাস্তবে সেটা নয়। ইংল্যান্ডের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা থ্রি-ডি মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করে বলেছেন, একেবারেই সাঁতার কাটে না শুক্রাণু। বরং তারা চড়কির মতো ঘুরতে থাকে। পাক খেতে খেতেই ডিম্বাণুর দিকে ছুটে যায়। ইউনিভার্সিটি অব ন্যাশিওনাল অটোনোমা দে মেক্সিকোর বিজ্ঞানীরা ‘ব্লু-স্কাই এক্সপ্লোরেশন’ পদ্ধতিতে শুক্রাণুদের এই পাক খাওয়া ফ্রেমবন্দি করেছেন। এই মাইক্রোস্কোপি টেকনিকে প্রতি সেকেন্ডে ৫৫ হাজার ছবি তোলা যায়। শুক্রাণুরা ঠিক কী পদ্ধতিতে ছুটে যায় তার প্রতি সেকেন্ডের ফ্রেম তোলা হয়েছে এই পদ্ধতিতে।
দেখা গেছে, লেজ-সমেত পাক খেতে থাকে শুক্রাণু। প্রায় ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে থাকে। অনেকটা চাকার মতো। তবে মাথার ঘূর্ণন আর লেজের ঘূর্ণন কিছুটা আলাদা। দুটো ভিন্ন ঘূর্ণন পদ্ধতিতে পাক খেতে থাকে শুক্রাণু। থ্রি-ডি মাইক্রোস্কোপে দেখলে মনে হয় ঠিক বলের মতো স্পিন করছে তারা। এর ফলে যে গতি তৈরি হয় তাতেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারে শুক্রাণু। ঘুরতে ঘুরতেই ডিম্বাণুর ফ্লুয়িডে গিয়ে গেঁথে যায়।
–সময় নিউজ