তামিম ইকবাল হার্ট অ্যাটাক করেছেন।
এ নিয়ে স্বভাবতই দেশবাসী উদ্বিগ্ন।
এত কম বয়সে একজন এলিট অ্যাথলেট কিভাবে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হলেন? অনেকের মনেই এ প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে।
–
দেখেন, হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনের (Myocardial Infarction/MI) অনেকগুলা রিস্ক ফ্যাক্টর আছে। যেমন:
১.
ফ্যামিলিতে Ischemic Heart Disease এর হিস্ট্রি থাকাটা (হার্ট অ্যাটাক অনেকগুলা IHD এর মধ্যে একটা প্যাথোলজি মাত্র) একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
তামিম ইকবালের বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল এবং তিনি এতে মারাও গেছেন। ফলে, তামিমের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি সবসময়ই ছিল।
২.
তামিমের পারসোনালিটি হচ্ছে টাইপ-১ পার্সোনালিটি। টাইপ-১ পার্সোনালিটির মানুষেরা হুটহাট হার্ট অ্যাটাক হবার রিস্কে থাকে। এর কারনটা সম্ভবত হাই ইমোশনাল ইনভলভমেন্ট।
৩.
ডায়েটারি হ্যাবিট। আপনারা তামিমকে যতটা এলিট অ্যাথলেট বলে মনে করেন, আসলে তামিম অতটাও না। ক্যারিয়ারের শেষদিকে তাঁর ভুড়ির সাইজ ও ফিল্ডিংয়ের দুরবস্থা আপনারা দেখেছেন। অর্থাৎ, তাঁর খাদ্যাভ্যাস ভাল না।
৪.
তামিম স্মোক করেন। পাশাপাশি তার প্রকৃত বয়স ৪০ এর আশপাশে। এ বয়সে বহু স্মোকার হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন এবং তামিম নিজেও এর ব্যতিক্রম না।
আরো অনেকগুলো আছে, যেমন ডায়াবেটিস-উচ্চরক্তচাপ, কিন্তু এগুলো তামিমের ক্ষেত্রে এপ্লাই করে কিনা- আমি সিওর না। রোগীকে নিজের দেখতে হবে, নইলে বুঝা যাবে না।
–
এখন আপনাদের পরিবারের কারোর হার্ট অ্যাটাক হলে কী করবেন? এ প্রশ্নও অনেকের মনে ঘুরঘুর করছে।
দেখেন, হার্ট অ্যাটাক হয়েছে নাকি হয় নাই- তা ডায়াগনোসিসের ও চিকিৎসার দায়িত্ব ডাক্তারের।
আপনারা শুধু এটুকু দেখবেন যে, বুকের বামপাশে যদি ব্যথা উঠে, তবে এই ব্যথাটা:
১. বাম হাতে,
২. ঘাড়ে এবং
৩. পিঠে ছড়াচ্ছে কিনা।
ব্যস, উত্তর হ্যাঁ হলেই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাবেন।
–
আর হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায় কি?
১. চিনি ছাড়েন,
২. সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন জিম করেন
৩. রোজ ১ ঘন্টা জোরে হাটেন,
৪. সময়মত ও পরিমাণমত ঘুমান,
৫. ফেসবুক কমান (এটা আপনার ফাইট-অ্যান্ড ফ্লাইট রেসপন্স কমাবে),
৬. ভাত-রুটি কমিয়ে মাংস-সবজি খাওয়া বাড়ান।
৭. ব্রিদিং এক্সারসাইজ করেন (উইম হফের ভিডিওগুলা দেখে দেখে)।
৮. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট শিখতে হবে।
এগুলো করলে ইনশাআল্লাহ হার্ট অ্যাটাক না, বরং স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপসহ আরো বহু রোগ থেকেই বেঁচে থাকা সম্ভব।
–
সবশেষে, বিসিবির প্রতি একটি সতর্কবার্তা।
সদ্য অবসর নেয়া একজন দেশসেরা ক্রিকেটার হার্ট অ্যাটাক করেছেন। এর অর্থ, আপনাদের জাতীয় দলের বাকি ক্রিকেটাররাও যথাযথভাবে স্বাস্থ্যের যত্ন নিচ্ছেন না। যার ফলে তাদের ভবিষ্যৎও তামিমের মত হওয়া অসম্ভব নয় বলেই আশংকা করছি।
আপনাদের ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হোন। প্রয়োজনে কঠোরতা অবলম্বন করুন।
এইটুকুই। ভাল থাকবেন সবাই।
লেখা: ডা: শাফিন ইব্রাহিম হোসেন
তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল