কেরোসিন হল একটি লিকুইড হাইড্রোকার্বনের মিশ্রন। মূলত C12H26 থেকে C15H30 এর মিশ্রন থাকে এখানে। জ্বালানি হিসাবে এটা বেশ ভাল।
তীব্র দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পেতে কম দুর্গন্ধযুক্ত কেরোসিন অনেক সময় ব্যবহার করা হয়। সুয়ারেজ লাইনে যে সুইপার রা কাজ করেন, তাদেরকে বেশি দুর্গন্ধ যুক্ত জায়গায় কেরোসিন ঢালতে দেখেছি। গুজব শুনেছি,তারা নাকি কেরোসিন খেয়ে নেশা করে। সত্যতা পাইনি কখনো।
বমির উপদ্রব হলে গ্রামের মা-খালাদের দেখেছি, নাকের সামনে একটু কেরোসিন তেল মাখিয়ে দিতে। এই দুর্গন্ধে বমি নাকি বন্ধ হবে। প্লাসিবো ইফেক্ট বলেই মনে হয়েছে।
২০ বছর আগেও বাংলাদেশে বর্নহীন কেরোসিন বিক্রি করা হত। বর্তমানের কেরোসিনের রং নীল।
কারন হচ্ছে, বর্নহীন পেট্রোলের মধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল হিসেবে কেরোসিন মিশিয়ে বিক্রি করত।
এই ভেজাল বন্ধ করার জন্য সরকারীভাবে ২০০০/২০০১ সালের দিকে কেরোসিনের মধ্যে এই নীল যৌগ বিক্রি শুরু হয়।
(নীল যৌগটার নাম কি? কেউ জানেন? নাকি জাস্ট নীল রং মিশায় এখানে?)
কাছাকাছি আরেকটা যৌগের তথ্য দেই। ইথানল ( CH3-CH2-OH) খেয়ে নেশা করা যায়। আবার ইথানল দরকার হয় কাঠ বার্নিশ করার জন্য।
যদি কাঠের বার্নিশের ইথানল সরকার আমদানি/বিক্রি/উতপাদনের পারমিশন দেয়, তাহলে দেখা যাবে মদখোরেরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কম দামে ইথানল কিনে খাবে।
মদখোরদের সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ইথানলের সাথে অল্প পরিমান মিথানল, পিরিডিন, বেঞ্জিন মিশিয়ে মেথিলেটেড স্পিরিট বানিয়ে সেটা কমার্শিয়াল কাজের জন্য বিক্রি করা হয়।
এই স্পিরিট দিয়ে কাঠ বার্নিশ করা যায়, কিন্তু নেশা করলে মানুষ মরে যাবে।
তারপরেও অনেক মাদকাসক্তের খবর মাঝে মাঝে পাওয়া যায়, যারা স্পিরিট খেয়ে নেশা করতে গিয়ে মারা যায়।
এনিওয়ে, অনলাইনে এবং অফলাইনে, কেরোসিনকে কোথাও জীবানুনাশক হিসেবে ইউজ করতে শুনিনি। আপনি শুনেছেন কখনো?
সম্প্রতি জনৈক আবুল কাশেম এর লেখা একটি লিফলেট অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সেখানে তিনি দাবি করেছেন, কেরোসিন তেলের গন্ধ নিলেই করোনা আক্রান্ত রোগী সূস্থ হয়ে যাবে।
আমি এই আবুল কাশেম কে ফোন দিয়েছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম,তার এই চিকিতসা পদ্ধতিতে কয়জন সূস্থ হয়েছেন?
তিনি বলেছেন, আমি জাস্ট লিফলেট ছাপিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। কোনো করোনা রোগী সূস্থ হয়েছে কিনা জানিনা।
জানতে চেয়েছিলাম, আপনি তো ডাক্তার বা কবিরাজ নন। এই চিকিতসা পদ্ধতি কিভাবে আবিষ্কার করলেন?
উত্তর দিয়েছেন, আল্লাহ পাক আমাকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
জিজ্ঞেস করেছিলাম, কিভাবে আল্লাহ জানালেন? স্বপ্নের মাধ্যমে এই কথা জানিয়েছেন নাকি?
আবুল কাশেম উত্তর দিয়েছেন,আল্লাহ কিভাবে আমাকে এই জ্ঞান দিয়েছেন সেটা এই মুহুর্তে আমি বলব না। এই বলে ফোন কেটে দিয়েছেন।
আপনারাও এই নাম্বার দুইটায় ফোন করে আসল কাহিনী জানার চেষ্টা করুন। 01623-391230, 01740-906875
কেরোসিন তেলে যদি কাজ হয়, তাইলে তো আমেরিকা, রাশিয়াকে পেছনে ফেলে সবার আগে আমরাই করোনার কার্যকর ওষুধ আবিষ্কার করে ফেলব। বাংলাদেশে নোবেল পুরষ্কার আসবে কয়েকটা।