ইংরেজিতে লিখে Vitamin । কিন্তু একশো বছর আগে শব্দটি লেখা হতো Vitamine । কি করে Vitamin হলো ? কেন একটি অতিরিক্ত E বাদ দেয়া হলো ?
নিশ্চয়ই কোনো গল্প আছে !
কারণটি ছিল মজার ।
১৯১২ সালে পোল্যান্ডের এক বায়োকেমিস্ট Casimir Funk প্রথম ভিটামিন আবিষ্কার করেন । পোলিশ আসল নাম Kazimierz Funk ।
১৯১০ এর দিকে লন্ডন চলে আসেন । আবার পরবর্তীতে ১৯৪০ এর দিকে আমেরিকায় চলে যান, পরিচিতি পান Casimir Funk নামে ।
লন্ডনের বিখ্যাত Lister Institute এ গবেষণা করে তিনি প্রথম ভিটামিন আবিষ্কার করেন ।
এই প্রসঙ্গে বলে নেই – সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা বেশিরভাগ চিকিৎসক কিংবা বিজ্ঞানীদেরও ধারনা নেই যে আজকের পৃথিবীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যত ভালো ভালো আবিষ্কার এবং সুফল মানুষ ভোগ করছে, তার সিংহভাগ এসেছে পৃথিবীর তিনটি রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে ।
- লন্ডনের লিস্টার ইনস্টিটিউট
- প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউট
- আমেরিকার রকফেলার ইনস্টিটিউট ।
যাইহোক, Casimir Funk ভিটামিন আবিষ্কার করে নাম দেন : Vitamine । ভাঙলে হয় Vital Amine ।
ভিটামিনের রাসায়নিক গঠনে তখন তিনি ভেবেছিলেন এর মধ্যে Amine নামের গ্ৰুপের রাসায়নিক উপাদান আছে ।
Amine হলো একধরনের গ্রুপ যেখানে নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেনের বন্ধনে ক্যেমিক্যালটি তৈরি হয় । যেমন : অ্যামিনো অ্যাসিড ।
তিনি ভেবেছিলেন ভিটামিনের মধ্যে Amine আছে এবং এটি শরীরের জন্যে গুরুপ্তপূর্ণ । নাম দেন Vital Amine বা Life Amine । ল্যাটিন Vita মানে Life ।
কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো যে সব ভিটামিনের মধ্যে Amine গ্ৰুপের কিছু থাকে না । শেষে E বাদ দিয়ে সংশোধন করে বলা হতে লাগলো : Vitamin !
উনিশ শতকে চিকিৎসকরা ভাবতো শরীরের চারটি মূল উপাদান দরকার । প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট এবং মিনারেলস । তখনও ভিটামিনের কথা জানতো না ।
Casimir Funk বিশ শতকের শুরুর দিকে ডাচ বিজ্ঞানী Christiaan Eijkman এর একটি আর্টিক্যাল পড়েন ।
সেখানে Beriberi রোগের কারণ সম্পর্কে Christiaan Eijkman আলোচনা করেন । ১৮৯৭ সালে Eijkman প্রথম বেরিবেরির কারণ হিসাবে খাদ্যকে দায়ী করেন ।
তিনি দেখতে পান যে – যারা সাদা চালের পরিবর্তে বাদামি চাল খায়, তাদের এই রোগ হয় না । পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা জানে যে – এই বেরিবেরির কারণ ভিটামিন B1 বা Thiamine ।
রসায়নবীদ Casimir Funk বাদামি চালের উপর কাজ করে তার রাসায়নিক উপাদানটি পৃথক করে তার নাম দেন : Anti Beriberi !
তারমানে ভিটামিন শব্দটি লেখার আগে ১৯১১ সালে তাকে প্রথম বলা হতো Anti Beriberi ।
তিনি তখন আসলে ভুল করে অন্য একটি ভিটামিন B3 যা Niacin নামে বর্তমানে পরিচিত, সেটি আবিষ্কার করেন । বাদামি চালের ভেতর ভুল করে B3 কে ভাবেন বেরিবেরির উপাদান ।
আসলে সেটি ছিল B1 Thiamine । এমন করে পরবর্তীতে চারটি মূল ভিটামিন তিনি আবিষ্কার করেন । ভিটামিন B1, B3, C এবং D ।
কিন্তু নামগুলো এমন আলফাবেট ছিল না ।
তখন তাদের নাম ছিল বেশ মজার ।
যেমন :
বেরিবেরির কারণ Antiberiberi Vitamin এর অভাব, যা পরে নাম দেয়া হলো ভিটামিন B এর সাবগ্রুপ B1 বা Thiamine ।
স্কার্ভির কারণ Antiscorbut Vitamin এর অভাব, যা পরে নাম দেয়া হলো ভিটামিন C ।
Pellagrar র কারণ Antipellagric Vitamin এর অভাব, যা পরে নাম দেয়া হলো ভিটামিন B3 বা Niacin ।
রিকেটস এর কারণ Antirachitic Vitamin এর অভাব, যা পরে নাম দেয়া হলো ভিটামিন D ।
এ নিয়ে ১৯১২ সালে তিনি একটি পপুলার বই লিখেন : The Vitamines ।
১৯১২ থেকে ১৯৪৮ সালের মধ্যে সকল ধরনের ভিটামিন আবিষ্কার হয় একে একে ।
ভুল করে প্রথম ভিটামিন হিসাবে ভিটামিন B আবিষ্কৃত হলেও পরবর্তীতে ১৯১২ সালেই Gowland Hopkins ভিটামিন A আবিষ্কার করেন, যা পরে ১৯২০ সালে নামকরণ করে A হিসাবে ।
শুরুর দিকে প্রতিটা আবিষ্কারের একটি নাম থাকলেও পরবর্তীতে আবিষ্কারের ক্রম অনুযায়ী ভিটামিন গুলোর নাম A, B, C, D, E এবং K করা হয় ।
B মূলত বেরিবেরি থেকে নেয়া, ভিটামিন K রক্ত জমাট বাঁধায় দরকারি বলে জার্মান koagulation বা ইংরেজি Coagulation থেকে K নেয়া হয়েছে ।
মানুষের শরীরে দরকার ধরা হয় ১৩ টি ভিটামিন । কেউ কেউ Choline নামের একটি উপাদানকেও ভিটামিন গ্ৰুপের অন্তর্ভুক্ত করে ১৪ টি বলে ।
ভিটামিন D ছাড়া আর কোনো ভিটামিন শরীর নিজেকে জোগাতে পারে না । তাই বিভিন্ন খাবার খেয়ে ভিটামিনের প্রয়োজনটি পূরণ করতে হয় ।
ভিটামিনের মূল কাজ শরীরে কোষের ভেতর বিভিন্ন মেটাবলিক কাজে সাহায্য করা ।
তথ্যসূত্র :
1. Harvard Health Publishing : Harvard Medical School
2. Journal of State Medicine
3. The Merck Manual
4. National Institute of Health USA
5. NHS UK
লিখাঃ ডাঃ অপূর্ব চৌধুরী ।
চিকিৎসক এবং লেখক ।
জন্ম বাংলাদেশ, বসবাস ইংল্যান্ড ।