ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে পত্রিকা এবং ফেসবুকে আলোচনা হচ্ছে, এটিকে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় করার ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এই কাজে জড়িত আছেন আমার দুজন শ্রদ্ধভাজন প্রফেসর যাদের সম্পর্কে আমার ভালবাসা এবং প্রার্থনা থাকে।
পাট নিয়ে রিসার্চ করতে গিয়ে এই প্রজেক্টের সূত্রপাত হয়। কিন্তু এর সাথে সায়েন্টিফিক্যালি পাটের কোন সম্পর্ক নেই। এক জাতীয় ব্যাকটেরিয়া যা মানুষের চামড়া বা অন্যান্য অংগে থাকে। একারনে এই ব্যাকটেরিয়াটির নাম দেয়ায় হয়েছে Staphyloccous hominis হিসেবে। পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং করার সময় হয়ত এটি কন্টামিনেশন ( contamination) হিসেবে সিকুয়েন্সিং হয়। এসব বায়ো-ইনফরমেটিক্স এনালাইসিস করলে জানা যায়। এগুলো অনলাইনে সহজে করার ব্যবস্থা আছে।
সেই সিকুয়েন্সের সাথে একজাতীয় এন্টি-মাইক্রোবিয়াল (যা লেন্টিবায়োটিক হিসেবে পরিচিত ১৯৮৮ সাল থেকে) মিল পাওয়া যায়। এগুলো সাধারনত খুব ছোট্ট মলিকিউলার ওয়েটের (less than 5Kda molecular weight) পেটটাইড যা সাধারনত heat-stable ( নির্দিষ্ট উচ্চ তাপমাত্রায় যার কার্যকারিতা নষ্ট হয় না)। ১৯৬০-৭০ সালে লেন্টিবায়োটিক নিয়ে কাজ শুরু হয়।
অনেক আগ থেকে এই টাইপের মলিকিউল নিয়ে যেহেতু গবেষণা হয়েছে তাই ঢাবি টিমের সম্ভবত এটি কাজ করতে আগ্রহ জন্মে। এটি পাটের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
ঢাবির রিসার্চ টিম Staphyloccous hominis কে ৫ মিলিলিটার কালচার টিউবে কালচার করে সেই লেন্টিবায়োটিক (Homicorcin) পিউরিফাই করে। মনে রাখা দরকার নতুন কোন কম্পাউন্ড পিউরিফাই বা আলাদা করা বাংলাদেশের রিসার্চ কালচার প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জিং কাজ।
কিন্তু উন্নত দেশের প্রেক্ষাপটে এসব কাজ তেমন চ্যালেঞ্জিং নয়। সেদিক থেকে বাংলাদেশের জন্য এটি বেসিক রিসার্চে পজিটিভ ডেভেলোপমেন্ট।
ব্যাকটেরিয়া থেকে আলাদা করা লেন্টিবায়োটিকের বায়োকেমিক্যাল এবং এন্টি- মাইক্রোবায়োলজিক্যাল characterization করা হয়। এই পুরো কাজটি করতে সম্ভবত কয়েক বছর লেগেছে যা সম্প্রতি Scientific Report নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশের মিডিয়াতে Nature publisher (সায়েন্টিফিক জার্নাল পাবিলিশিং হাউজ) কে বেশী গুরুত্ব দিয়েছে যা এথিক্যালি জাস্টিফাইড নয়। Nature publisher বেশ কিছু জার্নাল পাবলিশ করে এবং তাদের রিপুটেশন হাই। কিন্তু মনে রাখতে হবে এটি Nature জার্নালে পাবলিকেশন হয়নি।
নেচার জার্নালে কোন কিছু পাবলিকেশন হলে বিশ্বমিডিয়ার আলোচনায় আসে যদি এটি এন্টিবায়োটিক বা কোন গুরুত্বপূর্ন ড্রাগ ডেভেলোপমেন্ট বা ডিককভারী হয়। ন্যাচারে প্রকাশিত সব পাবলিকেশন নিয়ে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় হয় না।
বেসিক রিসার্চ হিসেবে এটি ভাল এবং ইণ্টারেস্টিং কাজ। ঢাবির মত বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে এই টাইপের কাজ নিয়মিত পাবলিকেশন হওয়ার কথা। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশে রিসার্চ কালচার নেই। যতটুকু আছে তা বিশ্ব লেভেলে যাওয়ার মত নয়।
আমরা বাংলাদেশীরা নিজেদের নিয়ে হীনমন্নতায় ভুগি। তাই স্বাভাবিক বিষয় নিয়ে খুব বেশী ইমোশন জাগায়, বিশ্ব জয় করার প্রবনতা কাজ করে। এই স্পিরিট ভাল যদি তা আমরা কাজে রূপান্তরিত করতে পারি।
দেশের রিসার্চ কালচার গড়ে তুলতে এবং ইয়াংদের মোটিভেইট করতে ঢাবির রিসার্চ টিমের কাজ পত্রিকায় আলোচনা হওয়া উচিত। কিন্তু মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত রিপোর্টিং (#বিশ্বব্যাপী_তোলপাড়) প্রফেসরদের কাজটিকে ম্লান করে দিতে পারে।
তাই সায়েন্টিফিক রিপোর্টিং এর ক্ষেত্রে যারা পেপার পাবলিকেশন করেন তারা সেই রিপোর্ট তৈরী করে দিলে জার্নালিস্টরাও শিখতে পারবে কিভাবে রিপোর্টিং করতে হয়।
সায়েন্স/হেলথ জার্নালিজম নিয়ে দেশে কাজ করার অনেক স্কোপ আছে। সাংবাদিক ভাইদের কেউ কেউ এ বিষয়ে ফোকাস করা জরুরী।
লেখকঃ মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন
মলিকুলার বায়োলজি গবেষক
শিক্ষক, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভারসিটি
এ সংক্রান্ত সংবাদ : ডেইলি বাংলাদেশ