কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের ইনফ্রারেড তরঙ্গের ক্যামেরা দ্বারা সংগৃহীত ছবি দেখে ঘূর্ণিঝড়ের বৈশিষ্ট্য ও গতি-প্রকৃতি নির্ণয় করা
নিচের চিত্রটি কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের ইনফ্রারেড তরঙ্গের ক্যামেরা দ্বারা সংগৃহীত। ইনফ্রারেড তরঙ্গের ক্যামেরা দ্বারা কোন বস্তুর তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায়।
ইনফ্রারেড তরঙ্গের থার্মোমিটার দ্বারা যেমন করে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয় ঠিক একই ভাবে ইনফ্রারেড তরঙ্গের ক্যামেরা দ্বারা নিচে সংযুক্ত নিম্নচাপের ছবিটি তোলা হয়েছে।
ইনফ্রারেড চিত্র হতে মেঘে অবস্হিত জ্বলিয় বাস্পের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়ে থাকে যে তাপমাত্রা দেখে মেঘের উচ্চতা পরিমাপ করা যায়। যে মেঘ যত উঁচু সেই মেঘের সর্বোচ্চ অংশের তাপমাত্রা তত কম হবে।
যে স্থানে মেঘের তাপমাত্রা যত বেশি ঋনাত্ন সেই স্থানে মেঘের উচ্চতা তত বেশি। মেঘের তাপমাত্রা যদি মাইনাস ৮০ থেকে মাইনাস ৯০ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয় তবে সেই মেঘের উচ্চতা ১৫ থেকে ১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। মেঘের তাপমাত্রার ছবি দেখে বুঝা যায় ঘূর্ণিঝড়টির কোন দিকে শক্তশালি হচ্ছে ও কোন দিকে দুর্বল হচ্ছে।
একই ভাবে মেঘের তাপমাত্রা দেখে নির্ধারণ করা হয় এই ঘূর্ণিঝড় থেকে কি পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে সমুদ্রের কোন স্থানে। মেঘের তাপমাত্রার ছবি দেখে বোঝা যায় মেঘের মধ্যে ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়েছে কি না? মেঘের তাপমাত্রার ছবি দেখে বোঝা যায় ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে কোন অবস্থায় রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি সংগঠিত হচ্ছে কি না?
নিছের ছবিতে লাল রং এর ঘূর্ণ্যমান তীর-চিহ্ন নির্দেশ করতেছে নিম্নচাপের স্থানে বাতাস কোন দিকে ঘুঁটেছে (উত্তর গোলার্ধে ঘূর্ণিঝড় এর সময় বাতাস ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘুরে)।
স্ক্রু -ড্রাইভার যখন ঘড়ির কাটার বিপরীতে ঘুরানো হয় তখন যেমন স্ক্রু উপরের দিকে বের হয়ে আসে কোন জায়গা থেকে ঠিক একই ভাবে সমুদ্রের উপর কোন স্থানে বায়ু যখন গড়ির কা টার বিপরীত দিকে ঘুরে তখন সেই স্থানের সমুদ্রের পানি জ্বলিয় বাষ্প আকারে আকাশে উড়ে গিয়ে মেঘের সৃষ্টি করে।
নিচের ছবিতে কালো লাইনের ভিতরে বিভিন্ন তাপমাত্রা/উচ্চতার অনেক মেঘের অবস্থা দেখা যাচ্ছে যা পূর্ব পাশে অনুপস্থিত। এই ছবি নির্দেশ করতেছে যে নিম্নচাপটি পশ্চিমদিকে শক্তিশালী হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের এই অংশটিকে বলা হয়ে থাকে আউটার ব্যান্ড। ঘূর্ণিঝড় স্থল ভাগে আঘাত করার সময় এই অংশটিই প্রথমে স্থল ভাগে আঘাত করে।
নিচের ছবিতে বিভিন্ন রং এর তীর চিহ্ন নিম্নলিখিত মেঘের নির্দেশ করতেছে:
১) ছবিতে সুরমা রং এর তীর চিহ্নিত এলাকার মেঘের তাপমাত্রা মাইনাস ৯০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর কাছাকাছি (সবচেয়ে উঁচু (প্রায় ১৬ থেকে ১৮ কিলোমিটার) মেঘের অবস্থান নির্দেশ করতেছে)
২) হলুদ রং এর তীর চিহ্নিত মেঘের তাপমাত্রা মাইনাস ৮০ থেকে ৮৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস (অত্যন্ত উঁচু (প্রায় ১৫-১৬ কিলোমিটার) মেঘের অবস্থান নির্দেশ করতেছে)
৩) লাল রং এর তীর চিহ্নিত মেঘের তাপমাত্রা মাইনাস ৭০ থেকে ৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াস প্রায় ১২-১৪ কিলোমিটার উচ্চতার মেঘের অবস্থান নির্দেশ করতেছে)
৪) সবুজ রং এর তীর চিহ্নিত মেঘের তাপমাত্রা মাইনাস ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার উচ্চতার মেঘের অবস্থান নির্দেশ করতেছে)
৫) গাড় নীল রং এর তীর চিহ্নিত মেঘের তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ থেকে ৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াস প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার উচ্চতার মেঘের অবস্থান নির্দেশ করতেছে)
৬) হালকা নীল রং এর তীর চিহ্নিত মেঘের তাপমাত্রা মাইনাস ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার উচ্চতার মেঘের অবস্থান নির্দেশ করতেছে
৭) রুপালি রং (হালকা রুপালি থেকে উজ্জ্বল) এর তীর চিহ্নিত মেঘের তাপমাত্রা মাইনাস ৩৫ থেকে ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস প্রায় ৬-৭ কিলোমিটার উচ্চতার মেঘের অবস্থান নির্দেশ করতেছে
৮) কাল রং এর তীর চিহ্নিত মেঘের তাপমাত্রা মাইনাস ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার উচ্চতার (সবচেয়ে নিচু) মেঘের অবস্থান নির্দেশ করতেছে
বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপরে উল্লেখিত মেঘের তাপমাত্রার সাপেক্ষে মেগের উচ্চতাগুলো আপেক্ষিক। এই উচ্চতা কিছুটা উঠা-নামা করে বিভিন্ন স্থানে।