ফুটবলার নেইমারের দেশ ব্রাজিলে ৩১ লক্ষ মানুষ করোনা পজিটিভি। ইতিমধ্যে মারা গেছে ১ লাখ করোনা রোগী।
ওদেশের মোট জনসংখ্যা ২১ কোটি। করোনার টেস্ট করা হয়েছে মাত্র সোয়া এক কোটির । এর মধ্যে ৩১ লাখই করোনা আক্রান্ত। প্রতি ৪ জনকে টেস্ট করা হলে এক জনকেই পাওয়া যাচ্ছে পজিটিভ।
অনেকে ধারনা করছেন, অবস্থা আসলে আরো খারাপ । মিডিয়ায় আসল খবর জানানো হচ্ছেনা। মিডিয়ায় কেবল ৩১ লাখ রোগী আর ১ লাখ নিহতের কথাই বলছে , কিন্তু রোগী আরো অনেক অনেক বেশি।
ব্রাজিলের অবস্থা এত খারাপ হওয়ার পিছনে দায়ী করা হচ্ছে দেশটির প্রেসিডেন্ট Jair Bolsonaro কে। এই জায়ের বলসোনারো করোনা ভাইরাসকে একটুও গুরুত্ব দেয়নি।
ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে যখন অল্প অল্প করে তার দেশে করোনার প্রকপ শুরু হয়েছিল, তখন সে বলেছিল, এই কভিড কোনো ভয়াবহ রোগ নয়, সামান্য সর্দি জ্বর (ফ্লু) এর মত , একে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
আমেরিকা সহ অন্যান দেশ যখন লক ডাউন করে দিচ্ছিল তাদের বড় বড় শহর , ব্রাজিল তখন সব কিছু খোলা রেখেছিল। সবাইকে অবাধে চলাচল করতে দিয়েছিল ।
জুন মাসের ৭ তারিখে , ব্রাজিল যখন করোনার স্কোরবোর্ডে সেকেন্ড পজিশনে উঠে আসল , তখন রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে করোনার বুলেটিন দেওয়া বন্ধ করে দিল।
প্রতিদিন কত জন মারা গেছে, কত জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে , কতজন কে টেস্ট করা হল, এই নিউজ জানানো পুরা অফ ।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হল, করোনার নিউজ টেলিকাস্ট করা হলে দেশের জনগন মানসিকভাবে ভেংগে পড়ে।
জনগনকে চাংগা রাখার জন্য টিভিতে করোনার নিউজ না দেখিয়ে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান বেশি বেশি দেখানো হতে লাগল।
(সোর্সঃ)
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নিজের চোখ বন্ধ করে করোনার প্রলয় ঠেকাতে চেয়েছিলেন। সেটা সম্ভব হয়নি। ওয়ার্ল্ড ও মিটার কিংবা জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি প্রথমে কয়েকদিন ধরে ব্রাজিলের কোন আপডেট পাচ্ছিল না।
পরে ব্রাজিলের কয়েকটা বেসরকারী সংবাদ সংস্থা করোনার আপডেট বাইরে সরবরাহ করা শুরু করল।
ওয়ার্ল্ড ও মিটার সেখান থেকে তথ্য নিয়ে তাদের ওয়েবসাইটে দিল। দেখা গেল, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার বন্ধ থাকলেও , করোনা হু হু করে বাড়ছেই।
মরুঝড়ের সময় উট বা মরুভূমির অন্যান্য প্রাণীরা বালিতে মাথা গুজে থাকে। এর ফলে প্রলয় যেমন বন্ধ হয়না, তেমনি জায়ের বলসোনারো চুপ করে থাকলেও করোনার প্রলয় কিন্তু থামেনি ।
কিছুদিন পরে বহির্বিশ্বের সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার আবার ডেইলি আপডেট দেওয়া শুরু করল, কিন্তু সেই আপডেটে মোট সংখ্যা বলা হত না।
মানে , ধরুন, ব্রিফিং এ বলা হল, আজ মারা গেছে দুই হাজার (কিন্তু, গত ৩ মাসে এখন পর্যন্ত মোট মারা গেছে ৭০ হাজার –এইরকম কথা বলা হল না।
সরকারী করোনা ওয়েবসাইতেও পুরনো সব রেকর্ড মুছে দেওয়া হল। অল্প কিছু ডেইলি আপডেট ওয়েবসাইটে দেখানো হতে লাগল শুধু।
সরকারি ভাবে যে সংখ্যা বলা হচ্ছে, সেই সংখ্যা নিয়েও বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ প্রকাশ করছেন। ধারনা করা হচ্ছে, সরকার অনেক কমিয়ে কমিয়ে সংখ্যা বলছে। প্রকৃত করোনা রোগীর সংখ্যা ব্রাজিলে আরো অনেক বেশি।
দেশের এই অবস্থাতেও বলসনারো ব্রাজিলের কিছুই বন্ধ করতে রাজি হননি। ”করোনায় কিছু মানুষ মরলে মরবে ,কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। আমি দুঃখিত। এটাই জীবন।
রোড এক্সিডেন্টে মৃত্যুর জন্য তো আপনি আর গাড়ির কারখানা বন্ধ রাখতে পারেন না। সুতরাং, করোনায় ব্রাজিলে যত মানুষই মরুক না কেন, কলকারখানা বন্ধ রাখা যাবেনা”—এটাই ছিল তার কথা।
(সোর্স)
দেশী -বিদেশী চাপে, এবং বিভিন্ন রাজ্যের আঞ্চলিক গভর্নরদের ক্ষমতার কারনে একসময়য় তিনি দেশের বিভিন্ন অংশে লকডাউন দিতে বাধ্য হয়েছেন । তবে লকডাউন বিরোধী প্রচুর মিটিং মিছিল হয়েছে দেশে।
মজার ব্যাপার হল, সরকারী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরাই এই লকডাউন বিরোধী মিছিল করেছে।
ঘটনা কি ক্লিয়ার ? বলসোনারো নিজেই তার দলের নেতা কর্মীদের বলেছেন, তোরা রাস্তায় নেমে মিছিল কর, যেন আমি লকডাউন তুলে নিতে পারি !
এই সময় প্রেসিডেন্ট বলসোনারো নিজেই মিছিল মিটিং সেমিনারে জয়েন করেছেন । সোশাল ডিসটান্স তো মানেন ই নি , এমনকি নিজে মুখে মাস্ক পর্যন্ত পরেন নি।
বিস্ময়কর হলেও সত্য, তিনি করোনা উপদ্রুত এলাকা সহ সব জায়গায় মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়িয়েছেন।
২৩শে জুন ব্রাজিলের হাইকোর্ট আদেশ জারি করে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট যেন অবশ্যি মাস্ক পরে ঘরাঘুরি করেন। হাইকোর্টের এই আদেশের পরেও বলসোনারো মাস্ক না পরেই ঘুরে বেড়াতেন। এতই তার ক্ষমতা !
(সোর্স)
বাঙলা একটা প্রবাদ আছে, চোরের ৭ দিন আর গৃহস্থের ১ দিন। করোনা ভাইরাস এক শুভদিনে আক্রমণ করল প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারো কে। তারিখটা ছিল আষাঢ়ের উনিশে ,সরি ,জুলাই মাসের ৭ তারিখে 🙂 ।
(সোর্স)
করোনা পজিটিভ হওয়ার পরেও তার উল্টাপাল্টা আচরন কমেনি। জুলাই মাসের ৮ তারিখে তিনি করোনা পজিটিভ অবস্থাতেই সাংবাদিকদের সামনে এসে মুখোমুখি কথা বলেছিলেন।
সেদিন অবশ্য মাস্ক পরেছিলেন, কিন্তু কথা বলার এক পর্যায়ে মাস্ক খুলে ফেলে বক্তব্য দেওয়া শুরু করে।
(সোর্স)
দেশের ডাক্তারদের পরামর্শ না শুনে তিনি নিজ দায়িত্বে হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইনিন খাওয়া শুরু করলেন।
তার দাবি, এটা নাকি করোনার ওষুধ। কোনো ডাক্তার অবশ্য করোনার ওষুধ হিসাবে এটাকে স্বীকৃতি দেয়নি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোথা থেকে শুনে যেন এই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনিন নিয়ে মাতামাতি করতেছিল, সেই কথা শুনে বলসোনারো ও হাইড্রক্সি ক্লোরো কুইনিন খাওয়া শুরু করেছে ।
করোনা আসার আগে থেকেই এই প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন কারনে সমালোচিত ছিলেন। ছোট একটা ঘটনা বলি। তিনি পরিবেশের চেয়ে উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দেন।
বাংলাদেশে যেমন সুন্দরবন, ব্রাজিলে তেমন আমাজন নামে একটা বড় বন আছে। সেই বন কেটে কেটে তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বসাতে চান।
পরিবেশবাদী গ্রুপগুলো তার এই কাজে বাধা দিচ্ছিল। তিনি তাদেরকে হুমকি ধামকি দিয়ে, জেলে ঢুকিয়ে,গুম করে আন্দোলন ঠান্ডা করে দিয়েছেন।
ওদের দেশের একজন বড় বিজ্ঞানী Sidarta Ribeiro বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছিলেন যে আমাজন জঙ্গল ধ্বংস হলে কিভাবে পরিবেশের উপর ক্ষতি হবে। প্রেসিডেন্ট ওই বিজ্ঞানীকে চাকরি থেকে ছাটাই করে দিয়েছেন।
সর্বশেষ, গত বছরের শেষের দিকে আমাজন জংগলের স্থানীয় অধিবাসীদের সাহায্যে জংগলের এক বিরাট অংশে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন, যেন জংগল পুড়ে যায়। সেই পোড়া জায়গায় উন্নয়ন কর্মকান্ড করা যাবে।
এই হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারো, যার দেশ আপাতত করোনা আক্রান্ত দেশের তালিকায় দুই নাম্বারে রয়েছে। তার পাগলামির কারনে দেশের লাখ লাখ মানুষ ভুগতেছে এখন ।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন কোভিডিয়ট কে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লেখার চেষ্টা করছিলাম।
যে লোকটা কোভিড সংক্রান্ত বিধি নিষেধ মানে না, এবং অন্যকেও মিসগাইড করে,তাকেই কভিডিয়ট বলে। টুইটারে কিছুদিন ধরে শব্দটা পপুলার হচ্ছে। Covid + idiot= Covidiot.
তবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট কে বোধ হয় কোভিডিয়ট বললে কম বলা হয়ে যায়, তার জন্য আরো সুন্দর কোনো টাইটেল দরকার। এনি সাজেশন?
পর্ব ১ – জার্মানিতে লক ডাউন বিরোধী মিছিল
পর্ব ২- মায়ানমারের পাদ্রী রেভারেন্ড ডেভিড লাহ
পর্ব ৩- ভারতের মন্ত্রী
পর্ব ৫- কোরিয়া আর অস্ট্রেলিয়ার পেশেন্ট ৩১
পর্ব ৬- করোনা ঠেকাতে ভারতে নরবলি