গতপর্বে প্রোটিনের চৌদ্দ-গুষ্টির জন্ম আর জীবন নিয়ে লিখেছিলাম। তাহলে এবার বাকি থাকে নিউক্লিক এসিড। এইবারের পর্ব নিউক্লিক এসিড নিয়ে, আজকের উপপর্ব নিউক্লিক এসিড কী জিনিস, তা নিয়ে।
নিউক্লিক এসিড হলো বায়োপলিমার, বৃহৎ জৈব-অণু, যা পরিচিত প্রত্যেক প্রাণের রূপের জন্য অতি-অপরিহার্য।নিউক্লিক এসিড হলো ডিএনএ আর আরএনএ এর সাধারণ নাম। এরা তৈরি নিউক্লিওটাইড দিয়ে, যা তিনটা উপাদানের তৈরি মনোমার বিশেষ। একটা পাঁচ কার্বন সুগার বা পেন্টোজ সুগার, একটা ফসফেট গ্রুপ ও একটা নাইট্রোজেনাস বেস বা পিউরিন/পাইরিমিডিন নিউক্লিওবেস।
যদি সুগারটা হয় রাইবোজ সুগার, তাহলে পলিমারটা হলো আরএনএ, রাইবোনিউক্লিক এসিড। আর যদি সুগারটা রাইবোজ হতে জাত বা উৎপন্ন হয়, অর্থাৎ ডিঅক্সিরাইবোজ (2′-deoxyribose)হয়, তাহলে পলিমারটা হলো ডিএনএ, ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড।এখানে পার্থক্য হলো শুধু সুগারের 2′ কার্বনের সাথে যুক্ত একটা হাইড্রক্সিল গ্রুপের,এটা ডিএনএ তে থাকে, আরএনএ তে থাকেনা ।
নিউক্লিক এসিডের সুগার আর ফসফেট একে অপরের সাথে পরিবর্তনশীল চেইনের মাধ্যমে ফসফোডায়েস্টার বন্ধনের সাহায্যে যুক্ত থাকে,যাকে সুগার-ফসফেট ব্যাকবোন বলে। প্রথম সুগারের 5′-হাইড্রক্সিল গ্রুপ পরবর্তীটার 3′-হাইড্রক্সিল গ্রুপের সাথে যুক্ত থাকে।
এটা নিউক্লিক এসিডকে একটা অভিমুখ প্রদান করে।নিউক্লিক এসিডের এই শেষমাথা গুলোকেই বলে 5′-end আর 3′-end। আর নিউক্লিওবেসগুলো সুগারের সাথে যুক্ত হয় এন-গ্লাইকোসাইডিক বন্ধনের সাহায্যে, যার মধ্যে নিউক্লিওবেস রিং নাইট্রোজেন ও পেন্টোজ সুগার রিং এর 1′ কার্বন যুক্ত থাকে, (পাইরিমিডিনের জনহ এন-১ ও পিউরিনের জন্য এন-৯)।নিউক্লিওবেস ও সুগার নিয়ে গঠিত অংশকে বলে নিউক্লিওসাইড।
জৈব অণুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলা যায় নিউক্লিক এসিডকে। কোষের মধ্যে এরা তথ্যের সংরক্ষণ, প্রতিলিপি তৈরি আর সৃষ্টিতে কাজ করে।কোষের নিউক্লিক এসিড তথ্যকে পরবর্তী প্রজন্মে নিয়ে যায়। এই তথ্য এনকোডেড থাকে নিউক্লিক এসিডের সিকোয়েন্স আকারে বা ক্রম আকারে।
নিউক্লিওটাইডের মনোমারগুলো যুক্ত হয়ে সুতা মানে পলিমার গঠন করে, যার মেরুদণ্ড হয় হেলিকাল। আরএনএ এর ক্ষেত্রে একটা ও ডিএনএ এর ক্ষেত্রে দুইটা ব্যাকবোন থাকে।এদের থাকে নিউক্লিওবেস যারা ব্যাকবোনের সাথে যুক্ত থাকে ক্রমানুসারে।
এরা হলো এডেনিন, সাইটোসিন, গুয়ানিন, থায়ামিন ও ইউরাসিল। এদেরকে যথাক্রমে A, C, G, T, U দ্বারা প্রকাশ করা হয়।A আর G হলো পিউরিন আর C,T,U পাইরিমিডিন।থায়ামিন শুধু ডিএনএ তে ও ইউরাসিল শুধু আরএনএ তে থাকে। প্রোটিন সিন্থেসিস নামক প্রক্রিয়ায় এমিনো এসিড ব্যবহার করে ডিএনএ এর নিউক্লিওবেস-জোড়ার ক্রম এনকোডেড জিন(gene!) রূপী তথ্যকে সংরক্ষণ ও পরিবহন করে।আরএনএ এর বেস-জোড়ার ক্রম নতুন প্রোটিন উৎপাদনের কাজ করে।
নিউক্লিক এসিড দৈর্ঘ্যে ২১ টা নিউক্লিওটাইড থেকে শুরু করে ২৪৭ মিলিয়ন বেস-পেয়ার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। সাধারণত ডিএনএ দ্বিসূত্রক ও আরএনএ একসূত্রক হলেও কিছু কিছু ভাইরাসে দ্বিসূত্রক আরএনএ ও একসূত্রক ডিএনএ পাওয়া যায়। আবার কোথাও তিন অথবা চার সূত্রক নিউক্লিক এসিডও গঠন হতে পারে।
আরএনএ এর পূর্ণরূপ হলো রাইবোনিউক্লিক এসিড। এটা এক ধরনের পলিমার জাতীয় অণু যা জিনের কোডিং,ডিকোডিং, ব্যবস্থাপনা ও গঠন পরিচালনার জন্য অপরিহার্য।আরএনএ তে নিউক্লিওটাইডের একটা চেইন থাকে, এতে ব্যাকবোন থাকে একটা।
আরএনএ নিজের মধ্যেই গুটিয়ে-ভাজ হয়ে নানান আকৃতি ধারণ করে। কোষীয় জীবেরা এম আরএনএ (মেসেঞ্জার আরএনএ /সংবাদবাহক আরএনএ) ব্যাবহার করে জেনেটিক তথ্য বহন করার কাজ করে যা নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষণ করে থাকে।অনেক ভাইরাস আছে যেগুলো আরএনএ জিনোম ব্যাবহার করে তাদের জেনেটিক তথ্য এনকোড করে।
কিছু আরএনএ অণু কোষীয় সংকেত অনুভব করে, আর তার সাথে যোগাযোগ করে থাকে। আবার অনেকে জিন গঠন নিয়ন্ত্রণ করে ও বিভিন্ন জৈব বিক্রিয়ায় প্রভাবকের কাজ করে থাকে। আরএনএ এর সবচেয়ে মুখ্য কাজগুলোর একটা হলো প্রোটিন সংশ্লেষণ, একটা সার্বিক প্রক্রিয়া যেখানে আরএনএ রাইবোজোমের সাথে প্রোটিন সংশ্লেষণের প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় টি আরএনএ (ট্রান্সফার/বহনকারী আরএনএ), এরা এমিনো এসিডকে রাইবোজোমের ওপর নিয়ে যায় আর আর আরএনএ(রাইবোজোমাল/রাইবোজোমীয় আরএনএ), এরা এমিনো এসিডকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে যুক্ত করে বিশেষ বিশেষ প্রোটিন তৈরি করে।
আরএনএ এর প্রতিটা নিউক্লিওটাইডে একটা রাইবোজ সুগার থাকে যেখানে 1′ – 5′ পর্যন্ত কার্বন থাকে। A,G,C,U বেস গুলো 1′ কার্বনের সাথে যুক্ত থাকে। আর একটা ফসফেট গ্রুপ প্রথম রাইবোজের 3′ ও পরেরটার 5′ কার্বনের সাথে যুক্ত থাকে। ফসফেট গ্রুপ গুলোর ঋণাত্মক আধান থাকে, তাই আরএনএও একটা আহিত পলিআয়ন।
বেসগুলোর A-G ও C-T এর মাঝে হাইড্রোজেন বন্ড থাকে। আরএনএ এর রাইবোজ সুগার অণুর 2′ কার্বনে একটা হাইড্রক্সিল গ্রুপ যুক্ত থাকে, এর ফলে হেলিক্সটা এ-ফর্ম জ্যামিতিক আকৃতি ধারণ করে।এই 2’এ হাইড্রক্সিল গ্রুপ থাকার আরেকটা ফলাফল হলো, আরএনএ এর নমনীয় অঞ্চলগুলতে এটা রাসায়নিকভাবে তৎসংলগ্ন ফসফোডায়েস্টার বন্ডকে আক্রমণ করে ব্যাকবোন থেকে বিচ্যুত করতে পারে।আরএনএতে মাত্র ৪ টা বেস থাকলেও এই বেসগুলো আর সংযুক্ত সুগারগুলোকে নানানভাবে বিশেষায়িত করা যায়।
যেমন-Pseudouridine, এখানে ইউরাসিল আর রাইবোজের মাঝের বন্ধনটা C-N এর বদলে C-C হয়।তাছাড়াও রাইবোথাইমিডিন, হাইপোক্স্যান্থিন আছে।হাইপোক্স্যান্থিন এ একটা ডিমিনেটেড এডেনিন বেস থাকে যার নিউক্লিওসাইডকে বলে ইনোসিন।কোনো যৌগ বা এমিনো এসিড থেকে একটা এমিনো গ্রুপ সরিয়ে নেয়াকে বলে ডিমিনেশন।প্রাকৃতিকভাবে প্রায় ১০০ এর বেশি বিশেষায়িত এমন নিউক্লিওসাইড আছে।আরএনএ সংশ্লেষণটা প্রভাবিত হয় “আরএনএ পলিমারেজ” নামক একটা এনজাইমের মাধ্যমে।এখানে ডিএনএ কে টেমপ্লেট এর মতো ব্যাবহার করা হয়, এই প্রক্রিয়ার নাম ট্রান্সক্রিপশন।
আরএনএ নানা ধরনের হয়, mRNA, rRNA,tRNA এর কথা আগেই বলেছি।এমআরএনএ এর কোডিং সিকোয়েন্স অনুযায়ী উৎপাদিত প্রোটিন এর মধ্যে এমিনো এসিডের ক্রম হয়।অনেক আরএনএ আবার প্রোটিন এর জন্য কোডিং এর কাজ করেনা।এদেরকে আবার বলে ncRNA (ননকোডিং আরএনএ)।এরা নিজেদের জিন দ্বারা নিজেরাই এনকোডেড হতে পারে। এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলো টিআরএনএ ও আরআরএনএ।
কিছু আরএনএ আবার বিভিন্ন বিক্রিয়ায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে,যেমন অন্য আরএনএ অণুদের কাটা ও সংযুক্ত করা এবং রাইবোজোমের পেপ্টাইড বন্ড গঠনে সাহায্য করা, এদেরকে আবার রাইবোযাইম বলে।বিভিন্ন ভাইরাসে দ্বি-সূত্রক আরএনএ দেখা যায়, এদেরকে dsRNA বলে।(ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আরএনএ)।
আমাদের মাইটোকন্ড্রিয়ায় বৃত্তাকার আরএনএ ও দেখা যায়।এদেরকে circRNA বলে।এবায়োজেনেসিস, যেটা আমার সিরিজের মূল টপিক, সেখানে একটা হাইপোথিসিস আছে, যাকে বলে “আরএনএ ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিস”।এখানে বলা হয় প্রাণের উপাদানগুলোর মধ্যে সবার আগে গঠিত হয়েছে আরএনএ।
ডিএনএ, পূর্ণরূপ ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড।প্রত্যেক প্রোক্যারিওটা আর ইউক্যারিওটা রাজ্যের জীবদের কোষে আর বিভিন্ন ভাইরাসের দেহে ডিএনএ থাকে। ডিএনএ তথ্য কোড করে তা পরবর্তী প্রজন্মে নিয়ে যাওয়ার বাহক হিসেবে কাজ করে। ডিএনএ এর আকৃতি হলো ডবল-হেলিক্স পলিমার।
অর্থাৎ দুইটা স্ট্র্যান্ড পরস্পরের সাথে স্পাইরালের মতো পেচানো থাকে। প্রত্যেক স্ট্র্যান্ড গঠিত হয় মনোমার নিউক্লিওটাইডের লম্বা চেইন দ্বারা। নিউক্লিওটাইড গঠিত হয় একটা ডিঅক্সিরাইবোজ সুগার অণুর সাথে একটা ফসফেট গ্রুপ আর A,G,C,T এর যেকোনো একটা যুক্ত হয়ে। এগুলো কি জিনিস তা আগের দুই উপপর্বে বলেছিলাম।নিউক্লিওটাইডগুলো যুক্ত হয় প্রথম নিউক্লিওটাইডের ফসফেট আর পরেরটার সুগারের মধ্যে সমযোজী বন্ধন দ্বারা। এতে একটা সুগার-ফসফেট ব্যাকবোন তৈরি হয়, যেটার ওপর নাইট্রোজেনাস বেসগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। দুইটা স্ট্র্যান্ড পরস্পরের সাথে হাইড্রোজেন বন্ডের দ্বারা যুক্ত হয়।
আর শুধুমাত্র A-T & C-G বন্ডই হবে।ডিএনএ এর আকৃতি ও গঠন অনেক সুস্থির, ফলে এটা নতুন ডিএনএ অণু তৈরির ক্ষেত্রে ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।পাশাপাশি, সম্পর্কিত কোনো আরএনএ অণুর উৎপাদনেও কাজ করে থাকে।ডিএনএ এর একটা নির্দিষ্ট অংশ, যেটা কোষে নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষণের জন্য কোডিং করে, তাকে বলে জিন।ডিএনএ রেপ্লিকেট বা প্রতিলিপি তৈরি হওয়ার জন্য ডিএনএ এর দুইটা স্ট্র্যান্ড পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যায়, প্রত্যেকটাই নতুন ডিএনএ এর ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।নতুন স্ট্র্যান্ড গুলো যুক্ত হওয়ার সময় বেসগুলো আগের ডিএনএ এর ক্রমই অনুসরণ করে।
এভাবে নতুন দুইটা ডিএনএ তৈরি হয় যেগুলোতে পুরোনো একটা আর নতুন একটা স্ট্র্যান্ড থাকে।এই সেমিকনজারভেটিভ বা আধা-রক্ষণশীল প্রতিলিপি তৈরিটাই জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের বংশানুক্রমে যে সুস্থির উত্তরাধিকার হয়, তার কারণ।কোষের ডিএনএ গুলো ঘন প্রোটিন-ডিএনএ মিশ্রণের মধ্যে সুসংগঠিত ভাবে থাকে, যাকে আমরা বলি ক্রোমোজোম। এই ক্রোমোজোমের ক্ষুদ্র অংশ হলো ক্রোমাটিন। এখানে, একটা প্রোটিনের দলা বা গোল্লা এর চারপাশে ডিএনএ পূর্ণ দুইবার পেচানো থাকে, একে বলে নিউক্লিওজোম।
ইউক্যারিওটদের ক্ষেত্রে এই প্রোটিনটা হলো হিস্টোন, প্রোক্যারিওটদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন থাকে।এই গাঠনিক বিক্রিয়া বা প্রোটিনের চারপাশে ডিএনএ এর পেচানোর ঘটনাটা সম্ভব হয় হিস্টোনের কিছু অবশিষ্টাংশ বা বর্ধিতাংশ এর কারণে, এটা ডিএনএ এর অম্লীয় সুগার-ফসফেট ব্যাকবোনের সাথে আয়নিক বন্ড তৈরি করে।যদিও ডিএনএ এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় সকল ঘটনায়ই A-T &C-G বেসগুলোর পরপর ক্রম অনুসারে কোডেড তথ্যের প্রভাব দেখা যায়, এই নিউক্লিওজোমের ঘটনাটা ডিএনএ এর বেসগুলোর ক্রম দ্বারা প্রভাবিত নয়।
বর্ধিতাংশগুলোর কেমিক্যাল মোডিফিকেশন এর মধ্যে আছে মিথাইলেশন, ফসফোরাইলেশন, এসিটাইলেশন।ইউক্যারিওটদের মধ্যে ক্রোমোজোম নিউক্লিয়াসে থাকে। যদিও এদের মাইটোকন্ড্রিয়া আর ক্লোরোপ্লাস্টে ডিএনএ পাওয়া যায়। প্রোক্যারিওটদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত না, তাই ডিএনএটা পাওয়া যায় সাইটোপ্লাজমের মধ্যে একটা সিংগেল বৃত্তাকার ক্রোমোজোম আকারে।কিছু প্রোক্যারিওট, যেমন-ব্যাক্টেরিয়া, আর কিছু ইউক্যারিওটদের এক্সট্রা-ক্রোমোজোমাল ডিএনএ থাকে, যাকে বলে প্লাজমিড।
প্লাজমিডরা স্বশাসিত, নিজেরাই নিজেদের রেপ্লিকেট করে। রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ টেকনোলজিতে জিন অভিব্যক্তি বুঝতে প্লাজমিড ব্যাবহৃত হয়।রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ বলতে বুঝায় কৃত্রিমভাবে বিভিন্ন জীবদেহ থেকে ডিএনএ এর উপাদান এনে নতুন ধরনের ডিএনএ বানানো। ডিএনএ কে বলা হয় জীবনের ব্লু-প্রিন্ট বা নীল-নকশা!
খুব আলোচিত প্রশ্ন হলো,পৃথিবীতে প্রথম কোনটা গঠিত হয়েছিল, ডিএনএ নাকি আরএনএ? পৃথিবীতে প্রথম ডিএনএ গঠিত হয়েছিল, এই হাইপোথিসিসের নাম “ডিএনএ-ওয়ার্ল্ড”, আর পৃথিবীতে প্রথম আরএনএ গঠিত হয়েছিল, এইটার নাম “আরএনএ-ওয়ার্ল্ড”।
আবার, কোন ধরনের ডিএনএ প্রথমে বা কোন ধরনের আরএনএ প্রথমে গঠিত, তা নিয়েও নানান হাইপোথিসিস আছে। আমরা অত গভীরে যাবো না।আজকে জানবো যে আরএনএ-ওয়ার্ল্ড কীভাবে সম্ভব। আসলে যেটাই আগে গঠিত হোক, আমাদের উদ্দেশ্য প্রাণ তৈরি করা।সেটা হলেই হলো। জড় থেকে কীভাবে জীব এলো, সেটা আমার ফোকাস পয়েন্ট। কোনটা আগে বা কোনটা পরে, সেটা ম্যাটার না।
নিউক্লিক এসিড কেন প্রয়োজন, সেটা আগের উপপর্বগুলো পড়লেই বোঝা যাবে, তাই ওইটা নিয়ে আর আলোচনা করব না, সরাসরি মূল কথায় চলে আসি। জীবনের ত্রিত্ত্ববাদে আমরা দেখেছিলাম যে প্রোটিন হলো বিল্ডিং ব্লক, নিউক্লিক এসিড হলো ব্লু প্রিন্ট।আর জীবদেহে বর্তমানে ডিএনএ ই মূল ব্লু প্রিন্টের কাজ করে।সমস্যা হলো, ডিএনএ তৈরি হতে হলে প্রোটিন দরকার, আবার প্রোটিন তৈরি হতে হলে ডিএনএ দরকার।
তাহলে প্রাণের প্রথম রূপটা নিশ্চই এমন ছিল যে সেটা একইসাথে প্রোটিনের মতো আর ডিএনএ এর মতো কাজ করতে পারবে, আর নিজেই নিজেই প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে পারবে, কারণ তাকে তৈরি করার মতো আর কেউ তখন ছিলোনা। বিজ্ঞানীরা অনেক খুজলেন, এমন কিছু পেলেন না যার মধ্যে এসকল বৈশিষ্ট্য একত্রে থাকবে। ১৯৬০ সালের দিকে এটা ধারণা করা হয় যে ডিএনএ এরই নিকটাত্মীয়, আরএনএ হতে পারে সেই জিনিস।কিন্তু একটা সমস্যা ছিল, সেই প্রাচীন পৃথিবীতে আরএনএ এর গঠিত হওয়া, তাও নিরবিচ্ছিন্নভাবে গঠিত হতে থাকা আদও সম্ভব কিনা, তা জানা ছিলোনা।তাই নিজের প্রতিরূপ গঠনকারী কিছুর সন্ধান এখনো পাওয়া গেলো না।
আমরা জানি যে প্রোটিনরা বক্র হয়ে ভাজ হয়ে অসংখ্য আকৃতি ধারণ করতে পারে।ফলে, তারা প্রায় যা ইচ্ছা কাজ করতে পারে, এনজাইম হতে পারে, বিক্রিয়ায় প্রভাবক সাজতে পারে।কিন্তু প্রোটিন তৈরি হয় ডিএনএ তে সংরক্ষিত তথ্য অনুসারে,আবার ডিএনএ তৈরিতে প্রোটিন দরকার। শুরুতেই সমস্যাটা উল্লেখ করেছি। ১৯৬০ সালে এইটাই আবিষ্কার হয় যে আরএনএ প্রোটিনের মতো ভাজ হওয়ার ক্ষমতা রাখে, অবশ্যই প্রোটিনের মতো অত জটিল আকৃতিতে না, কিছুটা।তাই, যদি কোনো আরএনএ তথ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি বিক্রিয়ায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে, অবশ্যই সে নিজে নিজের প্রতিরূপ গঠনে সক্ষম, প্রোটিন ছাড়াই!
কারণ প্রোটিনের ভাজ হওয়াই একে বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন কাজ করার সামর্থ্য দেয়।এটা বেশ আকর্ষণীয় একটা ধারণা ছিল, কিন্তু অনুমাননির্ভর। ১৯৮২ সালে আরএনএ এনজাইম আবিষ্কার হয়ে গেল, মানে এমন আরএনএ, যারা এনজাইমের কাজ করতে পারে।এই তথ্যও পাওয়া গেল যে পৃথিবীর প্রথম আরএনএ রা “s*x” করেছিল হয়তো!;) আবিষ্কার হওয়া আরএনএ এনজাইমটা যে শুধু বিক্রিয়াকে প্রভাবিত করত, এমন না।
এটা ছিল আরএনএ এর একটা ছোট অংশ, যেটা নিজেকে লম্বা কোনো চেইন থেকে কেটে ফেলতে পারত।আর এই ঘটনাটা উলটো হয়ে ঘটা মানেই সেই চেইনে নতুন আরএনএ এর অংশ যুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন একটা আরএনএ গঠিত হতে পারত।যেটাকে প্রজনন বললেও ভুল হবেনা।২০০০ সালে জানা গেল যে আমাদের দেহে প্রোটিন তৈরির কারখানার একদম মূলে কাজ করে আরএনএ এনজাইম।তাহলে নিশ্চই আরএনএ কেই আগে তৈরি হতে হয়েছিল।
তাও কিছু সমস্যা থেকে গেল, যেমন-আদও আরএনএ নিজের প্রতিরূপ তৈরিতে সক্ষম ছিলো কিনা।যদি প্রাচীন কালে নিজের প্রতিরূপ গঠনে সক্ষম কোনো কিছু থেকেও থাকে, তাহলে হয়তো সেটা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তাই গবেষকরা নিজেরাই এমন একটা জিনিস তৈরির উদ্যোগ নিলেন। র্যান্ডম আরএনএ নিয়ে তাদেরকে কয়েক প্রজন্ম বিবর্তিত করে দেখলেন যে ফলাফল কী আসে।২০০১ সালে এই প্রক্রিয়ায় RNA18 নামের একটা এনজাইম পাওয়া গেল, যেটা অন্য একটা আরএনএ এর ওপর ১৪ টা নিউক্লিওটাইড লাগাতে পারত।
যেকোনো সেল্ফ-রেপ্লিকেটিং বা নিজের প্রতিরূপ গঠনকারী আরএনএ কমপক্ষে নিজের সমান লম্বা আরএনএ গঠন না করলে ধীরে ধীরে সেটা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ, ধরি, ১০০ টা নিউক্লিওটাইড বিশিষ্ট সেল্ফ-রেপ্লিকেটিং আরএনএ তৈরি করল ৮০ নিউক্লিওটাইড বিশিষ্ট, সেটা করল ৬০ নিউক্লিও. বিশিষ্ট, সেটা করল ৪০….. এভাবে একসময় আর তৈরিই হবে না আর সেটা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।যেখানে RNA18 এর নিউক্লিওটাইড ছিল ১৮৯ টা, সে তৈরি করল মাত্র ১৪ টা। আর সবচেয়ে লম্বা আরএনএ, যেটা সে গঠন করেছিল, সেটায় ছিল মাত্র ২০ টা।পরবর্তীতে tC19Z নামের একটা আরএনএ এনজাইম পাওয়া গেল, এটা ৯৫ ঘর পর্যন্ত আরএনএ ক্রম কপি করতে পারত, নিজের দৈর্ঘ্যের প্রায় অর্ধেক!
এটা করার জন্য এনজাইমটা একটা আরএনএ এর শেষ মাথায় আকড়ে বসে, সঠিক নিউক্লিওটাইডটা লাগায়, তারপর একধাপ সামনে যায়, আরেকটা লাগায়।এত সরল একটা অণুর এত জটিল একটা কাজ করা আসলেই অভাবনীয়!গবেষকরা যখন সেল্ফ-রেপ্লিকেটিং আরএনএ তৈরি করছিলেন, তখন আরেকটা প্রশ্ন উত্থাপিত হলো, এসব কাজ করার জন্য শক্তি এল কোথা থেকে? কারণ আরএনএতো কোনো বিপাকীয় কাজ পরিপূর্ণ ভাবে করতে পারে না।
গত উপপর্বে আরএনএ ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিসের পক্ষে সামান্য প্রমাণাদি দিয়েছিলাম, আর শেষে একটা প্রশ্ন করে রেখেছিলাম যে, ওইসব বিক্রিয়া করার জন্য আরএনএ শক্তি পেল কোথা থেকে? কারণ জানা মতে আরএনএ বিপাক করতে পারে না। আর এর কারণ হলো, আরএনএ এর রাসায়নিক ভাবে সক্রিয় “ফাংশনাল গ্রুপ” খুবই কম। যার ফলে আরএনএ খুবই কমসংখ্যক বিক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
ফাংশনাল গ্রুপ জিনিসটা হলো যন্ত্রপাতির মতো, একজন মেকানিকের কাছে যত যন্ত্রপাতি বেশি থাকবে, সে ততবেশি রকমের কাজ করতে পারবে। প্রোটিনের কাছে বহুরকমের ফাংশনাল গ্রুপ আছে, তাই সে এত রং-বেরং এর কাজ পারে।কিন্তু এমন ফাংশনাল গ্রুপও বানানো সম্ভব, যেটার সাথে ভিন্ন ভিন্ন ছোট-খাট কিছু অণু যোগ করলেই সেটা নানাবিধ কাজ করতে পারবে।
মানে সেই স্ক্রু-ড্রাইভারের মতো, যেটার মাথার অংশ নানা ধরনের হয়, একটা খুলে আরেকটা লাগালে এক এক রকমের স্ক্রু খোলা বা লাগানো যায়।আর ফাংশনাল গ্রুপের ক্ষেত্রে এই চেঞ্জেবল মাথা গুলো হলো ক্ষুদ্র সাহায্যকারী অণু, যাদেরকে কোফ্যাক্টর বলা হয়।
প্রোটিনেরা এই কোফ্যাক্টর ব্যাবহার করে তাদের কাজের পরিধি বৃদ্ধি করে থাকে। আর মজার বিষয় হলো, আরএনএ এনজাইমেও কোফ্যাক্টর পাওয়া গিয়েছে। ২০০৩ সালে এলকোহলকে অক্সিডাইজ করতে পারে এমন আরএনএ এনজাইম তৈরি করা হলো, সেটা NAD+ নামের কোফ্যাক্টর ব্যাবহার করত।
এর কিছুদিন পরে glmS নামের একটা প্রাকৃতিক আরএনএ এনজাইম পাওয়া যায়, এটাতেও এই কোফ্যাক্টর ছিল। মানে আরএনএ এনজাইমে কোফ্যাক্টর থাকা স্বাভাবিক এবং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক।ফলে বিক্রিয়ার জন্য শক্তি উৎপাদনে সক্ষম আরএনএ এর সম্ভাবনা দৃঢ় হতে থাকল।
এত কিছু আবিষ্কার হয়ে গেল, কিন্তু সেই সদ্য জন্মানো পৃথিবীর চরম পরিবেশে আরএনএ তৈরি হলো কীভাবে, সেটা জানা গেল না।আমরা জানি যে আরএনএ হলো নিউক্লিওটাইডের সুঁতা, যেটা একটা সুগার, বেস,আরেকটা ফসফেট গ্রুপ দিয়ে তৈরি। এই নিউক্লিওটাইডদের জোড়া লাগিয়ে আরএনএ বানাতে জীবদেহে বহুধরনের এনজাইম কাজ করে।কিন্তু প্রাচীন পৃথিবীতেতো আর এই এনজাইম ছিলো না। তাহলে কীভাবে এতগুলো নিউক্লিওটাইড জোড়া লাগল?
প্রশ্নটার উত্তর সম্ভবত, কাদা। জ্বি হ্যা, মাটির সাথে পানি মেশালে যা হয়, সেটা।১৯৯৬ সালে এক গবেষণায় আগ্নেয়গিরি অঞ্চলের কাদায় যখন এক্টভেটেড নিউক্লিওটাইড দেয়া হয়, তখন সেটা ৫৫ নিউক্লিওটাইড লম্বা আরএনএ তৈরি করে ফেলেছিল। এক্টিভেটেড নিউক্লিওটাইড কী?
নিউক্লিওটাইডের ৫ নং কার্বনে একটা এক্সট্রা গ্রুপ যুক্ত থাকে(সাধারণত মনোফসফেট বা ট্রাইফসফেট), যেটা নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে সক্ষম, ফলে বিক্রিয়ার জন্য শক্তি পাওয়া যায়, এদেরকে এক্টিভেটেড নিউক্লিওটাইড বলে। সাধারণ নিউক্লিওটাইড দিলে কাদায় আরএনএ গঠন হবে না, কিন্তু এই এক্টিভেটেড নিউক্লিওটাইড শক্তি উৎপাদনে সক্ষম বলে কাদার আণবিক গঠনের সুবিধা নিয়ে সেটাকে ভিত্তি হিসেবে ব্যাবহার করে, ও নিউক্লিওটাইডগুলো বিক্রিয়ার মাধ্যমে যুক্ত হয়।তাই, প্রাচীন পৃথিবীতে যদি পর্যাপ্ত এক্টিভেটেড নিউক্লিওটাইড থেকে থাকে, তাহলে নিশ্চই আরো লম্বা ও কার্যকরী সুস্থির আরএনএ গঠন হওয়া সম্ভব।
আরএনএ এর গঠন সম্পর্কে আমরা আগেই পড়েছি। সুগার, নাইট্রোজেন বেস আর ফসফেট এর মূল উপাদান। সেই চরম পরিবেশে এগুলো তৈরি হওয়া বেশ স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।কারণ তখন শক্তির অভাব ছিলোনা, ফলে বিচ্ছিন্ন পরমাণুগুলো বিক্রিয়া করে এই যৌগগুলো খুব সহজে তৈরি হতে পারে। কিন্তু এই যৌগগুলোকে জোড়া লাগানো বেশ কঠিন, কাদার মধ্যে তৈরি আরএনএ গুলো স্থায়ী ছিলোনা। সুগার আর বেস অণুগুলোর বিশেষ আকৃতির কারণে এগুলো জোড়া লাগানো কঠিন, জোড়া লাগলেও স্থায়ী না।দ্রুত ভেঙ্গে যায়।একমাত্র জীবদেহের বিশেষ এনজাইমরাই এই কাজ করতে সক্ষম। তাহলে উপায় কী? কীভাবে গঠিত হলো প্রথম আরএনএ?
পৃথিবীর প্রচণ্ড পরিবেশে স্থায়ী আরএনএ কীভাবে গঠিত হলো? তো, এই সমস্যার কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছিলো না, ফলে অনেক বায়োলজিস্টরাই আরএনএ কে প্রথম রেপ্লিকেটর হওয়ার প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দিয়ে দিলেন।
অনেকে আবার নতুন নতুন হাইপোথিসিস আনতে শুরু করলেন, টিএনএ ওয়ার্ল্ড, পিএনএ ওয়ার্ল্ড, এএনএ ওয়ার্ল্ড। এরা সবাই আরএনএ এর মতো, তবে এদের বেসিক ইউনিটগুলোর পুনরুৎপাদিত হওয়ার আর জোড়া লাগার সম্ভাবনা বেশি।কিন্তু, সমস্যা হলো, প্রমাণ নেই!এই সময়েই আরেকটা হাইপোথসিসিসের উদ্ভব হলো।
এতদিন বিজ্ঞানীরা ভাবছিলেন যে কার্বন, হাইড্রোজেন, ফসফরাস, নাইট্রোজেন এগুলো যুক্ত হয়ে সুগার, বেস,ফসফেট তৈরি হয়েছে, তারপর এগুলো জোড়া লেগে আবার নিউক্লিওটাইড হয়েছে, কিন্তু এই পদ্ধতি তেমন কাজে আসল না। নতুন হাইপোথিসিস বলল যে, বারবার জোড়া লাগার কী দরকার? সরাসরি মৌলগুলো যুক্ত হয়েইতো নিউক্লিওটাইড গঠিত হতে পারে। মানে দম বিরিয়ানির মতো। নর্মালি বিরিয়ানিতে মাংস আলাদা রান্না হয়, ভাত আলাদা রান্না হয়, তারপর দুটো মেশানো হয়। কিন্তু দম বিরিয়ানিতে একসাথে চাল-মাংস দিয়ে দমে একবারে রান্না করা হয়।নতুন হাইপোথিসিসও এটাই বলল যে মৌলগুলো একবারে যুক্ত হয়ে সরাসরি নিউক্লিওটাইড হয়ে গিয়েছে। ২০০৯ সালে এটা কিছুটা
প্রমাণিতও হলো, গবেষকরা অর্ধেক সুগার,আর অর্ধেক বেস নিয়ে জোড়া লাগিয়ে দিলেন, ফলে সেই কঠিন সুগার-বেস বন্ধন তৈরি হয়ে গেল, যেটা অন্যরা পারছিলেন না।তারপর তারা বাকি অংশটুকু যুক্ত করলেন। কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিল ফসফেট গ্রুপ নিয়ে, তারা বুঝলেন যে ফসফেট গ্রুপটা প্রথমেই উপস্থিত থাকা প্রয়োজন।
ফসফেট প্রথমে দিয়েও কাজটা করা হলো, কিন্তু ব্যাপারটা অনেক অগোছালো হয়ে গেলো, যদিও এতে সফলতা আসল অনেকখানি।কারণ, প্রাচীন পৃথিবীও অগোছালোই ছিলো, তাই হয়তো এই অগোছালো পরিবেশই আরএনএ তৈরির উপযুক্ততা তৈরি করেছিল। আমরা জানি যে আরএনএ তে চারটা নিউক্লিওটাইড থাকে, কিন্তু এই গবেষণায় তৈরি হয়েছিলো মাত্র ২ টা। গবেষণা চলতে থাকল।আবার আরেকদল গবেষক TAP বা ট্রাইয়ামিনোপাইরিমিডিন কে রাইবোজের সাথে মিশিয়ে দিলেন, বিশেষ পরিবেশে রেখে, যেন একটা শুকনো-ভেজা জায়গা, হাইড্রোথার্মাল ভেন্টের ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠের মতো। দেখা গেল যে টিএপি এর ৮০%ই নিক্লিওসাইডে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে।
এরপরে গবেষকরা সেই মিশ্রণে নতুন একটা যৌগ,সায়ানিউরিক এসিড যোগ করলেন, এতে অনেকগুলো অসমযোজী পলিমার তৈরি হলো, যাদের হাজারো জোড়া নিউক্লিওসাইড ছিলো।এই পলিমারাইজেশন টুকু করতে আমাদের দেহে অনেক জটিল জটিল প্রক্রিয়া ঘটে, এখানে একটা এসিড দিয়েই তা হয়ে গেল।তাই প্রাচীন পৃথিবীতে আরএনএ প্রথম গঠিত হওয়ার ধারণা জোরদার হতে থাকল।
নতুন নতুন প্রশ্ন উত্থাপিত হতে থাকল, আরএনএ প্রথমে গঠিত হয়ে থাকলে পরবর্তীতে ডিএনএ কীভাবে প্রাধান্য পেলো? আরএনএ কোষে ঢুকল কীভাবে? অনেকে ভাবলেন যে আরএনএ মুক্ত স্থানে তৈরি না হয়ে আবদ্ধ কোষের মতো স্থানে তৈরি হয়েছে, এতে আরএনএ এর গাঠনিক উপাদানগুলো একসাথে স্থিতিশীল থাকতে পেরেছে। হয়তো হাইড্রোথার্মাল ভেন্টের সেই অতিক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ, যেখানে গ্লাইসেরোফসফোলিপিড আর প্রোটিন তৈরি হয়েছিল, সেখানেই আরএনএ তৈরি হয়েছে।
এভাবে প্রাণের ত্রিত্ত্ববাদ মিলে গিয়েছে, তৈরি হয়ে গিয়েছে প্রথম কোষের মতো বস্তু, যাকে জীবনের প্রথম রূপ বলা যায়। এগুলো নিছকই ধারণা, পোক্ত প্রমাণ এখনো নেই।
প্রাণ কোথায় গঠিত হয়েছিলো, তা নিয়ে আমরা সিদ্ধান্তে এসেছিলাম যে,হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট। কিন্তু কোনটা আগে গঠিত হয়েছে, ডিএনএ, নাকি আরএনএ, এই নিয়ে সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব না, কারণ এখনো গবেষণা চলমান, উভয়ের পক্ষে আর বিপক্ষে প্রায় সমান যুক্তি-তর্ক-প্রমাণ আছে।
লিখাঃতাহসিন আহমেদ অমি